সিলেটে নিজের বাড়িতে এনজিও কর্মকর্তার মা ও শিশুকন্যা খুন

সিলেটে নিজের বাড়িতে এক নারী ও শিশুকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত দুজন হলেন স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনের মা মোমিনা খাতুন (৭৫) ও মেয়ে সাবিহা আক্তার (৬)। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল শনিবার বিকেলে শহরতলির খাদিমপাড়া ইউনিয়নের দলইপাড়া গ্রামে।


শাহ পরান থানার পুলিশ জানায়, সুরতহাল করার সময় মোমিনার গলার বামদিকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে সাবিহাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুজনের লাশ বাড়ির রান্নাঘরের মেঝেতে পাওয়া গেছে। লাশ দুটি উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। সাবিহা স্থানীয় প্রফুল্ল পাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল।
সন্ধ্যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি বিশেষজ্ঞদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করেছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, নাসির উদ্দিন স্থানীয় এনজিও ফ্রেন্ডস ইন ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশের (এফআইভিডিবি) শিক্ষা প্রকল্পে চাকরি করেন। তিনি পরিবারসহ এই বাড়িতে থাকেন। কয়েক বছর আগে তিনি এখানে জমি কিনে একটি টিনশেড বাড়ি করেন। স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার। স্ত্রী রোকশানা বেগম এফআইভিডিবি পরিচালিত কানুগুল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তাঁর স্ত্রী প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বের হতেন। গতকাল সকালে ছোট মেয়ে সাবিহা বিদ্যালয়ে যেতে না চাইলে রোকশানা পাশের বাড়ি থেকে তাঁর শাশুড়ি মোমিনা খাতুনকে এনে বাড়িতে রেখে যান।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ওই বাড়ি থেকে টেলিভিশনের উচ্চ শব্দ শুনে প্রতিবেশী একজন ঘরে উঁকি দিয়ে কাউকে না দেখে অন্যদের জানায়। এ খবর পেয়ে প্রতিবেশী ও স্বজনরা ঘরে প্রবেশ করে দেখেন বসার ঘরে টেলিভিশন চলছে। কিন্তু ঘরের ভেতর কারো সাড়াশব্দ নেই। ডাকাডাকি ও খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে রান্নাঘরের মেঝেতে দুজনকে অচেতন দেখে সাবিহার মা ও বাবাকে খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে নাসির ও রোকশানা কর্মস্থল থেকে ছুটে আসেন। ঘটনার সময় বড় মেয়ে তৃষা বিদ্যালয়ে ছিল। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে লাশ উদ্ধার করে।
শাহ পরান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ধারণা করা হচ্ছে, দুপুর ১টা থেকে দেড়টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে।
এনজিও কর্মকর্তা নাসিরের বড় ভাই বাচ্চু মিয়া জানান, বাসায় তাঁর বৃদ্ধা মা ও ভাতিজি ছিল। দুর্বৃত্তরা বাড়িতে ঢুকে তাঁর মা ও ভাতিজিকে খুন করে। স্থানীয় লোকজন জানায়, পরিবারটি নিরীহ ছিল। কারো সঙ্গে তাঁদের শত্রুতা ছিল না।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আমিনুল ইসলাম জানান, হত্যাকাণ্ডের কোনো ক্লু খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া ডাকাতিও সন্দেহ করা হচ্ছে না। কেননা ঘরের কোনো জিনিসপত্র খোয়া যায়নি। তিনি জানান, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তাঁরা তদন্ত করছেন।

No comments

Powered by Blogger.