অন্য একজন-রাজ্জাকের দৌড় by নাজমুল ইমন

ওগাঁয় ভূমি রাজস্ব অফিসের একজন কর্মচারী আব্দুর রাজ্জাক প্রতিদিন প্রায় ৪২ কিলোমিটার দৌড়ে নিয়মিত অফিস করেন। অফিস ছুটি হলে আবার ৪২ কিলোমিটার দৌড়ে বাড়ি ফেরেন। সবার মনে হতে পারে, এটা বোধ হয় লোকটার খামখেয়ালি নতুবা টাকা বাঁচানোর একটা কৌশল। আসলে এর একটাও নয়, তিনি একজন ক্রীড়াবিদ।তার এই ব্যতিক্রমী আচরণের কারণে তিনি নওগাঁ জেলাতে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছেন। প্রায় ৪০ বছর বয়সী এই মানুষটি স্ত্রী


রুনা আর এক মাত্র মেয়ে রিয়াকে নিয়ে নওগাঁর বক্তারপুর গ্রামে লাল মসজিদ নামক স্থানে বসবাস করেন।
রাজ্জাকের দৌড় শুরু হয় ভোরের আকাশে সূর্য উঠার সঙ্গে সঙ্গেই। সকালের নামাজ পড়ে হালকা নাস্তা সেরেই অফিসের ফাইল নিয়ে অফিসের উদ্দেশে দৌড় শুরু করেন। আনুমানিক ৬টায় দৌড় শুরু করেন বাড়ির দরজা থেকেই। প্রথমে আস্তে আস্তে তারপর শরীরের গতি বাড়ার সাথে সাথেই বাড়ে রাজ্জাকের দৌড়ের গতি। এক দৌড়েই অফিস পৌঁছেন আর অফিস পেঁৗছানোর পর দেখা যায় ৯টা সাড়ে ৯টা। কোনোদিনই অফিসে পেঁৗছাতে বা অফিসের টাইম অতিক্রম হয়নি বরং অফিসের টাইমের আগেই আবদুর রাজ্জাক অফিসে হাজির। এভাবে প্রতিদিন দৌড়ে এসে অফিস করছেন আজ প্রায় ৪ বছর হলো।
'ক্রীড়াচর্চার ক্ষেত্রে তাঁর শরীর উপযোগী রাখতে নতুন কোনো রেকর্ড গড়তে আমি এই কৌশল অবলম্বন করছি।' আবদুর রাজ্জাকের কথা থেকে বোঝা যায় তিনি একজন ক্রীড়াবিদ। আর তার ক্রীড়ানৈপুন্যের কারণেই তিনি এই চাকরি পেয়েছেন। একজন সফল এবং দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী ক্রীড়াবিদ হিসেবে এটাতেই তিনি সার্থক। এক সময় একটি চাকরির আশায় ঘুরে বেড়িয়েছেন দিনের পর দিন। কিন্তু ২০০৭ সালের ১ জুলাই কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ রোডে বাংলা ম্যারাথন আয়োজিত ৪২ দশমিক ১৯৫ কিলোমিটার ম্যারাথন দেঁৗড়ে আবদুর রাজ্জাক প্রথম স্থান অধিকার করে দেশে আলোচিত হন। আর এই জয়ই তার জীবনের হাসি ফোটায়। কৃতিত্বপূর্ণ ম্যারাথন ব্যক্তিত্ব আবদুর রাজ্জাক তার সাফল্যের সব দলিল মানে সার্টিফিকেট নিয়ে অফিসপাড়ায় ঘুরতে থাকেন। অবশেষে একদিন নওগাঁর তৎকালীন জেলা প্রশাসক শেফাউল করিম আবদুর রাজ্জাকের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিচারে রাজস্ব বিভাগে এমএলএসএস পদে চাকরির ব্যবস্থা করেন। তিনি জেলা প্রশাসকের রাজস্ব শাখার ভূমি অফিসে চাকরি করছেন।
দরিদ্র এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আবদুর রাজ্জাক। এসএসসি পাস করার পর অভাবী পরিবারের ছোট ছেলে হিসেবে চাকরি খুঁজতে থাকেন তিনি। ফুটবল খেলায় ছোট থেকেই ঝোঁক ছিল তার। সেটা ৯২-৯৩ সালের কথা। নাটোরে থাকাকালীন স্টেডিয়ামে ফুটবল খেলতে গেলে পরিচয় হয় এক ম্যারাথন ট্রেনারের সঙ্গে, তার কাছেই শেখা হয় দৌড়ের প্রথম পর্ব আর সব প্রস্তুতি শেষে ১৯৯৪ সালে নাটোর জেলায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয় যুব দিবস উপলক্ষে ২৫ কিলোমিটার ম্যারাথন দৌড়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ১ম স্থান লাভ করে। তারপর ১৯৯৫, ১৯৯৬, ১৯৯৭ ও ১৯৯৮ সালে একই জেলায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয় যুব দিবস উপলক্ষে ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতায় বরাবর ১ম স্থান অধিকার করেন।
'কেন তিনি দৌড়াচ্ছেন অফিস করার জন্য এত দূরের পথ?' এর জবাবে আবদুর রাজ্জাক বলেন, ' অফিসের কাজে সময় না পাওয়ার কারণে অফিসের যাবার সময়টাতেই প্র্যাকটিস সেরে ফেলি। একে, অফিসেও যাওয়া হয় আবার প্র্যাকটিসটাও হয়ে যায়।'
তার স্বপ্ন তিনি দেশের পক্ষে জাতীয় দলের হয়ে ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করবেন।
স্বামী সম্পর্কে রুনা বেগম বললেন, 'প্রথম প্রথম আমার একটু খারাপই লাগত, কিন্তু এই দৌড়ের পর যখন চাকরি পেলো তখন বুঝলাম দৌড়টাই আমাদের ভাগ্যের চাকা। তাই এখন আর কিছু মনে হয় না।' হ

No comments

Powered by Blogger.