অনুমতি মেলেনি, বিএনপির জনসভা নয়াপল্টনে-হরতাল আসতে পারে?

সমাবেশ করতে তিনটি স্থানের জন্য অনুমতি চেয়েও সরকারের কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনেই আগামীকাল সোমবার কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। গতকাল শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য


তরিকুল ইসলাম। এর আগে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যায়। সাক্ষাৎ না পেয়ে ডিএমপি উপকমিশনারের সঙ্গে কথা বলে ফিরে আসে তারা। এর পরই সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
এদিকে সমাবেশের অনুমতি না পাওয়া গেলে এবং নেতাদের মুক্তি না দেওয়া হলে আগামীকাল সোমবার গণসমাবেশ থেকে হরতালের কর্মসূচি দিতে পারে ১৮ দলীয় জোট। এ ছাড়া বিক্ষোভ সমাবেশ, অনশন, গণমিছিলসহ আরো কিছু কর্মসূচি থাকবে। গতকাল দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে। রাত সোয়া ৯টায় গুলশানের কার্যালয়ে কমিটির বৈঠক শুরু হয়ে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলে। বৈঠকে কমিটির সদস্যরা হরতাল, অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচির পক্ষে তাঁদের মতামত তুলে ধরেন বলে জানা যায়।
এর আগে দুপুরের সংবাদ সম্মেলনে তরিকুল ইসলাম বলেন, 'এক দিন বাকি থাকলেও পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আজ পর্যন্ত আমাদের সমাবেশের স্থান ও মাইক ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি। আমরা সরকারকে বলতে চাই, দ্রুত অনুমতি দিন। নইলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই ১১ জুন সমাবেশ করার ব্যাপারে আমরা সংকল্পবদ্ধ।'
তরিকুল ইসলাম আরো বলেন, 'জনসভার অনুমতি না দিয়ে সরকার অগণতান্ত্রিক ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করছে। কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটলে, তার জন্য সরকারই দায়ী থাকবে। অনুমতি না পেলেও আমরা নয়াপল্টনে জনসভা করব।'
প্রসঙ্গত, ১৮ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে সমাবেশের জন্য পল্টন ময়দান, মানিক মিয়া এভিনিউ ও নয়াপল্টনের সড়ক চেয়ে গত ২৪ মার্চ বিএনপি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানায়। এর মধ্যে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পল্টন ময়দানে সমাবেশ করা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। অন্য দুটির বিষয়ে শনিবার বিকেল পর্যন্ত কোনো অনুমতি মেলেনি।
তরিকুল ইসলাম বলেন, 'বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবদুস সালাম বৃহস্পতিবার ও শনিবার দুই দফা ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে যান। তাঁরা দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কমিশনারের দেখা পাননি। সেখানকার কর্মকর্তারা বিএনপির প্রতিনিধি দলের প্রতি নূ্যনতম সৌজন্য ও ভদ্রতা প্রদর্শন করেননি, এটা দুঃখজনক।'
সরকার সমাবেশ করতে দিতে চায় না বলে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে অভিযোগ করে তরিকুল বলেন, যত প্রতিবন্ধকতাই সৃষ্টি হোক না কেন, সোমবার বিএনপির জনসভা হবেই।
সমাবেশের প্রচার চালাতে মাইক ব্যবহারের অনুমতিও পুলিশ দিচ্ছে না অভিযোগ করে এর নিন্দা জানান তিনি। বিএনপির এ নেতা বলেন, এর পরও ১২ মার্চের দ্বিগুণ জনসমাগম হবে সোমবার।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আবদুল্লাহ আল নোমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, মশিউর রহমান, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আবদুস সালাম, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।
'পুলিশ টালবাহানা করছে : ফারুক' : 'সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ১৫ দিন ধরে পুলিশের কাছে আবেদন করলেও গতকাল বিকেল পর্যন্ত অনুমতি পায়নি বিএনপি। পুলিশ হ্যাঁ বা না কিছুই বলছে না।' গতকাল সকালে ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক।
এর আগে সকাল ১১টায় চিপ হুইপ কমিশনারের কার্যালয়ে যান। সঙ্গে ছিলেন দলের দুই সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি ও আবুল খায়ের ভুঁইয়া, মহানগর সদস্যসচিব আবদুস সালাম। কমিশনারকে না পেয়ে তাঁরা কথা বলেন উপকমিশনারের সঙ্গে। ফারুক জানান, ডিএমপি কমিশনার মিটিংয়ে থাকায় উপকমিশনারের সঙ্গে কথা হয়েছে। উপকমিশনার বলেছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সময়মতো জানানো হবে। ফারুক বলেন, 'পুলিশ অনুমতি নিয়ে টালবাহানা করছে। তবে আমরা এখনো আশাবাদী, শেষ মুহূর্তে সমাবেশ করার অনুমতি পাওয়া যাবে।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী ছয় জেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সারা দেশ থেকেও লোক আসবে।
হরতাল আসতে পারে : রাতে গুলশানে অনুষ্ঠিত বৈঠক সূত্র আরো জানায়, সমাবেশের অনুমতি এবং নেতাদের মুক্তি মিললে রোজার আগে কঠোর কর্মসূচি থাকছে না। সে ক্ষেত্রে নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তবে রোজার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে হরতাল, অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গনি, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, সারোয়ারী রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, নজরুল ইসলাম খান, আবদুল মঈন খান প্রমুখ।
বৈঠক চলাকালে এক সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান জানান, তাঁরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবেন। এর পরও সমাবেশ বানচালের চেষ্টা করছে সরকার। এটি গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়। তিনি জানান, সরকার বোমা হামলা মামলায় ওয়ারেন্ট ইস্যু করে তাঁদের নেতা-কর্মীদের জামিনে বাধা সৃষ্টি করছে। এটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। আজকের সভা থেকে এই ওয়ারেন্ট প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। তা না হলে যা ঘটার তা-ই ঘটবে। তিনি বলেন, নেতারা মুক্তি না পেলেও ব্যাপক লোকসমাগম ঘটবে। সভা থেকে ইলিয়াস আলী ও তাঁর গাড়িচালককে ফেরত দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে বলেও তিনি জানান।
বৈঠক শেষে এম কে আনোয়ার অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন, কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়নি। আটক নেতাদের মুক্তি না দিলে কর্মসূচির ধরন পাল্টে যাবে।
খালেদার সঙ্গে মাহীর বৈঠক : বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিকল্প ধারার সাংগঠনিক সম্পাদক মাহী বি চৌধুরী। রাত সোয়া ১১টা থেকে ১০ মিনিটের বৈঠকে তাঁদের মধ্যে সমাবেশে বিকল্প ধারার অংশগ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে মাহী বি চৌধুরী বলেন, সমাবেশে তিনি অংশ নেবেন। তবে দলের চেয়ারম্যান এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী থাকবেন না।

No comments

Powered by Blogger.