সুন্দরবন রাখব তো? by একরামুল হক শামীম

গত ২০ জুন জানা যায়, বিশ্বের প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের ভোটাভুটির তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে সুন্দরবন। সুন্দরবন শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে (িি.িহব৭িড়িহফবৎং.পড়স/াড়ঃরহম-ঃৎবহফং)। শীর্ষ সাতে থাকা নামগুলো একনজরে দেখে নেওয়া যাক_ শীর্ষে সুন্দরবন, দ্বিতীয় স্থানে দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু আইল্যান্ড, তৃতীয় স্থানে


ভিয়েতনামের হেলং বে, চতুর্থ স্থানে ফিলিপাইনের পিপি আন্ডারগ্রাউন্ড রিভার, পঞ্চম স্থানে ম্যাটারহর্ন/কারভিনো, ষষ্ঠ স্থানে মালদ্বীপ এবং সপ্তম স্থানে চাইনিজ তাইপের ইউশান। এই ভোটিং ট্রেন্ড পরিবর্তন হচ্ছে। সুন্দরবনকে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের তালিকায় রাখতে সবাই এখন উদ্যোগী। অনলাইনে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি চলছে এসএমএস ভোটিং। কেউ কেউ আবার ফোন করেও ভোট দিচ্ছেন। মিডিয়াগুলোও নিয়মিত সুন্দরবনকেন্দ্রিক খবর প্রকাশ করছে, প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের ভোটাভুটির ব্যাপারে খবর জানাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্পেইন করে সুন্দরবনের পক্ষে ভোট নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন সুন্দরবনের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে। কয়েক দিন আগে এসএমএসে সুন্দরবনকে ভোট দেওয়ার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। ১১ নভেম্বর পর্যন্ত ভোট দেওয়া যাবে এসএমএসের মাধ্যমে। এসএমএসের মাধ্যমে সুন্দরবনকে ভোট দিতে হলে মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে ঝই টাইপ করতে হবে। তারপর তা পাঠিয়ে দিতে হবে ১৬৩৩৩ নম্বরে। খরচ প্রতি এসএমএসে ২ টাকা ৩০ পয়সা। গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুকে এসএমএস ভোটিংয়ের পক্ষে নানা ধরনের প্রচারণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এরই মধ্যে একটি ফেসবুক ইভেন্টও খোলা হয়েছে, যেখানে প্রায় এক হাজার লোক যোগ দিয়েছেন। এসব সুন্দরবনের ব্যাপারে আমাদের আশান্বিত করে। তবে সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত 'উজাড় হচ্ছে সুন্দরবন' শিরোনামের লেখা পড়ার পর সেই আশার আলো হঠাৎ করেই নিভে যেতে চায়। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর পরিবেশগত ভারসাম্যই যদি ঠিক না থাকে, তাহলে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের শীর্ষে থেকেই-বা কী হবে। স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে, আমরা কি কেবল প্রচারণামুখী হয়ে পড়ছি। যে সুন্দরবনকে ঘিরে আমরা এত এত প্রচারণা চালাচ্ছি. মন্ত্রীরা তাদের গুরুত্বপূর্ণ সময় ব্যয় করে সুন্দরবনের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন, এমনকি আমাদের প্রধানমন্ত্রীও যে সুন্দরবনের পক্ষে ভোট চাচ্ছেন সে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার খবরে কয়জন প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন? সুন্দরবনের গোলপাতা কাটার পাস পারমিট বন্ধ থাকা সত্ত্বেও নৌকাভর্তি গোলপাতা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ কাজে জড়িতরা এর জন্য নৌকাপ্রতি খরচ করছে মাত্র দুই থেকে তিন হাজার টাকা। প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, সুন্দরবনের মূল্যবান সম্পদ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ধ্বংস করার সঙ্গে জড়িত বন বিভাগেরই কোনো কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী। রক্ষক যখন ভক্ষক হয়ে ওঠে তখন কোনো কিছুকে রক্ষা করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে।
সুন্দরবন উজাড় হওয়া সংক্রান্ত আরও কিছু খবর জেনে নেওয়া যাক। সুন্দরবনের টহল ফাঁড়ি সংলগ্ন এলাকার কিছু চোরাকারবারি সুন্দরী, পশুর, ধুন্দল, কাঁকড়া, বাইন, কেওয়া গাছ কেটে ফেলছে। তাছাড়া হরিণ শিকার করছে। এসব ফাঁড়ি সংলগ্ন খেজুরিয়া, খেজুরিয়ার গেট, বাঁধ, ভোজনখালী ও বাণীশান্তা এলাকা দিয়ে পাচার করা হচ্ছে। এছাড়া সুন্দরবনের চরের খাল, কুলতলীর খাল, গাগড়ামারী খাল ও ভারানীর খালে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল পেতে মাছ ধরা হচ্ছে। এখানেই শেষ নয়, এসব খালে বিষ প্রয়োগ করে মাছ ধরে তা পাচার করা হচ্ছে। একদিকে সুন্দরবনের পক্ষে ঘটা করে ভোট চাওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে পাচারকারীদের দৌরাত্ম্যে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে সুন্দরবন!
 

No comments

Powered by Blogger.