কালের যাত্রা by পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়
শুরুতেই ইংরেজি নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাই। দেখতে দেখতে বর্তমান সরকারের দুই বছর পেরিয়ে গেল। হানিমুন পিরিয়ড শেষ। এবার কাউন্টডাউন শুরু। কী পেয়েছি, আর কী পাইনি, তার হিসাব মেলাতে আনন্দ-নিরানন্দের মিশ্র অনুভূতি হয়। তবে হতাশ হই না।
আশাবাদী মানুষ হিসেবে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আশা ধরে রাখতে চাই। গত দুই বছরে পেয়েছি ঢের। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এবং রায় কার্যকর তো অসাধারণ প্রাপ্তি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করাও গত দুই বছরের অন্যতম ঘটনা। তা ছাড়া জলবায়ু, দারিদ্র্য বিমোচন, জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রম, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্কের ভিত্তিতে যূথবদ্ধ উন্নয়নে সহযাত্রী হওয়া, দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে নেতৃত্ব দেওয়া ইত্যাদি আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ ভূমিকা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। দেশাভ্যন্তরে মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন, অবাধ তথ্য প্রবাহের নিশ্চয়তা, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী বাতিল করা, পদ্মা সেতু নির্মাণের কার্যকর পদক্ষেপ, চালের দাম কমিয়ে আনা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বৃদ্ধি প্রভৃতির মাধ্যমে বর্তমান সরকারের ইতিবাচক ভূমিকার কথা বলতেই হয়।
এসবের জন্য আমার বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই একমাত্র কৃতিত্বের দাবিদার। ১/১১-এর সংকট, ষড়যন্ত্র, নির্যাতন এবং বৈরিতার জাল ছিন্ন করে এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন যারপরনাই আত্মবিশ্বাসী। সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়নে তাঁর দ্রুত গতিশীলতার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতা অনেক মন্ত্রীরই নেই। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে নবীন মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকেন বলে শুনেছি। এটা একদিক দিয়ে অবশ্য ভালো। তাতে অন্তত উল্টাপাল্টা কিছু করার ভয় থাকে। বোধ হয় এ কারণেই দু-একটি ঘটনা ছাড়া মন্ত্রীদের নৈতিকতা বিষয়ে খুব বেশি নেতিবাচক খবর গণমাধ্যমে আসেনি। তবে কি তারা ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির! তা বোধ হয় নয়। কে জানে! খোঁজ নিলে নিশ্চয় কিছু না কিছু জানা যাবে।
তিন দিন পর বর্তমান সরকারের দুই বছর পূর্তি হবে। এ উপলক্ষে অনেক ফুর্তিও হবে। দৈনিক পত্রিকাগুলোয় বিশেষ ক্রোড়পত্র ছাপা হবে, বিটিভিতে সাফল্যগাথা নিয়ে অনেক রকমের অনুষ্ঠান প্রচার হবে, বেসরকারি টেলিভিশনগুলোয় টক-শো হবে, আইয়ুবি আমলের 'চিত্রে পাকিস্তানি খবর' স্টাইলে সরকারি সাফল্যের তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হবে। এটা হবে, সেটা হবে, অনেক কিছুই হবে। তবে এ ধরনের গতানুগতিক আনুষ্ঠানিকতায় সরকারের দুই বছরের সাফল্য বা ইতিবাচক ভূমিকা তৃণমূল জনগোষ্ঠীর কাছে কতটুকু পেঁৗছাবে সে ব্যাপারে সন্দেহ হয় বৈকি। সরকারের সঙ্গে পার্টির এবং পার্টির সঙ্গে তৃণমূল মানুষের দূরত্ব অনুধাবন করেই এ রকম অশুভ আশঙ্কা মনে আসে।
আওয়ামী লীগের মতো পার্টি যদি কাজের ক্ষেত্রে প্রশাসননির্ভর হয়ে পড়ে, তবে তো দিনবদলের অঙ্গীকার সাফল্যের মুখ দেখবে না। আওয়ামী লীগ তৃণমূল মানুষের পার্টি। বঙ্গবন্ধু সেই আদলেই পার্টিকে সুসংহত করেছিলেন।
তাই আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতার সুখ-দুঃখ তৃণমূল মানুষকে সঙ্গে নিয়েই ভাগাভাগি করে ভোগ করতে হবে। আর সে জন্য গতানুগতিক পদ্ধতির বাইরে গিয়ে আধুনিকমনস্কতা এবং জনসম্পৃক্ততার বিষয়কে গুরুত্বসহকারে আমলে নিয়ে নতুন পলিসিতে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বারবার ত্যাগের রাজনীতির কথা বলেন। ভোগবাদকে তুচ্ছ করে ঐতিহ্যবাহী আদর্শিক রাজনীতির জন্য কর্মীদের উপদেশ দেন। কিন্তু দুঃখজনক এই যে গত দুই বছরে তাঁর উপদেশ খুব একটা কাজে দেয়নি।
পার্টির হার্ডকোর ক্যাডাররা অন্তঃকলহে মেতেছে, নিজ দলীয় ভ্রাতৃহত্যায় হাত রাঙিয়েছে, জবরদখল সংস্কৃতিতে মত্ত থেকেছে। এসব নিত্য আলোচিত বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলে কষ্ট এবং শত্রু কোনোটাই বাড়াতে চাই না। বরং ফিরে আসি সাফল্যের বার্তা ঘরে ঘরে পেঁৗছে দেওয়ার কথায়। সরকার নিয়ন্ত্রিত একমাত্র গণমাধ্যম বিটিভি এবং রেডিও মান্ধাতা ধাঁচে অনুষ্ঠান করে হয়তো তথ্য সরবরাহ করতে পারে, কিন্তু তথ্যকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না। আর বর্তমানকালে গণমাধ্যমকর্মী মাত্রই বোধ হয় জানেন যে কেবল তথ্য দিয়ে অথবা অতি তথ্য সরবরাহ করে আর যা-ই হোক, সত্য প্রতিষ্ঠিত হয় না।
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, 'তথ্য মানুষের সম্বল, কিন্তু সত্য তার ঐশ্বর্য।' সরকার এবং আওয়ামী লীগের উচিত, ঐশ্বর্য লাভে সচেষ্ট হওয়া এবং প্রচারমাধ্যমকে আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্কতার সঙ্গে ব্যবহার করা। বেসরকারি টিভি চ্যানেল এবং সংবাদপত্রের ভেতর আওয়ামী লীগের প্রভাব সম্পূর্ণভাবে কোথাও নেই।
তাই গত দুই বছরে লক্ষ করেছি, অন্তত ডজন দুয়েক তথাকথিত বুদ্ধিজীবী নিরপেক্ষতার নামে পত্রিকার কলামে এবং টিভির টক-শোতে যা লিখেছেন এবং বলেছেন তা শেখ হাসিনার সাফল্যের বিপক্ষেই। জানি, তাঁরা কেবল ভঙ্গি দিয়েই মন ভোলান। কিন্তু এ-ও তো সত্য যে বিদ্যুৎ সংকট, যানজট, টিআইবি রিপোর্ট, ক্রসফায়ার, ছাত্রলীগ, দ্রব্যমূল্য ইত্যাদি বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য সাধারণ মানুষকে শুনতে এবং পড়তে প্রলুব্ধ করে।
শুরুতে বলেছিলাম, গত দুই বছরে পেয়েছি ঢের। না পাওয়ার আফসোসও কি কম! সংস্কৃতিচর্চায় থোক বরাদ্দ দেওয়া হলো। কিন্তু কেন, কার জন্য, কোন লক্ষ্যে, কিভাবে সেই বরাদ্দ খরচ করা হবে তা জানা হলো না। সংস্কৃতি বিষয়ে পলিসি তৈরি হয়নি বলেই এ দুরবস্থা। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের সংস্কৃতির নিজস্ব একটা চেহারার স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং বাস্তবায়নে সেভাবে উদ্যোগও নিয়েছিলেন, যেখানে বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, তৃণমূল শিল্পচর্চা এবং তৃণমূল শিল্পীর প্রাধান্য থাকবে। গত দুই বছরে এ কাজটি কেন করা হয়নি? খুব কঠিন কাজ তো নয়!
তবু হয়নি যে সেটাই সত্য। যদি জানতে পারতাম যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, বাস্তবায়নের ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন, তবেই খুশি হতাম। চটজলদি সফলতার চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সুফল লাভের পদক্ষেপের বার্তা অনেক বেশি আনন্দের। আফসোস যে গত দুই বছরে কিছু স্বতঃস্ফূর্ত প্রত্যাশা আনন্দের স্বাদ পায়নি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী সরকারকে ঘিরে কিছু স্বপ্ন লালন করেছিলাম। সেই স্বপ্নের কথা জায়গামতো পেঁৗছে দেবে কে? প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে দুই বছরে যে দুর্ভেদ্য বূ্যহ তৈরি হয়েছে, তার ফাঁক গলে সাধারণজনের ভেতরে যাওয়া তো অত্যন্ত কঠিন। তবু আশাবাদী বলেই স্বপ্ন দেখে যাব।
মাত্র তিন দিন আগে একটি বছর শেষ হয়েছে। বছর নয়, একটি দশক শেষ হয়েছে। যার ৮০ ভাগজুড়েই ছিল দুঃসময়। নতুন দশকের শুরুতে প্রার্থনা করি, দুঃসময়ের কষ্ট কেটে গিয়ে ফুটে ওঠা আলোয় সুসময়ের আনন্দে মেতে উঠুক বাঙালি, এগিয়ে যাক বাংলাদেশ। আজ এখানেই কালের যাত্রার বিরতি।
লেখক : সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
এসবের জন্য আমার বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই একমাত্র কৃতিত্বের দাবিদার। ১/১১-এর সংকট, ষড়যন্ত্র, নির্যাতন এবং বৈরিতার জাল ছিন্ন করে এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন যারপরনাই আত্মবিশ্বাসী। সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়নে তাঁর দ্রুত গতিশীলতার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতা অনেক মন্ত্রীরই নেই। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে নবীন মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকেন বলে শুনেছি। এটা একদিক দিয়ে অবশ্য ভালো। তাতে অন্তত উল্টাপাল্টা কিছু করার ভয় থাকে। বোধ হয় এ কারণেই দু-একটি ঘটনা ছাড়া মন্ত্রীদের নৈতিকতা বিষয়ে খুব বেশি নেতিবাচক খবর গণমাধ্যমে আসেনি। তবে কি তারা ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির! তা বোধ হয় নয়। কে জানে! খোঁজ নিলে নিশ্চয় কিছু না কিছু জানা যাবে।
তিন দিন পর বর্তমান সরকারের দুই বছর পূর্তি হবে। এ উপলক্ষে অনেক ফুর্তিও হবে। দৈনিক পত্রিকাগুলোয় বিশেষ ক্রোড়পত্র ছাপা হবে, বিটিভিতে সাফল্যগাথা নিয়ে অনেক রকমের অনুষ্ঠান প্রচার হবে, বেসরকারি টেলিভিশনগুলোয় টক-শো হবে, আইয়ুবি আমলের 'চিত্রে পাকিস্তানি খবর' স্টাইলে সরকারি সাফল্যের তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হবে। এটা হবে, সেটা হবে, অনেক কিছুই হবে। তবে এ ধরনের গতানুগতিক আনুষ্ঠানিকতায় সরকারের দুই বছরের সাফল্য বা ইতিবাচক ভূমিকা তৃণমূল জনগোষ্ঠীর কাছে কতটুকু পেঁৗছাবে সে ব্যাপারে সন্দেহ হয় বৈকি। সরকারের সঙ্গে পার্টির এবং পার্টির সঙ্গে তৃণমূল মানুষের দূরত্ব অনুধাবন করেই এ রকম অশুভ আশঙ্কা মনে আসে।
আওয়ামী লীগের মতো পার্টি যদি কাজের ক্ষেত্রে প্রশাসননির্ভর হয়ে পড়ে, তবে তো দিনবদলের অঙ্গীকার সাফল্যের মুখ দেখবে না। আওয়ামী লীগ তৃণমূল মানুষের পার্টি। বঙ্গবন্ধু সেই আদলেই পার্টিকে সুসংহত করেছিলেন।
তাই আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতার সুখ-দুঃখ তৃণমূল মানুষকে সঙ্গে নিয়েই ভাগাভাগি করে ভোগ করতে হবে। আর সে জন্য গতানুগতিক পদ্ধতির বাইরে গিয়ে আধুনিকমনস্কতা এবং জনসম্পৃক্ততার বিষয়কে গুরুত্বসহকারে আমলে নিয়ে নতুন পলিসিতে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বারবার ত্যাগের রাজনীতির কথা বলেন। ভোগবাদকে তুচ্ছ করে ঐতিহ্যবাহী আদর্শিক রাজনীতির জন্য কর্মীদের উপদেশ দেন। কিন্তু দুঃখজনক এই যে গত দুই বছরে তাঁর উপদেশ খুব একটা কাজে দেয়নি।
পার্টির হার্ডকোর ক্যাডাররা অন্তঃকলহে মেতেছে, নিজ দলীয় ভ্রাতৃহত্যায় হাত রাঙিয়েছে, জবরদখল সংস্কৃতিতে মত্ত থেকেছে। এসব নিত্য আলোচিত বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলে কষ্ট এবং শত্রু কোনোটাই বাড়াতে চাই না। বরং ফিরে আসি সাফল্যের বার্তা ঘরে ঘরে পেঁৗছে দেওয়ার কথায়। সরকার নিয়ন্ত্রিত একমাত্র গণমাধ্যম বিটিভি এবং রেডিও মান্ধাতা ধাঁচে অনুষ্ঠান করে হয়তো তথ্য সরবরাহ করতে পারে, কিন্তু তথ্যকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না। আর বর্তমানকালে গণমাধ্যমকর্মী মাত্রই বোধ হয় জানেন যে কেবল তথ্য দিয়ে অথবা অতি তথ্য সরবরাহ করে আর যা-ই হোক, সত্য প্রতিষ্ঠিত হয় না।
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, 'তথ্য মানুষের সম্বল, কিন্তু সত্য তার ঐশ্বর্য।' সরকার এবং আওয়ামী লীগের উচিত, ঐশ্বর্য লাভে সচেষ্ট হওয়া এবং প্রচারমাধ্যমকে আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্কতার সঙ্গে ব্যবহার করা। বেসরকারি টিভি চ্যানেল এবং সংবাদপত্রের ভেতর আওয়ামী লীগের প্রভাব সম্পূর্ণভাবে কোথাও নেই।
তাই গত দুই বছরে লক্ষ করেছি, অন্তত ডজন দুয়েক তথাকথিত বুদ্ধিজীবী নিরপেক্ষতার নামে পত্রিকার কলামে এবং টিভির টক-শোতে যা লিখেছেন এবং বলেছেন তা শেখ হাসিনার সাফল্যের বিপক্ষেই। জানি, তাঁরা কেবল ভঙ্গি দিয়েই মন ভোলান। কিন্তু এ-ও তো সত্য যে বিদ্যুৎ সংকট, যানজট, টিআইবি রিপোর্ট, ক্রসফায়ার, ছাত্রলীগ, দ্রব্যমূল্য ইত্যাদি বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য সাধারণ মানুষকে শুনতে এবং পড়তে প্রলুব্ধ করে।
শুরুতে বলেছিলাম, গত দুই বছরে পেয়েছি ঢের। না পাওয়ার আফসোসও কি কম! সংস্কৃতিচর্চায় থোক বরাদ্দ দেওয়া হলো। কিন্তু কেন, কার জন্য, কোন লক্ষ্যে, কিভাবে সেই বরাদ্দ খরচ করা হবে তা জানা হলো না। সংস্কৃতি বিষয়ে পলিসি তৈরি হয়নি বলেই এ দুরবস্থা। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের সংস্কৃতির নিজস্ব একটা চেহারার স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং বাস্তবায়নে সেভাবে উদ্যোগও নিয়েছিলেন, যেখানে বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, তৃণমূল শিল্পচর্চা এবং তৃণমূল শিল্পীর প্রাধান্য থাকবে। গত দুই বছরে এ কাজটি কেন করা হয়নি? খুব কঠিন কাজ তো নয়!
তবু হয়নি যে সেটাই সত্য। যদি জানতে পারতাম যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, বাস্তবায়নের ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন, তবেই খুশি হতাম। চটজলদি সফলতার চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সুফল লাভের পদক্ষেপের বার্তা অনেক বেশি আনন্দের। আফসোস যে গত দুই বছরে কিছু স্বতঃস্ফূর্ত প্রত্যাশা আনন্দের স্বাদ পায়নি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী সরকারকে ঘিরে কিছু স্বপ্ন লালন করেছিলাম। সেই স্বপ্নের কথা জায়গামতো পেঁৗছে দেবে কে? প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে দুই বছরে যে দুর্ভেদ্য বূ্যহ তৈরি হয়েছে, তার ফাঁক গলে সাধারণজনের ভেতরে যাওয়া তো অত্যন্ত কঠিন। তবু আশাবাদী বলেই স্বপ্ন দেখে যাব।
মাত্র তিন দিন আগে একটি বছর শেষ হয়েছে। বছর নয়, একটি দশক শেষ হয়েছে। যার ৮০ ভাগজুড়েই ছিল দুঃসময়। নতুন দশকের শুরুতে প্রার্থনা করি, দুঃসময়ের কষ্ট কেটে গিয়ে ফুটে ওঠা আলোয় সুসময়ের আনন্দে মেতে উঠুক বাঙালি, এগিয়ে যাক বাংলাদেশ। আজ এখানেই কালের যাত্রার বিরতি।
লেখক : সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
No comments