ধরতে পারল না, মেরে ফেলা হলো- লোকালয়ে সুন্দরবনের বাঘ by মিজানুর রহমান
সুন্দরবনের চ-িপুর থেকে ফিরে লোকালয়ে চলে আসা সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে নিরাপদে ফের সুন্দরবনে ফেরত পাঠানো এবং জীবন রায় দ্রম্নত পদপে নিতে আবারও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বনবিভাগ।
ট্রাঙ্কুলাইজার গান ও চেতনানাশক ওষুধ না থাকায় লোকালয়ে ঢুকে পড়া বাঘটিকে জনরোষ থেকে বাঁচাতে শুক্রবার দিনভর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছে বিডিআর, পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি স্থানীয় সাংসদ। প্রায় অর্ধল গ্রামবাসী টানা ১২ ঘণ্টা বনবিভাগের কর্মতৎপরতা দেখার জন্য ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ও বিডিআরকে দফায় দফায় লাঠিচার্জ করতে হয়েছে। হাজার হাজার মানুষের ভিড় সামাল দিতে এবং তাদের ছোড়া ইট পাটকেলে ঠেকাতে বিকালে পুলিশ ৪ রাউন্ড টিয়ারগ্যাস ছোড়ে। ছোড়া ইটের আঘাতে স্থানীয় সাংসদ, সাংবাদিক, শ্যামনগর থানার ওসিসহ প্রায় ১০ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যনত্ম ঘরের মধ্যে থাকা বাঘটিকে জাল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ দল আসলেই বাঘটিকে উদ্ধার করা হবে বলে বিভাগীয় বনকর্মকর্তা জানিয়েছেন। কিন্তু ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ আসার আগেই ধৈর্যহীন এলাকাবাসী বাঘটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা এমনিতেই কমে আসছে। মানুষের পিটুনিতে এভাবে আরও একটি সংরৰণভুক্ত দুর্লভ প্রাণীর প্রাণ সংহার ঘটছে।সাতীরা শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরের বুড়িগোয়ালিনি ইউনিয়নের চ-ীপুর গ্রামে শুক্রবার ভোরে প্রায় সাড়ে ৭ ফুট লম্বা একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার ঢুকে পড়ে। সুন্দরবনের চুনানদী পার হয়ে প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার গ্রামের মধ্যে চলে আসা বাঘটি চারটি ছাগল খেয়ে ফেলে। সকালে লোকজনের হৈ চৈ দেখে বাঘটি খোরশেদ মীর্জার কাঠ ঘরের চালে উঠে পড়ে। সকাল ৯টার দিকে বাঘটি চাল ভেঙ্গে ঘরের মধ্যে পড়ে গেলে বাঘটি কাঠের মাচার নিচে আশ্রয় নেয়। এদিকে গ্রামে বাঘ ঢোকার খবরে বিভিন্ন গ্রাম থেকে হাজার হাজার মানুষ খোরশেদ মীর্জার বাড়ির চারিপাশে জড়ো হতে থাকে। দুপুরের মধ্যেই প্রায় অর্ধল মানুষ জড়ো হয় গ্রামজুড়ে। সকালে এলাকাবাসী ফাঁস লাগিয়ে ঘরের মধ্যে বাঘটিকে মেরে ফেলার চেষ্টা করলে শ্যামনগর থানার ওসি বাধা দেন। এতে তাকে ল্য করে ইট পাটকেল ছোড়া হয় এবং তিনি আহত হন। পুলিশ এ সময় লাঠিচার্জ করে এলাকাবাসীকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এদিকে বাঘটিকে জীবনত্ম উদ্ধার করে সুন্দরবনে ফেরত পাঠানোর জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন স্থানীয় সাংসদ এইচএম গোলাম রেজা। নীলডুমুর ব্যাটালিয়নের সিও লে. কর্নেল বদরম্নল আলমের নেতৃত্বে কয়েক পস্নাটুন বিডিআর বাঘ আশ্রিত ঘরটি ঘিরে রাখেন। তাঁরা জনতাকে ঠেকাতে চেষ্টা চালান। স্থানীয় বন বিভাগের ট্রাঙ্কুলাইজার গান ও এক্সপার্ট না থাকায় খুলনা বিভাগীয় বন অফিস থেকে কর্মকর্তাদের আসার অপোয় জনগণকে শানত্ম থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। সাড়ে ১১টায় খুলনা বিভাগীয় বনকর্মকর্তা অবনী ভূষণ ঠাকুর ও বন্যপ্রাণী বিভাগের ডিএফও ইয়াছিন নেওয়াজ চেতনানাশক ইনজেকশন ছাড়াই টাইগারবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে আসলে তারা এমপি, বিডিআর কর্মকর্তাসহ জনগণের তোপের মুখে পড়েন। ডিএফও জানান, খুলনা বিভাগীয় অফিসে ট্রাঙ্কুলাইজার গান থাকলেও এটির জন্য কোন ওষুধ নেই এবং দ গানম্যানও নেই। ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ দল আসলেই বাঘটি উদ্ধারে চেষ্টা চালানো হবে বলে বনকর্মর্কতা জানান। এ অবস্থায় বিকেলে জনগণ জাল দিয়ে ঘরটি ঘিরে ফেলে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করে। এভাবেই তারা অপেৰা করতে থাকে। কিন্তু ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ দল বা ওষুধ ট্রাঙ্কুলাইজার না আসাতে ধৈর্যহীন এলাকাবাসী একপর্যায়ে বাঘটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলে।
এদিকে বাঘ উদ্ধারে বনবিভাগের নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করে সাংসদ গোলাম রেজা সাংবাদিকদের বলেন, বনবিভাগের ব্যর্থতায় জনগণ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। তিনি বাঘটি উদ্ধারের জন্য সকাল থেকে বনমন্ত্রী, সচিবসহ প্রধান বন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললেও বাঘটি উদ্ধারে কেউ সাড়া দেয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে তদনত্ম কমিটি গঠন করে প্রয়োজনে সংসদে এ বিষযটি উত্থাপন করবেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করবেন বলে জানানো হয়েছে।
No comments