চট্টগ্রামে মামলার পাহাড়-বিচারক সংকট দূর হোক
চট্টগ্রাম আদালতে মামলার সংখ্যা এখন এক লাখ ১৫ হাজার। অথচ এখানে মঞ্জুরিকৃত ৭৪টি আদালতের বিপরীতে বিচারক আছেন মাত্র ৫৪ জন। গুরুত্বপূর্ণ ২০টি আদালতে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিচারক নেই। ফলে মামলাজট দিন দিন প্রায় সমাধানের অতীত পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। বিচারপ্রার্থীরা যতই হাহুতাশ করেন না কেন, বিচারের বাণী নীরবে-নিভৃতে কেঁদে মরলেও বিচারকের অভাবেই তা সহসা সুরাহার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
সম্প্রতি আইনমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী চট্টগ্রামে একটি সহকারী জেলা জজ আদালতের দৈনিক কার্যতালিকার ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড প্রদর্শন কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠবে, যেখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারকই নেই সেখানে ডিজিটাল ডিসপ্লে কী কাজে আসবে! এটা যেন অনেকটা ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ার মতো। আর বিচারক স্বল্পতা শুধু চট্টগ্রামের সমস্যা নয়। প্রায়ই দেশের আদালতগুলোতে বিচারকের অভাবের কথা জানিয়ে পত্রিকার পাতায় রিপোর্ট প্রকাশ পায়। বিচারকের অভাবে মামলার পাহাড় জমা এবং পরিণামে বিচারপ্রার্থীদের অবর্ণনীয় ভোগান্তির কাহিনীও প্রকাশ পায়। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে এসব ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দেওয়া ছাড়া কাজের কাজ তেমন হয়েছে বলে জানা নেই। আইনমন্ত্রী অতি সম্প্রতি মামলাজট দূর করতে বিচারকদের দ্রুত মামলার কার্যক্রম সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন। তার বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত করার কোনো কারণ নেই। মামলা নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া দ্রুততর করলে মামলার সংখ্যা স্বভাবতই হ্রাস পাওয়ার কথা। কিন্তু দেশের অধিকাংশ স্থানে যেখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক নেই, সেখানে এই প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ হওয়া সম্ভব? বিচারক সংকটের কারণে যেভাবে মামলার স্তূপ স্ফীত হচ্ছে তার সমাধান হবে কীভাবে? এ জন্য কেবল মামলা নিষ্পত্তি দ্রুততর করলেই চলবে না, এর সঙ্গে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক নিয়োগের ব্যবস্থাও নিতে হবে। এ ব্যাপারে সরকার, আইন মন্ত্রণালয় ও বিচার বিভাগকে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে মানুষের স্বাভাবিক বিচার পাওয়ার প্রত্যাশা অতীতের মতো ভবিষ্যতেও পূরণ হবে না। আমরা চট্টগ্রামে বিচারকের সংকট দূর করতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানাই। বিচারক থাকলেই তো ন্যায়বিচার পাওয়ার প্রশ্ন আসে। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টাও অব্যাহত রাখতে হবে।
No comments