সঙ্কট সত্ত্বেও গ্যাস ভিত্তিক বিদু্যতকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ- দশ বিদু্যতকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে
কাওসার রহমান সঙ্কট সত্ত্বেও গ্যাসভিত্তিক ৩শ' মেগাওয়াট ৰমতার নতুন বিদু্যতকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে ইজিসিবি। বর্তমানে গ্যাস সঙ্কটের কারণে দেশের কমপ ে১০টি বিদু্যতকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে।
এসব বিদু্যতকেন্দ্রে ৭শ' মেগাওয়াট বিদু্যত কম উৎপাদিত হচ্ছে। ঠিক সেই সময়ে বাসত্মবতাকে উপো করে নবগঠিত বিদু্যত কোম্পানি ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (ইজিসিবি) গ্যাসচালিত ৩শ' মেগাওয়াট মতার আরেকটি নতুন বিদু্যতকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে গ্যাস উৎপাদন না বাড়লে ওই সব বিদু্যতকেন্দ্র কিভাবে চালু হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এ বিদু্যতকেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করা হবে সিদ্ধিরগঞ্জ বিদু্যত স্টেশনে। অথচ সিদ্ধিরগঞ্জ স্টেশনের বর্তমান বিদু্যতকেন্দ্রগুলোই গ্যাসের অভাবে চালানো যাচ্ছে না। এ অবস্থায় এটিকে ডুয়েল-ফুয়েল (দ্বৈত জ্বালানি) কেন্দ্র না করে শুধু গ্যাসভিত্তিক বিদু্যতকেন্দ্র কেন করা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিদু্যত খাতের বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেছেন, ডুয়েল-ফুয়েল কেন্দ্র না করে শুধু গ্যাসভিত্তিক বিদু্যতকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হলে এ স্টেশনের অন্য কেন্দ্রগুলোর মতো এটিকেও বসে থাকতে হবে গ্যাসের অভাবে। আর জাতি বঞ্চিত হবে বিদু্যত থেকে।
সূত্র জানায়, বিদু্যত খাত সংস্কারের অংশ হিসাবে ২০০৪ সালে ইজিসিবি গঠন করা হয়। পিডিবির সিদ্ধিরগঞ্জ স্টেশনটি দেয়া হয় ইজিসিটিকে। এ স্টেশনে বর্তমানে ২১০ মেগাওয়াটের একটি তাপ বিদু্যতকেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া ২৪০ মেগাওয়াটের আরেকটি কেন্দ্র এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে বাসত্মবায়নাধীন রয়েছে।
বাসত্মবায়নাধীন ২৪০ মেগাওয়াট কেন্দ্রের ১২০ মেগাওয়াটের মতার একটি ইউনিট ইতোমধ্যেই বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু গ্যাসের অভাবে ২১০ মেগাওয়াট তাপ বিদু্যতকেন্দ্র এবং ২৪০ মেগাওয়াটের নতুন ইউনিটটি চালানো যাচ্ছে না। তীব্র গ্যাস সঙ্কটের কারণে বিদু্যত মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই নতুন কেন্দ্রের দু'টি ইউনিটকেই ডুয়েল-ফুয়েল (দ্বৈত জ্বালানি) সিস্টেমে রূপানত্মরের নির্দেশনা দিয়েছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে, গ্যাসের সঙ্কটকালে কেন্দ্রটি যেন তরল জ্বালানি তথা ডিজেল বা ফার্নেস অয়েল দিয়েও চালানো যায়। ইজিসিবিও কেন্দ্রটি ডুয়েল-ফুয়েল করার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু্তু দেশে গ্যাস সঙ্কটের এ পরিস্থিতি সত্ত্বেও ইজিসিবি কি কারণে বা কার স্বার্থে সিদ্ধিরগঞ্জ স্টেশনে ৩শ' মেগাওয়াট মতার নতুন বিদু্যতকেন্দ্রটি শুধুমাত্র গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে তা বিশেষজ্ঞদের কাছে বোধগম্য নয়। এ প্রসঙ্গে সূত্র জানায়, গ্যাস সঙ্কটের কথা বিবেচনা করে গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত পেট্রোবাংলা ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে তারা আর নতুন কোন বিদু্যতকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করবে না। আর এ কারণেই পিডিবি তার প্রায় সব নতুন বিদু্যতকেন্দ্রই করছে, হয় তরল জ্বালানি অথবা কয়লাভিত্তিক। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইজিসিবি গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্র করার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।
তীব্র গ্যাস সঙ্কট মোকাবেলায় পেট্রোবাংলা আগামী বুধবার থেকে গ্যাস রেশনিংয়ের সিদ্ধানত্ম নিয়েছে। এ লৰ্যে রাজধানীসহ নারায়ণগঞ্জ, সাভার ও গাজীপুরকে সাতটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। ওই সাত অঞ্চলে এক একদিন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে। ফলে ওই দিনগুলোতে সংশিস্নষ্ট অঞ্চলের কারখানাগুলোত সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে। এ রেশনিংয়ের ফলে ৩০ থেকে ৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সাশ্রয় হবে।
সূত্র জানায়, ইজিসিবি গত বছর এপ্রিল মাসে ৩শ' মেগাওয়াট বিদু্যতকেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠার জন্য টেন্ডার আহ্বান করে। অথচ গ্যাস সঙ্কটের কথা জানা থাকা সত্ত্বেও তারা বিল্ট-ইন ডুয়েল-ফুয়েল সিস্টেম না রেখেই শুধু গ্যাসভিত্তিক বিদু্যতকেন্দ্রের জন্য প্রসত্মাব আহ্বান করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথম থেকেই যদি বিদু্যতকেন্দ্রটি ডুয়েল-ফুয়েল সিস্টেম সংবলিত না করা হয়, তা হলে নির্মাণের পর এটিকে ডুয়েল-ফুয়েল সিস্টেমে রূপানত্মরের উদ্যোগ নেয়া হলে এর স্থাপন ব্যয় বহুগুণ বেড়ে যাবে। কারণ একটি সিস্টেম থেকে অন্য একটি সিস্টেমে রূপানত্মরের ব্যয় অনেক বেশি। তাই তারা প্রথম থেকেই এ বিদু্যতকেন্দ্রটি ডুয়েল-ফুয়েল সিস্টেম সংবলিত করার কথা বলছেন।
এ সম্পর্কে ইজিসিবির কর্মকর্তারা গ্যাস সঙ্কটের কথা স্বীকার করে বলেছেন, সরবরাহজনিত সীমাবদ্ধতার কারণেই গ্যাসের এ সঙ্কট চলছে। বাখরাবাদ থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ পর্যনত্ম একটি গ্যাস পাইপলাইন নির্মিত হলেই এ সঙ্কটের সমাধান হয়ে যাবে। তখন আর গ্যাসের এ সঙ্কট থাকবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাস পাইপলাইন নির্মিত হলেও নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের শিল্প-কলকারখানার চাহিদা মেটাতেই তা ব্যবহৃত হবে। ফলে সিদ্ধিরগঞ্জ বিদু্যতকেন্দ্রের সঙ্কট সহজেই কাটবে না। তাই বিদু্যতকেন্দ্রটি ডুয়েল-ফুয়েল সিস্টেম সংবলিতই হওয়া উচিত, যাতে গ্যাস সঙ্কট হলেও তা লিকুইড ফুয়েলে চালানো যায়।
এদিকে গ্যাস সঙ্কট ছাড়াও বিদু্যতকেন্দ্রটির টেন্ডার আহ্বানের পর এর বাসত্মবায়নে নতুন একটি জটিলতা দেখা দিয়েছে। যার ফলে কেন্দ্রটির সময়মতো প্রতিষ্ঠা করা নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, টেন্ডারে মোট একটি বিদেশী কোম্পানি অংশ নেয়। তাদের প্রসত্মাব মূল্যায়নকালে দেখা যায়, নয়টি কোম্পানিই জার্মানির সিমেন্স কোম্পানির গ্যাস টারবাইন সরবরাহের প্রসত্মাব করেছে। অথচ এ প্রকল্পে অর্থায়নকারী সংস্থা বিশ্বব্যাংক গত বছর সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে, সিমেন্সের সঙ্গে তাদের একটি আইনগত বিরোধের কারণে কোন প্রকল্পে সিমেন্সের যন্ত্রপাতি সরবরাহ গ্রহণ করা হলে তারা তাতে অর্থায়ন করবে না। এখন ইজিসিবি বিদু্যত বিভাগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সম্পদ বিভাগের কাছে একটি প্রসত্মাব পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছে, যাতে বিশ্বব্যাংক সিমেন্সসংক্রানত্ম নিষেধাজ্ঞাটি রহিত করে। ইজিসিবি ইতোমধ্যে বিদু্যত সচিবের কাছে ইআরডি সচিবের উদ্দেশ্যে একটি ড্রাফট লেটারও পাঠিয়েছে। তারা চাচ্ছে বিদু্যত সচিব যেন ঐ ড্রাফট লেটারটি ইআরডি সচিবের কাছে পাঠায় এবং ইআরডি সচিব যেন তার অনুকরণে বিশ্বব্যাংকে একটি পত্র লেখেন।
No comments