তিসত্মায় পানি বেড়েছে আরও এক হাজার কিউসেক- ধুধু বালুচরে নৌকা চলছে, মাছ ধরার আনন্দ by তাহমিন হক
নীলফামারী থেকে অতীত স্মৃতিময় দিনগুলো ফিরে পেতে যাচ্ছে তিসত্মা। তিসত্মায় উজানের পানির তোড় বাড়ছে। গত এক সপ্তাহ ধরে তিসত্মায় যে ৫ হাজার কিউসেক পানি ছিল তা আরও ১ হাজার ৩৯৬ কিউসেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ নিয়ে শুক্রবার তিসত্মায় পানির পরিমাণ দাঁড়াল ৬ হাজার ৩৯৬ কিউসেক। শুষ্ক মৌসুমে তিসত্মায় উজানের পানি বেড়ে যাওয়ায় তিসত্মা পারের হাজারো মানুষ আনন্দে মেতে ওঠে। পানি আরও বাড়বে এমনও আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সংশিস্নষ্ট কতর্ৃপৰ বাংলাদেশ অংশের তিসত্মায় ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার কিউসেক পর্যনত্ম পানি পাওয়া যাবে বলে ধারণা করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর এবং তিসত্মার পানি বন্টনের হিস্যার প্রক্রিয়াধীন অস্থায়ী চুক্তির সিদ্ধানত্মের পরিপ্রেৰিতে এই পানি আসছে বলে তিসত্মার সুবিধাভোগী সাধারণ মানুষজন মনে করছেন।শুক্রবার তিসত্মাপারে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় সকালের ঘন কুয়াশায় মাঝিমালস্নারা তাদের নৌকা তৈরি করে ঘাটে বেঁধে রেখেছেন। রোদ উঠলেই তারা তাদের কাজে নেমে পড়বেন। বিগত কয়েক বছর পর শুষ্ক এই সময়ে পানি পেয়ে তিসত্মাপারে এমন দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। নদীর পানিতে নৌকা ভাসছে। আবার জেলেরা তাদের মাছ ধরার জাল ঠিক করতে মহাব্যসত্ম। উজানের পানির ঢলে তারা আনন্দে আত্মহারা। দুপুরের পর শীতের কুয়াশা কেটে যখন আকাশের মেঘ ভেদ করে ঝলমলে রোদ বেরিয়ে আসে, তখন চারদিকে হাঁকডাক শুরম্ন হয়ে যায়। চলোরে চলোরে মাছ ধরতে যাই। তিসত্মার স্বাদু বৈরালী মাছ। চলছে নৌকা, ফেলছে জাল। ধরা পড়ছে মাছ। অনেকদিন পর যেন মাছ ধরার আনন্দ। পাশাপাশি তিসত্মার ওপারে যে চর গ্রামগুলো রয়েছে তারা এতদিন হেঁটে নদীর এপারে আসত সেখানে এখন তাদের নৌকায় পারাপার হতে হচ্ছে।
আরও মজার বিষয় হলো গত কয়েক বছরে তিসত্মার সেচের পানির জন্য কৃষকদের হন্যে হয়ে ঘুরতে হয়েছে। ধু ধু বালুচর তিসত্মায় পানি নেই তাই তিসত্মা সেচ খালে কতর্ৃপৰ পানি দিতে পারেননি। ফলে কৃষকরা ৰিপ্ত হয়ে ঘেরাও করেছিল পানি উন্নয়ন বোড অফিস। লাঞ্ছিত হয় কতর্ৃপৰ। এবার এখানেও দৃশ্যপটের পরিবর্তন। না কৃষকদের আর সেচের পানির জন্য ঘেরাও করতে হবে না। এখন পানি না চাইতেই তারা সেচের পানি পেয়ে যাচ্ছে। তাদের মাঝেও অনাবিল মুখে মিষ্টি হাসি ।
তিসত্মা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক প্রকৌশলী জানান, তিসত্মায় গড়ে ৫ হাজার কিউসেক পানি ছিল। শুক্রবার এটি আরও ১ হাজার ৩৯৬ কিউসেক বেড়ে যাওয়ায় পানির পরিমাণ হয়েছে ৬ হাজার ৩৯৬ কিউসেক।
উলেস্নখ্য, তিসত্মা নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের কালীগঞ্জ জিরো পয়েন্ট হয়ে ভারতের কুচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এখান থেকে ২০ কিলোমিটার ভাটিতে দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিসত্মা ব্যারাজ। বিগত বছরগুলোয় তিসত্মা শুষ্ক মৌসুমে মরে যেত। থাকত না বিন্দুমাত্র পানি। এতে করে বাংলাদেশের তিসত্মা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছিল। অবশেষে এবার তিসত্মায় পানি এসেছে।
No comments