তৃতীয় জোট গঠন ছিল ভুল!- স্বীকার বি চৌধুরীর
নির্বাচনের সময়ে তৃতীয় জোট গঠন করাটা ভুল ছিল। তৃতীয় জোট গঠন না করে বরং বড় দুই জোটের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেই ভাল হতো বলে বিকল্প ধারা বাংলাদেশের বিশেষ জাতীয় কাউন্সিলে অধিকাংশ বক্তা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
বিকল্প ধারা সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক একিউএম বদরম্নদ্দোজা চেীধুরী, সরকার এবং বিরোধী দলকে নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি করে জনগণকে অন্ধকারে রাখার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তারা কেউ সত্য বলে না। তাই রাজনীতিবিদদের ওপর জনগণের আস্থার সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আবারও গণতন্ত্রের বিকল্প শক্তি ৰমতা দখল করতে পারে । সরকারের বিগত এক বছরের কর্মকা- মূল্যায়ন করতে গিয়ে তিনি বলেন, এক বছরে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- বন্ধ হয়নি এবং শিৰাঙ্গনে অস্ত্রের মহড়া এখনও চলছে। এ ছাড়া সংসদ বর্জনের রাজনীতি থেকে দেশ এখনও বের হতে না পারায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিরোধী দলকে সংসদে ফিরিয়ে আনতে স্পীকারকে আরো উদ্যোগী হবার আহ্বান জানান তিনি।প্রায় সহস্রাধিক কাউন্সিলর এবং ডেলিগেটদের অংশ গ্রহণে ডিপেস্নামা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শুক্রবার বিকল্প ধারার এই বিশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। দলের গঠনতন্ত্রের বিশেষ কিছু সংশোধনী প্রসত্মাব পাশের জন্য এই বিশেষ কাউন্সিল আয়োজন করায় দলের নেতৃত্বে এই কাউন্সিলের মাধ্যমে কোন প্রকার পরিবর্তন আসেনি।
সকালে জাতীয় এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং পায়রা ওড়াবার মধ্য দিয়ে কাউন্সিল উদ্বোধন করেন সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক বদরম্নদ্দেজা চৌধুরী। শোক প্রসত্মাবের পরে যুগ্মমহাসচিব মাহী বি চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে, জাতীয় নির্বাচনে দলের ভরাডুবি নিয়ে আত্মসমালোচনা পর্ব শুরম্ন করেন। তিনি সে সময় নতুন জোট করে বিকল্প ধারার নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধানত্মটি ভুল ছিল বলে মনত্মব্য করেন। নতুন জোট গঠনের পর এর পরিচিতি পর্ব এবং মাঠ পর্যায়ে এর কর্মকাঠামো বিসত্মৃত করার পর্যাপ্ত সময় না থাকায় বড় কোন জোটের শরিক হলেই বরং ভাল হতো বলে জানান। জোটের অনেক দলই কাঠামোগত দিক থেকে দুর্বল থাকাতেও তাদের ভোগানত্মি পোহাতে হয় বলে মনত্মব্য করেন। দলের মহাসচিব মেজর (অব) আব্দুল মান্নান মাহীর সুরে সুর না মেলালেও একবারে দ্বিমত পোষণ করেননি। তিনি বলেন, বড় জোটে গেলে নির্বাচনী আসন কম পাওয়া যাবে, তাই সে সময় নতুন জোট গঠন করে অধিক আসনে প্রাথর্ী দেয়াই ঠিক ছিল বলে মনে হলেও পরবর্তীতে তা ভুল বলে প্রতীয়মান হয়েছে। খোন্দকার জুবায়ের, এ্যাডভোকেট শহীদ আহমেদসহ অনেক কাউন্সিলরই আলোচনায় অংশ নেন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে, বিকেলে দলের মহাসচিবের সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশের পাশাপাশি দলের গঠনতন্ত্রে কিছু সংশোধনীর অনুমোদন দেয়া হয়। যার মধ্যে, দলের প্রেসিডেন্ট এবং মহাসচিব কাউন্সিলরদের প্রত্যৰ ভোটে নির্বাচনের বিধান করা হয়। এর আগে দলের সভাপতি ভোটে নির্বাচিত হলেও মহাসিচব নির্বাচনের এখতিয়ার ছিল সভাপতির নিজের। যে কোন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীর জন্য দলের তৃণমূলকে সক্রিয় করার অংশ হিসেবে তৃণমূল থেকে তিনজনের প্রাথর্ী তালিকার প্যানেল নির্বাচিত করে কেন্দ্রে পাঠানোর পর সেখান থেকে মনোনয়ন চূড়ানত্ম করার সিদ্ধানত্ম হয়। এ ছাড়া সকল প্রকার অঙ্গ সংগঠন বাতিলসহ দলের কার্যনির্বাহী কমিটির কলেবর এক শ' ৫১ সদস্য থেকে বৃদ্ধি করে তিন শ' ৫১ করা হয়েছে।
দলের সভাপতি অধ্যাপক বদরম্নদ্দেজা চৌধুরী তাঁর সমাপনী বক্তব্যে, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেৰাপট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিরোধী দলের সংসদ বর্জনের অতীত ঐতিহ্য থেকে রাষ্ট্রের এখনও মুক্তিলাভ না ঘটায় তা গণতন্ত্রের জন্য শুভ লৰণ নয় বলেও মনত্মব্য করেন। সরকার এবং বিরোধী দল উভয়কে মিলেই সংসদকে কার্যকর করার আহ্বান জানিয়ে এ জন্য তিনি স্পীকারকে আরও উদ্যোগী হবার আহ্বান জানান। এক বছরের সরকারের মূল্যায়নে, সরকার কেবলই যে শতভাগ ব্যর্থ হয়েছে বলে বিরোধী দল যে দাবি করে তা সঠিক নয় বলে মনত্মব্য করেন। তবে, এক বছরে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত না হবার পাশাপাশি শিৰাঙ্গনে সন্ত্রাস এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- অব্যাহত থাকায় সরকারের সমালোচনা করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর সরকারের থেকে এক শ' ভাগ সফল ও বিরোধীদের থেকে এক শ' ভাগ ব্যর্থ দাবি করার মাজেজা সম্পর্কে জনগণের পৰ থেকে তিনি উভয় নেত্রীরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে সরকারকে ভারতের সঙ্গে কোন প্রকার আপোসে না যাবার পাশাপাশি চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দরকে ব্যবহার করতে দিলে নিরাপত্তা যেন বিঘি্নত না হয় সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান। এ ছাড়া রাজনীতিবিদদের বিরম্নদ্ধে দায়ের করা দুনর্ীতির মামলাগুলো দ্রম্নত নিষ্পত্তির পৰেও মত দেন তিনি। দুর্নীতির মামলার নিষ্পত্তি না হলে দুর্নীতি উচ্ছেদ হবে না বলেও মনত্মব্য করেন।
No comments