টিপাইমুখ বাঁধ-যৌথ সমীক্ষার আশ্বাস মিললেও আনুষ্ঠানিক জানায়নি ভারত-মনমোহনের ফের আশ্বাস, ক্ষতি হবে না বাংলাদেশের
বিতর্কিত টিপাইমুখ বাঁধের কারণে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হবে না বলে আবারও আশ্বাস দিয়েছে ভারত। গতকাল শুক্রবার ভারতের রাজধানী নয়াদিলি্লতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী ও অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের সঙ্গে বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং এ আশ্বাস দেন। এর আগে মঙ্গলবার ভারতীয় হাইকমিশন থেকে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এবং ড. মনমোহন সিং
একাধিকবার টিপাইমুখ বাঁধের কারণে বাংলাদেশের ক্ষতি হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন।টিপাইমুখে যৌথ সমীক্ষা চালানোর বিষয়ে দিলি্লর পক্ষ থেকে ঢাকাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো না হলেও মনমোহন সিং এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন বলে দাবি করেছে ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশন।
হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার সৈয়দ এনামুল হক চৌধুরী কালের কণ্ঠের কলকাতা প্রতিনিধিকে জানান, ভারত টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে সব ধরনের তথ্য দেবে। শুধু তা-ই নয়, মণিপুর সরকার ও ভারতের জলবিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থার মধ্যে হওয়া চুক্তি-পরবর্তী তাদের যৌথ সমীক্ষার প্রতিবেদনও বাংলাদেশকে দেওয়া হবে। উপদেষ্টারা বাংলাদেশ থেকে একটি টেকনিক্যাল কমিটির ভারত সফরের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেন বলেও মন্তব্য করেন প্রেস মিনিস্টার।
এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় নয়াদিলি্লতে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী গতকালের বৈঠকে জানান যে টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলকে ভারত সফরে স্বাগত জানানো হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারত বাংলাদেশকে আবার আশ্বাস দিয়েছে, টিপাইমুখ প্রকল্পে এমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে না_যাতে এ দেশের ক্ষতি হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী ও ড. মসিউর রহমানের সাক্ষাতের কথা উল্লেখ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বরাক নদের ওপর প্রস্তাবিত টিপাইমুখ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে বাংলাদেশে সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাবের বিষয়টি তাঁরা বৈঠকে তুলে ধরেন। বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী গত সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে_এমন কোনো উদ্যোগ ভারত টিপাইমুখে নেবে না। দিলি্ল সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুই উপদেষ্টা প্রস্তাবিত টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে অগ্রসর হওয়ার আগে বাংলাদেশকে জানানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
দিলি্লতে বাংলাদেশ হাইকমিশন জানায়, টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে ভারত বাংলাদেশকে সব সময় তথ্য এবং জিজ্ঞাসার জবাব দিয়ে আসছে। ২০০৯ সালের জুলাই-আগস্টে ভারত সরকার বাংলাদেশের সংসদীয় প্রতিনিধিদলকে সফরের সুযোগ করে দিয়েছিল। এ ছাড়া প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ওই প্রকল্পের ব্যাপারেও বিশদ আলোচনা করেছিল ভারত। এর বাইরে দুই দেশের মন্ত্রী ও কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠকে ওই প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং ভারত প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনের সুযোগ দিয়েছে বলে বাংলাদেশ হাইকমিশন জানায়।
বাংলাদেশ হাইকমিশন জানায়, বাংলাদেশি সংসদীয় প্রতিনিধিদলকেও প্রস্তাবিত যৌথ উদ্যোগের প্রকল্প সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল। বাংলাদেশের সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সফরের পর গত ২২ অক্টোবর মণিপুর সরকার, এনএইচপিসি ও সুতলেজ জলবিদ্যুৎ নিগম লিমিটেডের মধ্যে স্বাক্ষরিত 'প্রমোটারস এগ্রিমেন্ট' (বিনিয়োগ চুক্তি) টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে একমাত্র অগ্রগতি। যৌথ উদ্যোগে একটি কম্পানি প্রতিষ্ঠাই ছিল ওই চুক্তির লক্ষ্য। হাইকমিশন আরো জানায়, প্রস্তাবিত টিপাইমুখ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা এবং শুকনো মৌসুমে পানিপ্রবাহ বৃদ্ধির ব্যবস্থা রয়েছে। সেচ বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে বরাক নদ থেকে পানি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কোনো ব্যবস্থা ওই প্রকল্পে নেই। টিপাইমুখ নিয়ে আলোচনার জন্য ভারত সরকার বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানাবে বলেও নয়াদিলি্লর পক্ষ থেকে জানানো হয়।
গতকালের বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সেপ্টেম্বরে তাঁর বাংলাদেশ সফরের কথা উল্লেখ করেন। এ ছাড়া তিনি সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতার প্রশংসা করেন এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের আরো উন্নয়নে একযোগে কাজ করার আশ্বাস দেন বলে হাইকমিশন জানায়।
যৌথ সমীক্ষার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কিছু জানানো হয়নি কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, টিপাইমুখ বাঁধ ইস্যুতে বাংলাদেশে অব্যাহত উদ্বেগ ও সমালোচনার মুখে সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দিলি্লতে পাঠানো কড়া বার্তায় এ দেশকে না জানিয়ে চুক্তির বিষয়ে ব্যাখ্যা দাবি করা হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ ভারতকে জানিয়েছে, বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বারবার যে আশ্বাস এসেছে, বাংলাদেশ তাতে আশ্বস্ত। এর পরও বাংলাদেশের ক্ষতি হবে না_এমন তথ্য যৌথ সমীক্ষা থেকেও আসা উচিত। টিপাইমুখ প্রকল্পের কারণে বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন কি না_এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, 'এখনো কোনো যৌথ সমীক্ষা হয়নি। উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু আছে কি না, তা সমীক্ষার ফল না পেয়ে কিভাবে বলি?'
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, দিলি্ল আলোচনার জন্য বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানাবে বলে ঢাকাকে বার্তা পাঠিয়েছে। কিন্তু যৌথ সমীক্ষার বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দিলি্ল থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে যৌথ সমীক্ষার দাবির ব্যাপারে নীতিগতভাবে সমর্থন জানানো হয়েছে। কিন্তু তা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে আসেনি।'
গতকাল সন্ধ্যায় দিলি্লতে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও যৌথ সমীক্ষার বিষয়টি স্থান পায়নি। এ নিয়ে উপদেষ্টাদের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আলোচনা হয়েছে কি না, তাও স্থান পায়নি বিজ্ঞপ্তিতে। গত মঙ্গলবার ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন থেকে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তি এবং গতকাল সন্ধ্যায় দিলি্লতে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তির উল্লেখযোগ্য অংশের মিল রয়েছে।
এ ছাড়া গতকাল দিলি্লতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের টিপাইমুখ এলাকা পরিদর্শনের কথা বলা হয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, তখনকার গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, ওই সফর ছিল অসম্পূর্ণ। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে প্রতিনিধিদলকে বহনকারী হেলিকপ্টার টিপাইমুখ এলাকায় নামতে পারেনি।
গত মাসে টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সময় নীরব ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা। গত বুধবার হঠাৎই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার জন্য দিলি্লতে যান প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিষয়টি তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানতেন না।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একই অববাহিকার দেশ বাংলাদেশকে না জানিয়ে ভারত এভাবে গোপনে চুক্তি করতে পারে না। তা ছাড়া ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বারবার আশ্বাসের পরও ওই চুক্তির মাধ্যমে সম্পর্কের উষ্ণতম সময়ে বাংলাদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে বলে তাঁরা মনে করেন।
খালেদাকে লেখা চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার পায়নি ভারত!
টিপাইমুখ বাঁধ ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার চিঠির উত্তর দিয়েছে ভারত এক সপ্তাহ আগে। কিন্তু গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ওই জবাবের প্রাপ্তি স্বীকার করে কোনো তথ্য ভারতকে জানানো হয়নি। এর ফলে আদৌ ওই চিঠির জবাব খালেদা জিয়ার হাতে পেঁৗছেছে কি না, তা নিশ্চিত নয় ভারত সরকার। এমনটা দাবি করেছেন দিলি্লতে বাংলাদেশের প্রেস মিনিস্টার সৈয়দ এনামুল হক চৌধুরী।
টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের কাছে খালেদা জিয়ার লেখা চিঠির উত্তর গত সপ্তাহে দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং। সৈয়দ এনামুল হক চৌধুরী গতকাল রাতে টেলিফোনে বলেন, একজন প্রধানমন্ত্রীর চিঠি পাওয়ার পর সেই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করে চিঠি পাঠানোটা হচ্ছে কূটনৈতিক নিয়ম। কিন্তু সেই চিঠি না পাওয়ায় ভারত সরকার বিস্ময় প্রকাশ করেছে। যদিও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। কিংবা কোনো সংবাদমাধ্যমেও দেশটি এই মনোভাবের কথা জানায়নি।
হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার সৈয়দ এনামুল হক চৌধুরী কালের কণ্ঠের কলকাতা প্রতিনিধিকে জানান, ভারত টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে সব ধরনের তথ্য দেবে। শুধু তা-ই নয়, মণিপুর সরকার ও ভারতের জলবিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থার মধ্যে হওয়া চুক্তি-পরবর্তী তাদের যৌথ সমীক্ষার প্রতিবেদনও বাংলাদেশকে দেওয়া হবে। উপদেষ্টারা বাংলাদেশ থেকে একটি টেকনিক্যাল কমিটির ভারত সফরের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেন বলেও মন্তব্য করেন প্রেস মিনিস্টার।
এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় নয়াদিলি্লতে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী গতকালের বৈঠকে জানান যে টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলকে ভারত সফরে স্বাগত জানানো হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারত বাংলাদেশকে আবার আশ্বাস দিয়েছে, টিপাইমুখ প্রকল্পে এমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে না_যাতে এ দেশের ক্ষতি হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী ও ড. মসিউর রহমানের সাক্ষাতের কথা উল্লেখ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বরাক নদের ওপর প্রস্তাবিত টিপাইমুখ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে বাংলাদেশে সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাবের বিষয়টি তাঁরা বৈঠকে তুলে ধরেন। বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী গত সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া আশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে_এমন কোনো উদ্যোগ ভারত টিপাইমুখে নেবে না। দিলি্ল সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুই উপদেষ্টা প্রস্তাবিত টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে অগ্রসর হওয়ার আগে বাংলাদেশকে জানানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
দিলি্লতে বাংলাদেশ হাইকমিশন জানায়, টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে ভারত বাংলাদেশকে সব সময় তথ্য এবং জিজ্ঞাসার জবাব দিয়ে আসছে। ২০০৯ সালের জুলাই-আগস্টে ভারত সরকার বাংলাদেশের সংসদীয় প্রতিনিধিদলকে সফরের সুযোগ করে দিয়েছিল। এ ছাড়া প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ওই প্রকল্পের ব্যাপারেও বিশদ আলোচনা করেছিল ভারত। এর বাইরে দুই দেশের মন্ত্রী ও কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠকে ওই প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং ভারত প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনের সুযোগ দিয়েছে বলে বাংলাদেশ হাইকমিশন জানায়।
বাংলাদেশ হাইকমিশন জানায়, বাংলাদেশি সংসদীয় প্রতিনিধিদলকেও প্রস্তাবিত যৌথ উদ্যোগের প্রকল্প সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল। বাংলাদেশের সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সফরের পর গত ২২ অক্টোবর মণিপুর সরকার, এনএইচপিসি ও সুতলেজ জলবিদ্যুৎ নিগম লিমিটেডের মধ্যে স্বাক্ষরিত 'প্রমোটারস এগ্রিমেন্ট' (বিনিয়োগ চুক্তি) টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে একমাত্র অগ্রগতি। যৌথ উদ্যোগে একটি কম্পানি প্রতিষ্ঠাই ছিল ওই চুক্তির লক্ষ্য। হাইকমিশন আরো জানায়, প্রস্তাবিত টিপাইমুখ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা এবং শুকনো মৌসুমে পানিপ্রবাহ বৃদ্ধির ব্যবস্থা রয়েছে। সেচ বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে বরাক নদ থেকে পানি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কোনো ব্যবস্থা ওই প্রকল্পে নেই। টিপাইমুখ নিয়ে আলোচনার জন্য ভারত সরকার বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানাবে বলেও নয়াদিলি্লর পক্ষ থেকে জানানো হয়।
গতকালের বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সেপ্টেম্বরে তাঁর বাংলাদেশ সফরের কথা উল্লেখ করেন। এ ছাড়া তিনি সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতার প্রশংসা করেন এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের আরো উন্নয়নে একযোগে কাজ করার আশ্বাস দেন বলে হাইকমিশন জানায়।
যৌথ সমীক্ষার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কিছু জানানো হয়নি কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, টিপাইমুখ বাঁধ ইস্যুতে বাংলাদেশে অব্যাহত উদ্বেগ ও সমালোচনার মুখে সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দিলি্লতে পাঠানো কড়া বার্তায় এ দেশকে না জানিয়ে চুক্তির বিষয়ে ব্যাখ্যা দাবি করা হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ ভারতকে জানিয়েছে, বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বারবার যে আশ্বাস এসেছে, বাংলাদেশ তাতে আশ্বস্ত। এর পরও বাংলাদেশের ক্ষতি হবে না_এমন তথ্য যৌথ সমীক্ষা থেকেও আসা উচিত। টিপাইমুখ প্রকল্পের কারণে বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন কি না_এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, 'এখনো কোনো যৌথ সমীক্ষা হয়নি। উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু আছে কি না, তা সমীক্ষার ফল না পেয়ে কিভাবে বলি?'
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, দিলি্ল আলোচনার জন্য বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানাবে বলে ঢাকাকে বার্তা পাঠিয়েছে। কিন্তু যৌথ সমীক্ষার বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দিলি্ল থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে যৌথ সমীক্ষার দাবির ব্যাপারে নীতিগতভাবে সমর্থন জানানো হয়েছে। কিন্তু তা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে আসেনি।'
গতকাল সন্ধ্যায় দিলি্লতে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও যৌথ সমীক্ষার বিষয়টি স্থান পায়নি। এ নিয়ে উপদেষ্টাদের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আলোচনা হয়েছে কি না, তাও স্থান পায়নি বিজ্ঞপ্তিতে। গত মঙ্গলবার ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন থেকে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তি এবং গতকাল সন্ধ্যায় দিলি্লতে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তির উল্লেখযোগ্য অংশের মিল রয়েছে।
এ ছাড়া গতকাল দিলি্লতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের টিপাইমুখ এলাকা পরিদর্শনের কথা বলা হয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, তখনকার গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, ওই সফর ছিল অসম্পূর্ণ। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে প্রতিনিধিদলকে বহনকারী হেলিকপ্টার টিপাইমুখ এলাকায় নামতে পারেনি।
গত মাসে টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সময় নীরব ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা। গত বুধবার হঠাৎই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার জন্য দিলি্লতে যান প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিষয়টি তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানতেন না।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একই অববাহিকার দেশ বাংলাদেশকে না জানিয়ে ভারত এভাবে গোপনে চুক্তি করতে পারে না। তা ছাড়া ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বারবার আশ্বাসের পরও ওই চুক্তির মাধ্যমে সম্পর্কের উষ্ণতম সময়ে বাংলাদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে বলে তাঁরা মনে করেন।
খালেদাকে লেখা চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার পায়নি ভারত!
টিপাইমুখ বাঁধ ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার চিঠির উত্তর দিয়েছে ভারত এক সপ্তাহ আগে। কিন্তু গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ওই জবাবের প্রাপ্তি স্বীকার করে কোনো তথ্য ভারতকে জানানো হয়নি। এর ফলে আদৌ ওই চিঠির জবাব খালেদা জিয়ার হাতে পেঁৗছেছে কি না, তা নিশ্চিত নয় ভারত সরকার। এমনটা দাবি করেছেন দিলি্লতে বাংলাদেশের প্রেস মিনিস্টার সৈয়দ এনামুল হক চৌধুরী।
টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের কাছে খালেদা জিয়ার লেখা চিঠির উত্তর গত সপ্তাহে দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং। সৈয়দ এনামুল হক চৌধুরী গতকাল রাতে টেলিফোনে বলেন, একজন প্রধানমন্ত্রীর চিঠি পাওয়ার পর সেই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করে চিঠি পাঠানোটা হচ্ছে কূটনৈতিক নিয়ম। কিন্তু সেই চিঠি না পাওয়ায় ভারত সরকার বিস্ময় প্রকাশ করেছে। যদিও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। কিংবা কোনো সংবাদমাধ্যমেও দেশটি এই মনোভাবের কথা জানায়নি।
No comments