প্রাকৃতিক সম্পদ-সুন্দর থাকুক সুন্দরবন by সোহেল নওরোজ

কেবল মানুষের হাত থেকে রক্ষা পেলে সবুজ-সতেজ সুন্দরবন সগৌরবে মাথা তুলে দাঁড়াবেবিশ্বের প্রাকৃতিক সাত বিস্ময়ে সুন্দরবন না থাকায় এটির উপযোগিতা তিলমাত্রও কমবে না। সুন্দরবনকে 'প্রকৃতির তাজমহল' বললেও অত্যুক্তি হয় না। কারণ প্রবল বিক্রমে বারবার মাথা তুলে দাঁড়ানোর ক্ষমতা সবার থাকে না। আমাদের সৌভাগ্য, পৃথিবীর অন্যতম ম্যানগ্রোভ বা প্যারাবনের বৃহৎ অংশ আমাদের দেশে অবস্থিত। এটি ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট।


ভয়াবহ প্রাকৃতিক বৈরিতায় বঙ্গভূমিকে সর্বদা বুকে আগলে সমূহ বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে সুন্দরবন। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস-উত্তাপ সহ্য করে আবার স্বমহিমায় জেগে ওঠে। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলার ক্ষত সারিয়ে তুলতে দেশের উপকূলবাসী এখনও হিমশিম খাচ্ছে। অথচ দুটি মারাত্মক ঝড়ের ধাক্কা সামলে ঠিকই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে অপরাজেয় সুন্দরবন। বাংলাদেশে পরিচালিত যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বনসেবা বিভাগের সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত ১৩ বছরে অনেক অত্যাচার-দুর্যোগ সওয়ার পরও সুন্দরবনের গাছ, লতাগুল্ম ও বনজ সম্পদ প্রায় দুই শতাংশ বেড়েছে।
সুন্দরবনের নদী ও বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন এলাকায় বনজ সম্পদের পরিমাণ যেমন বেড়েছে, তেমনি কমেছে জনবসতি অঞ্চলে। লোকালয় সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে নানাভাবে মানুষের নির্মমতার শিকার হচ্ছে এ প্যারাবন। নির্বিচারে গাছ কাটা, গোলপাতা ও মধু সংগ্রহের জন্য বনের স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘি্নত হচ্ছে। দস্যু ও কুচক্রী মহল কর্তৃক বৃক্ষরাজি ও অন্যান্য মূল্যবান বনজ সম্পদ লুণ্ঠিত হচ্ছে। সচেতনতা কিংবা কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে বন ভারসাম্য হারাচ্ছে। বাস্তুশৃঙ্খল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে।
সুন্দরবনের সংবেদনশীল একটি অংশ মানুষের অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে বিপন্ন হতে চলেছে। এ জন্য এককভাবে যেমন কাউকে দায়ী করা যায় না, তেমনি পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে 'অনিবার্য'ও বলা যায় না। নির্দিষ্ট কোনো শ্রেণী বা ব্যক্তিবিশেষের স্বার্থের কাছে সুন্দরবনের নিরাপত্তা তথা আমাদের ভবিষ্যৎ অস্তিত্বের পাশে 'হুমকি' শব্দটি যুক্ত হতে পারে না। অনিশ্চিত-অশুভ ভবিষ্যৎ থেকে সুন্দরবনকে রক্ষা করতে এখনই যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। ইদানীং যে কোনো অধিবেশনে-সম্মেলনে বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশের তালিকা করা হচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশের নাম প্রথম সারিতে স্থান পাচ্ছে। জলবায়ু বিপর্যয়ের ক্ষতিকর প্রভাব এড়াতে সাহায্য তহবিলও গড়ে তোলা হয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও মরুময়তার ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে পৃথিবীর মানুষ। উষ্ণায়নের শিকার ক্যালিফোর্নিয়া জঙ্গলের বিপন্ন প্রজাতির দু'একটি বৃক্ষকে টিকিয়ে রাখতে পরিবেশবাদীরা সমস্বর। অথচ কেবল মানুষের হাত থেকে রক্ষা পেলে সবুজ-সতেজ সুন্দরবন সগৌরবে মাথা তুলে দাঁড়াবে। টেকসই সুরক্ষা দিয়ে উপকূলবাসীকে বাঁচাবে। তাই সর্ববৃহৎ শ্বাসমূলীয় এ বনটিকে বিরক্ত না করে প্রকৃতির হাতে ছেড়ে দিতে হবে। সুন্দরবন যতটা আমাদের, ততটা না হোক তার কিয়দংশ হলেও আমরা সুন্দরবনের হয়ে আমাদের দায়বদ্ধতা কিংবা ভালোবাসার প্রমাণ দেব না কেন?

সোহেল নওরোজ :শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ
snawroz.bau@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.