চার দিক-ওদের যেমন ঈদের আনন্দ by শারমিন নাহার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন, মল চত্বর, হাকিম চত্বর, মিলন চত্বর আর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির চারপাশে ওদের সদা বিচরণ। কারও হাতে হয়তো ছোট ঝুড়িতে কয়েক রকমের চকলেট। কারও হাতে আবার ছোট ফুলের বালতি। তাতে হরেক রকমের ফুল, যার বেশির ভাগই গোলাপ।
কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে দাঁড়াতেই পেছন থেকে এসে ডাকতে থাকে, ‘আপু, একটা চকলেট লন।’ পেছন ফিরে দেখি, আরে, এ তো সবার আদরের ‘পলাশ’। এই পলাশ হয়তো ফুল হয়ে ফোটে না। তবে ফুলের মতোই নিষ্পাপ। অন্যজন ফুলের বালতিসহ দৌড়ে এসে বলে, ‘আপু তো রোজা, চকলেট নেবে না। আপু নেবে লাল রঙের গোলাপ।’ এবার দুজনের তর্কাতর্কি। কিছুক্ষণ বাদেই ওরা আবার মিলেমিশে একজন অন্যজনের বন্ধু বনে যায়।
পলাশ, লাজিয়া, চান মিয়া, জুনায়েদ, সাগর। ওদের কেউ চকলেট, কেউ ফুল, কেউবা আবার ফুলের মালা বিক্রি করে। সামনে ঈদুল ফিতর। ঈদ নিয়ে কার কী ভাবনা, তাই নিয়ে কথা হয় ওদের সবার সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার কয়েক দিন আগে কথা বলি ওদের সঙ্গে। এরই মাঝে ক্যাম্পাস ফাঁকা হতে শুরু করেছে। নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে অনেকেই। কারণ, বাড়ির সবাইকে নিয়ে ঈদের আনন্দটা ভাগাভাগি করে নেবে। কিন্তু এই পথশিশুরা ঈদে কী করবে, তা কি একবারের জন্যও আমাদের ভাবায়!
ভৈরবে বাড়ি লাজিয়ার। তিন বোন আর মাকে নিয়ে সংসার। ঈদের আনন্দ লাজিয়াকে কখনোই ছুঁয়ে যায় না। ‘আমি আর মা ফুল বেচি, কিন্তু ইনভারসিটি বন্ধ হয়ে যাওয়াতে বেচাবিক্রি নাই। মায়ে শাহবাগে গিয়া যা বেচে, তাতে খাওনের পয়সাটা হয়।’ ছোট একটা ঘর ভাড়া নিয়ে রাজধানীর নিমতলীতে থাকেন লাজিয়া আর তার মা। নিমতলীর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অনেক কিছুই হারিয়েছে তারা। যেখানে বেঁচে থাকাটাই বড় কষ্টের, সেখান ঈদের আনন্দ নিছক প্রহসন। জুনায়েদের বাড়িও ভৈরবে। ঢাকা শহরে এসেছে দুই বছর হলো। মা-বাবার সঙ্গে থাকছে চানখাঁরপুলে। জুনায়েদ বলে, ‘বাপে চালায় রিশকা আর আমি বেচি ফুল। মায়েরে প্রতিদিন ৫০ টেকা দিতাম, এখন তো তা পারি না। ক্যাম্পাস ফাঁকা, তাই ব্যবসা নাই, টেকা দিমু কোথথেইকা। টেকা নাই খাওনের। তাই চা খাইয়া খিদা মাইরা ফেলি। ঈদ আমি করতাম না।’ ঈদের দিনটা পথে পথে হেঁটে বেড়াবে সে। ‘বড় মাইনসেরা খাওন দিলে খামু।’ প্রশ্ন করি, ঈদের নামাজ পড়তে যাবে না? জুনায়েদের ক্ষোভমিশ্রিত উত্তর, ‘নামাজ পড়তে নতুন প্যান লাগে, আমার তো নতুন প্যান নাই। তাই ঈদের নামাজ ও নাই।’
ওদের সবার ছোট্ট পলাশ বলে, ‘আমারে এক ভাইয়া কইছে নতুন জামা কিনা দেবে।’ সে কারণে ঈদটা বোধহয় সে ভালোই কাটাবে। মাকে বড্ড ভালোবাসে পলাশ, কিন্তু মায়ের ঈদের শাড়ির ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত হয় নাই। এটা নিয়ে পলাশের মনটা খারাপ। কিছুক্ষণ বাদে পলাশ অকপটে বলে ফেলে, ‘আপনি আমার মায়ের ঈদের শাড়ি দেবেন?’ মাকে খুশি দেখতে মন চায় পলাশের। সংসার বলতে পলাশ আর তার মা। তাই ছেলে হিসেবে দায়িত্বটা যে তার বেশি, এত অল্প বয়সেও পলাশ সেটা বুঝতে পেরেছে। সেমাই আর পোলাও কিনতে মায়ের হাতে ৫০০ টাকা দেবে সে।
সাগর আর তার বড় ভাই থাকে ঢাকায়। সাগরের বাড়ি সিলেটে। দেশে তার পরিবার-পরিজন থাকে। তাই ঈদে বাড়ি যাবে সে। বড় ভাই জুতার দোকানে কাজ করে আর সাগর ক্যাম্পাসে ফুল বিক্রি করে। সাগর বলে, ‘পলাশের মতো আমাগো তো সিনার ভাই (সিনিয়র) নাই, তাই আমাগো নতুন কাপড় কিনা দেওয়ার কেউ নাই।’ চাঁদপুরে বাড়ি চান মিয়ার ঈদ নিয়ে নেই আলাদা কোনো ভাবনা। ঈদে ঢাকাতেই থাকবেন, কোনো ভাইয়া বা আপা তাকে পোশাক দেবে বলে আশ্বস্ত করেনি। ঈদের দিন ফুটবল খেলে কাটাবে সে।
বোঝাই যাচ্ছে, দারিদ্র্যের কারণে ওরা ভুলে গেছে ঈদের আনন্দ। ঈদের নতুন কাপড়ের গন্ধ ওদের ব্যাকুল করে না। কেউ কেউ অপেক্ষা করে কোনো বড় আপু বা ভাইয়া জামা কিনে দেবে। তবে এখন সবারই ভাবনা, কবে আবার বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে। ওদের বেচা-বিক্রি ভালো হবে। বেলা বেশ গড়িয়েছে। ছোট ফুলের বালতি হাতে লাজিয়া আর সাগর উঠে পড়ে। সকাল থেকে দুপুর অবধি চলে ফুলের ব্যবসা। তাই বাধ্য হয়েই দাঁড়িয়ে বলে, এখন প্রতিটা ফুলের দাম তিন টাকা। একটু পরে দাম হবে দুই টাকা। ফুলগুলা আগে বেইচা শেষ করি। একে একে ওরা সবাই উঠে পড়ে। ব্যস্ত হয়ে যায় যার যার কাজে।
পলাশ, লাজিয়া, চান মিয়া, জুনায়েদ, সাগর। ওদের কেউ চকলেট, কেউ ফুল, কেউবা আবার ফুলের মালা বিক্রি করে। সামনে ঈদুল ফিতর। ঈদ নিয়ে কার কী ভাবনা, তাই নিয়ে কথা হয় ওদের সবার সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার কয়েক দিন আগে কথা বলি ওদের সঙ্গে। এরই মাঝে ক্যাম্পাস ফাঁকা হতে শুরু করেছে। নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে অনেকেই। কারণ, বাড়ির সবাইকে নিয়ে ঈদের আনন্দটা ভাগাভাগি করে নেবে। কিন্তু এই পথশিশুরা ঈদে কী করবে, তা কি একবারের জন্যও আমাদের ভাবায়!
ভৈরবে বাড়ি লাজিয়ার। তিন বোন আর মাকে নিয়ে সংসার। ঈদের আনন্দ লাজিয়াকে কখনোই ছুঁয়ে যায় না। ‘আমি আর মা ফুল বেচি, কিন্তু ইনভারসিটি বন্ধ হয়ে যাওয়াতে বেচাবিক্রি নাই। মায়ে শাহবাগে গিয়া যা বেচে, তাতে খাওনের পয়সাটা হয়।’ ছোট একটা ঘর ভাড়া নিয়ে রাজধানীর নিমতলীতে থাকেন লাজিয়া আর তার মা। নিমতলীর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অনেক কিছুই হারিয়েছে তারা। যেখানে বেঁচে থাকাটাই বড় কষ্টের, সেখান ঈদের আনন্দ নিছক প্রহসন। জুনায়েদের বাড়িও ভৈরবে। ঢাকা শহরে এসেছে দুই বছর হলো। মা-বাবার সঙ্গে থাকছে চানখাঁরপুলে। জুনায়েদ বলে, ‘বাপে চালায় রিশকা আর আমি বেচি ফুল। মায়েরে প্রতিদিন ৫০ টেকা দিতাম, এখন তো তা পারি না। ক্যাম্পাস ফাঁকা, তাই ব্যবসা নাই, টেকা দিমু কোথথেইকা। টেকা নাই খাওনের। তাই চা খাইয়া খিদা মাইরা ফেলি। ঈদ আমি করতাম না।’ ঈদের দিনটা পথে পথে হেঁটে বেড়াবে সে। ‘বড় মাইনসেরা খাওন দিলে খামু।’ প্রশ্ন করি, ঈদের নামাজ পড়তে যাবে না? জুনায়েদের ক্ষোভমিশ্রিত উত্তর, ‘নামাজ পড়তে নতুন প্যান লাগে, আমার তো নতুন প্যান নাই। তাই ঈদের নামাজ ও নাই।’
ওদের সবার ছোট্ট পলাশ বলে, ‘আমারে এক ভাইয়া কইছে নতুন জামা কিনা দেবে।’ সে কারণে ঈদটা বোধহয় সে ভালোই কাটাবে। মাকে বড্ড ভালোবাসে পলাশ, কিন্তু মায়ের ঈদের শাড়ির ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত হয় নাই। এটা নিয়ে পলাশের মনটা খারাপ। কিছুক্ষণ বাদে পলাশ অকপটে বলে ফেলে, ‘আপনি আমার মায়ের ঈদের শাড়ি দেবেন?’ মাকে খুশি দেখতে মন চায় পলাশের। সংসার বলতে পলাশ আর তার মা। তাই ছেলে হিসেবে দায়িত্বটা যে তার বেশি, এত অল্প বয়সেও পলাশ সেটা বুঝতে পেরেছে। সেমাই আর পোলাও কিনতে মায়ের হাতে ৫০০ টাকা দেবে সে।
সাগর আর তার বড় ভাই থাকে ঢাকায়। সাগরের বাড়ি সিলেটে। দেশে তার পরিবার-পরিজন থাকে। তাই ঈদে বাড়ি যাবে সে। বড় ভাই জুতার দোকানে কাজ করে আর সাগর ক্যাম্পাসে ফুল বিক্রি করে। সাগর বলে, ‘পলাশের মতো আমাগো তো সিনার ভাই (সিনিয়র) নাই, তাই আমাগো নতুন কাপড় কিনা দেওয়ার কেউ নাই।’ চাঁদপুরে বাড়ি চান মিয়ার ঈদ নিয়ে নেই আলাদা কোনো ভাবনা। ঈদে ঢাকাতেই থাকবেন, কোনো ভাইয়া বা আপা তাকে পোশাক দেবে বলে আশ্বস্ত করেনি। ঈদের দিন ফুটবল খেলে কাটাবে সে।
বোঝাই যাচ্ছে, দারিদ্র্যের কারণে ওরা ভুলে গেছে ঈদের আনন্দ। ঈদের নতুন কাপড়ের গন্ধ ওদের ব্যাকুল করে না। কেউ কেউ অপেক্ষা করে কোনো বড় আপু বা ভাইয়া জামা কিনে দেবে। তবে এখন সবারই ভাবনা, কবে আবার বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে। ওদের বেচা-বিক্রি ভালো হবে। বেলা বেশ গড়িয়েছে। ছোট ফুলের বালতি হাতে লাজিয়া আর সাগর উঠে পড়ে। সকাল থেকে দুপুর অবধি চলে ফুলের ব্যবসা। তাই বাধ্য হয়েই দাঁড়িয়ে বলে, এখন প্রতিটা ফুলের দাম তিন টাকা। একটু পরে দাম হবে দুই টাকা। ফুলগুলা আগে বেইচা শেষ করি। একে একে ওরা সবাই উঠে পড়ে। ব্যস্ত হয়ে যায় যার যার কাজে।
No comments