আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনের- নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে শাস্তি by হারুন আল রশীদ



জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার জন্য সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ যেকোনো ব্যক্তিকে শাস্তির আওতায় আনতে চায় নির্বাচন কমিশন। এ জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের প্রস্তাব নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে কমিশন।
প্রস্তাবিত আইনে সরকারের সব মন্ত্রণালয়ের ওপর কমিশনের নিয়ন্ত্রণ আরোপের কথাও বলা হয়েছে।
আরপিওর ৮৬(এ) ধারা সংশোধনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নির্বাচনের সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি যথাযথ কারণ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের দেওয়া দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ধরনের অপরাধের জন্য সেই ব্যক্তির সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় ধরনের দণ্ড হবে।
৮৬(বি) ধারায় আছে, কোনো প্রতিষ্ঠান কমিশনের দেওয়া দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে সেই প্রতিষ্ঠানের প্রধান ব্যক্তি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে বিবেচিত হবে। এ-সম্পর্কিত ব্যাখ্যায় প্রতিষ্ঠান বলতে যেকোনো ধরনের সরকারি বা আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সরকারি প্রতিষ্ঠান, নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, অংশীদারি প্রতিষ্ঠান এবং যেকোনো ধরনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বোঝানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তিন বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের কথা বলা হয়েছে।
এখন আরপিওতে নির্বাচনী অপরাধের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির কোনো বিধান নেই। কোনো কর্মকর্তা অপরাধ করলে সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সেই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগে শাস্তির সুপারিশ করতে পারে। তবে অতীতে কমিশন এ ধরনের সুপারিশ করলেও কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা শোনা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক ও মো. শাহনেওয়াজ কোনো মন্তব্য করেননি।
কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, আরপিও সংশোধনের খসড়া কমিশন চূড়ান্ত করেছে। প্রস্তাবটি কমিশনের আগামী বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আগামী সপ্তাহের যেকোনো দিন প্রস্তাবটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
মন্ত্রণালয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ: নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকালীন সরকারের সব মন্ত্রণালয়ের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এ বিষয়েও আরপিওর ৪৪(ই) ধারা সংশোধনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ না করে সরকারের কোনো মন্ত্রণালয় কোনো ধরনের বদলি, পদোন্নতি ও নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। নির্বাচনকে প্রভাবিত করার মতো অন্য কোনো সিদ্ধান্তও মন্ত্রণালয় নিতে পারবে না।
প্রার্থী চূড়ান্ত করার ব্যাপারেও দলগুলোকে সময় কিছুটা বেশি দিতে চায় কমিশন। প্রস্তাবে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় পর্যন্ত প্রার্থী চূড়ান্ত করার সুযোগ রাখা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে হয়।
কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, একজন কমিশনার নির্বাচনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীকে (সেনা-নৌ-বিমানবাহিনী) অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবটি গৃহীত হয়নি। কমিশন ফৌজদারি কার্যবিধির আওতায় নির্বাচনের মাঠে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করতে চায়। সে ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য হিসেবে পুলিশ বা বিজিবির সদস্যরা বিনা পরোয়ানায় যে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারলেও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা পারেন না।

No comments

Powered by Blogger.