বিসিএসে কোটা পদ্ধতি-সংস্কার জরুরি
প্রচলিত কোটা পদ্ধতিতে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দান যথাযথ হচ্ছে না বলে সরকারি কমিশনের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পর্যন্ত এই পদ্ধতি নিয়ে সাধারণ্যে যে বিতর্ক চলে আসছিল, এর পর তা নতুন মাত্রা পেল। অন্তত চাকরিপ্রার্থীদের সমস্যাগুলো সম্পর্কে সরকারের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হলো।
সরকারি কর্মকমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই পদ্ধতি অবলম্বন করে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করা প্রায় অসম্ভব। প্রশ্ন আসে, তাহলে প্রায় অসম্ভব কাজটি কিভাবে এত দিন পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানটি করে এসেছে? আশার কথা, সর্বশেষ পিএসসি থেকে কিছু সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়েছে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের জন্য। কোটা হার পরিবর্তনের কোনো প্রস্তাবনা তাদের সুপারিশে নেই। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কোটার হার পরিবর্তনের বিষয়টিও ভেবে দেখা দরকার। সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের প্রাধান্য থাকা উচিত। কিন্তু কোটার আধিক্য থাকার কারণে মেধার শর্ত সংগত কারণেই শিথিল হয়ে যাচ্ছে। এতে সরকারি কর্মীবাহিনীতে যোগ্যদের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। আমাদের সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী পিছিয়েপড়া জনগণকে সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে যে জেলাভিত্তিক কোটা নির্ধারণ করা হয়েছিল, স্বাধীনতা লাভের পরপর তা নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা হয়েছে। সরকারি চাকরিতে যোগদানের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়টি সরকারের ভেবে দেখা দরকার। সরকারি কর্মকমিশন তাদের সুপারিশে শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়োগ লাভের জন্য কিছু পদে বয়সসীমা তুলে দেওয়ার পক্ষে মত প্রদান করেছে। কিন্তু সরকারি চাকরিতে নবাগতদের জন্য সুখবর হতে পারে এমন কোনো প্রস্তাবনা দেওয়া হয়নি। যেহেতু সরকারি চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই পদ শূন্য হওয়ার সময় বেড়ে গেল। এই পরিস্থিতিতে নবাগতদের জন্য যদি বয়সসীমা বাড়িয়ে না দেওয়া হয় তাহলে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। তার সঙ্গে যুক্ত আছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সমাপনের সময়সীমা। সরকারের ব্যর্থতা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ইত্যাদি কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ে বেরিয়ে যেতে পারছে না। কিন্তু তাদের বয়স বেড়ে যাচ্ছে ঠিকই। ফলে প্রতিবছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী সরকারি চাকরি লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যেহেতু কোটা পদ্ধতি পূরণের প্রয়োজনে সরকারি কর্মকমিশন কোটা পদ্ধতি সংস্কারের চিন্তা করছে, তাই এই সুযোগে বয়সের বিষয়টিও সুরাহা হয়ে যাওয়া উচিত। যেমনি মেধাভিত্তিক নিয়োগের দিকেও প্রাধান্য দেওয়া দরকার। বর্তমান কোটা পদ্ধতিকে জটিল, দুরূহ এবং সময়ক্ষেপণকারী বলে আখ্যায়িত করেছে সরকারি কর্মকমিশন। জটিলতা নিরসন করে সরলভাবে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ লাভের সুযোগ তৈরি হোক। চাকরিপ্রার্থীদের যাতে হয়রানির শিকার না হতে হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
No comments