পবিত্র কোরআনের আলো-সব মানুষ একই উম্মতের অন্তর্ভুক্ত ছিল
২১৩. কা-নান্না-ছু উম্মাতাওঁ ওয়া-হিদাহ; ফাবাআ'ছাল্লা-হুন নাবিয়্যিনা মুবাশ্শিরীনা ওয়া মুনযিরীন; ওয়া আনযালা মাআ'হুমুল কিতাবা বিলহাক্কি লিইয়াহ্কুমা বাইনান্না-ছি ফীমাখতালাফূ ফীহি; ওয়া মাখ্তালাফা ফীহি ইল্লাল্লাযীনা ঊতূহু মিম্ বা'দি মা জা-আতহুমুল বায়্যিনাতু বাগইয়াম্ বাইনাহুম;
ফাহাদাল্লা-হুল্লাযীনা আ-মানু- লিমাখ্ তালাফূ ফীহি মিনাল হাক্কি বিইযনিহি; ওয়াল্লাহু ইয়াহদী মাইঁয়্যাশা-উ ইলা ছিরাতি্বম্ মুসতাক্বীম।
২১৪. আম হাছিবতুম আন তাদখুলুল জান্নাতা ওয়ালাম্মা- ইয়া'তিকুম্ মাছালুল্লাযীনা খালাও মিন ক্বাবলিকুম; মাচ্ছাতহুমুল বা'ছা-উ ওয়াদ্ দ্বার্রা-উ ওয়া যুলযিলূ হাত্তা- ইয়াক্বূলার-রাসূলু ওয়াল্লাযীনা আ-মানূ মাআ'হূ মাতা-নাছরুল্লাহি; আলা-ইন্না নাছরাল্লা-হি ক্বারীব। [সুরা বাকারা, আয়াত : ২১৩-২১৪]
অনুবাদ : ২১৩. সব মানুষ একই উম্মতের অন্তর্ভুক্ত ছিল (পরে তারা বিভক্ত হয়েছে); অতঃপর আল্লাহ তায়ালা সুসংবাদ প্রদানকারী ও সতর্ক বার্তা প্রদানকারী নবী-রাসুল পাঠালেন। তিনি সত্যসহ গ্রন্থও নাজিল করলেন তাদের ওপর। যেন তারা মানুষের এসব পারস্পরিক বিরোধের ফায়সালা দিতে পারেন_যে ব্যাপারে তারা মতবিরোধ করে। তাদের কাছে সুস্পষ্ট পথনির্দেশ পাঠানো সত্ত্বেও তারা পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টির জন্য মতবিরোধ করছে। অতঃপর যারা ঈমান এনেছে, তাদের আল্লাহ সঠিক পথনির্দেশ দিয়েছেন_যেসব ব্যাপারে তারা মতবিরোধ করছিল। আল্লাহ তায়ালা যাকে চান সঠিক পথ দেখান।
২১৪. তোমরা কি মনে করে নিয়েছ, তোমরা বেহেশতে চলে যাবে? তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের মতো কোনো বিপর্যয় এখনো তোমাদের ওপর আসেনি; তাদের ওপর বিপর্যয় ও সংকট এসেছে, তাদের প্রকম্পিত করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি স্বয়ং নবী ও তাঁর সঙ্গীরা এই বলে আর্তনাদ করে উঠেছে, আল্লাহর সাহায্য কবে আসবে? জেনে রাখো, আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে।
ব্যাখ্যা: এখানে মানবজাতির আদি ইতিহাসের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে এবং মানবসমাজের মূল দর্শনের বিষয়টা সামনে আনা হয়েছে। একান্ত আদিতে মানুষ একই সম্প্রদায়ভুক্ত ছিল। হজরত আদম (আ.) আল্লাহ প্রেরিত প্রথম নবী। হজরত আদম-হাওয়া পৃথিবীতে আসার পর থেকে তাদের সন্তানরা পিতার শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে এক আল্লাহর ইবাদতের ধারায় জীবন যাপন করতে শুরু করেন। তখন পৃথিবীতে একটাই সম্প্রদায় ছিল, একটাই শিক্ষা ছিল এবং এক ধরনের জীবনধারা ছিল। পরে ধীরে ধীরে মানুষ বাড়তে থাকে এবং বিভক্ত হতে থাকে। ক্রমান্বয়ে তাদের কর্মপদ্ধতি, চিন্তা-চেতনা ও বিশ্বাসে পার্থক্য বা অনৈক্যের সূচনা হতে থাকে। ক্রমে একদল আরেক দলের বিরুদ্ধে যায় এবং পরস্পরে শত্রুতে পরিণত হয়। তাদের মধ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্ব আসে, বিশ্বাস ও জীবনবোধে দ্বন্দ্ব আসে, তারা পরস্পরে কলহ-বিবাদে লিপ্ত হয় এবং মারামারি করে। অথচ এই পৃথিবীতে সুখে-শান্তিতে বাঁচতে হলে প্রয়োজন পরস্পরের সহযোগিতা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও পরস্পরকে বোঝা।
মানুষ মানেই সমাজবদ্ধ জীবন। আর এই সমাজজীবনকে সুন্দর ও শান্তিময় করতে হলে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন হলো অভিন্ন ধর্ম, অভিন্ন বিশ্বাস ও ঐক্যবদ্ধ জীবনবোধ। এজন্য আল্লাহ তায়ালা তাঁর একত্ববাদের শিক্ষা দিয়ে তাঁর নবী-রাসুলদের পাঠিয়েছেন মানুষকে সঠিক পথনির্দেশ প্রদান করতে। তিনি নবী-রাসুলদের কিতাব দিয়েছেন যেখানে তাঁর পক্ষ থেকে সঠিক জীবনপথের পথনির্দেশনা রয়েছে।
ওইসব আয়াতে খুব স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে_আল্লাহর কিতাবের মূল পথনির্দেশনা হচ্ছে মানুষের পারস্পরিক মতবিরোধ বা স্বার্থের বিরোধগুলোর ফায়সালা করা। মানবসমাজ মানেই পারস্পরিক সম্পর্ক বা স্বার্থ ও বিশ্বাসের জটিলতা। এই জটিলতা নিরসন করে মানুষকে পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও ভালোবাসার সম্পর্কের মাধ্যমে সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলাই আল্লাহ তায়ালার মূল উদ্দেশ্য।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
২১৪. আম হাছিবতুম আন তাদখুলুল জান্নাতা ওয়ালাম্মা- ইয়া'তিকুম্ মাছালুল্লাযীনা খালাও মিন ক্বাবলিকুম; মাচ্ছাতহুমুল বা'ছা-উ ওয়াদ্ দ্বার্রা-উ ওয়া যুলযিলূ হাত্তা- ইয়াক্বূলার-রাসূলু ওয়াল্লাযীনা আ-মানূ মাআ'হূ মাতা-নাছরুল্লাহি; আলা-ইন্না নাছরাল্লা-হি ক্বারীব। [সুরা বাকারা, আয়াত : ২১৩-২১৪]
অনুবাদ : ২১৩. সব মানুষ একই উম্মতের অন্তর্ভুক্ত ছিল (পরে তারা বিভক্ত হয়েছে); অতঃপর আল্লাহ তায়ালা সুসংবাদ প্রদানকারী ও সতর্ক বার্তা প্রদানকারী নবী-রাসুল পাঠালেন। তিনি সত্যসহ গ্রন্থও নাজিল করলেন তাদের ওপর। যেন তারা মানুষের এসব পারস্পরিক বিরোধের ফায়সালা দিতে পারেন_যে ব্যাপারে তারা মতবিরোধ করে। তাদের কাছে সুস্পষ্ট পথনির্দেশ পাঠানো সত্ত্বেও তারা পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টির জন্য মতবিরোধ করছে। অতঃপর যারা ঈমান এনেছে, তাদের আল্লাহ সঠিক পথনির্দেশ দিয়েছেন_যেসব ব্যাপারে তারা মতবিরোধ করছিল। আল্লাহ তায়ালা যাকে চান সঠিক পথ দেখান।
২১৪. তোমরা কি মনে করে নিয়েছ, তোমরা বেহেশতে চলে যাবে? তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের মতো কোনো বিপর্যয় এখনো তোমাদের ওপর আসেনি; তাদের ওপর বিপর্যয় ও সংকট এসেছে, তাদের প্রকম্পিত করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি স্বয়ং নবী ও তাঁর সঙ্গীরা এই বলে আর্তনাদ করে উঠেছে, আল্লাহর সাহায্য কবে আসবে? জেনে রাখো, আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে।
ব্যাখ্যা: এখানে মানবজাতির আদি ইতিহাসের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে এবং মানবসমাজের মূল দর্শনের বিষয়টা সামনে আনা হয়েছে। একান্ত আদিতে মানুষ একই সম্প্রদায়ভুক্ত ছিল। হজরত আদম (আ.) আল্লাহ প্রেরিত প্রথম নবী। হজরত আদম-হাওয়া পৃথিবীতে আসার পর থেকে তাদের সন্তানরা পিতার শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে এক আল্লাহর ইবাদতের ধারায় জীবন যাপন করতে শুরু করেন। তখন পৃথিবীতে একটাই সম্প্রদায় ছিল, একটাই শিক্ষা ছিল এবং এক ধরনের জীবনধারা ছিল। পরে ধীরে ধীরে মানুষ বাড়তে থাকে এবং বিভক্ত হতে থাকে। ক্রমান্বয়ে তাদের কর্মপদ্ধতি, চিন্তা-চেতনা ও বিশ্বাসে পার্থক্য বা অনৈক্যের সূচনা হতে থাকে। ক্রমে একদল আরেক দলের বিরুদ্ধে যায় এবং পরস্পরে শত্রুতে পরিণত হয়। তাদের মধ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্ব আসে, বিশ্বাস ও জীবনবোধে দ্বন্দ্ব আসে, তারা পরস্পরে কলহ-বিবাদে লিপ্ত হয় এবং মারামারি করে। অথচ এই পৃথিবীতে সুখে-শান্তিতে বাঁচতে হলে প্রয়োজন পরস্পরের সহযোগিতা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও পরস্পরকে বোঝা।
মানুষ মানেই সমাজবদ্ধ জীবন। আর এই সমাজজীবনকে সুন্দর ও শান্তিময় করতে হলে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন হলো অভিন্ন ধর্ম, অভিন্ন বিশ্বাস ও ঐক্যবদ্ধ জীবনবোধ। এজন্য আল্লাহ তায়ালা তাঁর একত্ববাদের শিক্ষা দিয়ে তাঁর নবী-রাসুলদের পাঠিয়েছেন মানুষকে সঠিক পথনির্দেশ প্রদান করতে। তিনি নবী-রাসুলদের কিতাব দিয়েছেন যেখানে তাঁর পক্ষ থেকে সঠিক জীবনপথের পথনির্দেশনা রয়েছে।
ওইসব আয়াতে খুব স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে_আল্লাহর কিতাবের মূল পথনির্দেশনা হচ্ছে মানুষের পারস্পরিক মতবিরোধ বা স্বার্থের বিরোধগুলোর ফায়সালা করা। মানবসমাজ মানেই পারস্পরিক সম্পর্ক বা স্বার্থ ও বিশ্বাসের জটিলতা। এই জটিলতা নিরসন করে মানুষকে পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও ভালোবাসার সম্পর্কের মাধ্যমে সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলাই আল্লাহ তায়ালার মূল উদ্দেশ্য।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments