প্রাথমিক বিদ্যালয় অবকাঠামো-শিক্ষকদের সম্মান করতে দিন by মাহফুজুর রহমান মানিক
সরকারি হিসাব ধরলেও প্রায় দুই হাজার গ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বঞ্চিত। যদিও গত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী ১৫শ' বিদ্যালয় স্থাপনের কথা বলেছিলেন, অবশ্য এবারের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী তার আপডেট জানিয়ে বলেছেন, এর মধ্যে ৭৮০টি নতুন বিদ্যালয়ের কাজ সমাপ্তির পথে
আকলিমারা শিক্ষকদের সম্মান করতে চায়। শিক্ষকরা শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করলে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা করতে চায়। চাইলেও তারা তা পারছে না। প্রতিক্রিয়ায় আকলিমারা বলছে, 'স্যারদের দেখে না দাঁড়ালে খারাপ লাগে'। প্রতিবেদনটি সমকালের। ৭ জুন প্রকাশিত পত্রিকাটির এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল 'শ্রেণীকক্ষে দাঁড়ালেও বিপত্তি!' যেটি বলছে টাঙ্গাইলের সখীপুরের লাঙ্গুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি ভবনের মেঝের প্লাস্টার উঠে গেছে। মেঝেতে অসংখ্য গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় বেঞ্চ বসে না। শিক্ষকরা ক্লাসে ঢুকলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সম্মান জানাতে দাঁড়াতে গেলেই ঘটে বিপত্তি। বেঞ্চ উল্টে গিয়ে চতুর্থ শ্রেণীর এক ছাত্রের পা ভাঙার পর শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে দাঁড়াতে নিষেধ করে দেন শিক্ষকরা। ২০০৭ সাল থেকে ভবনটির এ অবস্থা হলেও এবং বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও এখন পর্যন্ত ভবন সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
ঝুঁকিপূর্ণ ভবন কিংবা ক্লাসরুমের এই চিত্রের বাইরের চিত্র যে নেই, তা নয়। যেমন ২০ মে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের ৫শ' বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম উদ্বোধন করেন। এ ৫শ' বিদ্যালয়ের চিত্র দেখে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো কারণ নেই। শিক্ষা ব্যবস্থায় ডিজিটালাইজেশনের কথা বলে সরকার হয়তো এ বিদ্যালয়গুলোই দেখাবে। কিন্তু বাস্তবে এটিই যে আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র নয়, ওপরের প্রতিবেদনই তার প্রমাণ। সরকার ৫০৩টি মডেল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেই যে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থায় ডিজিটালাইজেশনের ঢেঁকুর তুলছে, তার অসারতাই ওপরের বিদ্যালয়গুলোর অবস্থা। অবশ্য মডেল স্কুলগুলোর চিত্রকে একেবারে নাকচও করা যায় না। যেহেতু সরকারের পক্ষে একই দিনে গোটা দেশে একই সঙ্গে সব বিদ্যালয়কে ডিজিটাল করা সম্ভব নয়। এ জন্য যে অর্থ দরকার, সেটা হয়তো সরকারের একসঙ্গে জোগান দেওয়া সম্ভব নয়। সেটা না হয় মানা গেল; কিন্তু তাই বলে কোনো বিদ্যালয়ে বছরের পর বছর শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমে ক্লাস করতে পারবে না, অথচ আরেক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাল্টিমিডিয়া উপভোগ করবে_ এটা কীভাবে মানা যায়!
সরকারি হিসাব ধরলেও প্রায় দুই হাজার গ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বঞ্চিত। যদিও গত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী ১৫শ' বিদ্যালয় স্থাপনের কথা বলেছিলেন, অবশ্য এবারের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী তার আপডেট জানিয়ে বলেছেন, এর মধ্যে ৭৮০টি নতুন বিদ্যালয়ের কাজ সমাপ্তির পথে। সেটা নিশ্চয়ই ভালো খবর। তবে মনে রাখতে হবে, সরকার ১৬ হাজার থেকে কমিয়ে ২ হাজারে এনেছে, যেখানে বিদ্যালয় স্থাপন না করলে সেখানকার শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত হবে না। এ রকম জরুরি প্রতিটি স্থানে দ্রুত বিদ্যালয় স্থাপন আবশ্যক। ৭৮০ বিদ্যালয়ের কাজ দ্রুত শেষ করে অন্যগুলোর কাজও শুরু করা উচিত।
সরকার তার নির্বাচনী মেনিফেস্টো, শিক্ষানীতি এমনকি এবারের বাজেটেও বলেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও শিক্ষার পরিবেশ তারা নিশ্চিত করবে। এবং এ কথাও এসেছে, তারা এসব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৫৮ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বৃহৎ একটি (তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি, পিইডিপি-৩) বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে। আমরা এসব বাস্তবায়নের প্রত্যাশাই করব।
আকলিমাদের নিয়ে শুরু করেছিলাম, যারা শিক্ষকের মর্যাদা বোঝে, শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করে। শ্রেণীকক্ষে শিক্ষক এলে তাদের সম্মানে তারা দাঁড়িয়ে আসছে। এখন বিদ্যালয় পরিস্থিতি তাদের সেটা করতে দিচ্ছে না। শিক্ষকদের সম্মান করতে না পেরে তাদের খারাপ লাগছে। যারা প্রশাসনে আছেন, তাদের খারাপ লাগছে কি-না জানি না। তবে অনুরোধ, শিক্ষকদের আমরা সম্মান করি আর না-ই করি, অন্তত আকলিমাদের শিশুমন রক্ষায় তাদের বিদ্যালয়ের সংস্কার কাজটা দ্রুত করুন।
মাহফুজুর রহমান মানিক : শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
mahfuz.manik@gmail.com
ঝুঁকিপূর্ণ ভবন কিংবা ক্লাসরুমের এই চিত্রের বাইরের চিত্র যে নেই, তা নয়। যেমন ২০ মে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের ৫শ' বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম উদ্বোধন করেন। এ ৫শ' বিদ্যালয়ের চিত্র দেখে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো কারণ নেই। শিক্ষা ব্যবস্থায় ডিজিটালাইজেশনের কথা বলে সরকার হয়তো এ বিদ্যালয়গুলোই দেখাবে। কিন্তু বাস্তবে এটিই যে আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র নয়, ওপরের প্রতিবেদনই তার প্রমাণ। সরকার ৫০৩টি মডেল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেই যে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থায় ডিজিটালাইজেশনের ঢেঁকুর তুলছে, তার অসারতাই ওপরের বিদ্যালয়গুলোর অবস্থা। অবশ্য মডেল স্কুলগুলোর চিত্রকে একেবারে নাকচও করা যায় না। যেহেতু সরকারের পক্ষে একই দিনে গোটা দেশে একই সঙ্গে সব বিদ্যালয়কে ডিজিটাল করা সম্ভব নয়। এ জন্য যে অর্থ দরকার, সেটা হয়তো সরকারের একসঙ্গে জোগান দেওয়া সম্ভব নয়। সেটা না হয় মানা গেল; কিন্তু তাই বলে কোনো বিদ্যালয়ে বছরের পর বছর শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমে ক্লাস করতে পারবে না, অথচ আরেক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাল্টিমিডিয়া উপভোগ করবে_ এটা কীভাবে মানা যায়!
সরকারি হিসাব ধরলেও প্রায় দুই হাজার গ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বঞ্চিত। যদিও গত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী ১৫শ' বিদ্যালয় স্থাপনের কথা বলেছিলেন, অবশ্য এবারের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী তার আপডেট জানিয়ে বলেছেন, এর মধ্যে ৭৮০টি নতুন বিদ্যালয়ের কাজ সমাপ্তির পথে। সেটা নিশ্চয়ই ভালো খবর। তবে মনে রাখতে হবে, সরকার ১৬ হাজার থেকে কমিয়ে ২ হাজারে এনেছে, যেখানে বিদ্যালয় স্থাপন না করলে সেখানকার শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত হবে না। এ রকম জরুরি প্রতিটি স্থানে দ্রুত বিদ্যালয় স্থাপন আবশ্যক। ৭৮০ বিদ্যালয়ের কাজ দ্রুত শেষ করে অন্যগুলোর কাজও শুরু করা উচিত।
সরকার তার নির্বাচনী মেনিফেস্টো, শিক্ষানীতি এমনকি এবারের বাজেটেও বলেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও শিক্ষার পরিবেশ তারা নিশ্চিত করবে। এবং এ কথাও এসেছে, তারা এসব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৫৮ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বৃহৎ একটি (তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি, পিইডিপি-৩) বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে। আমরা এসব বাস্তবায়নের প্রত্যাশাই করব।
আকলিমাদের নিয়ে শুরু করেছিলাম, যারা শিক্ষকের মর্যাদা বোঝে, শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করে। শ্রেণীকক্ষে শিক্ষক এলে তাদের সম্মানে তারা দাঁড়িয়ে আসছে। এখন বিদ্যালয় পরিস্থিতি তাদের সেটা করতে দিচ্ছে না। শিক্ষকদের সম্মান করতে না পেরে তাদের খারাপ লাগছে। যারা প্রশাসনে আছেন, তাদের খারাপ লাগছে কি-না জানি না। তবে অনুরোধ, শিক্ষকদের আমরা সম্মান করি আর না-ই করি, অন্তত আকলিমাদের শিশুমন রক্ষায় তাদের বিদ্যালয়ের সংস্কার কাজটা দ্রুত করুন।
মাহফুজুর রহমান মানিক : শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
mahfuz.manik@gmail.com
No comments