বন্ধুত্ব হোক মায়ের সঙ্গে by মেহেরুন নেছা রুমা
সন্তান জন্ম দেওয়ার পর মেয়েরা নারীত্বের পূর্ণতা পায়। মা হওয়ার গৌরব অর্জন করে। পৃথিবীতে মানবশিশুই জন্মের পর থেকে অন্যের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে একটু একটু করে বড় হয়ে একদিন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে।
তার এই পরিপূর্ণ মানুষ হওয়ার পেছনে একজন মায়ের যে অবদান তা আর অন্য কারও নেই। মিসেস শিলা এ কথাটি এখন তার একমাত্র মেয়ে হিমিকাকে বোঝাতে গিয়ে যেন কেবলই ব্যর্থ হচ্ছেন। তিনি ভেবে পান না এখন তার মেয়ের সঙ্গে কীভাবে ব্যবহার করা উচিত। হিমিকার কাছে এখন মায়ের কোনো কথাই গ্রহণযোগ্য মনে হয় না। একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী হিমিকা ইতিমধ্যেই নিজেকে আত্মনির্ভরশীল ভাবতে শুরু করেছে। জীবনের যে কোনো সিদ্ধান্ত এখন সে নিজেই নেওয়ার সামর্থ্য রাখে, এমনটিই তার ভাষ্য। মায়ের উপদেশ এখন তার কাছে অযথা সংলাপের মতো মনে হয়। কোথায় যায়, কী করে এসব বিষয় মাকে জানানো মনে করে ছেলেমানুষি। কথায় কথায় বলে, 'এখন আমি বড় হয়েছি। আমার ভালো আমিই বুঝতে পারি।' মা নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। এ বয়সটা তো তিনি নিজেও পেরিয়ে এসেছেন। এ সময়টা সব ছেলেমেয়ের কাছেই একটু আলাদা মনে হয়। সবকিছুই তাদের কাছে ভালো লাগে, আবার কোনো কিছুই ভালো লাগে না। বন্ধু-বান্ধব, আড্ডা, মোবাইল ফোনে রাত জেগে আলাপন আর বর্তমান প্রযুক্তির বদৌলতে ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগের নামে প্রযুক্তির অপব্যবহার আজকালকার ছেলেমেয়েদের যেন একটু বেশিই স্বাধীন আর সাহসী করে তুলেছে। হিমিকারও অবস্থা এখন সে রকম। বাবা-মাকে মোবাইল ফোন কিনে দেওয়ার জন্য অনেক পীড়াপীড়ি করার পরও তারা যখন দিচ্ছিলেন না, তখন সে নিজেই উপবৃত্তির টাকা দিয়ে মোবাইল ফোন কিনে এনেছে। মাকে বলারও প্রয়োজন মনে করেনি। অনেক পীড়াপীড়ি করে ঘরে ইন্টারনেটের কানেকশন নিয়েছে। বাবা-মায়ের উপস্থিতি আর তত্ত্বাবধানেই সে ইন্টারনেট ব্যবহার করার পারমিশন পায়। এ নিয়ে বাবা-মায়ের ওপর তার ক্ষোভের শেষ নেই। সে প্রায়ই বলে, সহপাঠীদের মতো তাকে কেন সবকিছু স্বাধীনভাবে করতে দেওয়া হয় না। মেয়ে বড় হলে তার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে মায়েরাই পারেন মেয়েকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে। এ ক্ষেত্রে মেয়েদেরও মাকে সহযোগিতা করতে হবে। প্রতিদিনের ছোট-বড় বিষয়গুলো যদি মায়ের সঙ্গে শেয়ার করে তাহলে বড় রকমের সমস্যাগুলোও সে সহজেই এড়াতে পারে। মাকে তার সব কাজের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী না ভেবে বরং বন্ধু ভেবে তার সঙ্গে সব বিষয় শেয়ার করলে মেয়েরা অনেকাংশেই নিজেকে ভারমুক্ত রাখতে পারে। মিসেস শিলা এসবই জানেন এবং বোঝেন। কিন্তু হিমিকা কোনো কিছুই বুঝতে নারাজ। তার মতে, মা তার সব কাজে হস্তক্ষেপ করছেন। শিলা মেয়ের সঙ্গে নিজেকে বন্ধুর মতো উপস্থাপন করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু ভালো কথা বলতে গেলেও রেগে যাওয়া, কান্নাকাটি করে সামান্য বিষয়কে বড় করে তোলা যেন হিমিকার স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশি কিছু বলতে গেলে ঘরের দরজা বন্ধ করে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখে। এসব নিয়ে মিসেস শিলা বড়ই দুশ্চিন্তায় দিনযাপন করছেন। অথচ হিমিকার বিশ্বাস মা কিছুই বোঝেন না। দুনিয়া সম্পর্কে তার যতটুকু জ্ঞান, তাতেই সে নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করে। কিন্তু নিজের সুখ-সমৃদ্ধির কথা না ভেবে মা সন্তানের কথা ভাবেন_ সে কথা মেয়েরা মা হলেই বুঝতে পারে। যখন বোঝে তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। কিন্তু মাকে অভিমানি হলে চলবে না। মেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তাকেই গড়ে তুলতে হবে।
No comments