বিএনপি হাইকমান্ড রাজপথে সক্রিয় হতে চাইছে!- গঠনতন্ত্রে সংশোধনী এনে ইসিতে জমা, চেয়ারপার্সনের ৰমতা বৃদ্ধি
নির্বাচন কমিশনে গঠনতন্ত্র জমা দেয়ার পর দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার পাশাপাশি রাজপথে সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে দলের হাইকমান্ড। পর্যায়ক্রমে বিএনপিকে ঢেলে সাজানো হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বলেন, দেশের বিরম্নদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করবে দল। দেশের সচেতন নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ করেই মাঠে নামার কৌশল নিয়েছে বিএনপি।
প্রয়োজনে পদবঞ্চিত ত্যাগী নেতাদের কমিটিতে অনত্মর্ভুক্ত করা হবে। নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়ার জন্য গঠনতন্ত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। গঠনতন্ত্র সংশোধনী অনুযায়ী দ-প্রাপ্তরা দলের সদস্য হতে পারবেন। দীর্ঘ ১৬ বছর পর দলের কাউন্সিল হলেও এখন থেকে তিন বছর পর পর কাউন্সিল করতে হবে। ছাত্রদল, কৃষক দল, শ্রমিক দল চলবে নিজেদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী। বলা হয়েছে প্রবাসী বিএনপির শাখা থাকছে না। কিন্তু প্রবাসী সংগঠনগুলো নিজেদের মতো সাংগঠানিক কাঠামো করলেও বিএনপির আদর্শ মেনে চলবে। বিএনপি সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টর্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশকে (ড্যাব) সাংগঠনিক কাঠামোর বাইরে রাখা হয়েছে। নির্বাহী কমিটির ৰমতা আগের মতো হ্রাস করে চেয়ারপার্সনের ৰমতা বাড়ানো হয়েছে সংশোধিত গঠনতন্ত্রে।নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধানত্ম অনুযায়ী আগামীকাল রবিবার গঠনতন্ত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। দু'দিন সময় হাতে রেখেই বৃহস্পতিবার বিএনপি গঠনতন্ত্র জমা দেয়া হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরম্নল ইসলাম খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল কাউন্সিলে অনুমোদিত গঠনতন্ত্র জমা দেয়। গত ২৪ জুলাই কাউন্সিল সম্পন্ন করে ২৫ জুলাই নির্বাচন কমিশনে গঠনতন্ত্র জমা দেয় ৰমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ওই সময় বিএনপি নির্বাচন কমিশনের কাছে ছয় মাস চেয়ে আবেদন করে এবং একটি খসড়া গঠনতন্ত্র জমা দেয়। বিএনপির আবেদনের পর নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ২০১০ সালের ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে গঠনতন্ত্র জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়। উলিস্নখিত সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো কাউন্সিলের অনুমোদনকৃত গঠনতন্ত্র জমা দিতে ব্যর্থ হলে দলের নিবন্ধন বাতিল হবে বলে ঘোষণা দেয় ইসি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই নির্বাচন কমিশনে সংশোধিত দলীয় গঠনতন্ত্র জমা দিল দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো।
উলেস্নখ্য, নবম সংসদ নির্বাচনের আগে নিবন্ধিত ৩৯ রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৩৭ দল গঠনতন্ত্র জমা দেয়। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও ফ্রিডম পার্টি গঠনতন্ত্র জমা দেয়নি। বাসদ ইতোমধ্যে কাউন্সিল সম্পন্ন করেছে। তাদের ২৪ জানুয়ারি চূড়ানত্ম গঠনতন্ত্র জমা দেয়ার কথা। তবে ফ্রিডম পার্টির প থেকে জানানো হয়েছে, 'বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে' যথাসময়ে তাদের প েসংশোধিত গঠনতন্ত্র জমা দেয়া সম্ভব হবে না।
বিএনপির গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাহী কমিটির ৰমতা কমানো হয়েছে। আগের মতোই চেয়ারপার্সনের একক ৰমতা বাড়ানো হলো। গঠনতন্ত্রের ৬ (১১) (খ) ধারা সংশোধন করে বলা হয়েছে দলের কোন নেতা কিংবা সদস্যের বিরম্নদ্ধে শাসত্মিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে না, কমিটি সুপারিশ করতে পারবে। কিন্তু এই ধারায় আগে কমিটির সরাসরি শাসত্মিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ৰমতা ছিল। তবে কোন সদস্যের বিরম্নদ্ধে শাসত্মিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার পর ওই ব্যক্তি চেয়ারপার্সনের বরাবরে আপিল করার সুযোগ পাবেন। নির্বাহী কমিটির সভা ছয় মাসের মধ্যে করতে হবে, আগে তিন মাসের মধ্যে সভা করার নিয়ম ছিল। গঠনতন্ত্রের দু'টি ধারা সংশোধন ও একটি ধারা সংযোজন করে চেয়ারপার্সনের ৰমতা বাড়ানো হয়েছে। গঠনতন্ত্রের ৮ (ক) ধারায় নতুন চেয়ারপার্সন দায়িত্ব না নেয়া পর্যনত্ম বর্তমান চেয়ারপার্সন স্বপদে থেকে তাঁর দায়িত্ব পালন করে যেতে পারবেন। তবে দলের চেয়ারপার্সন স্থায়ী কমিটি ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারপার্সন হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন বলে গণ্য করা হবে। বিশেষ করে স্থায়ী কমিটি ও নির্বাহী কমিটির পদ কিংবা কোন সদস্য শূন্য হলে সেৰেত্রে চেয়ারপার্সন একক ৰমতাবলে শূন্যপদ পূরণ করতে পারবেন। আগে কোন সিদ্ধানত্ম নেয়ার প্রয়োজন হলে স্থায়ী কমিটির সভায় অনুমোদন করে নিতে হতো। বর্তমানে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকের প্রয়োজন হবে না। দলীয় সংশোধিত গঠনতন্ত্রে এখন চেয়ারপার্সনের একক ৰমতা দেয়া হয়েছে। চেয়ারপার্সনের একক ৰমতা থাকলেও কাউন্সিলররা দলীয় চেয়ারপার্সনকে অপসারণ করতে পারবেন। সেৰেত্রে সর্বময় ৰমতার অধিকারী হচ্ছেন দলের কাউন্সিলরগণ।
এদিকে বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ (ক) ধারায় ছিল ফৌজদারী আইনে দ-প্রাপ্তরা বিএনপির সদস্য হতে পারবেন না। সংশোধিত গঠনতন্ত্র থেকে এই ধারাটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিএনপির অনেক নেতাকর্মী বিশেষ আদালতের রায়ে দ-প্রাপ্ত হয়েছে। এই ধারার কারণে বিভ্রানত্মি সৃষ্টি হতে পারে। গঠনতন্ত্র সংশোধন করে দ-প্রাপ্তদের দলে রাখার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। অন্যদিকে দল নিবন্ধনের আইনী বাধ্যবাধকতার কারণে সহযোগী সংগঠনের ধারায় ছাত্রদল, শ্রমিক দল তাদের নিজের ধারা অনুযায়ী চলবে। প্রবাসী সংগঠন সংক্রানত্ম ধারাটি পরিবর্তন করে একে প্রবাসে সংগঠন বলে উলেস্নখ করা হয়েছে। প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশী যারা বিএনপির নীতি, আদর্শ বিশ্বাস করেন তাঁরা যে দেশে স্থায়ী কিংবা অস্থায়ীভাবে বসবাস করেন তাঁরা সে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী সংগঠন পরিচালনা করতে পারবেন। তবে বিএনপির অঙ্গসংগঠন হিসেবে থাকতে পারবে না। তৃণমূল থেকে প্রার্থী চূড়ানত্ম করার ৰেত্রে সংশিস্নষ্ট নির্বাচনী এলাকার ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা, উপজেলা অথবা জেলা কমিটি কতর্ৃক চূড়ানত্ম প্রার্থী মনোনীত করবে। সেৰেত্রে চূড়ানত্ম প্রার্থী মনোনীত করার সর্বময় ৰমতা দেয়া হয়েছে দলের পালর্াামেন্টারি বোর্ডের ওপর।
গঠনতন্ত্র জমা দেয়ার পর বিএনপির প্রতিনিধি দলের প্রধান নজরম্নল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেছেন, আরপিও'র সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাউন্সিলে সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুমোদিত হয়েছে এবং তা ইসির কাছে জমা দেয়া হয়েছে। ছাত্রদল ও শ্রমিক দল তাদের নিজেদের গঠনতন্ত্র দ্বারা পরিচালিত হবে। তবে প্রবাসী সংগঠন, ড্যাবসহ পেশাজীবী সংগঠনগুলো বিএনপির সঙ্গে আদর্শগতভাবে কাজ করলেও সাংগঠনিকভাবে তারা বিএনপির সঙ্গে থাকছে না। নির্ধারিত সময়ের আগে দলীয় গঠনতন্ত্র জমা দেয়া দেশের রাজনীতির জন্য 'ইতিবাচক' বলে মনত্মব্য করেন সিইসি এটিএম শামসুল হুদা। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগে দুই দল ছাড়া সবার স্থায়ী গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনে জমা পড়েছে। এটা খুবই আনন্দের বিষয়। রাজনৈতিকভাবে তা খুবই ইতিবাচক।
গঠনতন্ত্র জমা দেয়া সম্পর্কে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। এই দলের কাউন্সিল করতে সময় লাগছে ঠিকই কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগেই আমরা দলের গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছি। এখন থেকে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে দলকে চাঙ্গা করার লৰ্য নিয়েই সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা। সরকারের বিরম্নদ্ধে বিএনপি কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচী দেবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশের বিরম্নদ্ধে যে কোন ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে প্রস্তুত বিএনপি। বিএনপি সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী হবে। দেশবাসীকে রাজপথে ঐক্যবদ্ধ করেই রাজনৈতিকভাবে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করা হবে বলে জানান তিনি।
No comments