স্থানীয় সরকার শক্তিশালী না হলে দেশ পিছিয়ে যাবে আকবর আলী- এক বছর ধরে অকার্যকর উপজেলা চেয়ারম্যান, ১০ দফা দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচী
ফোকাস বাংলা নিউজ অকার্যকর উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে শুক্রবার। কিন্তু এখনও তারা কাজের ত্রে বুঝে পায়নি। নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার পেতে ১০ দফা দাবি আদায়ে আগামী মাস থেকেই আন্দোলনের কর্মসূচী হাতে নিয়েছে তারা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান পরিষদের আয়োজনে 'অকার্যকর উপজেলা পরিষদের ব্যর্থতার এক বছর' শীর্ষক সমাবেশে এ কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। পরিষদের সভাপতি এ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ ফটোর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যানদের আজ উৎসব পালন করার কথা ছিল, কিন্তু তারা ব্যর্থতার এক বছর পালন করে আন্দোলনের কর্মসূচী দিচ্ছে। এটা দুঃখজনক ব্যাপার। বাংলাদেশের জন্য এটা একটা কলঙ্কজনক অধ্যায়। তিনি বলেন, আমাদের কিছু ভুল বোঝাবুঝির কারণে এ সমস্যাগুলোর সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় সরকারকে আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন মনে করি। আসলে এটা ঠিক নয়। কারণ, একটি দেশের মূল কাঠামো তৈরি হয় স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে। এ জায়গাটি যদি শক্তিশালী না হয়, তাহলে দেশ পিছিয়ে পড়বে। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে স্পষ্ট উলেস্নখ ছিল সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার। কিন্তু স্থানীয় সরকার ছাড়া কোনদিন সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। অথচ সরকার এ দিকটাতে খেয়াল দিচ্ছে না বরং তাদের কোণঠাসা করে রেখেছে।এদিকে, সরকারের বাজেটে এমপিদের কোন মতা না থাকায় তারা স্থানীয় সরকারের জায়গাটা দখল করে রেখেছে। স্থানীয় সরকারের ওপর এমপিদের যে আলাদা মতা দেয়া হয়েছে, তা তুলে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান আকবর আলী খান। এ ছাড়া উপজেলা চেয়াম্যানদের নিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা সমাধানে গণভোটের আয়োজনেরও আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, সরকার উপজেলা চেয়ারম্যানদের সঙ্গে সৎ মায়ের মতো আচরণ করছে; যা গণতান্ত্রিক সরকারের উচিত নয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন_ এমপিরা যেভাবে নির্বাচিত, উপজেলা চেয়ারম্যানরা ঠিক একইভাবে নির্বাচিত। সুতরাং এমপিদের উচিত উপজেলা চেয়ারম্যানদের কষ্ট বোঝা। কিন্তু তারা তা না করে তাদের সঙ্গে শত্রম্নতা শুরম্ন করেছে। সরকারের উচিত শীঘ্র উপজেলা চেয়ারম্যানদের সঙ্গে বসে এ সমস্যার সমাধান করা। অন্যথায় দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ব্যাঘাত ঘটবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুজনের সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন দেশকে ুধা, দারিদ্র্যমুক্ত এবং গণতান্ত্রিক রূপ দিতে হলে অবশ্যই স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হবে। তিনি বলেন, সাংবিধানিক আকাঙ্ৰা হলো স্থানীয় সরকার দ্বারা দেশ পরিচালিত হবে। কিন্তু স্থানীয় সরকারের ব্যাপারে এমপিদের পুরোপুরি মতা দেয়া হলে তা সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদের সম্পূর্ণ পরিপন্থী হবে।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মোঃ জিয়াউল হক সরকার চেয়ারম্যান নবীনগর উপজেলা, এ্যাডভোকেট শামছুল আলম ভোলা চেয়ারম্যান ফরিদপুর সদর উপজেলা, ঘোষ সমন কুমার চেয়ারম্যান তালা উপজেলা, নুসরাত জাহান মুনি্ন চেয়ারম্যান রামু উপজেলা, তিতাস মোসত্মফা ভাইস-চেয়ারম্যান জয়পুরহাট সদর উপজেলা, অধ্যাপক আবিদুর রহমান ভাইস-চেয়ারম্যান হবিগঞ্জ উপজেলা, ফাতেমা মনির ভাইস-চেয়ারম্যান নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলাসহ আরও অনেকে।
বক্তারা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, সরকার গত এক বছর তাদের সঙ্গে পুতুল খেলা খেলেছে। বার বার পরিপত্র জারির নামে প্রহসন করেছে। তাদের কাজের কোন ত্রে তৈরি করে দেয়নি। শুধু আশ্বাস দিয়েছে। তারা বলেন, জনগণকে প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে তাদের ভোটে নির্বাচিত হয়েও কোন কাজ করতে পারছি না। অথচ জনগণ আমাদের ভুল বুঝছে। তারা বলেন, নির্বাচিত হওয়ার এক বছর পার হলেও সরকার তাদের কাজগুলো বুঝিয়ে দেয়নি। বরং তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার রম্নদ্ধ করে রেখেছে। যে কারণে তারা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হচ্ছে।
আমলাদের দোষ দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা থাকলেও আমলা এবং আমলানির্ভর কিছু কর্মকর্তার জন্য তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তারা বলেন, আমাদের সম্মান ফিরিয়ে দিন এবং নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ করে সমস্যার সমাধান করম্নন। অন্যথায় হরতাল, অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচী দিতে বাধ্য হব।
অনুষ্ঠান শেষে কর্মসূচী ঘোষণা করেন সংগঠনের সভাপতি এ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ ফটো। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে আগামী ৭ ফেব্রম্নয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রম্নয়ারি বিভিন্ন জেলা সফর, ১ মার্চ সকালে প্রত্যেক উপজেলায় মানববন্ধন ও সভা, ১৫ মার্চ প্রত্যেক জেলায় একই সঙ্গে মানববন্ধন ও সমাবেশ এবং ৩০ মার্চ সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসকাবের সামনে মানববন্ধন, সমাবেশ ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান। একই দিনে পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণার আভাস দেয়া হয়।
No comments