১১ হাজার ৪৭০ কোটি ব্যয়ে ৫৩ নৌরম্নট খনন করা হবে- ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নৌপথ পরিদর্শন by রশিদ মামুন
নদ-নদী রৰায় সরকারের মহাপরিকল্পনার দুয়ার খুলছে। প্রকল্পের আওতায় ১১ হাজার ৪৭৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে দেশের ৫৩টি নৌরম্নট খনন করা হবে। এর মাধ্যমে দেশের প্রায় সকল বড় নদী থেকে ৩২ কোটি ঘনমিটার পলি অপসারিত হবে। যা নদীতে প্রাণসঞ্চারের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় অর্থনীতিকে গতিশীল করতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
বিআইডবিস্নউটিএ সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের কারিগরি এবং আর্থিক সাহায্য প্রদানের জন্য ভারতের প্রতিনিধি দল বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন নদী পরিদর্শন করছেন। ইন্ডিয়ান ওয়াটার ওয়েজ অথরিটির (আইডবিস্নউটিএ) সদস্য প্রদীপ কুমার ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গত বুধবার থেকে বিআইডবিস্নউটিএর প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে তারা নারায়ণগঞ্জ থেকে বাংলাদেশের নৌপথ পরিদর্শন শুরম্ন করেন। শুক্রবার আশুগঞ্জ পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে প্রতিনিধি দল পরিদর্শন শেষ করেছেন। আজ শনিবার প্রতিনিধি দল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বৈঠকে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের কাছে নদী খনন বিষয়ে কারিগরি সাহায্য চাওয়া হবে বলে জানা গেছে।সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে তারা বাংলাদেশকে সে ঋণ সহায়তা দিতে চেয়েছে সেখান থেকেও এ প্রকল্পে অর্থ ব্যয় করা হবে। গত বছর সেপ্টেম্বরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে বৈঠকে ভারত বাংলাদেশের নদী খনন প্রকল্পে সহায়তা করার আশ্বাস দেয়। এ ছাড়া সম্প্রতি কাতার বাংলাদেশের নদী রৰা প্রকল্পে অর্থ সাহায্যের প্রসত্মাব দিয়েছে। সরকারের তরফ থেকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এডিবি, আইডিবি, ডিএফআইডি, জেবিআইসিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে প্রকল্পের জন্য অর্থ সাহায্য চাওয়া হয়েছে।
মহাজোট তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে খননের মাধ্যমে দেশের নদ নদী রৰা করার প্রতিশ্রম্নতি দেয়। সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরপরই দেশে নদ নদী রৰার জন্য ড্রেজিংয়ের পরিকল্পনা করার নির্দেশ দেয়। বিআইডবিস্নউটিএ দুটি পর্যায়ে দেশের নৌরম্নট খননের জন্য 'ক্যাপিটাল ড্রেজিং অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ওয়েজ' প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করে। গত বছর ২৭ আগস্ট নীতিগতভাবে পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পটি অনুমোদন করে।
প্রকল্পের আওতায় দুটি পর্যায়ে এসব নদী খনন করা হবে। প্রথম পর্যায়ে পহেলা জানুয়ারি ২০১০ থেকে প্রকল্পের কাজ শুরম্ন হবে এবং শেষ হবে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর। এ সময় দেশের ২৩টি নৌরম্নটের ৭৪৮ কিলোমিটার খনন করা হবে। ২০১৪ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ২য় পর্যায়ের প্রকল্প বাসত্মবায়ন করা হবে। এ সময়ে ৩০ টি নৌরম্নটের এক হাজার ৬৪৫ কিলোমিটার নৌপথ খনন করা হবে। যাতে ৩২ কোটি ঘনমিটার পলি অপসারিত হবে। মোট ১১ হাজার ৪৭৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকার মধ্যে স্থানীয়ভাবে এক হাজার ২৭৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় নির্বাহ করা হবে। বাকি ১০ হাজার ১৯৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা দাতাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হবে।
সূত্র মতে, নদীর প্রস্থ এবং গভীরতার ওপর ভিত্তি করে প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ফেজ-১ এর গ্রম্নপ (এ) তে ১৫০ মিটার প্রস্থ এবং ৫ দশমিক ২০ মিটার গভীরতার ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, জাজিরা, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম নৌরম্নটের ৩০৬ কিলোমিটারের মধ্যে ২০ কিলোমিটার খনন করা হবে। গ্রম্নপ (বি) তে ৯০ মিটার প্রস্থ এবং ৪ দশমিক ৩০ মিটার গভীরতার ৭টি নৌরম্নটের এক হাজার ৪১২ কিলোমিটারের মধ্যে ১৬০ কিলোমিটার খনন করা হবে। গ্রম্নপ (সি) তে ৬০ মিটার প্রস্থ এবং ৩ দশমিক ৭০ মিটার গভীরতার ১৫টি নৌরম্নটের এক হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে ৫৬৮ কিলোমিটার খনন করা হবে। ফেজ-২ এ ৪০ মিটার প্রস্থ এবং ৩ মিটার গভীরতার ৩০টি নৌরম্নটের এ হাজার ৯৭৭ কিলোমিটারের মধ্যে ১৬৪৫ কিলোমিটার খনন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় দেশের সকল প্রধান নদীকে খননের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। যাতে দেশের হারিয়ে যাওয়া নৌপথ উদ্ধার হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শুক্রবার এ বিষয়ে বিআইডবিস্নউটি'র চেয়ারম্যান মালেক মিয়া জনকণ্ঠকে বলেন, যতদ্রম্নত সম্ভব তারা সারাদেশের নদী খনন শুরম্ন করতে চান। বিআইডবিস্নউটিএর প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশন নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে। এখন ইআরডির মাধ্যমে প্রকল্পের জন্য অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, সরকার দেশের নদ নদী রৰায় বিশেষ নজর দেয়ায় শীঘ্রই প্রকল্পের কাজ শুরম্ন করা সম্ভব হবে।
একই বিষয়ে বিআইডবিস্নউটিএর প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) আব্দুল মতিন জানান, বিআইডবিস্নউটিএর নতুন ১৭টি ড্রেজার কেনার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া বেসরকারীখাতেও বেশ কয়েকটি ড্রেজার আনা হচ্ছে। যাতে নদী খননে ড্রেজার সঙ্কট দূর করবে।
No comments