দরপত্রে অংশ নেওয়া ঠিকাদার নিয়ে নৌমন্ত্রীর বিদেশি বন্দর পরিদর্শন! by মাসুদ মিলাদ
নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বে একটি দল এবার ‘অভিজ্ঞতা অর্জনের’ জন্য চার দেশের বন্দর পরিদর্শনে যাচ্ছে। মন্ত্রীর সফরসঙ্গীর তালিকায় আছেন বন্দরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিন।
এই প্রতিষ্ঠান বন্দরের সবচেয়ে বড় টার্মিনাল নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে (এনসিটি) বিনিয়োগ ও পরিচালনার দরপত্রে অংশ নিয়েছে। দরপত্রের প্রক্রিয়া চলার সময় ঠিকাদারকে নিয়ে মন্ত্রীর বিদেশ সফরে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। নৌ-মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নৌমন্ত্রীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল প্রথমে লন্ডনে অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক নৌ-সংস্থার ১০৮তম অধিবেশনে যোগ দেবে। ১১ জুন থেকে এই সফর শুরু হবে। সফরের দ্বিতীয় পর্যায়ে ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল ১৫ থেকে ২২ জুন পর্যন্ত চার দেশের পাঁচটি বন্দর পরিদর্শন করবে। এই বন্দরগুলো হচ্ছে: নেদারল্যান্ডের রটারড্যাম, জার্মানির হামবুর্গ, ইতালির ভেনিস ও নেপৌলি এবং ফ্রান্সের ক্যালিওস বন্দর। বিদেশি বন্দর পরিদর্শনে মন্ত্রী ও ঠিকাদার ছাড়াও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শামসুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, নৌ-মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. সোহরাব হোসেন শেখ, বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল মোয়াজ্জেম হোসেন রয়েছেন। দরপত্রের প্রক্রিয়া চলাকালে ঠিকাদারকে সঙ্গে নিয়ে বিদেশ সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি এভাবে দেখিনি। হয়তো খেয়ালও করা হয়নি। আর সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিজ খরচেই যাচ্ছেন। এর পরও এ রকম প্রশ্ন উঠলে প্রয়োজনে সফর-তালিকা থেকে ওই ব্যবসায়ীকে বাদ দেওয়া হবে।’ বিদেশ সফরের যৌক্তিকতা তুলে ধরে নৌমন্ত্রী বলেন, এবার বন্দরের নতুন চেয়ারম্যান আসায় এই সফরের আয়োজন করা হয়েছে। বিদেশের বন্দরের অভিজ্ঞতা এখানে কাজে লাগানোর জন্য এই সফরের আয়োজন। বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বন্দরের সবচেয়ে বড় টার্মিনাল এনসিটির দরপত্রের প্রক্রিয়া চলছে। সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডসহ প্রাকযোগ্য ছয়টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে দরপত্র বিতরণ করা হয়েছে। ২৫ জুন এই দরপত্র জমা দেওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড প্রতিষ্ঠানকে দরপত্রে অংশ নেওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত করার সময় নানা অভিযোগ ওঠে।
জানতে চাইলে বন্দর বোর্ডের সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) হাদী হোসেন গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, বন্দর-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা আগেও এ ধরনের বিদেশ সফরে গেছেন। তবে এখন এনসিটির দরপত্রের প্রক্রিয়া চলছে। এই দরপত্রে অংশগ্রহণকারী একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রীর সঙ্গে বিদেশ সফরে যাওয়ায় এ ক্ষেত্রে একটা পক্ষপাতিত্বের প্রশ্ন থেকে যায়। বন্দর সূত্রে জানা গেছে, দরপত্রে অংশগ্রহণকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বিষয়টি জেনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনসিটির দরপত্রে অংশগ্রহণকারী বিদেশি প্রতিষ্ঠানের দেশীয় অংশীদারেরা বলেছেন, ঠিকাদারকে নিয়ে নৌমন্ত্রীর বিদেশ সফর এই দরপত্রে ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি করবে। বিদেশ সফরসংক্রান্ত নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের চিঠি অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক নৌ-সংস্থার সম্মেলনে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধির মধ্যে নৌমন্ত্রী, সাংসদ শামসুল হক চৌধুরী এবং মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সোহরাব হোসেন শেখের ব্যয়ভার বহন করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। দ্বিতীয় দফায় ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলের মধ্যে পাঁচজনের ব্যয়ভার বহন করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুহুল আমিন তরফদারের ব্যয়ভার তাঁকেই বহন করার কথা বলা হয় ওই চিঠিতে। বন্দর সূত্রে জানা গেছে, এই সফরের জন্য ৩৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা অগ্রিম নেওয়া হয়েছে বন্দর থেকে। বন্দরের প্রশিক্ষণ খাত থেকে এই ব্যয় নির্বাহ করা হচ্ছে।
কাজে আসেনি ‘অভিজ্ঞতা অর্জন’: নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এর আগেও নৌমন্ত্রীর নেতৃত্বে দুই দফায় দুটি বড় দল বন্দরের টাকা খরচ করে বিদেশি বন্দর সফর করে। এসব সফরের কার্যত কোনো সুফল পায়নি বন্দর। যেমন, বিদেশি বন্দর সফর করে ‘অভিজ্ঞতা’ অর্জনের পর বন্দর ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত দায়িত্ব থেকে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন অনেক কর্মকর্তা। ফলে বন্দরের টাকায় বিদেশ সফরের পর তাঁদের অভিজ্ঞতা কোনো কাজেই আসছে না। আবার দেখা গেছে, কিছু সুপারিশের কারণে বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি। যেমন, ২০১০ সালে প্রথম সফর শেষে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করার সুপারিশের কারণে এই টার্মিনালটির দরপত্র পিছিয়ে গেছে। এখনো বেসরকারি হাতে ছেড়ে দেওয়া যায়নি। বন্দর সূত্রে জানা গেছে, নৌমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথম দফায় ১৬ সদস্যের দল দুই সপ্তাহব্যাপী চার দেশের ১০টি বন্দর পরিদর্শন করে। প্রতিনিধিদলের মধ্যে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ছাড়া বাকি ১২ সদস্যের জন্য মোট ৪২ লাখ ৬৩ হাজার ২৮০ টাকা ব্যয় পরিশোধ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এই বিশাল বহর ১৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ১০টি সুপারিশ করে। দ্বিতীয় দফায় গত বছরের মার্চে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল তিনটি দেশের সমুদ্রবন্দর পরিদর্শন করে। এই তিনটি হলো—দুবাই, কেনিয়ার মোম্বাসা এবং সিঙ্গাপুর সমুদ্রবন্দর। কমিটি এই তিনটি দেশের বন্দর পরিদর্শন করে সাতটি সুপারিশ করে। এই সফরে বন্দরের প্রশিক্ষণ খাত থেকে প্রায় ৫৫ লাখ টাকা ব্যয় নির্বাহ করা হয়।
জানতে চাইলে বন্দর বোর্ডের সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) হাদী হোসেন গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, বন্দর-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা আগেও এ ধরনের বিদেশ সফরে গেছেন। তবে এখন এনসিটির দরপত্রের প্রক্রিয়া চলছে। এই দরপত্রে অংশগ্রহণকারী একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রীর সঙ্গে বিদেশ সফরে যাওয়ায় এ ক্ষেত্রে একটা পক্ষপাতিত্বের প্রশ্ন থেকে যায়। বন্দর সূত্রে জানা গেছে, দরপত্রে অংশগ্রহণকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বিষয়টি জেনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনসিটির দরপত্রে অংশগ্রহণকারী বিদেশি প্রতিষ্ঠানের দেশীয় অংশীদারেরা বলেছেন, ঠিকাদারকে নিয়ে নৌমন্ত্রীর বিদেশ সফর এই দরপত্রে ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি করবে। বিদেশ সফরসংক্রান্ত নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের চিঠি অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক নৌ-সংস্থার সম্মেলনে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধির মধ্যে নৌমন্ত্রী, সাংসদ শামসুল হক চৌধুরী এবং মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সোহরাব হোসেন শেখের ব্যয়ভার বহন করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। দ্বিতীয় দফায় ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলের মধ্যে পাঁচজনের ব্যয়ভার বহন করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুহুল আমিন তরফদারের ব্যয়ভার তাঁকেই বহন করার কথা বলা হয় ওই চিঠিতে। বন্দর সূত্রে জানা গেছে, এই সফরের জন্য ৩৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা অগ্রিম নেওয়া হয়েছে বন্দর থেকে। বন্দরের প্রশিক্ষণ খাত থেকে এই ব্যয় নির্বাহ করা হচ্ছে।
কাজে আসেনি ‘অভিজ্ঞতা অর্জন’: নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এর আগেও নৌমন্ত্রীর নেতৃত্বে দুই দফায় দুটি বড় দল বন্দরের টাকা খরচ করে বিদেশি বন্দর সফর করে। এসব সফরের কার্যত কোনো সুফল পায়নি বন্দর। যেমন, বিদেশি বন্দর সফর করে ‘অভিজ্ঞতা’ অর্জনের পর বন্দর ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত দায়িত্ব থেকে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন অনেক কর্মকর্তা। ফলে বন্দরের টাকায় বিদেশ সফরের পর তাঁদের অভিজ্ঞতা কোনো কাজেই আসছে না। আবার দেখা গেছে, কিছু সুপারিশের কারণে বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি। যেমন, ২০১০ সালে প্রথম সফর শেষে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করার সুপারিশের কারণে এই টার্মিনালটির দরপত্র পিছিয়ে গেছে। এখনো বেসরকারি হাতে ছেড়ে দেওয়া যায়নি। বন্দর সূত্রে জানা গেছে, নৌমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথম দফায় ১৬ সদস্যের দল দুই সপ্তাহব্যাপী চার দেশের ১০টি বন্দর পরিদর্শন করে। প্রতিনিধিদলের মধ্যে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ছাড়া বাকি ১২ সদস্যের জন্য মোট ৪২ লাখ ৬৩ হাজার ২৮০ টাকা ব্যয় পরিশোধ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এই বিশাল বহর ১৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ১০টি সুপারিশ করে। দ্বিতীয় দফায় গত বছরের মার্চে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল তিনটি দেশের সমুদ্রবন্দর পরিদর্শন করে। এই তিনটি হলো—দুবাই, কেনিয়ার মোম্বাসা এবং সিঙ্গাপুর সমুদ্রবন্দর। কমিটি এই তিনটি দেশের বন্দর পরিদর্শন করে সাতটি সুপারিশ করে। এই সফরে বন্দরের প্রশিক্ষণ খাত থেকে প্রায় ৫৫ লাখ টাকা ব্যয় নির্বাহ করা হয়।
No comments