গার্ড ওয়ার্ল্ড নিশিবক জলমুরগি_ নাচ গান চিত্রাঙ্কন- চিড়িয়াখানায় পাখি বরণ উৎসব
সৈয়দ সোহরাব পাখিরা সুন্দরের প্রতিচ্ছবি। পাখির পালকের রঙের জৌলস, পায়ের নাচন, কণ্ঠ মাধর্ুয, প্রেমকামবিহার, মৌসুমী আসা-যাওয়া, এ সবই মানুষের চিরকালের আগ্রহের বস্তু।
এ পৃথিবীটাকে যেমনি গাছ-গাছালির চাঁদোয়া ছাড়া ভাবা যায় না, তেমনি ভাবা যায় না পাখ-পাখালির ওড়াওড়ি ও কলকাকলী বিনে। ফুল, পাতা যেমন পৃথিবীকে চিত্রময়, গন্ধময় করে তোলে-পাখিও তেমনি ধরিত্রীকে শুধু রূপময় নয়, করে তোলে গীতিময়ও। এই পাখি আবার হয় দু'ধরনের। এক. এ দেশেরই জলে, স্থলে জন্ম আর আলো, বাতাসে বেড়ে ওঠা-মৃতু্য, অর্থাৎ দেশী পাখি। দুই. পরিযায়ী পাখি-যারা কোন দেশেরই পাখি নয়, সব সময়ই ঠা-ার অঞ্চলে বসবাস, তাই শীতকালে চলে আসে বাংলাদেশে। এই দু'ধরনের পাখিকেই বরণ করে নেয়ার জন্য শুক্রবার 'পাখি বরণ উৎসব'-এর আয়োজন করেছিল পাখি উৎসব জাতীয় কমিটি। ঢাকা চিড়িয়াখানার প্যাগোডা দ্বীপে আয়োজিত এ বর্ণাঢ্য উৎসবে সবই ছিল, যেমন- পাখি নিয়ে আলোচনা, পাখি সংক্রানত্ম বই ও পরিযায়ী পাখির আলোকচিত্রের প্রদর্শনী, পাখি নিয়ে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং নাচ ও গানের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শুধু ছিল না যাকে নিয়ে এই আয়োজন সেই পাখিরই পর্যাপ্ত উপস্থিতি। চিড়িয়াখানার সারা লেকজুড়ে পরিযায়ী পাখি গার্ড ওয়ার্ল্ড (পিয়ং হাঁস) ছিল মাত্র ১১৭টি আর দেশী বড় সরালী ছিল ৬টি। এ ছাড়া হাতেগোনা কয়েকটি নিশিবক, কানাবক, সাদা ছোট বক, চলপিপি, জল মুরগি ও কিছু জলজ পাখি ছিল। পাখিবিহীন এই পাখি বরণ উৎসবটি অনেকটাই হাস্যকর মনে হয়েছে উপস্থিত পাখিপ্রেমীদের কাছে।
শুক্রবারের নিরিবিলি শহরে পাখিপ্রেমী ও পরিবেশবাদীরা শীতের সকালে লেপ-কম্বলের উষ্ণতা ত্যাগ করে হাজির হয়েছিল প্যাগোডা দ্বীপে। কিন্তু তাঁদের আশা ভঙ্গ হয়েছে চিড়িয়াখানার মতো নিরাপদ স্থানে পরিযায়ী পাখির উলিস্নখিত সংখ্যা দেখে। অনেকে এ জন্য জলবায়ু পরির্বতনকেই দায়ী করলেন। এ প্রসঙ্গে আয়োজক কমিটির সমন্বয়কারী ও পাখি বিশেষজ্ঞ শাজাহান সরদার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ যে সবচেয়ে ৰতিগ্রসত্ম হয়েছে এটাই তার বড় প্রমাণ। বাংলাদেশের জলভূমিতে যে বড় ধরনের আঘাত লেগেছে এটা এখন স্পষ্ট। এমন আঘাত না আসলে আশঙ্কাজনকভাবে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমত না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন আমরা দেশের ৪০টি জলভূমিতে পাখি নিয়ে কাজ করছি। সব স্থানেই কমে এসেছে এ সংখ্যা। চিড়িয়াখানায় তো বিগত কয়েক বছর যাবতই পাখি আসছে না, তবে এর কারণ এখনও আমরা গবেষণা করিনি। এ স্থানটি পরিযায়ী পাখির জন্য নিরাপদ, তার পরও যে কেন আসছে না সেটা গবেষণা করে দেখতে হবে। তিনি আরও বলেন, ২০ বছর আগেও এই শীত মৌসুমে ২৫০ প্রজাতীর দেশী ও পরিযায়ী পাখি ে দেখা যেত এদেশে। ৫ থেকে ১০ বছর আগেও এ সংখ্যা ছিল ১৬০-এ। এখন সে সংখ্যা কমতে কমতে গত বছর এসে ঠেকেছে ৬৮ প্রজাতির পাখিতে। এর আগের বছর ৭০, তার আগের বছর ৭২ প্রজাতির পাখি দেখা গেছে। দিন দিন এ সংখ্যা কমে আসায় এটাই প্রমাণিত সত্য যে জলবায়ু ইফেক্টে পরেছে বাংলাদেশ। পরিযায়ী পাখির সংখ্যা না বাড়াতে পারলে জমির ফসল, নদীর মাছ দুই-ই দিন দিন কমে আসবে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বে বিপন্ন প্রজাতির তিনটি পাখির আবাসভূমি এই বাংলাদেশ। সেগুলো হলো- স্পুন বিল সেনপাইপারক, এশিয়াটিক ড উইচার্ড ও নড মেড গ্রিন সেঙ। এগুলোর সংখ্যাও দিন দিন কমে আসছে। দেশী ও পরিযায়ী সব পাখি সংরৰণের জন্যই আমরা নানা উৎসব ও পরিবেশ রৰার আন্দোলন করে যাচ্ছি। এর মাধ্যমে শিশুসহ সবাইকে সচেতন করে যাচ্ছি, যেন তাঁরা পাখি হত্যা ও পরিবেশ ধ্বংস না করে তা রৰায় সচেষ্ট হয়।
শুক্রবার এ উৎসবের উদ্বোধন করেন পরিবেশ ও বন সচিব ড. মিহির কানত্মি মজুমদার। আরও বক্তৃতা করেন পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. জাফর আহমেদ খান, উপকূলীয় ও জলভূমি জীববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প পরিচালক জাফর সিদ্দিক, আইপেকের চীফ ইব পার্টি রবার্ট টি উইন্টারবটম প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ।
এই পাখি বরণ উৎসবে শিশুদের পাখি বিষয়ক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এতে প্রায় এক শ' শিশু অংশ নেয়। এতে শিশুরা বাহারি রং ব্যবহার করে নানা পাখির ছবি অাঁকেন ক্যানভাসে। শিশু, নারী, পুরম্নষ সকলে বায়নোকুলার ও টেলিস্কোপ দিয়ে সামান্য যে ক'টা পাখি ছিল তাই-ই দেখেছেন এবং আরও দেখেছেন পরিযায়ী পাখির আলোকচিত্রের প্রদর্শনী। এ ছাড়া সারাৰণই চলেছে নাচ ও গানের অনুষ্ঠান। এতে শিল্পীরা গেয়ে শোনান গারে পাখি গা প্রাণ খুলে গা..., প্রজাপতিটা যখন তখন উড়ে উড়ে..., সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাসত্মেও তুমি... প্রভৃতি গান।
No comments