রুদ্ধশ্বাস টিকিটযুদ্ধ-ব্যাংকের সামনে মানুষের মিছিল হয়রানি-হাহাকার, লাঠিপেটা
২০১১ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় ম্যাচগুলোর টিকিট বিক্রি শুরুর দিনটা যেন আনন্দ আর হতাশারই যুগলবন্দি। গতকাল সকাল ১০টা থেকে বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু হলেও টিকিটপ্রত্যাশীরা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন অনেক আগে থেকে।
যিনি বা যাঁরা লাইনে সবার আগে ছিলেন, তাঁদের অনেকেই সোনার হরিণ হাতে পেয়ে ঘরের মাঠে বসে বিশ্বকাপ দেখা নিশ্চিত করেছেন। আবার কেউ কেউ না পেয়ে মুষড়ে পড়েছেন হতাশায়। সারা দেশে সিটি ও অগ্রণী ব্যাংকের ৮০টি শাখায় টিকিট বিক্রির প্রথম দিন �না পাওয়ার� হতাশা থেকে উত্তেজনাও ছড়িয়েছে। ফলে ঢাকায় সিটি ব্যাংকের মিরপুর এক নম্বর এবং নিউ মার্কেট শাখার সামনে পুলিশের গরম পানি নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জের ঘটনাও ঘটেছে। ক্ষিপ্ত জনতার রোষে ভাঙচুর হয়েছে কিছু গাড়িও। মাঠের লড়াই শুরুর আগে টিকিটযুদ্ধটাও বেশ জমজমাট প্রথম দিন থেকেই।
ফ্যান ক্লাব �দৌড়া বাঘ আইলো�র সদস্যরাই সম্ভবত প্রথম লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। গত ৩১ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় তাঁরা ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর সিটি ব্যাংক শাখার সামনে হাজির হন বলে জানান এক সদস্য। সেদিন রাতে তাঁরা উল্টো দিকের গ্রামীণফোন সেন্টারের সামনে স্লিপিং ব্যাগে ঢুকে ও চাদর মুড়িয়ে রাত পার করেছেন বলেও জানান। এ শাখার সামনের ফুটপাতের লাইনের শুরুতেই ছিলেন তাঁদের ৪৫ জন সদস্য। কাল রাতে ফ্যান ক্লাবটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সাইফ মাহবুব রহমান প্রিয় ঘুমজড়ানো কণ্ঠেও টিকিট পাওয়ার আনন্দ ব্যক্ত করছিলেন, �বিশ্বকাপ আবার কবে বাংলাদেশে আসবে কে জানে! ভেবে ভালো লাগছে যে, আমরা খেলা দেখতে পারছি। সবাই কম-বেশি টিকিট পেয়েছি।�
কিন্তু পুরো ভিন্ন অবস্থা মাসুম সিদ্দিকী সুমনের। মিরপুর এক নম্বর সিটি ব্যাংকের সামনে ২৭ ঘণ্টা আগে লাইনে দাঁড়িয়েও ধাক্কাধাক্কিতে অনেক পিছিয়ে পড়ার হতাশায় ডুবে যাচ্ছিলেন এ তরুণ, �লাইনে দাঁড়ানো প্রথম লোক হিসেবে পত্রপত্রিকায় আমার ছবিসহ সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে। অথচ আমিই টিকিট পেলাম না। আমার স্বপ্ন ভেঙে গেল।� এ শাখার সামনে সকাল থেকেই তিনটি লাইনে ছিল উপচে পড়া ভিড়। দুটি পুরুষদের এবং একটি মহিলাদের লাইন। সকাল ১১টার দিকে হঠাৎই অপেক্ষমাণ জনতার মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। নিরাপত্তাকর্মীরা ব্যাংকের প্রধান গেট বন্ধ করে দিলেও বাইরে পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয় জনতার। একপর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হলে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর গরম পানি নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। ছত্রভঙ্গ বিক্ষোভকারীরা এরপর কয়েকটি গাড়ির ওপর চড়াও হয়। হুড়োহুড়ির মধ্যে পড়ে পুলিশের লাঠিচার্জের শিকার হন ডেইলি সান পত্রিকার ক্রীড়া সাংবাদিক মিনহাজউদ্দিন আহমেদ। এদিকে এ ঘটনার ব্যাপারে দারুস সালাম থানার ওসি আবদুল মালেক বলেন, �সকালের দিকে পুলিশ টিকিট সংগ্রহকারীদের লাইনে দাঁড় করিয়ে দেয়। কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোক লাইন ভাঙার কারণেই এ ঘটনা ঘটে।� এরপর ওই শাখার সামনে দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ালেও পুলিশ তা নিয়ন্ত্রণে আনে।
নারায়ণগঞ্জে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই উত্তেজিত জনতা ভেঙে ফেলে সিটি ব্যাংক শাখার গ্লাস। ব্যাংকের চিফ কমিউনিকেশনস অফিসার মাশরুর আরেফিন জানান, �আমাদের বঙ্গবন্ধু এভিনিউর শাখাও প্রায় বন্ধ করে দেওয়ার মতো অবস্থায় চলে গিয়েছিলাম। উত্তরা ও নিউ মার্কেট শাখায়ও ঝামেলা হয়েছে।� অনেকে কাক্সিক্ষত ম্যাচের টিকিট পাননি। বিশেষ করে আগামী ১৯ ফেব্র�য়ারি অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ-ভারত উদ্বোধনী ম্যাচের টিকিট জলদি শেষ হয়ে যাওয়ার ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, �টিকিট বিক্রির পুরো ব্যাপারটাই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কায়াজুঙ্গার (টিকেটিং এজেন্সি) ওয়েবসাইট থেকে। এখানে আমাদের করার তেমন কিছু নেই।� এ জন্যই কাল কী পরিমাণ টিকিট বিক্রি হয়েছে, সেটাও জানাতে পারেননি তিনি। কাল দুই, তিন ও ১০ হাজার টাকা দামের টিকিটগুলো বিক্রি করতে না পারার দায়ও চাপিয়েছেন কায়াজুঙ্গার ওপর। তাদের নিউ মার্কেট শাখার সামনে কাল দুপুর ১২টায় লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। ওই সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও দুই প্রাইভেট কারের কাচও ভেঙে ফেলে কিছু তরুণ। দায়িত্ব পালনকালে ইটের আঘাতে আহত হন কালের কণ্ঠের সিনিয়র আলোকচিত্রী মীর ফরিদ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়। ধানমণ্ডি থানার ওসি শাহ আলম বলেন, �অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে ফেলি।� লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটেছে সিটি ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখার সামনেও। বিভিন্ন জায়গায় মেয়েদের জন্য আলাদা লাইন থাকলেও তাঁদের অনেকেই টিকিট পাননি। মুন্সীগঞ্জ থেকে উদ্বোধনী ম্যাচের টিকিট কিনতে ঢাকায় আসা জয়া দাশ হতাশ হয়েই ফিরেছেন সিটি ব্যাংকের নিউ মার্কেট শাখা থেকে, �ভোর থেকে আমরা ২০ জন মেয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু একজনকেও ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কিভাবে, কারা টিকিট কিনল জানি না।� অনেকে কালক্ষেপণ করে টিকিট কালোবাজারি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। সিটি ব্যাংকের লোক পরিচয় দিয়ে ভেতরে ঢুকে টিকিট কেনার অভিযোগও শোনা গেছে। তবে নিউ মার্কেট শাখার বিক্রয় ও সেবা ব্যবস্থাপক সে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সময় লাগার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন এভাবেёএকটি টিকিটের কনফারমেশন আসতেই পাঁচ মিনিট লেগে যায়।� ওই শাখা থেকে কাল লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট না পাওয়া লোকদের সিরিয়াল অনুযায়ী টোকেন দেওয়া হয়েছে, যাতে আজ সোমবার সেটি দেখিয়ে তাঁরা টিকিট কিনতে পারেন।
রাজধানীর বাইরে দেশের অন্যান্য স্থানেও গতকাল আইসিসি বিশ্বকাপের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, নাটোর থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর�
চট্টগ্রাম : নিজের দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট মাঠ থেকে উপভোগ করার সুযোগ কিছুতেই হারাতে চান না ক্রীড়ামোদীরা। তাই টিকিট পেতে শনিবার বিকেল থেকেই চট্টগ্রামে সিটি ব্যাংকের পাঁচটি ও অগ্রণী ব্যাংকের একটি শাখার সামনে তাঁদের ভিড় জমতে থাকে। গতকাল সারা দিন প্রত্যেকটি শাখার সামনে ছিল বিভিন্ন বয়সের শত শত মানুষের লাইন। ছোটখাটো সমস্যা ছাড়া গতকাল চট্টগ্রামে বিশ্বকাপের টিকিট বিক্রির প্রথম দিনটি মোটামুটি নির্বিঘে�ই কেটেছে।
চট্টগ্রামের কোথাও তেমন কোনো ঝামেলার খবর পাওয়া না গেলেও টিকিট বিক্রির ধীরগতি নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন অপেক্ষমাণরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি ব্যাংক পাহাড়তলী শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নোয়াব মিয়া সিকদার স্বীকার করেন, ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে টিকিট বিক্রিতে কিছুটা সময় লেগেছে। তবে কাজটা দ্রুত শেষ করার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আন্দরকিল্লা শাখায় লাইনে দাঁড়ানো কিছু দর্শক টিকিট বিক্রিতে কারচুপির অভিযোগ করেছেন ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। তবে শাখা ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, এ অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন।
খুলনা : বিশ্বকাপের মাঠে সাকিব-তামিমদের নৈপুণ্য নিজের চোখে দেখার জন্য চাই টিকিট। আর সেই আরাধ্য টিকিট কিনতে শনিবার রাত থেকেই খুলনা সিটি ব্যাংকের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন ক্রিকেটপিপাসুরা। রাতের ঘুম বাদ দিয়ে, শীত সয়ে, সকাল থেকে দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট কিনেছেন তাঁরা।
সিটি ব্যাংক খুলনা শাখার ম্যানেজার মনিরুল ইসলাম বলেন, �আমরা ক্রিকেটপ্রেমীদের সর্বা�ক সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।�
সিলেট : পুরো জেলার জন্য ম্যাচপ্রতি মাত্র ১০৮টি টিকিট বরাদ্দ। তাই শনিবার বিকেল থেকেই সিলেট সিটি ব্যাংকের সামনে টিকিট প্রত্যাশীদের ভিড় জমতে শুরু করে। সারা রাত শীতের সঙ্গে লড়াই করে সকাল থেকে সারা দিন লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট পেয়েছেন হাতে গোনা কয়েকজন।
সকাল ১০টায় টিকিট বিক্রি শুরুর পর লাইনে দাঁড়ানো ক্রেতাদের পাঁচজন করে ব্যাংকের গেটের ভেতর নিয়ে যাওয়া হয়। টিকিট বিলি চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। টিকিট হাতে যখন একেকজন বেরিয়ে আসেন, বাকিরা তাঁদের চিৎকার করে সম্ভাষণ জানান। শনিবার বিকেল ৫টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত গতকাল দুপুরে টিকিট হাতে পান আখালিয়ার বাসিন্দা গোলাম সরোয়ার। তিনি বলেন, �বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ দেখার খুব ইচ্ছে ছিল। কিন্তু টিকিট পাইনি। দুটি টিকিট কিনেছি�একটা বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর অন্যটা বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড ম্যাচের।�
তবে সরোয়ারের মতো ভাগ্য নিয়ে খুব কম লোকই গতকাল ব্যাংকে এসেছিলেন। সুনামগঞ্জের পাগলা থেকে আসা সুমন আহমদ শনিবার বিকেল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও গতকাল বিকেলে ধাক্কাধাক্কির মধ্যে লাইন থেকে ছিটকে পড়েন। এরপর আর লাইনে ঢুকতে পারেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত খালি হাতেই বাড়ির পথ ধরেন সুমন।
বরিশাল : বরিশালের কলেজছাত্র অমৃত বাড়ৈ বিশ্বকাপের টিকিট কেনার জন্য শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় প্যারারা রোডের সিটি ব্যাংক শাখার সামনে হাজির হন। কিন্তু গতকাল সকাল ১১টায় টিকিট বিক্রির সময় লাইনে থাকা প্রথম ব্যক্তি হয়েও উদ্বোধনী খেলার টিকিট না পেয়ে কেঁদেই ফেলেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাঁকে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের একটি টিকিট দিয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
এদিকে টিকিট বিক্রির শুরুতেই বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না�এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে লাইনে থাকা কয়েক শ ক্রিকেটপ্রেমী উত্তেজিত হয়ে ব্যাংকের সামনে বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সারা দিন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর টিকিট পেয়ে বিজয়ীর বেশে ব্যাংক ছেড়েছেন কেউ কেউ। তবে অধিকাংশকেই বাড়ি ফিরতে হয়েছে টিকিট না পাওয়ার কষ্ট নিয়ে।
নারায়ণগঞ্জ : টিকিট চড়া দামে কালোবাজারিদের হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগে সিটি ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ শাখায় ভাঙচুর করেছে জনতা। সারা দিন লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট সংগ্রহ করতে না পেরে দুপুরের দিকে ক্রেতারা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তাঁদের একটি প্রতিনিধিদল উকিলপাড়ায় সিটি ব্যাংক কর্মকর্তা শরিফুল আজিজের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ ওঠে। বিক্ষুব্ধ টিকিট ক্রেতারা ব্যাংকের কাচ ভাঙচুর করেন।
নারায়ণগঞ্জ সদর থানার এসআই মোশাররফ টিকিট বিক্রির ধীরগতির কথা স্বীকার করেন। এ বিষয়ে সিটি ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক শরিফুল আজিজের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও তাঁকে অফিসে পাওয়া যায়নি। এক কর্মচারীকে দিয়ে খবর পাঠানোর পর তিনি এসে বলেন, �স্যার সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলবেন না।�
রংপুর : ক্রিকেট বিশ্বকাপের টিকিট কেনার জন্য রংপুর শহরে সিটি ব্যাংকের সেন্ট্রাল রোড শাখায় ভোর থেকেই ভিড়। দেশের মাটিতে প্রথম বিশ্বকাপ, তাই ইতিহাসের সাক্ষী হতে ভোরেই এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সুমন চৌধুরী। তাঁর সামনে আরো অন্তত পাঁচ শ ক্রিকেটপাগল মানুষ। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ শেষ পর্যন্ত টিকিট পেয়েছেন। তবে অধিকাংশকেই ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, রংপুরের জন্য সামান্য কিছু টিকিট বরাদ্দ দেওয়া হলেও সিটি ব্যাংকের কর্মকর্তারা নিজেদের লোকজনের কাছেই বেশির ভাগ টিকিট বিক্রি করে দিয়েছেন। এ অভিযোগের সত্যতা জানতে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপকের সাথে দেখা করতে চাইলেও ব্যাংকের ভেতরে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
নাটোর : সিটি ব্যাংকের নাটোর এসএমই শাখায় টিকিট বিক্রির খবর জানতে পেরে ভোর থেকেই ব্যাংক ভবনের সামনে লাইনে দাঁড়ানো শুরু করেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে থাকে। সকাল ১০টা পর্যন্ত টিকিট না পেয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ভোটার আইডি কার্ড দেখে প্রয়োজনীয় তথ্য এন্ট্রি করে টিকিটের পরিবর্তে একটি করে ক্যাশ ভাউচার দেন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কিন্তু চাহিদার তুলনায় কম টিকিট বরাদ্দ হওয়ায় দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরও ব্যর্থ হয়ে ফিরে যেতে হয় অধিকাংশ ক্রেতাকে।
ফ্যান ক্লাব �দৌড়া বাঘ আইলো�র সদস্যরাই সম্ভবত প্রথম লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। গত ৩১ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় তাঁরা ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর সিটি ব্যাংক শাখার সামনে হাজির হন বলে জানান এক সদস্য। সেদিন রাতে তাঁরা উল্টো দিকের গ্রামীণফোন সেন্টারের সামনে স্লিপিং ব্যাগে ঢুকে ও চাদর মুড়িয়ে রাত পার করেছেন বলেও জানান। এ শাখার সামনের ফুটপাতের লাইনের শুরুতেই ছিলেন তাঁদের ৪৫ জন সদস্য। কাল রাতে ফ্যান ক্লাবটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সাইফ মাহবুব রহমান প্রিয় ঘুমজড়ানো কণ্ঠেও টিকিট পাওয়ার আনন্দ ব্যক্ত করছিলেন, �বিশ্বকাপ আবার কবে বাংলাদেশে আসবে কে জানে! ভেবে ভালো লাগছে যে, আমরা খেলা দেখতে পারছি। সবাই কম-বেশি টিকিট পেয়েছি।�
কিন্তু পুরো ভিন্ন অবস্থা মাসুম সিদ্দিকী সুমনের। মিরপুর এক নম্বর সিটি ব্যাংকের সামনে ২৭ ঘণ্টা আগে লাইনে দাঁড়িয়েও ধাক্কাধাক্কিতে অনেক পিছিয়ে পড়ার হতাশায় ডুবে যাচ্ছিলেন এ তরুণ, �লাইনে দাঁড়ানো প্রথম লোক হিসেবে পত্রপত্রিকায় আমার ছবিসহ সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে। অথচ আমিই টিকিট পেলাম না। আমার স্বপ্ন ভেঙে গেল।� এ শাখার সামনে সকাল থেকেই তিনটি লাইনে ছিল উপচে পড়া ভিড়। দুটি পুরুষদের এবং একটি মহিলাদের লাইন। সকাল ১১টার দিকে হঠাৎই অপেক্ষমাণ জনতার মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। নিরাপত্তাকর্মীরা ব্যাংকের প্রধান গেট বন্ধ করে দিলেও বাইরে পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয় জনতার। একপর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হলে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর গরম পানি নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। ছত্রভঙ্গ বিক্ষোভকারীরা এরপর কয়েকটি গাড়ির ওপর চড়াও হয়। হুড়োহুড়ির মধ্যে পড়ে পুলিশের লাঠিচার্জের শিকার হন ডেইলি সান পত্রিকার ক্রীড়া সাংবাদিক মিনহাজউদ্দিন আহমেদ। এদিকে এ ঘটনার ব্যাপারে দারুস সালাম থানার ওসি আবদুল মালেক বলেন, �সকালের দিকে পুলিশ টিকিট সংগ্রহকারীদের লাইনে দাঁড় করিয়ে দেয়। কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোক লাইন ভাঙার কারণেই এ ঘটনা ঘটে।� এরপর ওই শাখার সামনে দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ালেও পুলিশ তা নিয়ন্ত্রণে আনে।
নারায়ণগঞ্জে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই উত্তেজিত জনতা ভেঙে ফেলে সিটি ব্যাংক শাখার গ্লাস। ব্যাংকের চিফ কমিউনিকেশনস অফিসার মাশরুর আরেফিন জানান, �আমাদের বঙ্গবন্ধু এভিনিউর শাখাও প্রায় বন্ধ করে দেওয়ার মতো অবস্থায় চলে গিয়েছিলাম। উত্তরা ও নিউ মার্কেট শাখায়ও ঝামেলা হয়েছে।� অনেকে কাক্সিক্ষত ম্যাচের টিকিট পাননি। বিশেষ করে আগামী ১৯ ফেব্র�য়ারি অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ-ভারত উদ্বোধনী ম্যাচের টিকিট জলদি শেষ হয়ে যাওয়ার ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, �টিকিট বিক্রির পুরো ব্যাপারটাই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কায়াজুঙ্গার (টিকেটিং এজেন্সি) ওয়েবসাইট থেকে। এখানে আমাদের করার তেমন কিছু নেই।� এ জন্যই কাল কী পরিমাণ টিকিট বিক্রি হয়েছে, সেটাও জানাতে পারেননি তিনি। কাল দুই, তিন ও ১০ হাজার টাকা দামের টিকিটগুলো বিক্রি করতে না পারার দায়ও চাপিয়েছেন কায়াজুঙ্গার ওপর। তাদের নিউ মার্কেট শাখার সামনে কাল দুপুর ১২টায় লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। ওই সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও দুই প্রাইভেট কারের কাচও ভেঙে ফেলে কিছু তরুণ। দায়িত্ব পালনকালে ইটের আঘাতে আহত হন কালের কণ্ঠের সিনিয়র আলোকচিত্রী মীর ফরিদ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়। ধানমণ্ডি থানার ওসি শাহ আলম বলেন, �অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে ফেলি।� লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটেছে সিটি ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখার সামনেও। বিভিন্ন জায়গায় মেয়েদের জন্য আলাদা লাইন থাকলেও তাঁদের অনেকেই টিকিট পাননি। মুন্সীগঞ্জ থেকে উদ্বোধনী ম্যাচের টিকিট কিনতে ঢাকায় আসা জয়া দাশ হতাশ হয়েই ফিরেছেন সিটি ব্যাংকের নিউ মার্কেট শাখা থেকে, �ভোর থেকে আমরা ২০ জন মেয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু একজনকেও ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কিভাবে, কারা টিকিট কিনল জানি না।� অনেকে কালক্ষেপণ করে টিকিট কালোবাজারি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। সিটি ব্যাংকের লোক পরিচয় দিয়ে ভেতরে ঢুকে টিকিট কেনার অভিযোগও শোনা গেছে। তবে নিউ মার্কেট শাখার বিক্রয় ও সেবা ব্যবস্থাপক সে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সময় লাগার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন এভাবেёএকটি টিকিটের কনফারমেশন আসতেই পাঁচ মিনিট লেগে যায়।� ওই শাখা থেকে কাল লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট না পাওয়া লোকদের সিরিয়াল অনুযায়ী টোকেন দেওয়া হয়েছে, যাতে আজ সোমবার সেটি দেখিয়ে তাঁরা টিকিট কিনতে পারেন।
রাজধানীর বাইরে দেশের অন্যান্য স্থানেও গতকাল আইসিসি বিশ্বকাপের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, নাটোর থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর�
চট্টগ্রাম : নিজের দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট মাঠ থেকে উপভোগ করার সুযোগ কিছুতেই হারাতে চান না ক্রীড়ামোদীরা। তাই টিকিট পেতে শনিবার বিকেল থেকেই চট্টগ্রামে সিটি ব্যাংকের পাঁচটি ও অগ্রণী ব্যাংকের একটি শাখার সামনে তাঁদের ভিড় জমতে থাকে। গতকাল সারা দিন প্রত্যেকটি শাখার সামনে ছিল বিভিন্ন বয়সের শত শত মানুষের লাইন। ছোটখাটো সমস্যা ছাড়া গতকাল চট্টগ্রামে বিশ্বকাপের টিকিট বিক্রির প্রথম দিনটি মোটামুটি নির্বিঘে�ই কেটেছে।
চট্টগ্রামের কোথাও তেমন কোনো ঝামেলার খবর পাওয়া না গেলেও টিকিট বিক্রির ধীরগতি নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন অপেক্ষমাণরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি ব্যাংক পাহাড়তলী শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নোয়াব মিয়া সিকদার স্বীকার করেন, ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে টিকিট বিক্রিতে কিছুটা সময় লেগেছে। তবে কাজটা দ্রুত শেষ করার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আন্দরকিল্লা শাখায় লাইনে দাঁড়ানো কিছু দর্শক টিকিট বিক্রিতে কারচুপির অভিযোগ করেছেন ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। তবে শাখা ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, এ অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন।
খুলনা : বিশ্বকাপের মাঠে সাকিব-তামিমদের নৈপুণ্য নিজের চোখে দেখার জন্য চাই টিকিট। আর সেই আরাধ্য টিকিট কিনতে শনিবার রাত থেকেই খুলনা সিটি ব্যাংকের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন ক্রিকেটপিপাসুরা। রাতের ঘুম বাদ দিয়ে, শীত সয়ে, সকাল থেকে দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট কিনেছেন তাঁরা।
সিটি ব্যাংক খুলনা শাখার ম্যানেজার মনিরুল ইসলাম বলেন, �আমরা ক্রিকেটপ্রেমীদের সর্বা�ক সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।�
সিলেট : পুরো জেলার জন্য ম্যাচপ্রতি মাত্র ১০৮টি টিকিট বরাদ্দ। তাই শনিবার বিকেল থেকেই সিলেট সিটি ব্যাংকের সামনে টিকিট প্রত্যাশীদের ভিড় জমতে শুরু করে। সারা রাত শীতের সঙ্গে লড়াই করে সকাল থেকে সারা দিন লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট পেয়েছেন হাতে গোনা কয়েকজন।
সকাল ১০টায় টিকিট বিক্রি শুরুর পর লাইনে দাঁড়ানো ক্রেতাদের পাঁচজন করে ব্যাংকের গেটের ভেতর নিয়ে যাওয়া হয়। টিকিট বিলি চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। টিকিট হাতে যখন একেকজন বেরিয়ে আসেন, বাকিরা তাঁদের চিৎকার করে সম্ভাষণ জানান। শনিবার বিকেল ৫টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত গতকাল দুপুরে টিকিট হাতে পান আখালিয়ার বাসিন্দা গোলাম সরোয়ার। তিনি বলেন, �বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ দেখার খুব ইচ্ছে ছিল। কিন্তু টিকিট পাইনি। দুটি টিকিট কিনেছি�একটা বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর অন্যটা বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড ম্যাচের।�
তবে সরোয়ারের মতো ভাগ্য নিয়ে খুব কম লোকই গতকাল ব্যাংকে এসেছিলেন। সুনামগঞ্জের পাগলা থেকে আসা সুমন আহমদ শনিবার বিকেল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও গতকাল বিকেলে ধাক্কাধাক্কির মধ্যে লাইন থেকে ছিটকে পড়েন। এরপর আর লাইনে ঢুকতে পারেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত খালি হাতেই বাড়ির পথ ধরেন সুমন।
বরিশাল : বরিশালের কলেজছাত্র অমৃত বাড়ৈ বিশ্বকাপের টিকিট কেনার জন্য শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় প্যারারা রোডের সিটি ব্যাংক শাখার সামনে হাজির হন। কিন্তু গতকাল সকাল ১১টায় টিকিট বিক্রির সময় লাইনে থাকা প্রথম ব্যক্তি হয়েও উদ্বোধনী খেলার টিকিট না পেয়ে কেঁদেই ফেলেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাঁকে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের একটি টিকিট দিয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
এদিকে টিকিট বিক্রির শুরুতেই বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না�এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে লাইনে থাকা কয়েক শ ক্রিকেটপ্রেমী উত্তেজিত হয়ে ব্যাংকের সামনে বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সারা দিন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর টিকিট পেয়ে বিজয়ীর বেশে ব্যাংক ছেড়েছেন কেউ কেউ। তবে অধিকাংশকেই বাড়ি ফিরতে হয়েছে টিকিট না পাওয়ার কষ্ট নিয়ে।
নারায়ণগঞ্জ : টিকিট চড়া দামে কালোবাজারিদের হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগে সিটি ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ শাখায় ভাঙচুর করেছে জনতা। সারা দিন লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট সংগ্রহ করতে না পেরে দুপুরের দিকে ক্রেতারা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তাঁদের একটি প্রতিনিধিদল উকিলপাড়ায় সিটি ব্যাংক কর্মকর্তা শরিফুল আজিজের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ ওঠে। বিক্ষুব্ধ টিকিট ক্রেতারা ব্যাংকের কাচ ভাঙচুর করেন।
নারায়ণগঞ্জ সদর থানার এসআই মোশাররফ টিকিট বিক্রির ধীরগতির কথা স্বীকার করেন। এ বিষয়ে সিটি ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক শরিফুল আজিজের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও তাঁকে অফিসে পাওয়া যায়নি। এক কর্মচারীকে দিয়ে খবর পাঠানোর পর তিনি এসে বলেন, �স্যার সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলবেন না।�
রংপুর : ক্রিকেট বিশ্বকাপের টিকিট কেনার জন্য রংপুর শহরে সিটি ব্যাংকের সেন্ট্রাল রোড শাখায় ভোর থেকেই ভিড়। দেশের মাটিতে প্রথম বিশ্বকাপ, তাই ইতিহাসের সাক্ষী হতে ভোরেই এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সুমন চৌধুরী। তাঁর সামনে আরো অন্তত পাঁচ শ ক্রিকেটপাগল মানুষ। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ শেষ পর্যন্ত টিকিট পেয়েছেন। তবে অধিকাংশকেই ফিরতে হয়েছে খালি হাতে। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, রংপুরের জন্য সামান্য কিছু টিকিট বরাদ্দ দেওয়া হলেও সিটি ব্যাংকের কর্মকর্তারা নিজেদের লোকজনের কাছেই বেশির ভাগ টিকিট বিক্রি করে দিয়েছেন। এ অভিযোগের সত্যতা জানতে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপকের সাথে দেখা করতে চাইলেও ব্যাংকের ভেতরে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
নাটোর : সিটি ব্যাংকের নাটোর এসএমই শাখায় টিকিট বিক্রির খবর জানতে পেরে ভোর থেকেই ব্যাংক ভবনের সামনে লাইনে দাঁড়ানো শুরু করেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে থাকে। সকাল ১০টা পর্যন্ত টিকিট না পেয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ভোটার আইডি কার্ড দেখে প্রয়োজনীয় তথ্য এন্ট্রি করে টিকিটের পরিবর্তে একটি করে ক্যাশ ভাউচার দেন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কিন্তু চাহিদার তুলনায় কম টিকিট বরাদ্দ হওয়ায় দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরও ব্যর্থ হয়ে ফিরে যেতে হয় অধিকাংশ ক্রেতাকে।
No comments