স্মরণ-ওস্তাদ বারীন মজুমদার

স্তাদ বারীন মজুমদার বাংলার সংগীতাঙ্গনের মহান ব্যক্তিত্ব। প্রাচুর্যের মধ্যে বেড়ে ওঠার কারণে সংস্কৃতিজগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন, এমনটা হয়নি তাঁর বেলায়। জমিদার পরিবারের সন্তান বারীন মজুমদার আন্তরিকভাবেই সংগীতচর্চায় লিপ্ত হন। পাবনা জেলার রাধানগরের জমিদার নিশেন্দ্র মজুমদারের সন্তান বারীন মজুমদার। বাবাও ছিলেন সংস্কৃতিমনস্ক। নাট্যাভিনেতা ছিলেন তিনি। মা ছিলেন সেতারবাদক।


তিন বছর বয়সে টাইফয়েডে আক্রান্ত হন তিনি। এরপর বিষ্ণুপদ ঘোষের শরীরচর্চা ক্লাবের সদস্য হন।শৈশব থেকে সংগীতের প্রতি তাঁর অনুরাগ দেখে বাবা নিশেন্দ্র মজুমদার তাঁকে কলকাতায় নিয়ে যান। ভীষ্মদেব চ্যাটার্জিকে সংগীতগুরু হিসেবে গ্রহণ করেন তিনি। রাগ ভূপালি শেখেন প্রথম দফায়। দুই বছর পর তাঁর গুরু সন্ন্যাসী হয়ে গেলে তিনি আবার পাবনায় ফিরে আসেন। বারীন মজুমদার সংগীতের ওপর আরো লেখাপড়া করার জন্য লক্ষ্নৌ যেতে চাইলেন। কিন্তু তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে লক্ষ্নৌ যেতে দেওয়া হলো না। বরং লক্ষ্নৌ থেকে ওস্তাদ রঘুরঙ্গন গোস্বামীকে আনা হলো বারীন মজুমদারকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য। তার পরও লক্ষ্নৌ যাওয়ার ইচ্ছা দমন করতে পারলেন না তিনি। গেলেন সেখানে। প্রথম যে হোটেলে থাকার জন্য তিনি গেলেন, সেখানেই ছিলেন উদয়শংকর ও রবিশংকর। কলেজে দেখা হয় বন্ধু চিন্ময় লাহিড়ীর সঙ্গে। তাঁর সহযোগিতায় তৃতীয় বর্ষে ভর্তি হলেন তিনি। সেখানে তিনি ওস্তাদ ফয়েজ খানের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হলেন। নিয়োজিত হলেন তাঁর শিক্ষানবিশ হিসেবে।
ওই সময় দেশ বিভাগের তোড়জোড় চলে। দেশ থেকে টাকা-পয়সা যাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেল। তিনি দেশে ফিরে আসার জন্য প্রিয় তানপুরাটা বন্ধক দিতে বাধ্য হলেন।
দেশ বিভাগের সূত্র ধরে তাঁর সম্পদের অনেকই লুট হয়ে যায়। কিন্তু দেশপ্রেমের কারণে তিনি তার পরও নিজের মাটির মায়া ত্যাগ করতে পারেননি। তাঁর পারিবারিক সম্পদের অনেকই হাতছাড়া হয়ে যায়। ফলে আর্থিক দিক থেকেও তাঁকে কষ্টকর অবস্থায় পড়তে হয়। কিন্তু নিজের প্রতিভা তাঁর চলার পথ সুগম করে দিয়েছে। চলার প্রয়োজনে তিনি একসময় ফটোগ্রাফি ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু স্বল্প সময়ের মধ্যেই এই ব্যবসার প্রতিও আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেন। আর্থিক সংকট থাকলেও সংগীতের পিপাসায় কোনো ঘাটতি হয়নি তাঁর। সেই কাজে অনুপ্রেরণাদায়িনী হিসেবে স্বীকৃত হয়েছেন তাঁর স্ত্রী এবং বিশিষ্ট রাগসংগীতশিল্পী ইলা মজুমদার। একজন শিল্পী তাঁর উত্তরসূরিদেরও সৃষ্টিশীল মানসিকতাসম্পন্ন করে গড়ে তোলার দিকে নজর দিয়েছেন। বাপ্পা মুজমদার ও পার্থ মজুমদার বাবার যোগ্য সন্তান হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। ওস্তাদ বারীন মজুমদার ২০০২ সালের ৩ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। সম্প্রতি তাঁর স্ত্রী ইলা মজুমদারও মৃত্যুবরণ করেছেন।
মো. আসাদুজ্জামান

No comments

Powered by Blogger.