চিনির বাজার অস্থির তবু টিসিবির হেঁয়ালি by ফারজানা লাবনী
দেশে চিনির বাজার প্রায় তিন মাস ধরে অস্থির হয়ে আছে। দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই। তিন মাস আগেও খুচরা বাজারে যে চিনি ৪৫ থেকে ৪৭ টাকা কেজি ছিল, এখন তা ৫৭ থেকে ৬০ টাকা। এ অস্থিরতা কাটাতে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির ব্যবস্থা থাকলেও সমাধান নেই।
সত্যিকারের উদ্যোগের বদলে তাদের আছে হেঁয়ালিপনা। ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে চিনি আমদানি করে, প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা থাকলেও টিসিবি উন্মুক্ত পদ্ধতির দরপত্রে এমন দাম বেঁধে দিয়েছে যে, আমদানিকারকরা আর বিদেশ থেকে চিনি আনতে পারছেন না, কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম অনেক বেশি। টিসিবির দামের সঙ্গে তার কোনো সামঞ্জস্য নেই। এতে করে ক্ষতি হচ্ছে কয়েক ধরনের-দেশে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকছে না; ক্রেতারা ক্ষুব্ধ হচ্ছে সরকারের ওপর; আমদানিকারকরা জামানতের মোটা অঙ্কের টাকা হারাচ্ছেন, কেউ কেউ আবার এলসি খুলেও চিনি আনতে না পেরে বিপদগ্রস্ত হচ্ছেন। আর এসব সংকট সৃষ্টি হচ্ছে টিসিবির খামখেয়ালি নীতির কারণেই-এ অভিযোগ আমদানিকারকসহ সংশ্লিষ্ট মহলের।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বাজারে সরবরাহে ঘাটতি থাকায় চিনির দাম বাড়ছে। তাই সরকারি পর্যায়ে সাদা (পরিশোধিত) চিনি আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং একে শুল্কমুক্তও করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিনেও সে পদক্ষেপ কার্যকর হয়নি। কত দিনে আমদানির চিনি স্থানীয় বাজারে পাওয়া যাবে, তারও সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ জানাতে পারেননি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
টিসিবির সঙ্গে আমদানি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী মোট ব্যয়ের পাঁচ শতাংশ টাকা পারফরম্যান্স সিকিউরিটি বা জামানত বাবদ সরকারি খাতে জমা রাখতে হয়। বেঁধে দেওয়া সময়ে চিনি সরবরাহে ব্যর্থ হলে জমা দেওয়া অর্থ টিসিবি থেকে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ফেরত দেওয়া হয় না।
সূত্র জানায়, গত বুধবার পর্যন্ত টিসিবি থেকে ২৭টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিটিকে সাড়ে ১২ হাজার টন করে সাদা চিনি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে টিসিবির সঙ্গে সব শর্ত পূরণ করে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে সাতটি প্রতিষ্ঠান। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নাকোফ ও তানিয়া জামান ফুড প্রডাক্ট প্রতি টন চিনি ৫০০ ডলার হিসাবে, ইউনান দেহান কোং ও জাগো করপোরেশন প্রতি টন ৪৫৯ দশমিক ৫ ডলার, আল আমিন ট্রেডার্স ৪৯৫ ডলার, নাবিলা ৪৭৫ ডলার এবং ফাইন টেক ইন্টারন্যাশনাল ৫১০ ডলার হিসাবে চিনি সরবরাহে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে টিসিবিই চূড়ান্ত দর ঠিক করে দেয়, সে দরেই চুক্তি হয়। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে অসংগতি দেখেও শুধু ব্যবসা ধরে রাখার জন্যই ব্যবসায়ীরা চুক্তিবদ্ধ হন।
কিন্তু আমদানিকারকরা বলছেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন চিনির দাম ৭২০ থেকে ৮০০ ডলারের মধ্যে। অন্যান্য খরচ যোগ হলে টিসিবির সঙ্গে চুক্তি হওয়া মূল্যের চেয়ে তা অনেক বেশি হয়ে যায়। তাতে বিপুল পরিমাণ টাকা লোকসান হয়। একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, বেশ কিছু দিন থেকে চিনি আমদানির চেষ্টা করছি, কিন্তু লোকসানে চিনি আনা সম্ভব হয়ে উঠছে না। নতুন করে আলোচনার মাধ্যমে চিনির আমদানি মূল্য না বাড়িয়ে টিসিবি জামানতের টাকা আটকে রাখছে। এ টাকা টিসিবি বাজেয়াপ্ত করেছে বলে তিনি জানান।
টিসিবির আমদানি শাখার ঊর্ধ্বতন কার্যনির্বাহী বজলুর রশিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, �উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে চিনির আমদানি মূল্য নির্ধারণ করা হয়। ইচ্ছুক প্রতিষ্ঠান আমাদের প্রস্তাবে সম্মত হয় বলেই তারা অনুমোদন পায়। চুক্তিবদ্ধ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে চিনি সরবরাহে একাধিকবার সময় বাড়ানো হয়েছে। পরে কেউ চিনি সরবরাহে ব্যর্থ হলে তার দায়ভার টিসিবির নয়।� তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী টিসিবির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান পণ্য সরবরাহে ব্যর্থ হলে পারফরম্যান্স সিকিউরিটির টাকা সরকারি তহবিলে চলে যায়।
জাগো করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রবিউল ইসলাম বলেন, �আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে টিসিবি দাম বেঁধে দিলে আমাদের পক্ষে চিনি সরবরাহ করা সম্ভব হবে।�
গত বছর চুক্তি বাতিলের পর প্রসেসিভ ইন্টারন্যাশনাল এবং এসএস ইন্টারন্যাশনালের জামানতের টাকা টিসিবির কাছে রয়েছে। তারা আদালতের আশ্রয় নিয়েও কোনো ফল পায়নি। চলতি বছর চুক্তি হওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে টিসিবি থেকে জাগো করপোরেশনের জামানত বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আল আমিন ট্রেডার্সের বাংলাদেশ শাখার প্রধান রতি লাল দেবনাথ কালের কণ্ঠকে বলেন, এসব সমস্যার সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী হুমকি দিচ্ছেন যাতে চিনি সরবরাহ করতে না পারি। তিনি বলেন, �ব্যবসা এক দিনের নয়। লোকসান দিয়েই চিনি আনার প্রস্তুতি নিয়েছি। কাউকে সুবিধা দিতে ব্যবসা বন্ধ করব না।� তবে সাদা চিনি আমদানি করতে পর্যাপ্ত সুবিধার দাবি জানান তিনি।
টিসিবির অনুমোদন পেয়ে চিনি আমদানির উদ্দেশ্যে ব্রাজিলের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা এক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কালের কণ্ঠকে জানান, এলসি খোলা হয়েছে। ব্যাংকের মাধ্যমে বড় অঙ্কের টাকাও বিদেশি প্রতিষ্ঠানটিকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা এখন কম দামে চিনি দিতে রাজি নয়। এতে তিনি চরম হতাশ ও বিপদগ্রস্ত বলে জানান।
সম্প্রতি সাদা চিনি আমদানি উৎসাহিত করতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ বি এম খোরশেদ আলম। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অপরিশোধিত চিনি আমদানিকারকদের একতরফা বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা খর্ব করতেই সাদা চিনির ওপর থেকে আমদানি শুল্ক সাময়িক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
ওদিকে চিনির বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) থেকে ৫০ হাজার টন চিনি আমদানির প্রস্তুতি নেওয়া হয়। বিএসএফআইসি সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ হাজার টন চিনি আমদানির জন্য দুটি প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়। ২৫ হাজার টন করে প্রথম পর্যায়ে এশিয়া কমোডিটি লিমিটেড এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে রিয়া ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের মাধ্যমে চিনি আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় বিএসএফআইসি। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বাড়ায় দরপত্রের নির্ধারিত দামে আমদানি করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেয় এশিয়া কমোডিটি। ফলে প্রথম পর্যায়ে ২৫ হাজার টন চিনি আমদানির চুক্তি বাতিল হয়ে যায়। তখন রিয়া ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্যায়ের ২৫ হাজার টন চিনি আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রায় সাড়ে তিন মাস দেরিতে গত মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের আমদানি করা চিনি।
দেশে চিনির বাজার আমদানির ওপর নির্ভরশীল। চাহিদার সামান্যই রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো থেকে সরবরাহ করা হয়। শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫টি চিনিকলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ১৮ হাজার টন। অথচ সারা দেশে চিনির বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১৪ লাখ টন। চলতি মৌসুমে রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫টি চিনিকলে গত বুধবার পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ৩১ হাজার টন। চিনির মৌসুম ধরা হয় অক্টোবর থেকে মে মাস পর্যন্ত।
শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো থেকে চাহিদ অনুযায়ী চিনি সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। পর্যাপ্ত উৎপাদন না হওয়ায় সম্পূর্ণভাবে বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে কিছু ব্যবসায়ী নিজেদের লাভের বিষয়ে এত বেশি মগ্ন যে, তাঁরা ভোক্তাদের বিষয়টি চিন্তাই করতে চান না। তবে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে বলে মন্ত্রী জানান।
কিন্তু বাজারে চিনির দাম বেড়েই চলেছে। গত রমজানের শুরু থেকে ঈদের আগে পর্যন্ত ঢাকার খুচরা বাজারে চিনির দাম ছিল ৪৫ থেকে ৪৭ টাকা কেজি। ঈদের পর দাম বাড়তে শুরু করে। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে চিনি কেজিপ্রতি ৫৪ থেকে ৫৭ টাকা হয়। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে চিনি বিক্রি হয় ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা কেজি দরে। আর গত মাসের শেষ সপ্তাহে এ দর বেড়ে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। গতকাল মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি চিনি খুচরা বাজারে ৬০ টাকাই রয়েছে।
দাম বেড়েছে চাল আটা তেল পেঁয়াজের
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বাজারে সরবরাহে ঘাটতি থাকায় চিনির দাম বাড়ছে। তাই সরকারি পর্যায়ে সাদা (পরিশোধিত) চিনি আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং একে শুল্কমুক্তও করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিনেও সে পদক্ষেপ কার্যকর হয়নি। কত দিনে আমদানির চিনি স্থানীয় বাজারে পাওয়া যাবে, তারও সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ জানাতে পারেননি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
টিসিবির সঙ্গে আমদানি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী মোট ব্যয়ের পাঁচ শতাংশ টাকা পারফরম্যান্স সিকিউরিটি বা জামানত বাবদ সরকারি খাতে জমা রাখতে হয়। বেঁধে দেওয়া সময়ে চিনি সরবরাহে ব্যর্থ হলে জমা দেওয়া অর্থ টিসিবি থেকে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ফেরত দেওয়া হয় না।
সূত্র জানায়, গত বুধবার পর্যন্ত টিসিবি থেকে ২৭টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিটিকে সাড়ে ১২ হাজার টন করে সাদা চিনি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে টিসিবির সঙ্গে সব শর্ত পূরণ করে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে সাতটি প্রতিষ্ঠান। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নাকোফ ও তানিয়া জামান ফুড প্রডাক্ট প্রতি টন চিনি ৫০০ ডলার হিসাবে, ইউনান দেহান কোং ও জাগো করপোরেশন প্রতি টন ৪৫৯ দশমিক ৫ ডলার, আল আমিন ট্রেডার্স ৪৯৫ ডলার, নাবিলা ৪৭৫ ডলার এবং ফাইন টেক ইন্টারন্যাশনাল ৫১০ ডলার হিসাবে চিনি সরবরাহে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে টিসিবিই চূড়ান্ত দর ঠিক করে দেয়, সে দরেই চুক্তি হয়। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে অসংগতি দেখেও শুধু ব্যবসা ধরে রাখার জন্যই ব্যবসায়ীরা চুক্তিবদ্ধ হন।
কিন্তু আমদানিকারকরা বলছেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন চিনির দাম ৭২০ থেকে ৮০০ ডলারের মধ্যে। অন্যান্য খরচ যোগ হলে টিসিবির সঙ্গে চুক্তি হওয়া মূল্যের চেয়ে তা অনেক বেশি হয়ে যায়। তাতে বিপুল পরিমাণ টাকা লোকসান হয়। একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, বেশ কিছু দিন থেকে চিনি আমদানির চেষ্টা করছি, কিন্তু লোকসানে চিনি আনা সম্ভব হয়ে উঠছে না। নতুন করে আলোচনার মাধ্যমে চিনির আমদানি মূল্য না বাড়িয়ে টিসিবি জামানতের টাকা আটকে রাখছে। এ টাকা টিসিবি বাজেয়াপ্ত করেছে বলে তিনি জানান।
টিসিবির আমদানি শাখার ঊর্ধ্বতন কার্যনির্বাহী বজলুর রশিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, �উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে চিনির আমদানি মূল্য নির্ধারণ করা হয়। ইচ্ছুক প্রতিষ্ঠান আমাদের প্রস্তাবে সম্মত হয় বলেই তারা অনুমোদন পায়। চুক্তিবদ্ধ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে চিনি সরবরাহে একাধিকবার সময় বাড়ানো হয়েছে। পরে কেউ চিনি সরবরাহে ব্যর্থ হলে তার দায়ভার টিসিবির নয়।� তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী টিসিবির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান পণ্য সরবরাহে ব্যর্থ হলে পারফরম্যান্স সিকিউরিটির টাকা সরকারি তহবিলে চলে যায়।
জাগো করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রবিউল ইসলাম বলেন, �আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে টিসিবি দাম বেঁধে দিলে আমাদের পক্ষে চিনি সরবরাহ করা সম্ভব হবে।�
গত বছর চুক্তি বাতিলের পর প্রসেসিভ ইন্টারন্যাশনাল এবং এসএস ইন্টারন্যাশনালের জামানতের টাকা টিসিবির কাছে রয়েছে। তারা আদালতের আশ্রয় নিয়েও কোনো ফল পায়নি। চলতি বছর চুক্তি হওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে টিসিবি থেকে জাগো করপোরেশনের জামানত বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আল আমিন ট্রেডার্সের বাংলাদেশ শাখার প্রধান রতি লাল দেবনাথ কালের কণ্ঠকে বলেন, এসব সমস্যার সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী হুমকি দিচ্ছেন যাতে চিনি সরবরাহ করতে না পারি। তিনি বলেন, �ব্যবসা এক দিনের নয়। লোকসান দিয়েই চিনি আনার প্রস্তুতি নিয়েছি। কাউকে সুবিধা দিতে ব্যবসা বন্ধ করব না।� তবে সাদা চিনি আমদানি করতে পর্যাপ্ত সুবিধার দাবি জানান তিনি।
টিসিবির অনুমোদন পেয়ে চিনি আমদানির উদ্দেশ্যে ব্রাজিলের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা এক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কালের কণ্ঠকে জানান, এলসি খোলা হয়েছে। ব্যাংকের মাধ্যমে বড় অঙ্কের টাকাও বিদেশি প্রতিষ্ঠানটিকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা এখন কম দামে চিনি দিতে রাজি নয়। এতে তিনি চরম হতাশ ও বিপদগ্রস্ত বলে জানান।
সম্প্রতি সাদা চিনি আমদানি উৎসাহিত করতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ বি এম খোরশেদ আলম। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অপরিশোধিত চিনি আমদানিকারকদের একতরফা বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা খর্ব করতেই সাদা চিনির ওপর থেকে আমদানি শুল্ক সাময়িক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
ওদিকে চিনির বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) থেকে ৫০ হাজার টন চিনি আমদানির প্রস্তুতি নেওয়া হয়। বিএসএফআইসি সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ হাজার টন চিনি আমদানির জন্য দুটি প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়। ২৫ হাজার টন করে প্রথম পর্যায়ে এশিয়া কমোডিটি লিমিটেড এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে রিয়া ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের মাধ্যমে চিনি আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় বিএসএফআইসি। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বাড়ায় দরপত্রের নির্ধারিত দামে আমদানি করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেয় এশিয়া কমোডিটি। ফলে প্রথম পর্যায়ে ২৫ হাজার টন চিনি আমদানির চুক্তি বাতিল হয়ে যায়। তখন রিয়া ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্যায়ের ২৫ হাজার টন চিনি আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রায় সাড়ে তিন মাস দেরিতে গত মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের আমদানি করা চিনি।
দেশে চিনির বাজার আমদানির ওপর নির্ভরশীল। চাহিদার সামান্যই রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো থেকে সরবরাহ করা হয়। শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫টি চিনিকলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ১৮ হাজার টন। অথচ সারা দেশে চিনির বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১৪ লাখ টন। চলতি মৌসুমে রাষ্ট্রায়ত্ত ১৫টি চিনিকলে গত বুধবার পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে ৩১ হাজার টন। চিনির মৌসুম ধরা হয় অক্টোবর থেকে মে মাস পর্যন্ত।
শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো থেকে চাহিদ অনুযায়ী চিনি সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। পর্যাপ্ত উৎপাদন না হওয়ায় সম্পূর্ণভাবে বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে কিছু ব্যবসায়ী নিজেদের লাভের বিষয়ে এত বেশি মগ্ন যে, তাঁরা ভোক্তাদের বিষয়টি চিন্তাই করতে চান না। তবে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে বলে মন্ত্রী জানান।
কিন্তু বাজারে চিনির দাম বেড়েই চলেছে। গত রমজানের শুরু থেকে ঈদের আগে পর্যন্ত ঢাকার খুচরা বাজারে চিনির দাম ছিল ৪৫ থেকে ৪৭ টাকা কেজি। ঈদের পর দাম বাড়তে শুরু করে। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে চিনি কেজিপ্রতি ৫৪ থেকে ৫৭ টাকা হয়। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে চিনি বিক্রি হয় ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা কেজি দরে। আর গত মাসের শেষ সপ্তাহে এ দর বেড়ে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। গতকাল মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি চিনি খুচরা বাজারে ৬০ টাকাই রয়েছে।
দাম বেড়েছে চাল আটা তেল পেঁয়াজের
No comments