নারীনীতি-২০১১- প্রত্যাশা কতটা পূরণ হলো
বহু প্রতীক্ষার পর ৭ মার্চ জাতীয় নারী উন্নয়ন
নীতি-২০১১ মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদন করা
হয়েছে।
নীতি-২০১১ মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদন করা
হয়েছে।
নতুন নীতিতে উত্তরাধিকার সম্পদে
নারী পুরুষের সমঅধিকার নয়, নারীর অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে অর্জিত সম্পত্তির ওপর সম্পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠার বিধান রাখা হয়েছে। কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে শিগগির এ নীতি কার্যকর করা হবে। নারীনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাক্ষাৎকারভিত্তিক প্রতিবেদনটি
লিখেছেন কনিকা হকডা. মালেকা বানু
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ
অনেক দিনের অপেক্ষার অবসান হলো। ২০০৪ এবং ২০০৮ সালে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিতে আমাদের দাবির বিষয়গুলো বিশেষ করে সম্পত্তির সমান অধিকার বিষয়টি উল্লেখ ছিল না। তারপরও মৌলবাদী গোষ্ঠীর সহিংস প্রতিবাদের মুখে ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দু'জন উপদেষ্টার প্রভাবে আইনটি আর এগোয়নি। সে অর্থে এতদিন কোনো নারী নীতি ছিলই না। পারিবারিক সহিংসতা বন্ধে আইন, ফতোয়ার বিরুদ্ধে আইন, ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটির আইন পাস হয়েছে। কিন্তু নারীর ক্ষমতায়নের জন্য জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি পাস হওয়া ছিল খুব জরুরি বিষয় । দীর্ঘদিন ধরে আমরা নারীনীতির দাবি জানিয়ে আসছিলাম। কাজেই নারী উন্নয়ন নীতি অনুমোদন হওয়ায় আমরা অবশ্যই খুশি। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন নারী সংগঠনের সুপারিশ যেমন আদিবাসী নারী, প্রতিবন্ধী নারী, কৃষক নারীদের উন্নয়নের সুপারিশসহ প্রযুক্তিতে নারীর উন্নয়নের দাবিও জোরালোভাবে ছিল। অনুমোদিত নীতিতে তার প্রতিফলন আমরা দেখছি। কিন্তু নারীর ক্ষমতায়নে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে অর্থনৈতিক ক্ষমতা অর্জন। সেজন্য অর্জিত এবং উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকারের বিষয়টি আমাদের অন্যতম দাবি ছিল। অনুমোদিত নীতিতে উপার্জিত সম্পত্তিতে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে সমঅধিকারের কথাটি স্পষ্ট নয়। তবে বৈষম্যমূলক আইন পরিবর্তন করা হবে_ এমনটা আশ্বাস দিয়েছেন নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শিরিন শারমীন চৌধুরী। কাজেই আমাদের আশা, জাতীয় সংসদে এই নীতিমালা পাস হওয়ার আগে সব বৈষম্য দূর হবে। নারী উন্নয়নে প্রকৃত অর্থে একটি জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা আমরা পাব।
আনু মুহাম্মদ
অধ্যাপক এবং অর্থনীতিবিদ
জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়েছে, এটি সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ। তবে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে সমান অধিকারে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়, এ বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া জরুরি। দ্বিতীয়ত, উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে সমান অধিকার প্রশ্নে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া উচিত নয় এবং কোনো রকম কম্প্রোমাইজ করাও উচিত হবে না। এর আগেও ইসলামপন্থিরা এই নীতিটির বিরোধিতা করেছে। কিন্তু তখন নারীনীতিতে অর্জিত সম্পত্তিতে নারীর অধিকারের কথা বলা ছিল উত্তরাধিকার সম্পত্তির বিষয়টি উল্লেখ ছিল না। এবার বিষয়টি খুব স্পষ্ট নয়। বিষয়টি উল্লেখ করে সরকারের উচিত জনসাধারণকে জানানো।
সম্পত্তিতে সমান অধিকার প্রশ্নে শুধু ইসলামপন্থি নয়, অনেক শিক্ষিত-প্রগতিশীল পুরুষও এর বিরোধিতা করেন। ইসলামপন্থিদের বিরোধিতায় তারা এক ধরনের আনন্দ পান। অধিকাংশ পুরুষের আতঙ্ক, এত দিন তারা যে সুবিধা পেয়ে আসছিলেন তা থেকে বঞ্চিত হবেন। তারা তাদের অধিকার হারাবেন। কিন্তু তারা যদি বিষয়টি এভাবে দেখেন, তার কন্যা, বোন_ এরা লাভবান হচ্ছে তাতে তো সবারই লাভ।
তথাকথিত ইসলামপন্থিদের জন্য আমার বক্তব্য হচ্ছে, তারা যে কথায় কথায় কোরআন-হাদিসের রেফারেন্স দেন তাদের অধিকাংশই কোরআন- হাদিস অনুসরণ করেন না। কোরআন-হাদিসে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে মেয়েরা সমান অধিকার পাবে না এমন কথা বলা হয়নি। আগে পুরুষরা উপার্জন করত, এখন মেয়েরাও উপার্জন করে। বরং ঘরে-বাইরে মিলিয়ে মেয়েরাই বেশি কাজ করে। সময়ের পরিবর্তন হয়েছে। নারী-পুরুষ যার যে রকম কন্ট্রিবিউশন
সে সে রকম পাবে।
যত বিরোধিতাই আসুক সম্পত্তিতে সমান অধিকার বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে দ্রুত আইনটি পাস করা হোক এটাই প্রত্যাশা।
সালমা খান
বিশিষ্ট নারী নেত্রী
জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১ অনুমোদন করে সরকার একটি প্রশংসনীয় কাজ করল। তবে খুব দ্রুত নীতিমালাটি আইনে পরিণত করা দরকার। কারণ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নারী যখন আদালতে যাবে তখন নীতিমালা গুরুত্ব পাবে না। পূর্ববর্তী আইন কী বলে তা গুরুত্ব পাবে। সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা আছে। নীতিমালায় তার প্রতিফলন ঘটেছে তবে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারীর সমঅধিকার বিষয়টি ষ্পষ্ট নয়। এ বিষয়টি স্পষ্ট অর্থাৎ সমান অধিকারের কথা উল্লেখ করে আইন পাস করা হোক এটি নারী সমাজের দাবি। এক শ্রেণীর মৌলবাদী এখই নীতির বিরোধিতা শুরু করে দিয়েছে। হরতালও ডেকেছে । এদের হুমকির কাছে সরকার যেন পিছিয়ে না পড়ে সেই দাবি জানাচ্ছি।
নারী পুরুষের সমঅধিকার নয়, নারীর অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে অর্জিত সম্পত্তির ওপর সম্পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠার বিধান রাখা হয়েছে। কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে শিগগির এ নীতি কার্যকর করা হবে। নারীনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাক্ষাৎকারভিত্তিক প্রতিবেদনটি
লিখেছেন কনিকা হকডা. মালেকা বানু
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ
অনেক দিনের অপেক্ষার অবসান হলো। ২০০৪ এবং ২০০৮ সালে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিতে আমাদের দাবির বিষয়গুলো বিশেষ করে সম্পত্তির সমান অধিকার বিষয়টি উল্লেখ ছিল না। তারপরও মৌলবাদী গোষ্ঠীর সহিংস প্রতিবাদের মুখে ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দু'জন উপদেষ্টার প্রভাবে আইনটি আর এগোয়নি। সে অর্থে এতদিন কোনো নারী নীতি ছিলই না। পারিবারিক সহিংসতা বন্ধে আইন, ফতোয়ার বিরুদ্ধে আইন, ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটির আইন পাস হয়েছে। কিন্তু নারীর ক্ষমতায়নের জন্য জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি পাস হওয়া ছিল খুব জরুরি বিষয় । দীর্ঘদিন ধরে আমরা নারীনীতির দাবি জানিয়ে আসছিলাম। কাজেই নারী উন্নয়ন নীতি অনুমোদন হওয়ায় আমরা অবশ্যই খুশি। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন নারী সংগঠনের সুপারিশ যেমন আদিবাসী নারী, প্রতিবন্ধী নারী, কৃষক নারীদের উন্নয়নের সুপারিশসহ প্রযুক্তিতে নারীর উন্নয়নের দাবিও জোরালোভাবে ছিল। অনুমোদিত নীতিতে তার প্রতিফলন আমরা দেখছি। কিন্তু নারীর ক্ষমতায়নে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে অর্থনৈতিক ক্ষমতা অর্জন। সেজন্য অর্জিত এবং উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকারের বিষয়টি আমাদের অন্যতম দাবি ছিল। অনুমোদিত নীতিতে উপার্জিত সম্পত্তিতে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে সমঅধিকারের কথাটি স্পষ্ট নয়। তবে বৈষম্যমূলক আইন পরিবর্তন করা হবে_ এমনটা আশ্বাস দিয়েছেন নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শিরিন শারমীন চৌধুরী। কাজেই আমাদের আশা, জাতীয় সংসদে এই নীতিমালা পাস হওয়ার আগে সব বৈষম্য দূর হবে। নারী উন্নয়নে প্রকৃত অর্থে একটি জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা আমরা পাব।
আনু মুহাম্মদ
অধ্যাপক এবং অর্থনীতিবিদ
জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়েছে, এটি সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ। তবে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে সমান অধিকারে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়, এ বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া জরুরি। দ্বিতীয়ত, উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে সমান অধিকার প্রশ্নে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া উচিত নয় এবং কোনো রকম কম্প্রোমাইজ করাও উচিত হবে না। এর আগেও ইসলামপন্থিরা এই নীতিটির বিরোধিতা করেছে। কিন্তু তখন নারীনীতিতে অর্জিত সম্পত্তিতে নারীর অধিকারের কথা বলা ছিল উত্তরাধিকার সম্পত্তির বিষয়টি উল্লেখ ছিল না। এবার বিষয়টি খুব স্পষ্ট নয়। বিষয়টি উল্লেখ করে সরকারের উচিত জনসাধারণকে জানানো।
সম্পত্তিতে সমান অধিকার প্রশ্নে শুধু ইসলামপন্থি নয়, অনেক শিক্ষিত-প্রগতিশীল পুরুষও এর বিরোধিতা করেন। ইসলামপন্থিদের বিরোধিতায় তারা এক ধরনের আনন্দ পান। অধিকাংশ পুরুষের আতঙ্ক, এত দিন তারা যে সুবিধা পেয়ে আসছিলেন তা থেকে বঞ্চিত হবেন। তারা তাদের অধিকার হারাবেন। কিন্তু তারা যদি বিষয়টি এভাবে দেখেন, তার কন্যা, বোন_ এরা লাভবান হচ্ছে তাতে তো সবারই লাভ।
তথাকথিত ইসলামপন্থিদের জন্য আমার বক্তব্য হচ্ছে, তারা যে কথায় কথায় কোরআন-হাদিসের রেফারেন্স দেন তাদের অধিকাংশই কোরআন- হাদিস অনুসরণ করেন না। কোরআন-হাদিসে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে মেয়েরা সমান অধিকার পাবে না এমন কথা বলা হয়নি। আগে পুরুষরা উপার্জন করত, এখন মেয়েরাও উপার্জন করে। বরং ঘরে-বাইরে মিলিয়ে মেয়েরাই বেশি কাজ করে। সময়ের পরিবর্তন হয়েছে। নারী-পুরুষ যার যে রকম কন্ট্রিবিউশন
সে সে রকম পাবে।
যত বিরোধিতাই আসুক সম্পত্তিতে সমান অধিকার বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে দ্রুত আইনটি পাস করা হোক এটাই প্রত্যাশা।
সালমা খান
বিশিষ্ট নারী নেত্রী
জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১ অনুমোদন করে সরকার একটি প্রশংসনীয় কাজ করল। তবে খুব দ্রুত নীতিমালাটি আইনে পরিণত করা দরকার। কারণ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নারী যখন আদালতে যাবে তখন নীতিমালা গুরুত্ব পাবে না। পূর্ববর্তী আইন কী বলে তা গুরুত্ব পাবে। সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা আছে। নীতিমালায় তার প্রতিফলন ঘটেছে তবে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারীর সমঅধিকার বিষয়টি ষ্পষ্ট নয়। এ বিষয়টি স্পষ্ট অর্থাৎ সমান অধিকারের কথা উল্লেখ করে আইন পাস করা হোক এটি নারী সমাজের দাবি। এক শ্রেণীর মৌলবাদী এখই নীতির বিরোধিতা শুরু করে দিয়েছে। হরতালও ডেকেছে । এদের হুমকির কাছে সরকার যেন পিছিয়ে না পড়ে সেই দাবি জানাচ্ছি।
No comments