১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা-বিচার হোক দ্রুত, থাকুক স্বচ্ছতা
চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার মামলায় সাবেক শিল্পমন্ত্রী জামায়াতে ইসলামী নেতা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, এনএসআইর সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দারসহ নতুন ১১ জনকে আসামি করে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেছে সিআইডি পুলিশ।
সাত বছর আগে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানার জেটিতে ১০ ট্রাক অস্ত্র ও চোরাচালানের ঘটনায় দায়ের করা দুটি পৃথক মামলায় সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করতে গিয়ে সিআইডি বলেছে, এ অস্ত্র দেশে নিয়ে আসা এবং খালাস পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াই এনএসআইর তৎকালীন শীর্ষস্থানীয় অফিসারদের তত্ত্বাবধানে সংঘটিত হয়েছে। আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার জন্য আনা এ অস্ত্রের চোরাচালান নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার কাজে বিভিন্ন পর্যায়ে নির্দেশ দেন ওই সময়ের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী। রাষ্ট্র্রের নিরাপত্তা বিধানে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ গুরুতর। তারা দেশের স্বার্থহানি করেছেন এবং তাদের কাজের দ্বারা প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্রে নাশকতা সৃষ্টির জন্যও সরাসরি ইন্ধন দানে লিপ্ত ছিলেন বলে প্রতীয়মান হয়। এদের সংশ্লিষ্টতার কারণেই সে সময়ে এ ধরনের একটি গুরুতর ঘটনায় যুক্তদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব ছিল না। ভূত তাড়ানোর সরিষাতেই ভূতের আছর_ এ প্রবাদ আমাদের জানা আছে। চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানার জেটিতে উলফার জন্য অস্ত্র খালাসের ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রতিষ্ঠানেই একযোগে ঘুণ ধরেছিল। কিংবা বলা যায়, সচেতনভাবেই তা করা হয়েছিল। অনেক স্থানে একযোগে পচন না ধরলে এমনটি হতে পারে না। এ ঘটনার বিচারকাজ এরই মধ্যে বিলম্বিত হয়েছে এবং তার কারণ বোধগম্য। এখন পরবর্তী পদক্ষেপগুলো দ্রুত গৃহীত হবে_ এটা প্রত্যাশিত। তবে বিচারকাজ হতে হবে স্বচ্ছ। তথ্য-প্রমাণের বাইরে অনুমাননির্ভরতার সুযোগ এ ক্ষেত্রে নেই। মামলার অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ বার সময় বাড়ানো হয়েছিল। সর্বশেষ গত ৩০ মার্চ আদালত তদন্ত প্রতিবেদন জমাদানের জন্য ২৯ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। সম্পূরক চার্জশিট দিতে গিয়ে শুধু সময়সীমা রক্ষা নয়, বরং তথ্য-প্রমাণের ওপর নিশ্চয়ই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর অন্যথা হলে সেটাও সংশ্লিষ্টদের ক্ষেত্রে গুরুতর অপরাধের পর্যায়ে পড়বে। মূল অভিযুক্তদের কয়েকজন বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জোটের নেতা হওয়ায় পুরো বিষয়টিকে 'রাজনৈতিক প্রতিহিংসা' হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা হতে পারে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বগুড়ায়ও বিপুল পরিমাণ গুলি ও বিস্ফোরক দ্রব্য আটকের ঘটনা ঘটেছিল। এর হোতারাও এখন পর্যন্ত বিচারের মুখোমুখি হয়নি। আরেকটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবল্পুব্দ এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা, যার সরাসরি টার্গেট ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা। এ ঘটনাকে নিছক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সমাবেশ পণ্ড করতে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। এর বিচারকাজেও ইচ্ছাকৃত গাফিলতির ঘটনা ঘটেছে। এখন একে একে প্যান্ডোরার বাক্স খুলে পড়ূক। কিন্তু সব কাজ হতে হবে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে। এর অন্যথা কোনোভাবেই গ্রহণীয় হবে না।
No comments