প্রসঙ্গ ইসলাম- ইসলাম-হিদায়াত-দাওয়াত- by অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ূম
সৎ পথ হচ্ছে হিদায়াত। আর এই হিদায়াতের দিকে দাওয়াত দেয়ার মধ্য দিয়ে ইসলামে পরিপূর্ণ দাখিল হবার সৌভাগ্য লাভ সম্ভব হয়। হিদায়াতের দিকে মানুষকে দাওয়াত দেয়ার জন্য প্রয়োজন শরী'আত তরীকত হকীকত ও মা'রিফাত বিশেষজ্ঞদের যারা সহজে মানুষকে সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করতে পারঙ্গম।
আলস্নাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁরই ইবাদতের জন্য। মানুষকে হিদায়াত দান করার জন্য যুগে যুগ নবী-রসুল প্রেরিত হয়ে এসেছেন। সহীফা বা কিতাব তাঁদের প্রতি নাযিল হয়েছে। কিতাবসমূহ হচ্ছে তওরাত, যবূর, ইঞ্জিল, কুরআন। নবী-রসুলগণের যুগ শেষ হয়েছে শেষ নবী হযরত মুহম্মদ সালস্নালস্নাহু 'আলায়াই ওয়া সালস্নামের আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে। তারপর এসেছে সাহাবায়ে কেরামের যুগ, যে যুগ শেষে ক্রমান্বয়ে এসেছে তাবেয়ীন তাবে-তাবেয়ীন যুগ। তারপর সুফীয়ায়ে ইসলাম প্রচারে অবদান রাখেন।
হিদায়াত শব্দের ব্যাপক অর্থ রয়েছে। হিদায়াত হচ্ছে সত্য পথ। হিদায়াত প্রাপ্তির মাধ্যমে আলস্নাহর রিযামন্দী বা সন্তুষ্টি ও কুর্বত বা নৈকট্য হাসিল করবার সৌভাগ্য লাভ হয়। সেই সঙ্গে দুনিয়ার কল্যাণ যেমন লাভ হয় তেমনি আখিরাতের কল্যাণও লাভ হয়। আমরা সূরা ফাতিহায় পাঠ করি ইহ্দিনাস্ সিরাতাল মুস্তাকিম_ আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করম্নন।
এই সরল পথই হচ্ছে ইসলাম। এই ইসলাম প্রচার নিজের গৃহ থেকেই শুরম্ন করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে : ওহে তোমরা যারা ঈমান এনেছ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার পরিজনকে দোযখের আগুন থেকে রৰা করো। (সূরা তাহ্রীম : আয়াত ৬)।
কোন পন্থায় হিদায়াতের দিকে মানুষকে দাওয়াত দিতে হবে সে সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে : তোমার রব-এর দিকে দাওয়াত দাও হিকমতের সঙ্গে এবং সুন্দর সুন্দর উপদেশ দিয়ে। (সূরা নহল : আয়াত ১২৫)।
নবী-রসুলগণ আলস্নাহ্ জালস্না শানুহুর নির্দেশ মুতাবিক মানুষকে সত্য সুন্দর সরল পথের দিকে আহ্বান করেছেন, তাঁরা হিদায়াত দানের জন্য যে পদ্ধতি প্রয়োগ করার নির্দেশপ্রাপ্ত হয়েছেন সেই পদ্ধতিই প্রয়োগ করেছেন। আলস্নাহ্ জালস্না শানুহু ইরশাদ করেন : মা 'আলার রসূলি ইলস্নাল্ বালাগ-প্রচার করাই কেবল রসূলের কর্তব্য। (সূরা মায়িদা : আয়াত ৯৯)।
ইসলাম প্রচার করার ৰেত্রে দাওয়াত শব্দটিও ব্যবহার করা হয়। দাওয়াতের নানা মাত্রিক অর্থ থাকলেও এৰেত্রে দাওয়াতের অর্থ আহ্বান বা আমন্ত্রণ যা আলস্নাহ্ জালস্না শানুহু নবী-রসূলগণের মাধ্যমে মানুষের প্রতি করেছেন। সব নবী-রসূলই মুসলিম ছিলেন এবং সকলের দীন বা জীবন ব্যবস্থাই ছিল ইসলাম কারণ আলস্নাহ কর্তৃক প্রদত্ত একমাত্র দীন হচ্ছে ইসলাম।
ইরশাদ হয়েছে : ইন্নাদ দীনা 'ইন্দালস্নাহিল্ ইসলাম_নিশ্চয়ই আলস্নাহর নিকট একমাত্র দীন ইসলাম। (সূরা আল ইমরান : আয়াত ১৯)।
এই ইসলাম পরিপূর্ণতা লাভ করে সর্বশেষ নবী সরকারে দোআলম নূরে মুজাস্সম হযরত মুহম্মাদুর রসূলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু 'আলায়হি ওয়া সালস্নামের মাধ্যমে। পৃথিবীতে তিনি ইসলামের সৌরভ ছড়িয়ে দিয়ে যেদিন তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে তাঁর রফিকুল 'আলা আলস্নাহ জালস্না শানুহুর নিকট ফিরে যান তার প্রায় ৯২ দিন পূর্বে ৯ জিলহজ্জ আরাফাত ময়দানে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার সাহাবায়ে কেরামের বিশাল সমাবেশে বিদায় হজ্জের যে খুত্বা প্রদান করেন সেই খুত্বায় তিনি মানব জাতিকে সম্বোধন করে বললেন : আমি তোমাদের নিকট রেখে যাচ্ছি আলস্নাহর কিতাব ও তাঁর রসূলের সুন্নাহ_ তোমরা যদি তা মজবুতভাবে অাঁকড়ে ধরো তাহলে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না।
সেদিন বিদায় হজ্জের ভাষণ শেষে আলস্নাহ্্ জালস্না শানুহু ইসলামের পরিপূর্ণতা ঘোষণা করে ওহী নাযিল হয়। আলস্নাহ্ জালস্না শানুহু ইরশাদ করেন : আল ইয়াওমা আকমালতু লাকুম দীনাকুম ওয়া আত্্মাম্তু 'আলায়কুম নি'মাতী ওয়ারাদীতু লাকুমুল ইসলামা দীনা_ আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করলাম। তোমাদের প্রতি আমার নি'আমত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের দীন ইসলামকে সানন্দ অনুমোদন দান করলাম। (সূরা মায়িদা : আয়াত ৩)।
যুগে যুগে যত নবী-রসূল পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছেন তাঁরা সবাই ইসলাম প্রচার করেছেন আপন কওম কিংবা অঞ্চলের মানুষের মধ্যে। কেউ কেউ বা হিজরত করেছেন এক অঞ্চল হতে অন্য অঞ্চলে। ইসলাম প্রচারে হিজরতেও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। আলস্নাহ জালস্না শানুহু হযরত মূসা 'আলায়হিস সালামকে ফিরাউনের কবল থেকে ইসরাইল সনত্মানদেরকে (বনী ইসরাইল) উদ্ধার করে দরিয়া পাড়ি দিয়ে হিজরত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
আলস্নাহ জালস্না শানুহু ইরশাদ করেন : আমি অবশ্যই মূসার প্রতি ওহী নাযিল করেছিলাম এই বলে যে, তুমি আমার বান্দাদেরকে নিয়ে রজনীযোগে বের হও এবং তাদের জন্য সমুদ্রের মধ্য দিয়ে এক শুকনো পথ নির্মাণ করো। পেছন থেকে এসে তোমাকে ধরে ফেলা হবে_ এমনতরো আশঙ্কা করো না এবং ভয়ও করো না। (সূরা ত্বহা : আয়াত ৭৭)।
প্রিয়নবী হযরত মুহম্মদ সালস্নালস্নাহু আলায়হি ওয়া সালস্নামকেও হিজরত করার নির্দেশ দেন আলস্নাহ জালস্না শানুহু। ইরশাদ হয়েছে : যারা হিজরত করেছে, নিজ গৃহ হতে যারা উৎখাত হয়েছে, আমার (আলস্নাহর) পথে যারা নির্যাতিত হয়েছে এবং যুদ্ধ করেছে ও নিহত হয়েছে আমি (আলস্নাহ) তাদের দোষ-ত্রম্নটিগুলো (পাপসমূহ) অবশ্যই দূরীভূত করব এবং অবশ্যই আমি (আলস্নাহ) তাদেরকে দাখিল করব জান্নাতে যার পাদদেশে নহর প্রবাহিত। এটা আলস্নাহর নিকট হতে পুরস্কার, উত্তম পুরস্কার আলস্নাহরই নিকট। (সূরা আল ইমরান : আয়াত ১৯৫)।
হযরত নূহ আলায়হিস সালাম প্রচার ৰেত্রে যে সব পদ্ধতি প্রয়োগ করতেন সে সব পদ্ধতি কুরআন মজীদে উলিস্নখিত হয়েছে। আলস্নাহ জালস্না শানুহু ইরশাদ করেন : আমি তো নূহ-কে পাঠিয়েছিলাম তার কওমের নিকট এবং সে বলেছিল : হে আমার কওম! আলস্নাহর ইবাদত করো, তিনি ব্যতীত তোমাদের অন্য কোন ইলাহ্্ নেই। আমি তোমাদের জন্য মহাদিবসের আযাবের আশঙ্কা করছি। তার কওমের প্রধানেরা বলেছিল : আমরাতো তোমাকে স্পষ্ট ভ্রানত্মিতে দেখছি। সে (নূহ) বলেছিল : হে আমার কওম! আমার মধ্যে কোন ভ্রানত্মি নেই, বরং আমি তো নিশ্চয়ই রব্বুল আলামীনের রসূল। আমার রব্-এর বাণী আমি তোমাদের নিকট পেঁৗছাচ্ছি ও তোমাদেরকে হিতোপদেশ দিচ্ছি। (সূরা আ'রাফ : আয়াত ৫৯-৬২)।
প্রিয়নবী সালস্নালস্নাহু 'আলায়হি ওয়া সালস্নাম হিদায়াতের দিকে মানুষকে দাওয়াত দেবার যে পথ ও পন্থা রেখে গেছেন তা প্রধানত পীর-আওলিয়া ধরে রেখেছেন। তাই তো বর্তমান বিশ্বে মুসলিম সংখ্যা দেড় শ' কোটিরও বেশি।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আঞ্জুমানে তোয়াজিয়া, উপদেষ্টা ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (সা)
No comments