পবিত্র কোরআনের আলো-উহুদ যুদ্ধের পর্যালোচনা ও পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণ
১৫২. ওয়া লাক্বাদ সাদাক্বাকুমুল্লাহু ওয়া'দাহূ ইয তাহুচ্ছূনাহুম বিইয্নিহী; হাত্তা ইযা ফাশিলতুম ওয়াতানাযা'তুম ফিল আম্রি ওয়া'আসাইতুম মিম বা'দি মা আরাকুম মা তুহিব্বূন; মিন্কুম মাইঁ ইউরীদূদ দুন্ইয়া ওয়া মিন্কুম মাইঁ ইউরীদুল আখিরাতা; ছুম্মা সারাফাকুম 'আনহুম লিয়াব্তালিয়াকুম; ওয়া লাক্বাদ 'আফা 'আন্কুম; ওয়াল্লাহু যূ ফাদ্ব্লিন 'আলাল মু'মিনীন।
১৫৩. ইয তুস্'য়িদূনা ওয়ালা তাল্ঊনা 'আলা আহাদিউঁ ওয়ার্রাসূলু ইয়াদ্'ঊকুম ফী উখ্রাকুম ফাআছাবাকুম গাম্মাম বিগাম্মিল লিকাইলা তাহ্যানূ 'আলা মা ফাতাকুম ওয়ালা মা আসাবাকুম; ওয়াল্লাহু খাবীরুম বিমা তা'মালূন। [সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫২-১৫৩]
অনুবাদ : ১৫২. আল্লাহ তায়ালা (উহুদের যুদ্ধে) তোমাদের যে সাহায্য প্রদানের অঙ্গীকার করেছিলেন, তা তিনি পালন করেছেন। তোমরা আল্লাহর অনুমতি নিয়ে তাদের (কাফিরদের) নির্মূল করে যাচ্ছিলে। এমনকি তোমরা যখন সাহস হারিয়ে এবং একটি বিশেষ আদেশ পালনের ব্যাপারে (গিরিপথ পাহারা দেওয়ার কাজ) মতপার্থক্য শুরু করে দিলে, আল্লাহর রাসুল (সা.) যখন তোমাদের কাঙ্ক্ষিত সেই লক্ষ্য দেখিয়েছিলেন, এর পরও তোমরা তাঁর কথা অমান্য করে সেই স্থান ছেড়ে চলে গেলে। তোমাদের কিছু লোক তখন বৈষয়িক ফায়দা হাসিল করতে চাইল। (অপরদিকে) তখনো তোমাদের কিছু লোক পরকালের কল্যাণ চাইতে থাকল। অতঃপর আল্লাহ পরীক্ষা নিতে চাইলেন এবং তা থেকে তোমাদের অন্যদিকে ফিরিয়ে দিলেন। এরপর আল্লাহ তোমাদের মাফ করে দিলেন। আল্লাহ ইমানদারদের প্রতি দয়াশীল।
১৫৩. যুদ্ধে বিপর্যয়ের সময় তোমরা যখন পাহাড়ের দিকে উঠে যাচ্ছিলে এবং তোমরা তোমাদের অন্য কারো প্রতি লক্ষ রাখছিলে না, অথচ আল্লাহর রাসুল (সা.) তোমাদের পেছন থেকে ডাকছিলেন। তাই আল্লাহ তোমাদের ওপর দুঃখের পর দুঃখ দিলেন, যেন তোমাদের কাছ থেকে যা হারিয়ে গেছে এবং যে বিপদ পতিত হয়েছে, এতে তোমরা উদ্বিগ্ন না হও। আল্লাহ তোমাদের সব কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।
ব্যাখ্যা : এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে উহুদ যুদ্ধের খণ্ড খণ্ড ঘটনার বিবরণ দিয়ে যুদ্ধে প্রথমে বিজয়ী হওয়ার পরও পরাজিত হওয়ার কারণের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। এই যুদ্ধে রাসুল (সা.) ইবনে যুবাইরের নেতৃত্বে ৫০ জন যোদ্ধাকে সর্বদা পশ্চাতের গিরিপথ রক্ষার জন্য নিয়োজিত করেছিলেন। কিন্তু কেউ কেউ রণকৌশল হিসেবে গিরিপথ প্রহরায় নিয়োজিত থাকার ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেছিল। সম্মুখযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর অল্পক্ষণের মধ্যেই মুসলমানদের প্রচণ্ড আক্রমণে কাফির যোদ্ধারা রণক্ষেত্র থেকে দৌড়ে পালাতে লাগল। মুসলিম যোদ্ধারা তাদেরকে পেছন দিক থেকে দৌড়ে হত্যা করতে লাগল। এ সময় গিরিপথরক্ষী যোদ্ধারা মনে করল, যুদ্ধে জয় হয়ে গেছে তাদের। সুতরাং এখন গনিমতের মাল সংগ্রহ করাই কাজ। তাঁদের একটি অংশ গনিমতের মাল সংগ্রহে লেগে গেল, আর অন্যরাও পলায়নরত প্রতিপক্ষের পেছনে ছুটল। এ সময় গিরিপথ উন্মুক্ত দেখে কুরাইশ বাহিনীর সৈন্যরা পেছন দিক থেকে ঢুকে মুসলমানদের ওপর আক্রমণ চালাল। অকস্মাৎ একসঙ্গে এই আক্রমণে মুসলিম বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ল। এই যুদ্ধে রাসুল (সা.) নিজে আহত হলেন; হামজা (রা.) সহ মুসলিম বাহিনীর অনেক সেনানায়ক নিহত হলেন। এ আয়াতগুলোর মাধ্যমে এই কাহিনীর খণ্ডচিত্রই বর্ণনা করা হয়েছে এবং জয়-পরাজয়ের তাৎপর্যের প্রতি ইঙ্গিত করে ভুলের ফাঁদে পা দেওয়া মুসলমানদের প্রতি তিরস্কার করা হয়েছে। আসলে গিরিপথরক্ষী যোদ্ধাদের কর্তব্যে অবহেলার কারণেই এ যুদ্ধে জয় থেকে পরাজয় নেমে এল। এ আয়াতে কর্তব্যে অবহেলাকারীদের তিরস্কার করে আবার তাঁদের মাফ করে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। ভীষণ বিপর্যয় এবং দুঃখ-কষ্ট নেমে আসার পরও এ যুদ্ধ যে মুসলমানদের জন্য অনেক শিক্ষণীয় হয়েছিল, সেটাই এখানে বলা হয়েছে। ফলে মুসলমানদের ব্যর্থতার দিকগুলো যেমন তুলে ধরা হয়েছে, তেমনি পরাজয়ের গ্লানি থেকে মুক্ত হওয়ার দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
অনুবাদ : ১৫২. আল্লাহ তায়ালা (উহুদের যুদ্ধে) তোমাদের যে সাহায্য প্রদানের অঙ্গীকার করেছিলেন, তা তিনি পালন করেছেন। তোমরা আল্লাহর অনুমতি নিয়ে তাদের (কাফিরদের) নির্মূল করে যাচ্ছিলে। এমনকি তোমরা যখন সাহস হারিয়ে এবং একটি বিশেষ আদেশ পালনের ব্যাপারে (গিরিপথ পাহারা দেওয়ার কাজ) মতপার্থক্য শুরু করে দিলে, আল্লাহর রাসুল (সা.) যখন তোমাদের কাঙ্ক্ষিত সেই লক্ষ্য দেখিয়েছিলেন, এর পরও তোমরা তাঁর কথা অমান্য করে সেই স্থান ছেড়ে চলে গেলে। তোমাদের কিছু লোক তখন বৈষয়িক ফায়দা হাসিল করতে চাইল। (অপরদিকে) তখনো তোমাদের কিছু লোক পরকালের কল্যাণ চাইতে থাকল। অতঃপর আল্লাহ পরীক্ষা নিতে চাইলেন এবং তা থেকে তোমাদের অন্যদিকে ফিরিয়ে দিলেন। এরপর আল্লাহ তোমাদের মাফ করে দিলেন। আল্লাহ ইমানদারদের প্রতি দয়াশীল।
১৫৩. যুদ্ধে বিপর্যয়ের সময় তোমরা যখন পাহাড়ের দিকে উঠে যাচ্ছিলে এবং তোমরা তোমাদের অন্য কারো প্রতি লক্ষ রাখছিলে না, অথচ আল্লাহর রাসুল (সা.) তোমাদের পেছন থেকে ডাকছিলেন। তাই আল্লাহ তোমাদের ওপর দুঃখের পর দুঃখ দিলেন, যেন তোমাদের কাছ থেকে যা হারিয়ে গেছে এবং যে বিপদ পতিত হয়েছে, এতে তোমরা উদ্বিগ্ন না হও। আল্লাহ তোমাদের সব কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।
ব্যাখ্যা : এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে উহুদ যুদ্ধের খণ্ড খণ্ড ঘটনার বিবরণ দিয়ে যুদ্ধে প্রথমে বিজয়ী হওয়ার পরও পরাজিত হওয়ার কারণের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। এই যুদ্ধে রাসুল (সা.) ইবনে যুবাইরের নেতৃত্বে ৫০ জন যোদ্ধাকে সর্বদা পশ্চাতের গিরিপথ রক্ষার জন্য নিয়োজিত করেছিলেন। কিন্তু কেউ কেউ রণকৌশল হিসেবে গিরিপথ প্রহরায় নিয়োজিত থাকার ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেছিল। সম্মুখযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর অল্পক্ষণের মধ্যেই মুসলমানদের প্রচণ্ড আক্রমণে কাফির যোদ্ধারা রণক্ষেত্র থেকে দৌড়ে পালাতে লাগল। মুসলিম যোদ্ধারা তাদেরকে পেছন দিক থেকে দৌড়ে হত্যা করতে লাগল। এ সময় গিরিপথরক্ষী যোদ্ধারা মনে করল, যুদ্ধে জয় হয়ে গেছে তাদের। সুতরাং এখন গনিমতের মাল সংগ্রহ করাই কাজ। তাঁদের একটি অংশ গনিমতের মাল সংগ্রহে লেগে গেল, আর অন্যরাও পলায়নরত প্রতিপক্ষের পেছনে ছুটল। এ সময় গিরিপথ উন্মুক্ত দেখে কুরাইশ বাহিনীর সৈন্যরা পেছন দিক থেকে ঢুকে মুসলমানদের ওপর আক্রমণ চালাল। অকস্মাৎ একসঙ্গে এই আক্রমণে মুসলিম বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ল। এই যুদ্ধে রাসুল (সা.) নিজে আহত হলেন; হামজা (রা.) সহ মুসলিম বাহিনীর অনেক সেনানায়ক নিহত হলেন। এ আয়াতগুলোর মাধ্যমে এই কাহিনীর খণ্ডচিত্রই বর্ণনা করা হয়েছে এবং জয়-পরাজয়ের তাৎপর্যের প্রতি ইঙ্গিত করে ভুলের ফাঁদে পা দেওয়া মুসলমানদের প্রতি তিরস্কার করা হয়েছে। আসলে গিরিপথরক্ষী যোদ্ধাদের কর্তব্যে অবহেলার কারণেই এ যুদ্ধে জয় থেকে পরাজয় নেমে এল। এ আয়াতে কর্তব্যে অবহেলাকারীদের তিরস্কার করে আবার তাঁদের মাফ করে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। ভীষণ বিপর্যয় এবং দুঃখ-কষ্ট নেমে আসার পরও এ যুদ্ধ যে মুসলমানদের জন্য অনেক শিক্ষণীয় হয়েছিল, সেটাই এখানে বলা হয়েছে। ফলে মুসলমানদের ব্যর্থতার দিকগুলো যেমন তুলে ধরা হয়েছে, তেমনি পরাজয়ের গ্লানি থেকে মুক্ত হওয়ার দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments