পাঠকের প্রশ্ন, আইনি পরামর্শ

যেকোনো আইনি সমস্যা ও প্রশ্ন থাকলে লিখুন। বিজ্ঞ আইনজীবীরা পরামর্শ দেবেন। ঠিকানা: আইন অধিকার, প্রথম আলো, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫। ই-মেইল ain@prothom-alo.info
ছেলেকে পেতে কী করণীয়?


আমি ২০০৫ সালে বিয়ে করি এবং ২০০৮ সালে আমাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। আমার একটি পুত্রসন্তান আছে, যার বয়স বর্তমানে পাঁচ বছর চার মাস। আদালতের মাধ্যমে ছেলের খোরপোশ বাবদ প্রতি মাসে এক হাজার ৫০০ টাকা প্রদান করি। অথচ বিবাহবিচ্ছেদের পর থেকে শত চেষ্টা করেও আমার ছেলের সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। কীভাবে ছেলেকে নিয়মিত দেখতে পাব এবং কত দিন পর ছেলেকে আমার হেফাজতে নিতে পারব—অনুগ্রহ করে পরামর্শ দিলে ভীষণ উপকৃত হব।
মো. নূর আলম, দিনাজপুর।
পরামর্শ: আইন অনুযায়ী আপনার ছেলের অভিভাবক আপনি। তবে ছেলেসন্তান সাত বছর পর্যন্ত হেফাজত ও তত্ত্বাবধানের জন্য মায়ের কাছে থাকতে পারে। যদি মা অন্যত্র বিয়ে করেন তাহলে তাঁর এ অধিকার হারাতে হতে পারে। সন্তানের মা অন্যত্র বিয়ে করেছেন কি না তা উল্লেখ করেননি। তবে সন্তানকে দেখতে পাওয়ার অধিকার আপনার আছে। এ জন্য আপনি চাইলে পারিবারিক আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন। ছেলেসন্তানকে ফেরত পেতে সন্তানের সাত বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

আসামি পলাতক থাকলে পরিণাম কী?
এখন থেকে প্রায় ১৫ বছর আগে, আমার বয়স তখন ১২ কি ১৩, নাটোর মহারাজা জে এন উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি। তখন একটি মারামারি সংঘটিত হয়। ওই দিন ঘটনাস্থলে আমি উপস্থিত ছিলাম না। আমি স্কুলে ছিলাম। কিন্তু ষড়যন্ত্র করে আমার নাম দেওয়া হয়েছে। মারামারির সপ্তাহ খানেকের ব্যবধানে মানুষ মারা যায়। অভিযোগপত্রের ধারা: ১৪৭/১৪৮/৪৪৭/৩২৩/৩২৪/ ৩০২/১৪৯ দঃবিঃ। মামলাটি ঘিরে আমার কিছু প্রশ্ন রয়েছে। অল্প বয়সে আমি আসামি হয়েছিলাম। এ জন্য আমার জীবন বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে। আমি সমাজের সবচেয়ে হতাশাগ্রস্ত একজন যুবকে পরিণত হয়েছি। ছোটবেলা থেকে আমার স্বপ্ন ছিল, সরকারি চাকরি করব। আজ কৃষি ডিপ্লোমার সামান্য একটি সনদ হাতে। আমি তো কোনো দোষ করিনি। তবে কেন মামলার আসামি হলাম?
আমার কিছু প্রশ্ন:
১. কোনো মামলায় যাকে ১ নম্বর আসামি করা হয় এবং সে যদি পলাতক হয়, তার ঘাড়ে দোষের চাপ বেড়ে যায় কি?
২. মামলার রায় যখন দোরগোড়ায় পৌঁছায়, ওই মুহূর্তে পলাতক আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তার আদালত অবমাননার দায়-কলঙ্ক মুছে যাবে কি?
৩. সমাজের কিছু ব্যক্তি বলে থাকে, ১৪-১৫ বছর ধরে কোনো মামলার আসামি যদি পলাতক থাকে, তার আর কোনো ভয় নেই। সে দেশে এসে নির্ভয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে। তাদের ধারণা, মামলার বয়স বেশি হলে মামলাটি আপনা-আপনি ফাইলবন্দী হয়ে খারিজ হয়ে যায়। কথাটি কি ঠিক? এ রকম নিয়মনীতি বা আইন আগে কখনো ছিল?
আজাদ, নাটোর।
পরামর্শ: আইনত, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আদালতে হাজির থেকেই মামলায় লড়ে যেতে হবে এবং নিজেকে নির্দোষ হিসেবে বিচার চাইতে হবে। এ জন্য আদালতে উপস্থিত থাকতে হয়, প্রতি তারিখে হাজিরা দিতে হয়। কেউ অনুপস্থিত থাকলে আইনের দৃষ্টিতে সে পলাতক এবং তার অনুপস্থিতিতেই বিচার সম্পন্ন হওয়ার বিধান আছে। বিচারে অভিযুক্ত ব্যক্তির দোষ প্রমাণিত হলে তার অনুপস্থিতিতেই সাজা হতে পারে। তাই কেউ পলাতক থাকলে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা খারিজ হয়ে যায়—এ ধারণা মিথ্যা।
পরামর্শ দিয়েছেন: কাজী জাহিদ ইকবাল
আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

No comments

Powered by Blogger.