সাগরতলে শব্দদূষণ- দিগ্ভ্রানত্ম তিমি
বহু সামুদ্রিক প্রাণী শব্দের কারণে ৰতিগ্রসত্ম হয়। এ জন্য প্রধানত দায়ী করা হয় বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল ভূ-কম্পন জরিপ এবং নৌবাহিনীর শব্দতরঙ্গ নির্ণায়ক যন্ত্র সোনারকে। অধিকাংশ সামুদ্রিক সত্মন্যপায়ী প্রাণী ও মাছ শব্দের ব্যাপারে খুবই স্পর্শকাতর।
সমুদ্রের তলদেশে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে পেঁৗছে যায় শব্দ। জ্যাক কুত্তিও'র প্রথম ছবির নাম ছিল 'দ্যা সাইলেন্ট ওয়ার্ল্ড' বা 'নীরব বিশ্ব'। প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে চিত্রায়িত হয়েছিল ছবিটি। সে সময় সমুদ্রের তলদেশকে নীরব বলে অভিহিত করা হলেও এখন তা আর নীরব নেই। এই শব্দের জন্য সামুদ্রিক সত্মন্যপায়ী প্রাণী ও শাবকরা তাদের পথ হারিয়ে পেলে। কিন্তু সমীৰায় আভাস পাওয়া গেছে যে, নেভাল সোনার বিপুল সংখ্যক তিমির জন্য ৰতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্যাস ও তেল অনুসন্ধানে ব্যবহৃত সিসমিক এয়ারগান সমুদ্রের শব্দ সৃষ্টির জন্য বহুলাংশে দায়ী। এ ধরনের সিসমিক এয়ারগান ৫০০ মিটার থেকে কয়েক কিলোমিটার পর্যনত্ম শব্দ ছড়ায়। তার ঐ অঞ্চলের মধ্যে বিচরণকারী মাছেরা ৰতির সম্মুখীন হয়। ভূ-কম্পন জরিপকালীন এলাকায় শতকরা ৪০ থেকে ৮০ ভাগ ছোট মাছ মারা যায়। শৈলশিরায় বিচরণ করা মাছের মধ্যে এ ধরনের শব্দের বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। কারণ শৈলশিরাতে স্বাভাবিকভাবে সৃষ্ট শব্দের ওপর নির্ভর করেই মাছেরা বসতি গড়ে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে তিমিরা। এরা প্রজনন ও বিচরণ ৰেত্র থেকে দূরে সরে যায়। সেই সঙ্গে পরিবর্তন করে অভিবাসন পথ। তার কিছু ৰেত্রে এরা সম্পূর্ণ নীরব থাকে। অর্থাৎ এরা যোগাযোগের পথ হারিয়ে ফেলে। মাঝে মাঝে দিক্ভ্রানত্ম হয়ে জাহাজের সঙ্গে ধাক্কাও খায়, সমুদ্রের তলদেশে এ ধরনের অযাচিত শব্দের কারণেই সমস্যার সৃষ্টি হয়। আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে এ সৃষ্ট সমস্যার কোন সামঞ্জস্য নেই।সমুদ্রের তলদেশে এ শব্দ দূষণের প্রধান তিনটি কারণ হচ্ছে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল বৃদ্ধি। ভূ-কম্পন জরিপ ও সমুদ্রের তলদেশে শব্দ তরঙ্গের মাধ্যমে শব্দ চিহ্নিত করার যন্ত্র সোনার। ক্রমবর্ধমান হারে তিমি ও অন্য সত্মন্যপায়ী প্রাণীদের জন্য নৈঃশব্দের এই 'সঙ্গীতের' সঙ্গে খাপখাওয়াতে ব্যর্থ হচ্ছে। এর ফলে সত্মন্যপায়ী প্রাণীরা আটকা পড়ে যাচ্ছে। মূলত দিক্ভ্রানত্ম হয়ে তিমিরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে আর হারিয়ে ফেলছে নিজেদের সনত্মান-সনত্মতিদের। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রের পানির অমস্নত্ব শব্দের শোষণ ৰমতা শতকরা ৪০ ভাগ হ্রাস পায়। ফলে শব্দ আরও বেশি দূরে চলে যায়। সমুদ্রে শব্দের মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে যে রহস্য লুকিয়ে রয়েছে তা হচ্ছে, তিমি ও অন্যান্য সত্মন্যপায়ী প্রাণীর আটকে পড়া। ধারণা করা হচ্ছে, তিমিরা সমুদ্রে অবস্থান নির্ণয়ের জন্য চৌম্বকীয় ৰেত্র এবং সমুদ্রের নিচের অংশকে ব্যবহার করে থাকে। অর্থাৎ এই ৰেত্রে কোন রকম বিচু্যতি-বিভ্রানত্মির সৃষ্টি হলেই মূলত সমস্যার সৃষ্টি হয়। একই সৈকতে আটকা পড়ার পর আবার সৈকতে ছেড়ে দেয়া হলেও তিমি আবারও ঐ সৈকতে আটকা পড়ে_ এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এৰেত্রে যা ঘটে থাকে তা হচ্ছে_ তিমির রেফারেন্স পয়েন্টসমূহ তাদের এ কথা বুঝিয়ে থাকে যে তারা গভীর পানির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আসলে তারা এখন সৈকতের দিকে ফিরে যাচ্ছে। এখানে উলেস্নখ করা যায় যে, কোন তিমি আটকা পড়লে যদি গভীর পানিতে ফিরে যেতে না পারে তাহলে এরা মারা যায়। তিমির দেহ সমুদ্রের পানিতে পরিপুষ্ট হয়। স্থলভাগে এলে তিমির ওজন কমে যায়। ফলে শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যায়।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, দূষণ, পস্নাস্টিকের ব্যাগ_ সবকিছু ছাপিয়ে এখন তালিকায় যুক্ত হয়েছে সমুদ্রের শব্দ। আমাদের স্থলভাগের নিচের বিশ্ব এখন আর 'নীরব বিশ্ব' নেই। সেখানে বসবাসকারী প্রাণীদের জীবনাচরণের ব্যবস্থা সহজ হলে তা আমাদের পরিবেশের জন্যই স্বসত্মির বার্তা বহন করবে। এ ব্যাপারে সকলের সচেতনতার মাধ্যমে সহযোগিতার হাত বাড়ালেই পরিবেশের উন্নতির পথ সুগম হবে বলে আশা করা যায়।
সূত্র : ইন্টারনেট
No comments