সেই ছাত্রলীগ এই ছাত্রলীগ by সৌমিত্র শেখর
২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের ছুটিতে বিকেলে বাসা থেকে বাইরে বের হতে গিয়ে প্রতিবেশী উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপকের সঙ্গে দেখা। এলোমেলো কেশ-বিন্যাসে তিনি ফিরছেন ফ্ল্যাটে। কুশল জিজ্ঞাসার প্রথমেই তিনি আমাকে জানালেন : জানে বেঁচে গেছেন আজ। তারপর সংক্ষেপে ঘটনার (দুর্ঘটনা?) বিবরণ দিলেন।
পরদিন সংবাদপত্রে দেখলাম, সেই ঘটনা নিয়ে সপ্তাহ না ঘুরতেই আবার আলোচনায় এসেছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ মানে 'বাংলাদেশ ছাত্রলীগ'_বর্তমান শাসক মহাজোট সরকারের প্রধান শরিক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন। অবশ্য 'অফিসিয়ালি' এ কথা বলা যাবে না যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। কারণ, আওয়ামী লীগ তাদের গঠনতন্ত্র থেকে এ সম্পর্ক-সূত্র ছিন্ন করেছে। কিন্তু কে না জানে, বাংলাদেশের কোন দলের ছাত্র সংগঠন কোনটি? বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন যে জন্মলগ্ন থেকে বলে আসছিল, তারা বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ছাত্র সংগঠন নয়, গণসংগঠন_কেউ কি তাদের কথা বিশ্বাস করেছে? করেনি তার কারণ, সিপিবি-ছাত্র ইউনিয়নের পারস্পরিক সম্পর্ক! জনগণকে এত বোকা ভাবা ঠিক নয়। তারা জানে কোন দলের সঙ্গে কোন দলের কতটুকু সম্পর্ক। কারণ, তারা বাজার থেকে রসুন কেনে। রাজনৈতিক বাজারের রসুনগুলো তারা চিনবে না? বলছিলাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কথা। ২২ ডিসেম্বর ২০১০ দেশের সবগুলো দৈনিকে সংবাদ বেরিয়েছে যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও খুলনা মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রলীগ সংঘর্ষ বাধিয়েছে, পরিণতিতে ক্লাস বন্ধ রাখা হয়েছে সেখানে। সংঘর্ষ চলাকালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক লাঠিপেটা খেয়ে অসহায়ভাবে বসে পড়েছেন রাস্তায়, কালের কণ্ঠে সে ছবি ছাপা হয়েছে। আমি জানি না, সে ছবি দেখে কারো মনে কোনো প্রশ্ন জেগেছে কি না। এর এক সপ্তাহ পেরোয়নি_২৬ ডিসেম্বর পত্রিকায় আবার ছাত্রলীগ-প্রসঙ্গ। কালের কণ্ঠ শিরোনাম করেছে : 'জাবিতে উপাচার্যের সামনেই ঢাবির খেলোয়াড়দের পেটাল ছাত্রলীগ : চার শিক্ষক লাঞ্ছিত'। উল্লেখ্য, চারজন শিক্ষকের নামের তালিকায় আমার সজ্জন প্রতিবেশী উদ্ভিদবিদ্যার সেই অধ্যাপকের নামও ছিল। সংবাদ পড়ে জানা গেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল দল ফাইনাল খেলতে গিয়েছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিপক্ষের দলও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য, প্রথমে গোল খেয়ে ফেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল দল। সংবাদপত্রের খবর এ রকম : 'খেলার প্রথমার্ধে ঢাবি এক গোলে এগিয়ে যায়। ঢাবির খেলোয়ার ও দর্শকদের একাংশ উল্লাস করতে থাকলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে জাবি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে দ্বিতীয়ার্ধের তিন মিনিটের মাথায় জাবি গোল পরিশোধ করে খেলায় সমতা আনে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ছাত্রলীগ ক্যাডাররা ও বেশ কিছু দর্শক মাঠের মধ্যে প্রবেশ করে ঢাবির খেলোয়াড়দের মারধর করতে শুরু করে। এ সময় জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির উপস্থিত ছিলেন। প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরাও ছিলেন নীরব দর্শক।' শুধু তাই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল দল গাড়িতে করে চলে আসার সময়ও রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে তাদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়েছে ছাত্রলীগের কর্মীরা। কী ভয়াবহ! ছাত্রলীগের হাত থেকে কি তাহলে নিস্তার নেই? ছাত্রলীগ পেটাবে বিরোধী দলের কর্মীদের, সাধারণ ছাত্রদের, লাঞ্ছিত করবে (এ কি শারীরিক অত্যাচারের চেয়ে কম?) শিক্ষকদের এবং অনেক সময় নিজেরাই নিজেদের মারবে। শুধু মারবে না, হত্যা করবে! ছাত্রলীগ কিছু দিন আগেই তো সেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের কর্মীদের হলের ছাদ বা ব্যালকনি থেকে কতটা নির্মমভাবে ফেলে দিয়েছিল নিচে! সংবাদপত্রে, টেলিভিশনে সে ছবি দেখে মানুষ আতঙ্কিত হয়েছে। এ রকম ঘটনায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি কাউকে কাউকে বহিষ্কার করে বা কমিটি বিলুপ্ত করে। কিন্তু এসব 'বহিষ্কার' বা 'বিলুপ্তি'তে এরা দমবার পাত্র নয়। আজকের ছাত্রলীগ মানেই জনগণের মনে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা! অথচ ছাত্রলীগ হলো বাংলাদেশের ইতিহাস সৃষ্টির নেতৃত্বদানকারী ছাত্র সংগঠন, সোনালি এর অতীত।
১৯৪৮ সালে বাংলাভাষার প্রশ্নে স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে বাঙালি ছাত্রদের প্রাণের সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগের অভ্যুদয়। তারপর থেকে ইতিবাচক সব ধরনের রাজনৈতিক সংগ্রামেই ছাত্রলীগ সক্রিয় ভূমিকায়ই শুধু নয়, নেতৃত্বে ছিল। ১৯৫২ সালে ছাত্র ইউনিয়ন গঠিত হলে বলা হয়, মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দিয়েছে। কিন্তু পরাধীন দেশে সাহস দেখিয়ে যে ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করার প্রয়োজন হয়েছিল, সেই যুগোপযোগী কর্মসূচি নিতে বা ছাত্রসমাজের সামনে তা উপস্থাপন করতে ছাত্র ইউনিয়ন বা তথাকথিত মেধাবীদের ছাত্র সংগঠনের চেয়ে যে ছাত্রলীগই অগ্রগামী ছিল, ইতিহাস তার সাক্ষী। এ কারণে ইতিহাস গড়েছে ছাত্রলীগ আর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও স্বীকার করেছেন তাঁর নিজের জীবনে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে রাজনৈতিক অর্জন ও শিক্ষার কথা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অনেক বক্তৃতায় তাঁর জীবনে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া ও ছাত্র-আন্দোলনে যোগদান করার স্মৃতিচারণা করেছেন। স্বাধীনতা-উত্তরকালে পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর নতুন করে ছাত্র-আন্দোলন আরম্ভ হলে, বিশেষ করে বিগত শতকের আশির দশকে জেনারেল এরশাদ-বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগ প্রধান ভূমিকা রেখেছে। এ সময় একাধিকবার ছাত্রলীগ থেকে গুরুত্বপূর্ণ নেতারা প্রচুরসংখ্যক কর্মী নিয়ে বেরিয়ে গিয়ে অন্য সংগঠন করেছেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুর্বল হয়নি ছাত্রলীগ। কারণ, তখন সৎ ও সাহসী নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছে এই ছাত্র সংগঠনটি। সে সময় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ছাত্র সংগঠনগুলো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। কিন্তু প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই ছাত্রলীগকে ভিপি বা জিএস (অনেক প্রতিষ্ঠানে দুটোই) পদ দিতে হয়েছে বাধ্য হয়ে। কারণ, সংগঠন ও নেতৃত্বের বিচারে ছাত্রলীগ ছিল প্রকৃত অর্থেই প্রধান ছাত্র সংগঠন। এ প্রসঙ্গে ডাকসুর সুলতান-মোশতাক বা জাকসুর শামীম-শাহীন বিজয়ী পরিষদের কথা স্মরণে আনা যায়। সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও এনামুল হক শামীম দুজনে পরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিও হয়েছিলেন। পাকিস্তান আমলে তো বটেই, স্বাধীন বাংলাদেশেও এই ছাত্রলীগ থেকেই জাতীয় রাজনীতিতে আগমন করেছেন অনেক নেতা। ছাত্রলীগ ছিল তাঁদের জীবনে রাজনীতির পাঠশালা। এই পাঠশালাকে আজকের কতিপয় নেতা-কর্মীর সন্ত্রাসী কর্মে বা যথেচ্ছাচারের তুফানে ভেঙে যেতে দিলে তা জাতীয় বিপর্যয় হিসেবে দেখা দিতে পারে।
জাতীয় বিপর্যয় কেন? কারণ, ছাত্র নেতৃত্ব থেকে রাজনীতিতে জাতীয় নেতৃত্ব সৃষ্টি না হলে সেই শূন্যস্থানের সুযোগে এগিয়ে আসবে অবসরপ্রাপ্ত আমলা আর সশস্ত্র বাহিনীর লোকজন। রাজনীতিতে অবসরপ্রাপ্তদের সংখ্যাধিক্য মানেই অর্ধমৃত গণতন্ত্র। কয়েকজন ছাত্রনেতা গত ২০ বছরে আমাদের জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন? সংখ্যাটা পাকিস্তান আমল বা স্বাধীনতার কয়েক বছর পরের তুলনায় সত্যি হতাশাজনক। এখন অন্যান্য ছাত্র সংগঠনও মহাদুর্বল। সেসব ছাত্র সংগঠন থেকেও তাদের জাতীয় দলে তেমন নেতার আগমন ঘটছে না। তার অর্থ স্বাধীনতার পক্ষের হাতেগোনা কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের মধ্যে ছাত্রলীগই এখন (অবশ্য আগেও) প্রধান ছাত্র সংগঠন। জাতীয় রাজনীতিতে ত্যাগী নেতা আগমনের পথ নির্মাণ করার দায়িত্বও তাদের। ছাত্রলীগকে বুঝতে হবে, ইতিহাসের দায় বড় কঠিন। সন্তান জন্ম দিয়ে যেমন তাকে হত্যা করা যায় না, তেমনি ইতিহাস সৃষ্টি করে তা ধ্বংস করা যায় না। তাহলে কেন ছাত্রলীগ নিজেদের সুবর্ণ ইতিহাসকে ক্ষতবিক্ষত করছে? কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল দলকে পেটালে বা তাদের প্রতি ইট ছুড়ে মারলেই বীরত্ব প্রকাশ হয় না; বরং তা বর্বরোচিত, কাপুরুষোচিত এবং ছাত্রলীগের কর্মীদের জন্য তা লজ্জার। ছাত্রলীগে শিক্ষকদের সম্মান করার ইতিহাস আছে, লাঞ্ছনার ইতিহাস নেই। যারা এসব অপকর্ম করে তারা ছাত্রলীগের ইতিহাসই জানে না অথবা জেনেশুনেই ছাত্রলীগকে ডুবাচ্ছে। এই ছাত্রলীগ কি সেই ছাত্রলীগকে ডুবাবে সত্যি? একেবারে ডুবিয়ে দেবে?
লেখক : অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
scpcdu@gmail.com
১৯৪৮ সালে বাংলাভাষার প্রশ্নে স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে বাঙালি ছাত্রদের প্রাণের সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগের অভ্যুদয়। তারপর থেকে ইতিবাচক সব ধরনের রাজনৈতিক সংগ্রামেই ছাত্রলীগ সক্রিয় ভূমিকায়ই শুধু নয়, নেতৃত্বে ছিল। ১৯৫২ সালে ছাত্র ইউনিয়ন গঠিত হলে বলা হয়, মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দিয়েছে। কিন্তু পরাধীন দেশে সাহস দেখিয়ে যে ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করার প্রয়োজন হয়েছিল, সেই যুগোপযোগী কর্মসূচি নিতে বা ছাত্রসমাজের সামনে তা উপস্থাপন করতে ছাত্র ইউনিয়ন বা তথাকথিত মেধাবীদের ছাত্র সংগঠনের চেয়ে যে ছাত্রলীগই অগ্রগামী ছিল, ইতিহাস তার সাক্ষী। এ কারণে ইতিহাস গড়েছে ছাত্রলীগ আর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও স্বীকার করেছেন তাঁর নিজের জীবনে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে রাজনৈতিক অর্জন ও শিক্ষার কথা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অনেক বক্তৃতায় তাঁর জীবনে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া ও ছাত্র-আন্দোলনে যোগদান করার স্মৃতিচারণা করেছেন। স্বাধীনতা-উত্তরকালে পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর নতুন করে ছাত্র-আন্দোলন আরম্ভ হলে, বিশেষ করে বিগত শতকের আশির দশকে জেনারেল এরশাদ-বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগ প্রধান ভূমিকা রেখেছে। এ সময় একাধিকবার ছাত্রলীগ থেকে গুরুত্বপূর্ণ নেতারা প্রচুরসংখ্যক কর্মী নিয়ে বেরিয়ে গিয়ে অন্য সংগঠন করেছেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুর্বল হয়নি ছাত্রলীগ। কারণ, তখন সৎ ও সাহসী নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছে এই ছাত্র সংগঠনটি। সে সময় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ছাত্র সংগঠনগুলো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। কিন্তু প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই ছাত্রলীগকে ভিপি বা জিএস (অনেক প্রতিষ্ঠানে দুটোই) পদ দিতে হয়েছে বাধ্য হয়ে। কারণ, সংগঠন ও নেতৃত্বের বিচারে ছাত্রলীগ ছিল প্রকৃত অর্থেই প্রধান ছাত্র সংগঠন। এ প্রসঙ্গে ডাকসুর সুলতান-মোশতাক বা জাকসুর শামীম-শাহীন বিজয়ী পরিষদের কথা স্মরণে আনা যায়। সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও এনামুল হক শামীম দুজনে পরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিও হয়েছিলেন। পাকিস্তান আমলে তো বটেই, স্বাধীন বাংলাদেশেও এই ছাত্রলীগ থেকেই জাতীয় রাজনীতিতে আগমন করেছেন অনেক নেতা। ছাত্রলীগ ছিল তাঁদের জীবনে রাজনীতির পাঠশালা। এই পাঠশালাকে আজকের কতিপয় নেতা-কর্মীর সন্ত্রাসী কর্মে বা যথেচ্ছাচারের তুফানে ভেঙে যেতে দিলে তা জাতীয় বিপর্যয় হিসেবে দেখা দিতে পারে।
জাতীয় বিপর্যয় কেন? কারণ, ছাত্র নেতৃত্ব থেকে রাজনীতিতে জাতীয় নেতৃত্ব সৃষ্টি না হলে সেই শূন্যস্থানের সুযোগে এগিয়ে আসবে অবসরপ্রাপ্ত আমলা আর সশস্ত্র বাহিনীর লোকজন। রাজনীতিতে অবসরপ্রাপ্তদের সংখ্যাধিক্য মানেই অর্ধমৃত গণতন্ত্র। কয়েকজন ছাত্রনেতা গত ২০ বছরে আমাদের জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন? সংখ্যাটা পাকিস্তান আমল বা স্বাধীনতার কয়েক বছর পরের তুলনায় সত্যি হতাশাজনক। এখন অন্যান্য ছাত্র সংগঠনও মহাদুর্বল। সেসব ছাত্র সংগঠন থেকেও তাদের জাতীয় দলে তেমন নেতার আগমন ঘটছে না। তার অর্থ স্বাধীনতার পক্ষের হাতেগোনা কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের মধ্যে ছাত্রলীগই এখন (অবশ্য আগেও) প্রধান ছাত্র সংগঠন। জাতীয় রাজনীতিতে ত্যাগী নেতা আগমনের পথ নির্মাণ করার দায়িত্বও তাদের। ছাত্রলীগকে বুঝতে হবে, ইতিহাসের দায় বড় কঠিন। সন্তান জন্ম দিয়ে যেমন তাকে হত্যা করা যায় না, তেমনি ইতিহাস সৃষ্টি করে তা ধ্বংস করা যায় না। তাহলে কেন ছাত্রলীগ নিজেদের সুবর্ণ ইতিহাসকে ক্ষতবিক্ষত করছে? কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল দলকে পেটালে বা তাদের প্রতি ইট ছুড়ে মারলেই বীরত্ব প্রকাশ হয় না; বরং তা বর্বরোচিত, কাপুরুষোচিত এবং ছাত্রলীগের কর্মীদের জন্য তা লজ্জার। ছাত্রলীগে শিক্ষকদের সম্মান করার ইতিহাস আছে, লাঞ্ছনার ইতিহাস নেই। যারা এসব অপকর্ম করে তারা ছাত্রলীগের ইতিহাসই জানে না অথবা জেনেশুনেই ছাত্রলীগকে ডুবাচ্ছে। এই ছাত্রলীগ কি সেই ছাত্রলীগকে ডুবাবে সত্যি? একেবারে ডুবিয়ে দেবে?
লেখক : অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
scpcdu@gmail.com
No comments