প্রতিবন্ধী দিবস-ওদের প্রতি অবহেলা নয়
৩ ডিসেম্বর বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস। সমাজে প্রতিবন্ধীরা অবহেলার শিকার। সারা পৃথিবীতে মানসিক প্রতিবন্ধীদের অবহেলার কারণ প্রায় একই রকম। তবে বাংলাদেশে এর মূল কারণ দ্যরিদ্র্য। মানসিক প্রতিবন্ধকতার কারণগুলোকে ছয় ভাগে ভাগ করা যায়। ক্রোমোজমের গঠনগত ত্রুটি অথবা জিনের অস্বাভাবিক অবস্থানের ফলে কোনো শিশু মানসিক প্রতিবন্ধী হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ক্রোমোজম ও জিনগত কারণে শিশু মানসিক প্রতিবন্ধী হতে পারে।
ক্রিটিনিজম এবং হাইপো থাইরয়ডিজম_এ দুটি রোগের ফলে শিশুদের আয়োডিনের অভাব দেখা দিতে পারে। আয়োডিনের অভাবে শিশুর মধ্যে যেমন মানসিক প্রতিবন্ধিত্ব দেখা যায়, তেমনি শারীরিক অন্যান্য সমস্যা দেখা দিয়ে বিকলাঙ্গ হয়ে যেতে পারে। শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য মায়ের স্বাস্থ্যের সঙ্গে বিশেষভাবে জড়িত। এ ছাড়া গর্ভবতী মা যদি অপুষ্টি, দীর্ঘস্থায়ী অসুখ যেমন_ডায়াবেটিস, মৃগীরোগ, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ইত্যাদিতে ভোগেন এবং তিনি যদি ক্ষতিকারক মাদকদ্রব্য সেবন করেন, তবে শিশুটির মানসিক বিকাশ ব্যাহত হতে পারে। অতিরিক্ত ধূমপানের ফলে গর্ভস্থ শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মাতে পারে এবং এর ফলে শিশুটির মানসিক প্রতিবন্ধিত্ব দেখা দিতে পারে। সন্তান প্রসবের সময় শ্বাস-প্রশ্বাস বাধাগ্রস্ত হলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বিঘি্নত হয় এবং এর ফলস্বরূপ মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ নষ্ট হয়ে শিশু মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে যেতে পারে। শিশু যদি নির্দিষ্ট সময়ের আগে প্রসব হয় এবং কম ওজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে শিশু মানসিক প্রতিবন্ধকতার ঝুঁকির মধ্যে আছে। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ এবং মস্তিষ্কের আঘাত_এ দুটি কারণে আমাদের দেশে বেশির ভাগ শিশু মানসিক প্রতিবন্ধী হয়। সামাজিক ও পরিবেশগত বিষয় শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। যেসব শিশু মানসিক ও শারীরিকভাবে অত্যাচারিত এবং প্রতিনিয়ত হিংস্রতার শিকার হয়, তারা মানসিক প্রতিবন্ধী হতে পারে। পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য পরিষেবার অভাবে আমাদের দেশের শিশুদের বিকাশগত প্রতিবন্ধকতা দেখা যায়। এ ছাড়া স্বাস্থ্য-সচেতনতা, শিক্ষা ইত্যাদির অভাবও প্রতিবন্ধকতার জন্য দায়ী। শুধু আমাদের মানসিক প্রতিবন্ধকতার কারণ খুঁজলেই চলবে না, দেখতে হবে কিভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়। মানসিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন শিশুদের যত্ন মনোভাবগত বাধার কারণে যাঁরা প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করেন, তাঁরা নানা জটিল সমস্যার সম্মুখীন হন। প্রতিবন্ধীদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে না পারলে তাদের বাস্তব উন্নয়ন সম্ভব নয়। যদি কোনো পরিবারে মানসিক প্রতিবন্ধী শিশু থাকে, তবে তার মা-বাবা তার সম্পর্কে অন্যকে বলতেই চান না। যেসব শিশু মাঝারি থেকে তীব্র মানসিক প্রতিবন্ধকতায় ভুগছে, তাদের জরুরি ভিত্তিতে পরিষেবা দেওয়া প্রয়োজন। যেসব শিশু ডাইনস ডিনড্রোমের সঙ্গে হৃদরোগ, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, কান ও নাকের সমস্যায় ভুগছে; তাদের দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন। যে শিশুরা হাইপোথায়রডিজমে ভুগছে, তাদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন। প্রতিটি মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুর কিছু মৌলিক অধিকার রয়েছে। সমাজ সচেতনতার অভাবে তারা তাদের অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিতও হচ্ছে। প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে আমাদের সমাজের সবারই আরো বেশি সচেতন হওয়া উচিত। পাশাপাশি আইনি সহযোগিতা দিয়ে তাদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে সবাইকেই স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে সাহায্য-সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা উচিত।
আফতাব চৌধুরী
আফতাব চৌধুরী
No comments