মিয়ানমারে অনুদান বন্ধ প্রসঙ্গ by ফিলিপ বোরিং
এখনই মিয়ানমারে পশ্চিমের অনুদান বন্ধ করে দেওয়ার সময়। অং সান সু চি কিংবা নির্বাসিতরা এতে রাজি থাকুক কিংবা না থাকুক। এ সুপারিশটা সাম্প্রতিক নির্বাচনে কারচুপির চেয়ে বেশি কিছু করা হয়েছে এ কারণেই নয়_তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত জান্তার দুর্নীতি এবং অদক্ষতার কারণেই বন্ধ করতে হবে এ কথাও সর্বাংশে ঠিক নয়। বড় কথা হচ্ছে, এই অনুদান মিয়ানমারের অধিকাংশ মানুষের কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না।
এটা সত্য যে প্রদত্ত অনুদানগুলো লক্ষ্য অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। বরং সামরিক জান্তার অন্যতম নেতা থান শুয়ে পশ্চিমাবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে পরিস্থিতি অধিকতর খারাপ করে দিয়েছে। তার প্রচারণা এবং পশ্চিমাবিরোধী কর্মসূচি তাদের প্রতিবেশী দেশেও প্রভাবিত হয়েছে। বিশেষ করে, চীনের কথা এখানে সবার আগে বলা যায়। পশ্চিমাবিরোধী এই প্রচারণার কারণে সেখানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টিতেও বিলম্বিত হচ্ছে।
অনুদান বন্ধ করা হলে ওই অঞ্চলে পশ্চিমাদের প্রভাব কমে যাবে। জেনারেলদের পরিবার-পরিজনের ভ্রমণ-সুবিধা বন্ধ করে দিলে তাদের ছেলেমেয়েরা পশ্চিমে এসে লেখাপড়া করার সুযোগ পাবে না।
অন্যদিকে জান্তার মধ্যেও এখন চির ধরতে শুরু করেছে। নির্বাচনে কারচুপির কারণে বিরোধী দল মুখ খোলার সুযোগ পেয়েছে। অং সান সু চির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির নির্বাচন বয়কট করার যৌক্তিকতাও প্রমাণিত হয়েছে। এটা প্রমাণ হয়েছে যে নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়, তাহলে অং সান সু চির পক্ষে বিজয় অর্জন করা এখন সহজতর ব্যাপারও বটে।
আগামী বছর থেকে কার্যকর সংবিধানেও নির্বাহী বিভাগের হাত থেকে ক্ষমতা কিয়দংশও কমিয়ে আনা হয়নি। আইন প্রণেতাদের এখনো নির্বাহী বিভাগের চেয়ে কম ক্ষমতাশালী করে রাখা হয়েছে। আবার অনিয়ম সম্পর্কে কিছুটা হলেও আলোচনা-সমালোচনা করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। স্বচ্ছতাও কিছুটা বাড়তে পারে। কিন্তু জেনারেলদের মধ্যে কেউ কেউ যখন তাঁদের ইউনিফর্ম পাল্টে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন এবং পরবর্তীকালে মন্ত্রী হওয়ার সুযোগও গ্রহণ করেছেন, তখন তাঁদের পক্ষে কিছুটা খোলা মনে কাজ করা সম্ভব হতে পারে। নীতি গ্রহণকালে তাঁরা আগের চেয়ে কিছুটা হলেও মুক্তমনের পরিচয় দেবেন বলেও মনে করেছিল কেউ কেউ। কিন্তু সে আশাও ভেস্তে গেছে সেই ১০ জেনারেলের হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত হওয়ার কারণে। কারণ তাঁরা এখনো সবকিছুর নিয়ন্ত্রক হিসেবে রয়েছেন। ২০০৮ সালের প্রাকৃতিক দুর্যোগ নার্গিস মোকাবিলা করতে গিয়ে সামরিক জান্তার যে ব্যর্থতা তাও সুশীলসমাজকে বিক্ষুব্ধ করে রেখেছে।
পর্যবেক্ষকরা দেখছেন, আইনসভায় বেশ কিছু ব্যবসায়ী অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। অবশ্য তাঁরাও সামরিক জান্তারই ধামাধরা বলে ইতিমধ্যে জানা গেছে। সেই জেনারেলদের অনুমোদন ছাড়া সেখানে কোনো ব্যবসাই করা সম্ভব হয় না। তবে তাঁদের অধিকাংশই জানেন কোনো কারণে সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা থাকলে তাদের উন্নয়ন সম্ভাবনা নয়, তার ফল সম্প্রসারিত হবে চীনের দিকে। একসময় বিশ্বের প্রধান একটি ধান রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিত মিয়ানমারে এখন ব্যাপকভাবে পুষ্টি সমস্যা বিরাজ করছে। শাসকযন্ত্র গ্যাসসম্পদ উন্নয়ন করে অবশ্য তাদের রাজস্ব আয়ের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। এতে তাদের আস্থা কিছুটা বাড়ছে। তবে জেনারেলদের সন্তানরা হয়তো একসময় বেসামরিক গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে পারে। এটাও একটা সম্ভাবনা।
বার্মিজ পতাকাবাহীদের পক্ষে হয়তো এটা চিন্তা করা সম্ভব হবে না যে তারা এখনো তাদের কাছের দেশ থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া কিংবা চীন থেকে কত পেছনে রয়ে গেছে। তবে মিয়ানমার এখন এমন একটা অবস্থায় পেঁৗছেছে, যেখানে ইন্দোনেশিয়ার মতো সংস্কার প্রয়োজন। সেখানে যদি মুক্ত দুনিয়ার ব্যবসায়ীদের প্রবেশপথ উন্মুক্ত হয়, যদি সেখানে সাংস্কৃতিক সংযোগ তৈরি হয় বাইরের সঙ্গে কিংবা সাংবাদিকরা যদি বিনা বাধায় যেতে পারে, শিক্ষাবিদদের যদি শিক্ষা সম্প্রসারণে এগিয়ে আসা সম্ভব হয়, তাহলে তাদের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে।
লেখক : সাংবাদিক
খালিজ টাইমস থেকে ভাষান্তর মোস্তফা হোসেইন।
অনুদান বন্ধ করা হলে ওই অঞ্চলে পশ্চিমাদের প্রভাব কমে যাবে। জেনারেলদের পরিবার-পরিজনের ভ্রমণ-সুবিধা বন্ধ করে দিলে তাদের ছেলেমেয়েরা পশ্চিমে এসে লেখাপড়া করার সুযোগ পাবে না।
অন্যদিকে জান্তার মধ্যেও এখন চির ধরতে শুরু করেছে। নির্বাচনে কারচুপির কারণে বিরোধী দল মুখ খোলার সুযোগ পেয়েছে। অং সান সু চির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির নির্বাচন বয়কট করার যৌক্তিকতাও প্রমাণিত হয়েছে। এটা প্রমাণ হয়েছে যে নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়, তাহলে অং সান সু চির পক্ষে বিজয় অর্জন করা এখন সহজতর ব্যাপারও বটে।
আগামী বছর থেকে কার্যকর সংবিধানেও নির্বাহী বিভাগের হাত থেকে ক্ষমতা কিয়দংশও কমিয়ে আনা হয়নি। আইন প্রণেতাদের এখনো নির্বাহী বিভাগের চেয়ে কম ক্ষমতাশালী করে রাখা হয়েছে। আবার অনিয়ম সম্পর্কে কিছুটা হলেও আলোচনা-সমালোচনা করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। স্বচ্ছতাও কিছুটা বাড়তে পারে। কিন্তু জেনারেলদের মধ্যে কেউ কেউ যখন তাঁদের ইউনিফর্ম পাল্টে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন এবং পরবর্তীকালে মন্ত্রী হওয়ার সুযোগও গ্রহণ করেছেন, তখন তাঁদের পক্ষে কিছুটা খোলা মনে কাজ করা সম্ভব হতে পারে। নীতি গ্রহণকালে তাঁরা আগের চেয়ে কিছুটা হলেও মুক্তমনের পরিচয় দেবেন বলেও মনে করেছিল কেউ কেউ। কিন্তু সে আশাও ভেস্তে গেছে সেই ১০ জেনারেলের হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত হওয়ার কারণে। কারণ তাঁরা এখনো সবকিছুর নিয়ন্ত্রক হিসেবে রয়েছেন। ২০০৮ সালের প্রাকৃতিক দুর্যোগ নার্গিস মোকাবিলা করতে গিয়ে সামরিক জান্তার যে ব্যর্থতা তাও সুশীলসমাজকে বিক্ষুব্ধ করে রেখেছে।
পর্যবেক্ষকরা দেখছেন, আইনসভায় বেশ কিছু ব্যবসায়ী অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। অবশ্য তাঁরাও সামরিক জান্তারই ধামাধরা বলে ইতিমধ্যে জানা গেছে। সেই জেনারেলদের অনুমোদন ছাড়া সেখানে কোনো ব্যবসাই করা সম্ভব হয় না। তবে তাঁদের অধিকাংশই জানেন কোনো কারণে সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা থাকলে তাদের উন্নয়ন সম্ভাবনা নয়, তার ফল সম্প্রসারিত হবে চীনের দিকে। একসময় বিশ্বের প্রধান একটি ধান রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিত মিয়ানমারে এখন ব্যাপকভাবে পুষ্টি সমস্যা বিরাজ করছে। শাসকযন্ত্র গ্যাসসম্পদ উন্নয়ন করে অবশ্য তাদের রাজস্ব আয়ের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। এতে তাদের আস্থা কিছুটা বাড়ছে। তবে জেনারেলদের সন্তানরা হয়তো একসময় বেসামরিক গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে পারে। এটাও একটা সম্ভাবনা।
বার্মিজ পতাকাবাহীদের পক্ষে হয়তো এটা চিন্তা করা সম্ভব হবে না যে তারা এখনো তাদের কাছের দেশ থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া কিংবা চীন থেকে কত পেছনে রয়ে গেছে। তবে মিয়ানমার এখন এমন একটা অবস্থায় পেঁৗছেছে, যেখানে ইন্দোনেশিয়ার মতো সংস্কার প্রয়োজন। সেখানে যদি মুক্ত দুনিয়ার ব্যবসায়ীদের প্রবেশপথ উন্মুক্ত হয়, যদি সেখানে সাংস্কৃতিক সংযোগ তৈরি হয় বাইরের সঙ্গে কিংবা সাংবাদিকরা যদি বিনা বাধায় যেতে পারে, শিক্ষাবিদদের যদি শিক্ষা সম্প্রসারণে এগিয়ে আসা সম্ভব হয়, তাহলে তাদের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে।
লেখক : সাংবাদিক
খালিজ টাইমস থেকে ভাষান্তর মোস্তফা হোসেইন।
No comments