গ্রেফতারকৃত ১২ শিবির ক্যাডারের একজন জেলে, অন্যদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ
চট্টগ্রাম অফিস চট্টগ্রামে অস্ত্র ও গোলাবারম্নদসহ ১২ শিবির ক্যাডার গ্রেফতারের ঘটনায় রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে আসামিদের। বৃহস্পতিবার আদালত কর্তৃক সর্বোচ্চ ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের পর এ জিজ্ঞাসাবাদ শুরম্ন হয়েছে।
কিন্তু আসামি পৰের কেঁৗসুলিরা আবেদনের মাধ্যমে আদালত থেকে নির্যাতন বন্ধসহ জেলখানায় উন্নতমানের সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির দাবি জানিয়ে আদেশ নেয় বলে পুলিশের পৰ থেকে জানা গেছে। ফলে জিজ্ঞাসাবাদে কিছুটা শিথিলতা চলে এসেছে। এদিকে, আসামি পৰের কেঁৗসুলিরা বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যনত্ম প্রায় দশ দফায় আসামিদের সঙ্গে দেখা করেছে বলে থানার একটি সূত্রে জানা গেছে।মামলার বাদী ও ডবলমুরিং থানার ওসি আসামিদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করলেও আদালত সর্বোচ্চ ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। তবে এরমধ্যে জামায়াত নেতা ও জামায়াতের পরিচালনাধীন একটি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ডা. একরামুল হককে মাত্র একদিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে। বাকি ১১ জনের দুই থেকে তিনদিন পর্যনত্ম রিমান্ড মঞ্জুর হয়।
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন ডবলমুরিং থানার সহকারী কমিশনার, ওসি ও মামলার বাদী এক এসআই। প্রথম দিনে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যনত্ম ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শুক্রবার দুপুর পর্যনত্ম ডা. একরামুল হক পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন তিনি '৭১ ও এর পূর্বে ইসলামী ছাত্রসংঘের সক্রিয় নেতা ছিলেন। তবে বর্তমানে জামায়াত বা শিবিরের সঙ্গে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। তবে জামায়াত পরিচালনাধীন একটি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হিসেবে কিভাবে নিযুক্ত রয়েছেন সে প্রশ্নের জবাবে কিছুই বলেননি। অস্ত্র প্রসঙ্গেও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি তার কাছ থেকে।
এদিকে, গ্রেফতারকৃত শিবির কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়ে বাদ জুমা নগরীতে বিৰোভ সমাবেশসহ বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে। এতে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ছাত্র শিবির কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর-এর সভাপতি মু. কলিমুলস্নাহ এ দাবি জানান। এছাড়াও আরও অপস্থিত ছিলেন সাবেক মহানগর সভাপতি এ্যাডভোকেট গোলাম ফারম্নক, নগর দৰিণ জেলা সভাপতি আবু নাসের, সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন, উত্তর সেক্রেটারি মিজানুর রহমান প্রমুখ।
অভিযোগ রয়েছে, ডবলমুরিং থানার এসআই মাহবুবুল আলম মোলস্না কর্তৃক প্রদত্ত মামলার এজাহারে আসামিদের বাঁচানোর জন্য তথ্যে গরমিল দেখা গেছে। কারণ ঐ পুলিশ কর্মকর্তা এজাহারে একটি স্থানে উলেস্নখ করেছেন আসামিদের হেফাজত হতে অস্ত্র ও গোলাবারম্নদ উদ্ধার করা হয়েছে। আরেক পর্যায়ে তিনি লিখেছেন আসামিদের দেখানো স্থান থেকে অস্ত্র ও গোলাবারম্নদ উদ্ধার করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এ এসআই এজাহারের আরেকটি স্থানে ১৯-ক ও ১৯(চ) ধারার অস্ত্র আইনের কথা উলেস্নখ করলেও আরেকটি স্থানে ১৯-ক, ১৯(ক)(চ) ধারার কথা উলেস্নখ করেছেন। এখানে প্রশ্ন উঠেছে, কোথাও ধারা বাড়িয়ে আবার কোথাও কমিয়ে দেখানোর পেছনে উদ্দেশ্য প্রশ্নবিদ্ধ।
এছাড়াও আসামিদের গ্রেফতারের পর ১৮ জানুয়ারি থানায় জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা আগ্রাবাদ মিস্ত্রীপাড়ার হক ভিলার দ্বিতীয় তলার পশ্চিম পাশ্বর্ের ফ্যাটে শিবিরের সিনিয়র নেতা আবদুলস্নাহ আল মামুন, দেলোয়ার হোসেন, আবদুল জব্বার, আবদুল কাদের, নুরম্নন নবী ও আবদুল হালিম বসবাস করার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। এমনকি ১৭ জানুয়ারি রাত ১০টায় তারা ঢাকার উদ্দেশে চট্টগ্রাম ত্যাগ করে। এজাহারে সন্দেহজনকভাবে পুলিশ কর্মকর্তা এসব অস্ত্র ও গোলাবারম্নদ তাদের বলে ধারণা করছেন এমন মনত্মব্য লেখা রয়েছে। স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, পুলিশের হাতে ধরা পড়েনি এমন আসামিরা ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মী এবং ঘটনাস্থলে বর্ণিত হাতিয়ারগুলো দিয়ে প্রশিৰণ গ্রহণ করে।
দ্বিতীয় তলার পলাতক এসব আসামিদের কৰ থেকে ৬টি বইও উদ্ধার করা হয়। এসব বইয়ের বিশেস্নষণ করা হয়েছে অপরাধ প্রতিরোধে ইসলাম, জিহাদের ময়দানে মুসলিম বাহিনী, সংঘাতের মুখে ইসলাম, বৈপস্নবিক দৃষ্টিতে ইসলাম, দিন বদলের সনদ-মানুষ হত্যার লাইসেন্স, আমরা সেই সে জাতি। এসব বইয়ের কথা এজাহারে উলেস্নখ থাকলেও পুলিশ ঐ ভবন থেকে শিবির কর্মীদের ব্যবহৃত দুটি কম্পিউটারও উদ্ধার করেছে। কিন্তু এজাহারে এ দুটি কম্পিটারের কথা কেন উলেস্নখ করা হয়নি তা প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে।
এদিকে, ডবলমুরিং থানায় আসামিরা রিমান্ডে থাকাকালীন সময়ে শুধু জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীদের চাপই নয়, স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাঘব বোয়ালরাও এদের পৰে কথা বলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, শিবির কর্মী ও নেতারা থানা কম্পাউন্ডে এদের বিষয়ে যতটা তৎপর নয়, এরচেয়ে বেশি তৎপরতা দেখাচ্ছে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মী।
No comments