আগামী সপ্তাহের মধ্যেই সব পাঠ্যবই পেঁৗছে দিতে চায় সরকার
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই বিনামূল্যের সকল পাঠ্যবই পেঁৗছে দিতে চায় সরকার। এ লৰ্যে ঢাকা মহানগরীসহ সারাদেশে সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে চলছে বই বিতরণের বিশেষ কার্যক্রম।
শুক্রবার ছুটির দিনেও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিৰা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নোমান-উর-রশিদসহ সংশিস্নষ্ট কর্মকর্তারা রাজধানীর বিভিন্ন শিৰা প্রতিষ্ঠানে পাঠ্যবই বিতরণ করেছেন। এ নিয়ে গত দুই দিনে রাজধানীতেই বিতরণ করা হলো প্রায় আড়াই লাখ কপি বই। তবে জানা গেছে, এখনও সকল বিষয়ের বই পায়নি রাজধানীর অনেক শিৰার্থী। বই প্রাপ্তির জন্য ঢাকা মহানগরীর স্কুল কর্তৃপৰকে জেলা শিৰা অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে অবিলম্বে জমা করে রাখা সকল বই বিতরণের জন্য জেলা ও উপজেলা শিৰা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।জানা গেছে, ঢাকা জেলা শিা অফিসার রম্নহুল আমিন খানের বরখাসত্মের একদিন পর বৃহস্পতিবারই সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধানত্মে ঢাকায় বিশেষভাবে বই বিতরণ কার্যক্রম শুরম্ন হয়। গত দু'দিনে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নোমান-উর-রশীদ ও পরিচালক অধ্যাপক জাকির হোসেন, পাঠ্যবই মনিটরিং কর্মকর্তা রতন সিদ্দিকীসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা ঢাকার পাঁচ উপজেলাসহ বিভিন্ন স্কুলে আড়াই লাখ কপি বই বিতরণ করেছেন। শুক্রবার রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজ, কাজলারচন উচ্চ বিদ্যালয়, তেজগাঁও সরকারী বালিকা বিদ্যালয়, তেজগাঁও সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়, সেন্ট গ্রেগরি, উইলস লিটল ফাওয়ার উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বই বিতরণ করা হয়। এদিকে, শুক্রবার পর্যনত্ম দেশের অনেক স্কুলের শিৰার্থীরাই সকল বিষয়ের বই হাতে পায়নি বলে জানা গেছে। আর এর মধ্যে প্রাথমিকের বইয়ের সংখ্যাই বেশি। আবার এই সমস্যা বেশি রাজধানীর শিৰা প্রতিষ্ঠানে। এদিকে বইয়ের সঙ্কটকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই শুরম্ন হয়ে গেছে নানামুখী অস্থিরতা। বাংলা বাজার, নীলৰেতসহ বিভিন্ন বইয়ের বাজারে বিনামূল্যের বই বিক্রি হচ্ছে প্যাকেজ (এক শ্রেণীর সব বিষয়) আকারে। প্রতি প্যাকেজের মূল্য ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা। অনেক স্কুল বইয়ের তালিকা ধরিয়ে দিয়ে কেনার জন্য নির্দিষ্ট দোকানে পাঠিয়ে দিচ্ছে শিৰার্থী ও অভিভাবকদের। ইংরেজী ভার্সনের বই দেয়ার আগেই বাজার থেকে কিনে ফেলেছে অধিকাংশ শিৰার্থী। এছাড়া বইয়ের সমস্যাকে পুঁজি করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের প্রকাশকরা। সমস্যাকে কাজে লাগিয়ে অধিক দামে বিক্রি হরা হচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত এসব বই। এর আগে ৰমতা গ্রহণের কিছুদিন পরই প্রাথমমিক ও মাধ্যমিকের সকল পর্যায়ে বিনামূল্যে শতভাগ পাঠ্যবই বিতরণের ঘোষণা দেয় মহাজোট সরকার। আর এ লৰ্যেই এনসিটিবির তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন সত্মরের ২ কোটি ৭৬ ল ৬২ হাজার ৫২৯ জন শিার্থীর জন্য মোট ১৮ কোটি ৮০ লাখ ৪৬ হাজার ৩৪৭ কপি পাঠ্যবই ছাপানো ও বিতরণের কাজ চলে। এর মধ্যে প্রাথমিক সত্মরের ৭ কোটি ৮০ লাখ ১০ হাজার ৯০৭ কপি, মাধ্যমিক সত্মরের ৭ কোটি ৬২ লাখ ৬৮ হাজার ১০৯ কপি, এবতেদায়ী সত্মরের ১ কোটি ৭৪ লাখ ৫ হাজার ২৩১ কপি, দাখিলের ১ কোটি ৪৭ লাখ ২১ হাজার ৬৬৩ কপি, কারিগরি সত্মরের ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৪৩৭ কপি পাঠ্যবই ছাপার কথা। ইংরেজী ভার্সনের জন্য আছে আরও ৫ লাখ বই। সরকারের পরিকল্পনার পথ ধরে গত ৩০ ডিসেম্বর বুধবার সকালে সচিবালয়ে ১১ শিৰার্থীর হাতে বই তুলে দিয়ে দেশব্যাপী বিনামূল্যের বই বিতরণের যুগানত্মকারী কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে বিতরণ প্রক্রিয়ার এ পর্যায় এসে দেশের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণ মাধ্যমিক, এবতেদায়ী সত্মরের বই বিতরণ অনেকটাই সফল। কিন্তু পিছিয়ে আছে প্রাথমিক, দাখিলের কাজ।
এবার এনসিটিবি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে ৪০০ প্যাকেজ, এবতেদায়িতে ৪০, দাখিলে ৭০ এবং কারিগরিতে ১০ প্যাকেজের কার্যাদেশ দিয়েছে। এসব প্যাকেজ কার্যাদেশ নিয়েই যত বিপত্তি বেধেছে বলে মনে করছেন সংশিস্নষ্টরা। তাদের অভিমত, কোন বইয়ের একাংশ এক প্যাকেজে, অন্য অংশ অন্য প্যাকেজে হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ বই পেতে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। মূলত কার্যাদেশ সংশি-ষ্ট বিপত্তির কারণেই বই পেতে এ বিলম্ব হচ্ছে। গত দু'দিন যাবত রাত অবধি নিজে উপস্থিত থেকে বই বিতরণ করছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিৰা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নোমান উর রশিদ। জানা গেছে, ঢাকা জেলার কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য জেলা শিৰা অফিসসহ ৪টি গুদাম খোলা হয়েছে। এর মধ্যে আছে মিরপুর বাংলা স্কুল, মিরপুর ন্যাশনাল বাংলা স্কুল এবং মডেল একাডেমী পাইকপাড়া। শুক্রবার রাতে জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, সরকার সকল সমস্যা কাটিয়ে সকল শিৰার্থীর হাতে বই পেঁৗছে দেবে। সংশিস্নষ্ট সকল কর্মকর্তা এ লৰ্যে রাতদিন কাজ করছেন। তিনি জানান, আমরা দেশের সকল জেলা শিৰা অফিসারদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেছি। আমরা তাদের কাছে থাকা সকল বই বিতরণ করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। এছাড়া কোথায় কোন সমস্যা বা বইয়ের চাহিদা থাকলে তা জানাতে বলেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক নোমান উর রশিদ বলেন, আসলে গত বছরের এপ্রিলে করা তালিকা অনুযায়ী বই ছাপা হয়েছে। ঐ সময়ের তলিকাই মূল চাহিদার তালিকা। কিন্তু এর পরে অনেক শিৰা প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে, পাঠদানের অনুমতি পেয়েছে। ফলে চাহিদা অনেক বেড়েছে। কিন্তু আমরা শিৰার্থী অভিভাবকসহ সংশিস্নষ্ট সকলকে আশ্বসত্ম করতে চাই, আপনারা কোন ধরনের অসাধু ব্যাবসায়ী বা অন্য কোন অসাধু চক্রের কথায় কান দেবেন না। ঢাকা মহানগরীর স্কুল কর্তৃপৰকে বলি আপনারা বই প্রাপ্তির জন্য জেলা শিৰা অফিসে যোগাযোগ করেন। যদি আরও চাহিদা থাকে সে বিষয়টিও অফিসকে অবগত করবেন।
No comments