পাখির খাঁচায় আসছে পাকিসত্মানে তৈরি জাল বিদেশী মুদ্রা- দশ সিন্ডিকেটের সন্ধান, শীর্ষ নেতা গোয়েন্দা জালে by গাফফার খান চৌধুরী
পাখির খাঁচায় করে বাংলাদেশে উড়ে আসছে পাকিসত্মানের তৈরি জাল বৈদেশিক মুদ্রা। পাখি আমদানি রফতানির আড়ালে চলছে জাল মুদ্রা লেনদেন। এর সঙ্গে জড়িত দশটি সিন্ডিকেটের সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দারা।
সিন্ডিকেটের শীর্ষ নেতাও এখন গোয়েন্দাদের জালে। দলনেতাকে যেকোন সময় গ্রেফতার করা হবে। সিন্ডিকেটের সবাই চোরচালানের সঙ্গে জড়িত। রাজধানীর কাঁটাবনেই রয়েছে এদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। আর পুরো বিষয়টির সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশে বসবাসকারী কিছু পাকিসত্মানী নাগরিক। এ পর্যনত্ম জাল বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্গে জড়িত চারজন পাকিসত্মানী নাগরিককে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বাংলাদেশে বসবাসরত অনত্মত অর্ধশত পাকিসত্মানী জাল বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এদের অনত্মত ১০টি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। একেক সিন্ডিকেট একেক ধরনের চোরাচালান ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। থান কাপড়, ফেনসিডিল, হেরোইন, পিঁয়াজ, আদা, রসুন, শাড়ি, চাল, গরম্ন, মহিষ এমনকি মসলস্না চোরাচালানের জন্য আলাদা আলাদা সিন্ডিকেট কাজ করে। এসব চোরাচালান ব্যবসায় পাকিসত্মানে তৈরি জাল বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহার করা হয়। জাল মুদ্রা পাকিসত্মান থেকে বাংলাদেশে আনার কাজ করে থাকে বাংলাদেশে বসবাসরত কতিপয় পাকিসত্মানী নাগরিক। এরা একটি বিশেষ সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটটি এফআইসি (ফেইক ইন্ডিয়ান কারেন্সি) নামে পরিচিত। এটি সিন্ডিকেট কতর্ৃক দেয়া সাঙ্কেতিক নাম। জাল বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবসা থেকে আয়ের একটি বড় অংশ বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের উত্থানের পিছনে ব্যয় করা হচ্ছে বলে নিশ্চিত হয়েছে গোয়েন্দারা।
এফআইসি সিন্ডিকেটের সদস্যরা পশু পাখি আমদানি রফতানি ও চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। এফআইসি সিন্ডিকেটের কয়েকটি ইউনিট পশু পাখি আমদানি রফতানির আড়ালে জাল বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবসা করে। কাঁটাবনের পশু পাখির মার্কেটে সিন্ডিকেটটির একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সিন্ডিকেটটি পাশর্্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে পশু পাখি আমদানি-রফতানির পাশাপাশি চোরাচালান ব্যবসায় জড়িত। পাকিসত্মানের করাচীতে বিভিন্ন দেশের মুদ্রা তৈরি করা হয়। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই এসব জাল মুদ্রা পাচারের ট্রানজিট রম্নট হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমল থেকে বাংলাদেশের চোরাচালান ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ চলে যায় পাকিসত্মানীদের হাতে। পাকিসত্মান থেকে আসা পশু পাখির খাঁচা তৈরি করা হয় বিশেষ কায়দায়। এসব খাঁচায় বিশেষ বিশেষ কুঠুির থাকে। এসব কুঠুরিতে করেই পাকিসত্মান থেকে বাংলাদেশে উড়ে আসে জাল বৈদেশিক মুদ্রা। বেশি জাল মুদ্রা বাংলাদেশে আনতে অনেক সময় বড় পশু পাখি পাকিসত্মান থেকে এদেশে আনা হয়। কারণ বড় বড় পশু পাখি আনতে বড় বড় খাঁচার দরকার হয়। বড় বড় খাঁচা মানেই বেশি বেশি পাকিসত্মানের তৈরি জাল বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশে চলে আসা। পরে জাল বৈদেশিক মুদ্রা ভর্তি বাংলাদেশে আসা পশু পাখি খাঁচাসহ পাশর্্ববর্তী ভারত ও নেপালে পাঠানো হয়। বাংলাদেশে সক্রিয় অনেক পাকিসত্মানী চোরাচালান ব্যবসায়ী এফআইসি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জাল মুদ্রা সংগ্রহ করে।
গ্রেফতারকৃত জাহিদ হাসান বলেছে, বাংলাদেশে বসবাসরত পাকিসত্মানী অনেক নাগরিক চোরাচালান ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এরমধ্যে একেক জন একেক ধরনের চোরাচালান ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সে ২০০০ সালের শেষের দিকে এ ব্যবসায় জড়িত হয়। শুরম্ন থেকেই সে পশু পাখি আমদানি রফতানির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এসব পাখির খাঁচায় জাল মুদ্রা পাকিসত্মান থেকে আসে। সে পাখি রফতানির নামে পাখির খাঁচায় জাল ভারতীয় রম্নপী ভারতের কলকাতায় ও বেলেঘাটায় পাঠায়। কলকাতায় ওহিদ আহম্মেদ ও বেলেঘাটায় বাবু ঘোষের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে পাখি আমদানি রফতানির নামে সে জাল ভারতীয় রম্নপীর ব্যবসা করে আসছিল। আবুবক্কর নামে এক পাকিসত্মানী নাগরিক নীলফামারী থেকে এ ব্যবসা করছে বলেও সে স্বীকার করেছে।
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার গোলাম আজাদ খান জানান, গ্রেফতারকৃত জাহিদের কাছ থেকে ৩টি বাংলাদেশী পাসপোর্ট উদ্ধার হয়েছে। ভুয়া নাম ঠিকানায় এসব পাসপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। পাসপোর্ট অনুযায়ী জাহিদ এ পর্যনত্ম ২১ বার পাকিসত্মান ও ৭ বার ভারতে যাতায়াত করেছে। এফআইসি সিন্ডিকেটের রাজধানীর কাঁটাবন মার্কেটে একাধিক পশু পাখির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়াও তাদের রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। জাহিদ এফআইসি সিন্ডিকেটের একটি ইউনিটের প্রধান। এফআইসি সিন্ডিকেটের প্রধান নেতাও এখন গোয়েন্দাদের জালের মধ্যে। জাহিদের বেশ কয়েকজন সহযোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। সহযোগীরা সবাই পাকিসত্মানী নাগরিক। এরকম অনত্মত ১০টি চোরাচালান সিন্ডিকেট বাংলাদেশে সক্রিয় রয়েছে।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসের প্রথম দিকে রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে রম্নবিনা হোসেন নামে এক পাকিসত্মানী নাগরিককে গ্রেফতারে করে পুলিশ। এরপর গত ১৮ জানুয়ারি জাল বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসায়ী পাকিসত্মানী নাগরিক সাবি্বর ও দানিশ ও দানিশের স্ত্রী বাংলাদেশী নাগরিক ফাতেমা আক্তার পপিকে ১০ লাখ জাল ভারতীয় রম্নপীসহ গ্রেফতার করা হয়। বুধবার দিবাগত রাতে জাহিদ হাসান নামে এক পাকিসত্মানী নাগরিককে ৫০ হাজার ভারতীয় রম্নপীর জালনোটসহ গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
No comments