আগের নায়কেরা
লেভ ইয়াসিন ১৯৬০ গোলরক্ষক সোভিয়েত ইউনিয়ন ‘ব্লাক স্পাইডার’ নামে পরিচিত লেভ ইয়াসিন মাকড়সার মতোই গোলমুখে ওত পেতে থাকতেন। এমনভাবে গোল বাঁচাতেন মনে হতো যেন তাঁর হাত-পা চারটি নয়, আটটি। ১৯৬০ ইউরোর প্রথম আসরে সোভিয়েত ইউনিয়নকে চ্যাম্পিয়ন করতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা তাঁরই।
ফাইনালে ৪৩ মিনিটে গোল খেয়ে বসেছিল তাঁর দল। অন্য খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করায় যুগোস্লাভিয়ার গ্যালিচের শটটি ফেরাতে পারেননি ইয়াসিন। এরপর অবিশ্বাস্য তৎপরতায় বেশ কয়েকবারই নিশ্চিত গোলের হাত থেকে বাঁচান দলকে। পিছিয়ে পড়ার ছয় মিনিট পরই সমতা আনা সোভিয়েতরা অতিরিক্ত সময়ে ভিক্টর পনেডেলনিকের গোলে গড়েন ইতিহাস।
লুইস সুয়ারেজ
১৯৬৪
মিডফিল্ডারস্পেন
এবারও ফাইনালে উঠেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। গোলরক্ষক সেই ইয়াসিনই। কিন্তু এবার স্পেনের লুইস সুয়ারেজের সঙ্গে আর পেরে উঠলেন না ব্লাক স্পাইডার। না, ফাইনালে কোনো গোল করেননি স্পেন দলের সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য এই প্লে মেকার। তবে তাঁর একটি অবিশ্বাস্য পাস ও একটি নিখুঁত ক্রসই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়। শুরুর ৬ মিনিটে ও শেষ হওয়ার ৬ মিনিট আগে ওই দুই গোলেই চ্যাম্পিয়ন স্বাগতিক স্পেন। সেমিতে হাঙ্গেরির বিপক্ষেও তাঁর পাস থেকেই দুটি গোল হয়েছিল।
দিনো জফ
১৯৬৮
গোলরক্ষক ইতালি
দিনো জফের কথা মনে হলেই স্মৃতির আয়নায় ভেসে ওঠে ১৯৮২ বিশ্বকাপ। ৪০ বছর বয়সে ইতালিকে বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক কিন্তু ১৪ বছর আগেই আরেকটি ইতিহাসের অংশ হয়েছিলেন। ১৯৬৮ সালে আজ্জুরিদের ইউরো জয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল জফের। শেষ আটে বুলগেরিয়ার বিপক্ষে শুরু। নাপোলির সেমিফাইনালে অসাধারণ খেলে সোভিয়েত ইউনিয়নকে রুখে দিলেন ০-০ গোলে। অতিরিক্ত সময়েও মীমাংসা না হওয়া টসের আশ্রয়ে মিলল ফাইনালের টিকিট। যুগোশ্লাভিয়ার বিপক্ষে খেলতে হলো দুটি ফাইনাল। প্রথমটি ১-১ ড্র হওয়ার পর রিপ্লেতে ২-০ গোলে জিতে ইতালি পেল একমাত্র ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের স্বাদ। চার ম্যাচে মাত্র একটি গোল খেয়েছিলেন জফ।
জার্ড মুলার
১৯৭২
স্ট্রাইকার প. জার্মানি
১৯৭০ বিশ্বকাপেই ১০ গোল করে নিজেকে চিনিয়েছিলেন জার্ড মুলার। ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, গান্টার নেটজার, পল ব্রাইটনার, উলি হোনেস ও মুলারকে নিয়ে ১৯৭৪ ইউরোতে ফেবারিট ছিল পশ্চিম জার্মানিই। সেমিফাইনালে বেলজিয়ামের বিপক্ষে করা জার্মানদের দুটি গোলই ছিল মুলারের। ফাইনালেও করলেন ২ গোল। সোভিয়েত ইউনিয়নকে ৩-০ গোলে হারিয়ে বিশ্ব ফুটবলে জার্মান আধিপত্যের সূচনা হলো ব্রাসেলসেই।
আন্তোনিন পানেঙ্কা
১৯৭৬
মিডফিল্ডার চেকোস্লোভাকিয়া
একটি মাত্র পেনাল্টি শট, আর তাতেই অমর আন্তোনিন পানেঙ্কা। ১৯৭৬ সালে বেলগ্রেডের ফাইনালে ফেবারিট ছিল পশ্চিম জার্মানিই। ফাইনালে দু-দুবার পিছিয়ে পড়েও সমতা এনেছিল জার্মানরা। অতিরিক্ত সময় শেষে ম্যাচ গড়াল টাইব্রেকারে। প্রথম ৭ শটেই গোল। জার্মানির চতুর্থ শটটি উড়ে গেল আকাশে। ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে পানেঙ্কা ঠান্ডা মাথায় আলতো চিপে বোকা বানালেন সেপ মেয়ারকে। বন্ধু ও সতীর্থ এক গোলরক্ষকের সঙ্গে বাজিতে এক গ্লাস বিয়ার বা একটি চকলেট বার জেতার জন্যই এই চিপ আবিষ্কার করেন পানেঙ্কা। আর এটাই চেকোস্লোভাকিয়াকে জিতিয়ে দিল ইউরো।
হর্স্ট রুবেশ
১৯৮০
স্ট্রাইকার প. জার্মানি
ব্যাপারটা ঠিক পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনার মতোই। স্ট্রাইকার ক্লস ফিশারের চোটই জাতীয় দলে সুযোগ করে দেয় রুবেশকে। সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে ১৯৮০ ইউরোতে নায়ক এই স্ট্রাইকারই। ফাইনালে তাঁর সুযোগ পাওয়া নিয়েই ছিল সংশয়। আগের ম্যাচগুলোয় গোল না পেলেও কোচ আস্থা রেখেছিলেন তাঁর ওপর। ফাইনালে বেলজিয়ামের বিপক্ষে ২-১ গোলে জয়ের ম্যাচটিতে জার্মানদের দুটি গোলই তাঁর। শূন্য থেকে উঠে এসেই নায়ক বনে গেলেন অখ্যাত এক ফুটবলার।
মিশেল প্লাতিনি
১৯৮৪
মিডফিল্ডার ফ্রান্স
স্বপ্নের ফুটবল খেলেই ১৯৮৪ ইউরো জিতেছিল স্বাগতিক ফ্রান্স। আর ফরাসিদের স্বপ্ন যাত্রার নায়ক ছিলেন অধিনায়ক মিশেল প্লাতিনি। ২টি হ্যাটট্রিকসহ করেছেন রেকর্ড ৯ গোল। ফাইনালে স্পেনের বিপক্ষে প্রথম গোলটিও তাঁর। প্লাতিনি তাঁর কাজ শুরু করেছিলেন ডেনমার্কের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই। তাঁর একমাত্র গোলেই জেতে ফ্রান্স। পরের দুই ম্যাচে বেলজিয়াম ও যুগোস্লাভিয়ার বিপক্ষে টানা দুই হ্যাটট্রিক। সেমিফাইনালে ১১৯ মিনিটে তাঁর দেওয়া গোলেই পর্তুগালকে ৩-২ গোলে হারায় ফ্রান্স।
মার্কো ফন বাস্তেন
১৯৮৮
স্ট্রাইকার হল্যান্ড
ইউরো শুরুর আগেই ২৩ বছর বয়সী বাস্তেনকে ভাবা হতো ফুটবল বিশ্বের অন্যতম সেরা তরুণ প্রতিভা। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটিতে সুযোগ পাননি। দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁকে খেলালেন কোচ রাইনাস মিশেল। হ্যাটট্রিক করেই নিজেকে চেনালেন বাস্তেন। এরপর সেমিফাইনালে পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে জয়সূচক গোল। ফাইনালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে দুরূহ কোণ থেকে করলেন আশ্চর্য এক গোল। ২-০ গোলে জিতে প্রথম ও শেষবারের মতো বড় কোনো টুর্নামেন্ট জিতল ডাচরা। আর বাস্তেন ঢুকে গেলেন ইতিহাসে।
পিটার স্মাইকেল
১৯৯২
গোলরক্ষক ডেনমার্ক
হান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসনের রূপকথাও হার মানল ১৯৯২ সালে। হার মানাল তাঁর দেশ ডেনমার্কই। বাছাইপর্ব পেরোতে ব্যর্থ দলটি সুইডেনে গেল যুগোস্লাভিয়া বহিষ্কার হওয়াতে। গিয়েই ধুন্ধুমার, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সকে পেছনে ফেলে উঠে গেল সেমিফাইনালে। শেষ চারে এসেই সব আলো নিজের দিকে টেনে নিলেন স্মাইকেল। টাইব্রেকারে আগের বারের নায়ক বাস্তেনের শট ঠেকিয়ে দলকে নিয়ে গেলেন ফাইনালে। গোথেনবার্গে প্রথম ১৫ মিনিটেই ঠেকালেন জার্মানদের তিন তিনটি শট। জার্মানিকে হতভম্ব করে উল্টো ২ গোল করে ফেলে ডেনমার্ক।
ম্যাথিয়াস স্যামার
১৯৯৬
মিডফিল্ডার জার্মানি
ফাইনালে অলিভার বিয়েরহফের গোল্ডেন গোলেই চেক প্রজাতন্ত্রকে ২-১ গোলে হারিয়ে ইউরো জেতে জার্মানি। তবে টুর্নামেন্টের নায়ক কিন্তু বিয়েরহফ নন, আরেক জার্মান ম্যাথিয়াস স্যামার। পূর্ব জার্মানি থেকে জার্মানি দলে সুযোগ পাওয়া প্রথম ফুটবলার স্যামার খেলতেন সুইপার পজিশনে। গ্রুপ পর্বে রাশিয়ার বিপক্ষে একটি গোলের পর কোয়ার্টারে তাঁর গোলেই ক্রোয়েশিয়াকে পেছনে ফেলে জার্মানি। এরপর স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ফাইনাল। পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারণ খেলার পুরস্কার পেলেন স্যামার প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট হয়ে।
থিওডরস জাগোরাকিস
২০০৪
মিডফিল্ডার গ্রিস
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে গ্রিস ইউরো জিতবে, এটা বললে লোকে পাগলই বলত। কিন্তু অধিনায়ক ও ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার থিওডরস জাগোরাকিসের নেতৃত্বে একের পর এক ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন গ্রিকরাই। জাগোরাকিস মিডফিল্ডে লড়েছেন সত্যিকারের লড়াকুর মতো। রক্ষণকাজেও সহায়তা করে গ্রিসের রক্ষণভাগকে নিশ্ছিদ্র রেখেছিলেন জাগোরাকিস। তাঁর ক্রস থেকেই কোয়ার্টার ফাইনালে হেডে গোল করে ফ্রান্সের বিদায় নিশ্চিত করেন অ্যাঞ্জেলো চ্যারিস্টিস।
জিনেদিন জিদান
২০০০
মিডফিল্ডার ফ্রান্স
দুবছর আগে বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন। এবার ফ্রান্স ইউরোও জিতল জিনেদিন জিদান জাদুতে। আগের আসরের জার্মানির মতো এবারও গোল্ডেন গোলেই শিরোপা নিশ্চিত করে ফ্রান্স। ডেভিড ত্রেজেগে গোলটি করেছেন জিদানের পাস থেকেই। টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সাবেক চ্যাম্পিয়ন ডেনমার্ককে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়া ম্যাচেও অঁরিকে দিয়ে একটি গোল করিয়েছিলেন জিদান। শেষ আটে তাঁর ফ্রিকিক গোলেই স্পেনকে ২-১ গোলে হারায় ফ্রান্স। সেমিতে পেনাল্টি থেকে জিদানের একমাত্র পেনাল্টি গোলেই পর্তুগালকে কাঁদিয়ে ফাইনালে ওঠে ফরাসিরা।
জাভি হার্নান্দেজ
২০০৮
মিডফিল্ডার স্পেন
একটি ট্রফির জন্য স্পেনের ৪৪ বছরের প্রতীক্ষার অবসান হয়েছিল ২০০৮ সালে। স্প্যানিশ ফুটবলের নতুন যুগের সূচনাও ওই বছর। স্প্যানিশ ফুটবলের এই পুনরুত্থানে মূল ভূমিকা ছিল তাদের মধ্য মাঠের। আর এর নেতৃত্বে ছিলেন জাভি হার্নান্দেজ। পাসিং ফুটবলের অনুপম পসরা সাজিয়ে মোহমুগ্ধ করে রেখেছিলেন দর্শকদের। ডিফেন্স চেরা নিখুঁত পাস, সতীর্থকে দিয়ে গোল করানো, খেলাটাকে নিজেদের দখলে রাখা—সব কাজেই নেতৃত্ব দিয়েছেন জাভি।
সোলায়মান
লুইস সুয়ারেজ
১৯৬৪
মিডফিল্ডারস্পেন
এবারও ফাইনালে উঠেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। গোলরক্ষক সেই ইয়াসিনই। কিন্তু এবার স্পেনের লুইস সুয়ারেজের সঙ্গে আর পেরে উঠলেন না ব্লাক স্পাইডার। না, ফাইনালে কোনো গোল করেননি স্পেন দলের সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য এই প্লে মেকার। তবে তাঁর একটি অবিশ্বাস্য পাস ও একটি নিখুঁত ক্রসই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়। শুরুর ৬ মিনিটে ও শেষ হওয়ার ৬ মিনিট আগে ওই দুই গোলেই চ্যাম্পিয়ন স্বাগতিক স্পেন। সেমিতে হাঙ্গেরির বিপক্ষেও তাঁর পাস থেকেই দুটি গোল হয়েছিল।
দিনো জফ
১৯৬৮
গোলরক্ষক ইতালি
দিনো জফের কথা মনে হলেই স্মৃতির আয়নায় ভেসে ওঠে ১৯৮২ বিশ্বকাপ। ৪০ বছর বয়সে ইতালিকে বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক কিন্তু ১৪ বছর আগেই আরেকটি ইতিহাসের অংশ হয়েছিলেন। ১৯৬৮ সালে আজ্জুরিদের ইউরো জয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল জফের। শেষ আটে বুলগেরিয়ার বিপক্ষে শুরু। নাপোলির সেমিফাইনালে অসাধারণ খেলে সোভিয়েত ইউনিয়নকে রুখে দিলেন ০-০ গোলে। অতিরিক্ত সময়েও মীমাংসা না হওয়া টসের আশ্রয়ে মিলল ফাইনালের টিকিট। যুগোশ্লাভিয়ার বিপক্ষে খেলতে হলো দুটি ফাইনাল। প্রথমটি ১-১ ড্র হওয়ার পর রিপ্লেতে ২-০ গোলে জিতে ইতালি পেল একমাত্র ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের স্বাদ। চার ম্যাচে মাত্র একটি গোল খেয়েছিলেন জফ।
জার্ড মুলার
১৯৭২
স্ট্রাইকার প. জার্মানি
১৯৭০ বিশ্বকাপেই ১০ গোল করে নিজেকে চিনিয়েছিলেন জার্ড মুলার। ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, গান্টার নেটজার, পল ব্রাইটনার, উলি হোনেস ও মুলারকে নিয়ে ১৯৭৪ ইউরোতে ফেবারিট ছিল পশ্চিম জার্মানিই। সেমিফাইনালে বেলজিয়ামের বিপক্ষে করা জার্মানদের দুটি গোলই ছিল মুলারের। ফাইনালেও করলেন ২ গোল। সোভিয়েত ইউনিয়নকে ৩-০ গোলে হারিয়ে বিশ্ব ফুটবলে জার্মান আধিপত্যের সূচনা হলো ব্রাসেলসেই।
আন্তোনিন পানেঙ্কা
১৯৭৬
মিডফিল্ডার চেকোস্লোভাকিয়া
একটি মাত্র পেনাল্টি শট, আর তাতেই অমর আন্তোনিন পানেঙ্কা। ১৯৭৬ সালে বেলগ্রেডের ফাইনালে ফেবারিট ছিল পশ্চিম জার্মানিই। ফাইনালে দু-দুবার পিছিয়ে পড়েও সমতা এনেছিল জার্মানরা। অতিরিক্ত সময় শেষে ম্যাচ গড়াল টাইব্রেকারে। প্রথম ৭ শটেই গোল। জার্মানির চতুর্থ শটটি উড়ে গেল আকাশে। ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে পানেঙ্কা ঠান্ডা মাথায় আলতো চিপে বোকা বানালেন সেপ মেয়ারকে। বন্ধু ও সতীর্থ এক গোলরক্ষকের সঙ্গে বাজিতে এক গ্লাস বিয়ার বা একটি চকলেট বার জেতার জন্যই এই চিপ আবিষ্কার করেন পানেঙ্কা। আর এটাই চেকোস্লোভাকিয়াকে জিতিয়ে দিল ইউরো।
হর্স্ট রুবেশ
১৯৮০
স্ট্রাইকার প. জার্মানি
ব্যাপারটা ঠিক পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনার মতোই। স্ট্রাইকার ক্লস ফিশারের চোটই জাতীয় দলে সুযোগ করে দেয় রুবেশকে। সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে ১৯৮০ ইউরোতে নায়ক এই স্ট্রাইকারই। ফাইনালে তাঁর সুযোগ পাওয়া নিয়েই ছিল সংশয়। আগের ম্যাচগুলোয় গোল না পেলেও কোচ আস্থা রেখেছিলেন তাঁর ওপর। ফাইনালে বেলজিয়ামের বিপক্ষে ২-১ গোলে জয়ের ম্যাচটিতে জার্মানদের দুটি গোলই তাঁর। শূন্য থেকে উঠে এসেই নায়ক বনে গেলেন অখ্যাত এক ফুটবলার।
মিশেল প্লাতিনি
১৯৮৪
মিডফিল্ডার ফ্রান্স
স্বপ্নের ফুটবল খেলেই ১৯৮৪ ইউরো জিতেছিল স্বাগতিক ফ্রান্স। আর ফরাসিদের স্বপ্ন যাত্রার নায়ক ছিলেন অধিনায়ক মিশেল প্লাতিনি। ২টি হ্যাটট্রিকসহ করেছেন রেকর্ড ৯ গোল। ফাইনালে স্পেনের বিপক্ষে প্রথম গোলটিও তাঁর। প্লাতিনি তাঁর কাজ শুরু করেছিলেন ডেনমার্কের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই। তাঁর একমাত্র গোলেই জেতে ফ্রান্স। পরের দুই ম্যাচে বেলজিয়াম ও যুগোস্লাভিয়ার বিপক্ষে টানা দুই হ্যাটট্রিক। সেমিফাইনালে ১১৯ মিনিটে তাঁর দেওয়া গোলেই পর্তুগালকে ৩-২ গোলে হারায় ফ্রান্স।
মার্কো ফন বাস্তেন
১৯৮৮
স্ট্রাইকার হল্যান্ড
ইউরো শুরুর আগেই ২৩ বছর বয়সী বাস্তেনকে ভাবা হতো ফুটবল বিশ্বের অন্যতম সেরা তরুণ প্রতিভা। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটিতে সুযোগ পাননি। দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁকে খেলালেন কোচ রাইনাস মিশেল। হ্যাটট্রিক করেই নিজেকে চেনালেন বাস্তেন। এরপর সেমিফাইনালে পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে জয়সূচক গোল। ফাইনালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে দুরূহ কোণ থেকে করলেন আশ্চর্য এক গোল। ২-০ গোলে জিতে প্রথম ও শেষবারের মতো বড় কোনো টুর্নামেন্ট জিতল ডাচরা। আর বাস্তেন ঢুকে গেলেন ইতিহাসে।
পিটার স্মাইকেল
১৯৯২
গোলরক্ষক ডেনমার্ক
হান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসনের রূপকথাও হার মানল ১৯৯২ সালে। হার মানাল তাঁর দেশ ডেনমার্কই। বাছাইপর্ব পেরোতে ব্যর্থ দলটি সুইডেনে গেল যুগোস্লাভিয়া বহিষ্কার হওয়াতে। গিয়েই ধুন্ধুমার, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সকে পেছনে ফেলে উঠে গেল সেমিফাইনালে। শেষ চারে এসেই সব আলো নিজের দিকে টেনে নিলেন স্মাইকেল। টাইব্রেকারে আগের বারের নায়ক বাস্তেনের শট ঠেকিয়ে দলকে নিয়ে গেলেন ফাইনালে। গোথেনবার্গে প্রথম ১৫ মিনিটেই ঠেকালেন জার্মানদের তিন তিনটি শট। জার্মানিকে হতভম্ব করে উল্টো ২ গোল করে ফেলে ডেনমার্ক।
ম্যাথিয়াস স্যামার
১৯৯৬
মিডফিল্ডার জার্মানি
ফাইনালে অলিভার বিয়েরহফের গোল্ডেন গোলেই চেক প্রজাতন্ত্রকে ২-১ গোলে হারিয়ে ইউরো জেতে জার্মানি। তবে টুর্নামেন্টের নায়ক কিন্তু বিয়েরহফ নন, আরেক জার্মান ম্যাথিয়াস স্যামার। পূর্ব জার্মানি থেকে জার্মানি দলে সুযোগ পাওয়া প্রথম ফুটবলার স্যামার খেলতেন সুইপার পজিশনে। গ্রুপ পর্বে রাশিয়ার বিপক্ষে একটি গোলের পর কোয়ার্টারে তাঁর গোলেই ক্রোয়েশিয়াকে পেছনে ফেলে জার্মানি। এরপর স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ফাইনাল। পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারণ খেলার পুরস্কার পেলেন স্যামার প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট হয়ে।
থিওডরস জাগোরাকিস
২০০৪
মিডফিল্ডার গ্রিস
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে গ্রিস ইউরো জিতবে, এটা বললে লোকে পাগলই বলত। কিন্তু অধিনায়ক ও ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার থিওডরস জাগোরাকিসের নেতৃত্বে একের পর এক ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন গ্রিকরাই। জাগোরাকিস মিডফিল্ডে লড়েছেন সত্যিকারের লড়াকুর মতো। রক্ষণকাজেও সহায়তা করে গ্রিসের রক্ষণভাগকে নিশ্ছিদ্র রেখেছিলেন জাগোরাকিস। তাঁর ক্রস থেকেই কোয়ার্টার ফাইনালে হেডে গোল করে ফ্রান্সের বিদায় নিশ্চিত করেন অ্যাঞ্জেলো চ্যারিস্টিস।
জিনেদিন জিদান
২০০০
মিডফিল্ডার ফ্রান্স
দুবছর আগে বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন। এবার ফ্রান্স ইউরোও জিতল জিনেদিন জিদান জাদুতে। আগের আসরের জার্মানির মতো এবারও গোল্ডেন গোলেই শিরোপা নিশ্চিত করে ফ্রান্স। ডেভিড ত্রেজেগে গোলটি করেছেন জিদানের পাস থেকেই। টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সাবেক চ্যাম্পিয়ন ডেনমার্ককে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়া ম্যাচেও অঁরিকে দিয়ে একটি গোল করিয়েছিলেন জিদান। শেষ আটে তাঁর ফ্রিকিক গোলেই স্পেনকে ২-১ গোলে হারায় ফ্রান্স। সেমিতে পেনাল্টি থেকে জিদানের একমাত্র পেনাল্টি গোলেই পর্তুগালকে কাঁদিয়ে ফাইনালে ওঠে ফরাসিরা।
জাভি হার্নান্দেজ
২০০৮
মিডফিল্ডার স্পেন
একটি ট্রফির জন্য স্পেনের ৪৪ বছরের প্রতীক্ষার অবসান হয়েছিল ২০০৮ সালে। স্প্যানিশ ফুটবলের নতুন যুগের সূচনাও ওই বছর। স্প্যানিশ ফুটবলের এই পুনরুত্থানে মূল ভূমিকা ছিল তাদের মধ্য মাঠের। আর এর নেতৃত্বে ছিলেন জাভি হার্নান্দেজ। পাসিং ফুটবলের অনুপম পসরা সাজিয়ে মোহমুগ্ধ করে রেখেছিলেন দর্শকদের। ডিফেন্স চেরা নিখুঁত পাস, সতীর্থকে দিয়ে গোল করানো, খেলাটাকে নিজেদের দখলে রাখা—সব কাজেই নেতৃত্ব দিয়েছেন জাভি।
সোলায়মান
No comments