হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়-ছাত্রলীগের সহসভাপতিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি ফাহিম মাহফুজ ওরফে বিপুলকে (২৪) গতকাল শনিবার ক্যাম্পাসসংলগ্ন বাঁশেরহাট বাজারে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। ফাহিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স অনুষদ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তাঁর বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার বীরহলি গ্রামে।


বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে সংগঠনের একটি সূত্র প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছে।
ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ইফতেখারুল ইসলাম জানান, সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানটিনে ছাত্রলীগের সভা চলছিল। সভার একপর্যায়ে দুপুর ১২টার দিকে ফাহিম তিন কর্মীসহ বাইরে চা খেতে যান।
ইফতেখারুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সঙ্গে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড প্রসেসিং ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ছাত্র মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, ফাহিম, কিশোর, মিথুনসহ তাঁরা ক্যাম্পাসসংলগ্ন বাঁশেরহাট বাজারে চা খেতে যান। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার বিভাগের চতুর্থ শ্রেণীর এক কর্মচারী ‘কথা আছে’ বলে ফাহিমকে ডেকে নেয়। মাত্র ১০ গজ দূরে নিয়ে ওই কর্মচারী ফাহিমের গালে চড় মারে। এ সময় কর্মচারীর ডাকে প্রায় ১৫ জন সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র হাতে সেখানে উপস্থিত হয়। একপর্যায়ে ওই কর্মচারী ধারালো ছোরা দিয়ে ফাহিমের শরীরে আঘাত করে দলবল নিয়ে দ্রুত এলাকা ছেড়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছুরিকাঘাতের পর ফাহিমের সঙ্গীরা তাঁকে দ্রুত দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ টি এম জিল্লুর রহমান বলেন, মুমূর্ষু অবস্থায় ফাহিমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর বাঁ চোয়াল ও বুকের দুই পাশের গভীর ক্ষত দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। বেলা দুইটায় তিনি মারা যান।
খবর পেয়ে ফাহিমের বাবা মো. মাহফুজুর রহমান ও মা ফেরদৌসী বেগমসহ স্বজনেরা হাসপাতালে ছুটে যান। এ সময় মা ফেরদৌসী বেগমের আহাজারিতে সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।
ফাহিমের বাবা মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করে, বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পরিবেশ নেই।’
ময়নাতদন্ত শেষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানাজার জন্য ফাহিমের লাশ ক্যাম্পাসে নিতে চাইলে মাহফুজুর রহমান সেই অনুরোধ নাকচ করে দিয়ে বলেন, ‘যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে আমার একমাত্র ছেলেসন্তান খুন হয়েছে, তার লাশ আর সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে না।’
কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কল্যাণ রায় জানান, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের পরিবার এখনো থানায় মামলা করেনি। তিনি জানান, ময়নাতদন্তের পর ফাহিমের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার মো. ময়নুল হোসেন ফাহিমের খুনের ঘটনাকে পূর্বপরিকল্পিত বলে বর্ণনা করে বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে ইতিমধ্যে পুলিশ ও পুলিশের বিশেষ শাখার সদস্যরা ছাড়াও র‌্যাব সদস্যরা মাঠে নেমেছেন।

No comments

Powered by Blogger.