নিজেদের অতীতেই পাওয়া যাবে অনুপ্রেরণা by মাসুদ পারভেজ

স্মৃতি কখনো বেদনার আবার কখনো অনুপ্রেরণারও। পাকিস্তান সিরিজের প্রথম ওয়ানডের পর বাংলাদেশ শিবির এখন বেদনার ভারে ভারাক্রান্ত হওয়ার চেয়ে নিজেদের অতীত থেকেই বরং অনুপ্রেরণা খুঁজে নিতে পারে। দুঃসহ একসময়ের মধ্য দিয়ে যেতে থাকা দলটির সামনে এ ছাড়া আর যে কোনো বিকল্পও নেই।টোয়েন্টি টোয়েন্টি ম্যাচের ব্যর্থতার পর অন্তত এ ব্যাখ্যায় দায় এড়ানোর সুযোগ ছিল যে এ ধরনের ক্রিকেটের চরিত্রের সঙ্গে এখনো ঠিক সেভাবে


মানিয়ে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। কিন্তু ওয়ানডের ক্ষেত্রে তো সেটাও বলার উপায় নেই। এক দিনের ক্রিকেট হরহামেশাই খেলে আসছে তারা এবং গত পরশু মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডেতে ৯১ রানে অল আউট হওয়ার লজ্জায় দুঃসহ নিকট অতীতও চলে আসছে সামনে। এ বছরই একই মাঠে একই রকম দুর্ঘটনা যে আছে আরো দুটো। বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৮ আর দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ৭৮ রানে অল আউট হওয়ার সঙ্গে প্রথম ওয়ানডের কাণ্ডটা যোগ হয়ে পাষাণভার বেড়ে গেছে আরো।
আবার এমন ব্যর্থতার পরও ঘুরে দাঁড়ানোর নজির কিন্তু আছে। আর তেমন ঘটনার সন্ধানে খুব বেশি পেছনেও ফিরে যেতে হচ্ছে না। বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নজিরবিহীন ব্যাটিং ব্যর্থতার পরপরই ঝলসে উঠেছিল বাংলাদেশ। নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানে অল আউট হওয়ার ঘটনায় সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হয়ে চলছিলেন ক্রিকেটাররা। ওই পারফরম্যান্স দলের সামর্থ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল। রীতিমতো দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার মতো অবস্থা তখন। সে অবস্থায় ইংল্যান্ডকে হারিয়ে কী দারুণভাবেই না ঘুরে দাঁড়িয়েছিল টাইগাররা। ব্যর্থতার তিক্ত স্বাদ নিয়ে চট্টগ্রামে গিয়ে যেন অমৃতের পেয়ালায় চুমুক দিয়েছিলেন ক্রিকেটাররা। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ইংলিশদের ২২৫ রানে আটকে দেওয়ার পর পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচে শেষপর্যন্ত ২ উইকেটের জয়। চট্টগ্রাম তো আর এমনি এমনি সৌভাগ্যের শহর নাম পেয়ে যায়নি।
সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেটা অবশ্য সেই সৌভাগ্যের শহরে হচ্ছে না। না হলেও সেই ইংল্যান্ড ম্যাচ থেকে অনুপ্রেরণা নিতে বাধা কিসের! বিশ্বকাপ শেষে দেশের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দীর্ঘ ছুটিতে থাকা বাংলাদেশের সামনে আরেকটি বিপর্যয় নিয়ে আসে গত জুলাই-আগস্টের জিম্বাবুয়ে সফর। যেখানে একমাত্র টেস্টের পর ওয়ানডে সিরিজও হেরে বসায় আবারও সমালোচনার ঝড়ো হাওয়ায় লণ্ডভণ্ড হতে চলেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট। কঠিন সে সময়েও ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিজ্ঞা ফুটে উঠেছিল মাঠের পারফরম্যান্সে। দেশের মাঠে নতুন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজই শুরু হয়েছিল টোয়েন্টি টোয়েন্টি জয় দিয়ে। এরপর ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে খানিক খেই হারানো দলটি চট্টগ্রামে গিয়ে শেষ ম্যাচে ৫৮ লজ্জার ক্ষতে প্রলেপও ছড়াতে পেরেছিল। ক্যারিবীয়রা যে সেই ম্যাচে অল আউট হয়েছিল ৬১ রানে।
পাকিস্তান অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ নয় যে তাদের স্পিনে নাজেহাল করে ছাড়া যাবে। এ সিরিজে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের স্পিন অ্যাটাকের বিষেই বরং বেশি নীল হয়েছে বাংলাদেশ। কাজেই সাফল্যের পুরনো সূত্র মেনে এগোলে ঠিক চলছে না। তা ছাড়া পাকিস্তানও আছে দুর্দান্ত ফর্মে। পরিসংখ্যানে চোখ রেখে দেখা যাচ্ছে এ বছর খেলা সর্বশেষ ২০ ওয়ানডের মধ্যে ১৬টিতেই জয়ের হাসি হেসেছে পাকিস্তান। সে জন্যই সিরিজ শুরুর আগে থেকেই বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম বলে আসছিলেন যে পাকিস্তানের বিপক্ষে জিততে হলে তাঁদের খারাপ দিন যাওয়াটা খুব জরুরি। কিন্তু সে খারাপ দিনটা আনতে হলে নিজেদেরও তো কিছু করা লাগে। সে জন্য ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিজ্ঞায় একাট্টা হয়ে মাঠে নামতে হয় এবং উজাড় করে দিতে হয় নিজেদের সেরাটা। সেসব পারলে নিজেদের ভালো দিনও আসে।
এ বছরই ব্যর্থতায় নতজানু বাংলাদেশের প্রতিপক্ষকে পদানত করার দিনও এসেছে। দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে সে দিনগুলোই অনুপ্রেরণা হোক না!

No comments

Powered by Blogger.