বাছাই করে গুরুত্বপূর্ণগুলো চালু হোক-মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্প স্থগিত
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় বছরের পর বছর কিছু প্রকল্প চলতে দেখা যায়। তবে তা চলমান থাকে নামকাওয়াস্তে। মোট যে অর্থ বরাদ্দ করা হয় এসব প্রকল্পের অনুকূলে, তার খুব সামান্যই ব্যয় হয় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে। তাই মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও প্রকল্প থেকে যায় অসম্পূর্ণ।
তার পরও কিছু অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রকল্প চালিয়ে নিতে। এতে করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ফুটে ওঠে সরকারের ভেতরে উন্নয়ন বিষয়ে সমন্বয়হীনতা ও সুদূরপ্রসারী চিন্তার ঘাটতি। অপচয় হয় দেশের সীমিত সম্পদ। এ রকম একটি প্রেক্ষাপটে প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এ রকম ১২৭টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় স্থগিত করেছে। বলা হয়েছে, সংশোধন করা না হলে আর এসব প্রকল্পের বিপরীতে অর্থ ছাড় করা হবে না। সরকারের এই সিদ্ধান্ত একাধিক কারণে তাৎপর্য বহন করে, যা একটু বিশ্লেষণ করা দরকার।
বস্তুত, এসব প্রকল্প স্থগিত করার মাধ্যমে অর্থ ও সম্পদের অপচয় রোধ করার একটি সুযোগ তৈরি হলো। স্থগিতকৃত প্রকল্পগুলোর মধ্যে এমন প্রকল্পও আছে, যার মেয়াদ শেষ হয়ে বেশির ভাগ অর্থই খরচ হয়ে গেছে, তার পরও তাতে সমাপ্তির কোনো লক্ষণ নেই। আবার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও কোনো অর্থ খরচ হয়নি, এমন প্রকল্পও আছে। স্থগিত করা না হলে অল্প অল্প করেও বেশ কিছু অর্থ ব্যয় হতো এসব প্রকল্পের পেছনে, যা শেষ পর্যন্ত কোনো কাজে আসত না। তাতে একদিকে সম্পদের অপচয় বাড়ত, অন্যদিকে সময়ও নষ্ট হতো। সুতরাং, সরকারের এখন উচিত হবে স্থগিতকৃত প্রকল্পগুলো নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করে যেগুলোয় প্রয়োজন সেগুলোয় অর্থ বরাদ্দ দিয়ে নতুন সময়সীমা বেঁধে তা যথাসময়ে সম্পন্ন করার কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। এখানেই চলে আসছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অগ্রাধিকার নির্ণয়ের বিষয়টি।
এডিপির প্রকল্প পর্যালোচনায় অনেক আগে থেকেই এটা প্রতিষ্ঠিত যে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, যার অনেকগুলো আসলেই তেমন দরকারি নয়। এতে করে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি থমকে যায় বা পিছিয়ে পড়ে। যেমন, স্থগিতকৃত প্রকল্পগুলোর মধ্যে মংলা বন্দরের উন্নয়নসংক্রান্ত দুটি প্রকল্পের মোট আয়তন ছিল ৪৬ কোটি টাকা। অথচ নির্ধারিত মেয়াদ শেষে মাত্র তিন লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে, যার মানে হলো, এখানে কোনোই অগ্রগতি হয়নি। এমনিতেই প্রকল্প বাস্তবায়নের অদক্ষতা ও সুশাসনের অভাব বরাবরই উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে। তার ওপর যদি অগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বরাদ্দ দিতে হয়, তাহলে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিতে সমস্যা দেখা দেয়। দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের স্বার্থে এ ধরনের কালক্ষেপণকারী ও অপচয়চর্চা থেকে সরকারকে এখনই বেরিয়ে আসতে হবে।
No comments