হলিউডকিংস স্পিচের পর হুপারের- লা মিজারেবল
১৮৬২ সালের কথা। লা মিজারেবল তখন মাত্রই প্রকাশিত হয়েছে। কেমন বিক্রি হচ্ছে জানতে গিয়ে ভিক্তর উগো আশ্চর্য এক চিঠি পাঠালেন প্রকাশকের কাছে। পুরো সাদা পাতায় শুধু একটা ‘?’ এঁকে পাঠিয়ে দিলেন চিঠি।
প্রশ্নবোধক চিহ্নটির মানে একটাই—কেমন চলছে? প্রকাশকও দিলেন দারুণ পাল্টা জবাব। পুরো সাদা পাতায় আঁকলেন শুধু ‘!’ চিহ্ন। মানে—বিস্ময়কর!
এটাই নাকি বিশ্বের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত চিঠি এবং তার উত্তর। এই গল্প কতটা সত্যি, কতটা মিথ্যা কে জানে। তবে এখনো এই দেড় শতাব্দী পরেও লা মিজাবেরল-এর পর একটা বিস্ময় চিহ্ন বসাতে বাধ্য হই আমরা। উগোর সেই অবিস্মরণীয় সৃষ্টি এবার উঠে এল রুপালি পর্দায়। টম হুপার আছেন ছবিটির পরিচালনায়। তারকাবহুল ছবিতে অভিনয় করেছেন রাসেল ক্রো, হিউ জ্যাকম্যান, অ্যান হ্যাথাওয়ে, আমান্ডা সেফ্রায়েড।
২০১০ সালে দ্য কিংস স্পিচ দিয়ে মাতিয়ে দিয়েছিলেন হুপার, জিতেছিলেন সেরা পরিচালকের অস্কার। লা মিজারেবল তাঁকে কত দূর নিয়ে যাবে কে জানে। তবে মুক্তির আগেই অস্কারের পর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতা গোল্ডেন গ্লোবের চার-চারটি বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে এই ছবি!
ছবিটির পোস্টারের ট্যাগ লাইনে ব্যবহার করা হয়েছে চারটি শব্দ: ফাইট, ড্রিম, হোপ এবং লাভ। লা মিজারেবল লড়াই, স্বপ্ন, আশা এবং ভালোবাসার গল্পই শুনিয়েছে। সরাসরি ভিক্তর উগোর উপন্যাসটিকে অবশ্য অনুসরণ করেননি পরিচালক। উগোর উপন্যাস অবলম্বনে অ্যালাইন বুবলিল এবং ক্লদে-মিশেল স্কনবার্গ অভিন্ন নামে একটি সংগীত-নাট্য করেছিলেন। সেই মিউজিক্যাল অবলম্বনেই বুবলিল-স্কনবার্গকে সঙ্গে নিয়ে চিত্রনাট্য লিখেছেন উইলিয়াম নিকলসন।
মিউজিক্যাল হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে প্রচুর গান। এখানেই বৈপ্লবিক এক কাণ্ড ঘটিয়েছেন পরিচালক হুপার। সাধারণত ছবির গানগুলো আগেই রেকর্ড করা থাকে। শুটিংয়ের সময় অভিনেতারা শুধু ঠোঁট মেলান। কিন্তু হুপার চেয়েছেন শুটিংয়ের সময় অভিনেতারাই গান গাইবেন। তখনই রেকর্ড করা হবে কণ্ঠস্বর!
স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি ছিল জ্যাকমান-ক্রোদের জন্য ভীষণ চ্যালেঞ্জের। জ্যাকম্যান যেমন কফি খাওয়াই ছেড়ে দিয়েছিলেন শুধু গলা ঠিক রাখবেন বলে। কফির বদলে শুটিংয়ের সময়টায় খেয়েছেন কেবল লেবু মেশানো গরম পানি! ‘কফি ছেড়ে দিয়েছিলাম। কারণ, এটা কণ্ঠস্বরের কোনো উপকার করে না। বলতে পারেন রীতিমতো সন্ন্যাসীর জীবন যাপন করেছি’—বলেছেন জ্যাকমান।
গায়কদের দিয়েই শুটিংয়ের সময় গান গাইয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা সংগীত-নাট্য থেকেই নিয়েছেন হুপার। মঞ্চে অভিনেতাদেরই গান গাইতে হয়। কিন্তু সেসব অভিনেতা এই কাজের জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত। ক্রো তো ভীষণ ঝামেলাতেই পড়ে গিয়েছিলেন। চাইলেই গ্ল্যাডিয়েটর সাজা যায়, সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ভোলাভালা অধ্যাপক সাজা যায়। কিন্তু গায়ক হওয়া তো খুবই কঠিন একটা কাজ। বেচারার গলায় আবার সুরও তেমনটা নেই। তবে শেষ পর্যন্ত সবাই দুর্দান্তই করেছেন। বোদ্ধারা ছবিটিকে দিচ্ছেন বিশেষ মর্যাদা।
কিন্তু অভিনেতাদের গায়ক বানিয়ে গায়কদের ভাত মারার এই আইডিয়া অনেকেরই পছন্দ হয়নি। আমেরিকান আইডল তারকা অ্যাডাম ল্যামবার্ট টুইট করেছেন, ‘ইদানীং বড় অভিনেতাদের গায়ক সাজার খুব শখ হয়েছে দেখছি।’ জবাব দিতে গিয়ে ক্রো আবার এমন টুইট করেছেন, সেটা আঁতে ঘা লাগিয়ে দিয়েছে সংগীততারকাদের। ক্রোর কথার মধ্যে যে শ্লেষ ছিল, গায়কদের গলায় থাকে অতি নাটুকেপনা, ‘অ্যাডামের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি না। গানগুলো আরও মিষ্টি-মধুর অবশ্যই করা যেত। তবে কি না হুপার চেয়েছিল গানগুলো একেবারে আসল ও বাস্তবসম্মত করতে।’
এই বিতর্কের মৃদু আলোড়নটুকু বাদ দিলে ছবিটা কিন্তু দারুণ করছে। বড়দিনের দিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং বক্সিং ডেতে অস্ট্রেলিয়ায় মুক্তি পাওয়ার পর এরই মধ্যে আয় করেছে প্রায় ১৬ কোটি ডলার। ছবিটির বড় বাজার যুক্তরাজ্যে লা মিজারেবল মুক্তি পাবে আগামীকাল।
রাজীব হাসান
এলএ টাইমস ও হলিউড রিপোর্টার অবলম্বনে
এটাই নাকি বিশ্বের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত চিঠি এবং তার উত্তর। এই গল্প কতটা সত্যি, কতটা মিথ্যা কে জানে। তবে এখনো এই দেড় শতাব্দী পরেও লা মিজাবেরল-এর পর একটা বিস্ময় চিহ্ন বসাতে বাধ্য হই আমরা। উগোর সেই অবিস্মরণীয় সৃষ্টি এবার উঠে এল রুপালি পর্দায়। টম হুপার আছেন ছবিটির পরিচালনায়। তারকাবহুল ছবিতে অভিনয় করেছেন রাসেল ক্রো, হিউ জ্যাকম্যান, অ্যান হ্যাথাওয়ে, আমান্ডা সেফ্রায়েড।
২০১০ সালে দ্য কিংস স্পিচ দিয়ে মাতিয়ে দিয়েছিলেন হুপার, জিতেছিলেন সেরা পরিচালকের অস্কার। লা মিজারেবল তাঁকে কত দূর নিয়ে যাবে কে জানে। তবে মুক্তির আগেই অস্কারের পর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতা গোল্ডেন গ্লোবের চার-চারটি বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে এই ছবি!
ছবিটির পোস্টারের ট্যাগ লাইনে ব্যবহার করা হয়েছে চারটি শব্দ: ফাইট, ড্রিম, হোপ এবং লাভ। লা মিজারেবল লড়াই, স্বপ্ন, আশা এবং ভালোবাসার গল্পই শুনিয়েছে। সরাসরি ভিক্তর উগোর উপন্যাসটিকে অবশ্য অনুসরণ করেননি পরিচালক। উগোর উপন্যাস অবলম্বনে অ্যালাইন বুবলিল এবং ক্লদে-মিশেল স্কনবার্গ অভিন্ন নামে একটি সংগীত-নাট্য করেছিলেন। সেই মিউজিক্যাল অবলম্বনেই বুবলিল-স্কনবার্গকে সঙ্গে নিয়ে চিত্রনাট্য লিখেছেন উইলিয়াম নিকলসন।
মিউজিক্যাল হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে প্রচুর গান। এখানেই বৈপ্লবিক এক কাণ্ড ঘটিয়েছেন পরিচালক হুপার। সাধারণত ছবির গানগুলো আগেই রেকর্ড করা থাকে। শুটিংয়ের সময় অভিনেতারা শুধু ঠোঁট মেলান। কিন্তু হুপার চেয়েছেন শুটিংয়ের সময় অভিনেতারাই গান গাইবেন। তখনই রেকর্ড করা হবে কণ্ঠস্বর!
স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি ছিল জ্যাকমান-ক্রোদের জন্য ভীষণ চ্যালেঞ্জের। জ্যাকম্যান যেমন কফি খাওয়াই ছেড়ে দিয়েছিলেন শুধু গলা ঠিক রাখবেন বলে। কফির বদলে শুটিংয়ের সময়টায় খেয়েছেন কেবল লেবু মেশানো গরম পানি! ‘কফি ছেড়ে দিয়েছিলাম। কারণ, এটা কণ্ঠস্বরের কোনো উপকার করে না। বলতে পারেন রীতিমতো সন্ন্যাসীর জীবন যাপন করেছি’—বলেছেন জ্যাকমান।
গায়কদের দিয়েই শুটিংয়ের সময় গান গাইয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা সংগীত-নাট্য থেকেই নিয়েছেন হুপার। মঞ্চে অভিনেতাদেরই গান গাইতে হয়। কিন্তু সেসব অভিনেতা এই কাজের জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত। ক্রো তো ভীষণ ঝামেলাতেই পড়ে গিয়েছিলেন। চাইলেই গ্ল্যাডিয়েটর সাজা যায়, সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ভোলাভালা অধ্যাপক সাজা যায়। কিন্তু গায়ক হওয়া তো খুবই কঠিন একটা কাজ। বেচারার গলায় আবার সুরও তেমনটা নেই। তবে শেষ পর্যন্ত সবাই দুর্দান্তই করেছেন। বোদ্ধারা ছবিটিকে দিচ্ছেন বিশেষ মর্যাদা।
কিন্তু অভিনেতাদের গায়ক বানিয়ে গায়কদের ভাত মারার এই আইডিয়া অনেকেরই পছন্দ হয়নি। আমেরিকান আইডল তারকা অ্যাডাম ল্যামবার্ট টুইট করেছেন, ‘ইদানীং বড় অভিনেতাদের গায়ক সাজার খুব শখ হয়েছে দেখছি।’ জবাব দিতে গিয়ে ক্রো আবার এমন টুইট করেছেন, সেটা আঁতে ঘা লাগিয়ে দিয়েছে সংগীততারকাদের। ক্রোর কথার মধ্যে যে শ্লেষ ছিল, গায়কদের গলায় থাকে অতি নাটুকেপনা, ‘অ্যাডামের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি না। গানগুলো আরও মিষ্টি-মধুর অবশ্যই করা যেত। তবে কি না হুপার চেয়েছিল গানগুলো একেবারে আসল ও বাস্তবসম্মত করতে।’
এই বিতর্কের মৃদু আলোড়নটুকু বাদ দিলে ছবিটা কিন্তু দারুণ করছে। বড়দিনের দিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং বক্সিং ডেতে অস্ট্রেলিয়ায় মুক্তি পাওয়ার পর এরই মধ্যে আয় করেছে প্রায় ১৬ কোটি ডলার। ছবিটির বড় বাজার যুক্তরাজ্যে লা মিজারেবল মুক্তি পাবে আগামীকাল।
রাজীব হাসান
এলএ টাইমস ও হলিউড রিপোর্টার অবলম্বনে
No comments