চার সন্তানই প্রতিবন্ধী by রফিকুল ইসলাম,
গৌরাঙ্গ চন্দ্র শীল। বংশপরম্পরায় তিনি নরসুন্দর। তবু ছোটবেলা থেকেই কারুশিল্পের দিকে তাঁর ঝোঁক। ২৫-৩০ হাত লম্বা বাঁশ কেটে সাজি বানাতে একটুও ভাবতে হয় না তাঁকে। সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পৈতৃক পেশার পরিবর্তন করেন গৌরাঙ্গ। কিন্তু সেই অদম্য ইচ্ছাশক্তি যেন পরাজিত হতে চলেছে। কারণ তাঁর পাঁচ সন্তানের চারজনই প্রতিবন্ধী।
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার মঠবাড়ী ইউনিয়নের ডহরসংকর গ্রামের কারুশিল্পী (পাটনী) গৌরাঙ্গ। তাঁর বড় ছেলে গোবিন্দ চন্দ্র শীল (২১) জন্মের সময় সুস্থ-সবল ছিলেন। যথাসময়ে তাঁকে ছয়টি টিকাও দেওয়া হয়। কিন্তু বয়স যখন সাড়ে তিন বছর, তখন তিনি অস্বাভাবিকভাবে হাঁটতে থাকেন। পরে হাঁটা ঠিক হলেও কথা বলা ও শ্রবণশক্তি দুটিই নষ্ট হয়ে যায়। তাই স্কুলের চৌকাঠে পা রাখতে পারেননি তিনি।
গোবিন্দের ছোট দুই বোন রীতা রানী শীল (১৭) ও অনিতা রানী শীল (১৫) এবং ছয় বছরের ভাই সৌরভ শীলেরও একই অবস্থা। তারাও ভাইয়ের মতোই বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী। এক পরিবারের চার সন্তানের অবস্থা একই রকম হলেও একমাত্র মেয়ে সুচিত্রা রানী শীল (১৪) পুরো সুস্থ। সে রাজাপুরের মঠবাড়ী ইউনিয়নের পুখরিজানা গ্রামের পিএম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীতে পড়ছে। তবে আর্থিক দৈন্যদশায় যেকোনো সময় তার পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা পরিবারের।
গৌরাঙ্গের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, খাওয়া থেকে শুরু করে পায়খানা-প্রস্রাব, এমনকি শুয়ে থাকা অবস্থায় পাশ ফেরানোসহ সব কাজই সৌরভকে করিয়ে দিচ্ছেন মা ঊষা রানী শীল। তিনি বলেন, 'বড় সন্তানদের সব কাজই একসময় করিয়ে দিতে হতো। রাতে ঘুমের মধ্যে এক পাশে বেশিক্ষণ থাকলে ওরা চিৎকার শুরু করত। তখন পাশ ফিরিয়ে দিতে হতো। এভাবে এক রাতে ওদের অন্তত চার-পাঁচবার ঘুরিয়ে দিতে হয়েছে। একটু বড় হওয়ার পর পায়খানা-প্রস্রাব বিছানায় করত। কারণ তখন ওরা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে আমাকে বোঝাতে পারত না।' তিনি বলেন, 'কাছাকাছি প্রতিবন্ধীদের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় অনেক কষ্টে সন্তানদের অঙ্গভঙ্গি শিখিয়েছি। এখন ওরা অনেক কিছুই শিখেছে। আমাকে রান্না থেকে শুরু করে কারুশিল্পের কাজে সাহায্য করে আসছে। ওরা এখন আমার কাছে আর বোঝা নয়।'
গৌরাঙ্গ জানান, জন্মের পর গোবিন্দকে ছয়টি টিকা দেওয়া হয়েছিল যাতে ভবিষ্যতে ডিপথেরিয়া, পোলিও, হুপিং কাশি, যক্ষ্মা, হাম ও ধনুষ্টঙ্কারের মতো মারাত্মক রোগ থেকে মুক্ত থাকেন। কিন্তু সাড়ে তিন বছর বয়সে কথা বলা ও শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলেন। একই পরিণতি হয় রীতা, অনিতা আর সৌরভের। প্রথমে গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে গোবিন্দ ও রীতার চিকিৎসা করানো হয়। তিনি বলেন, 'রাজাপুর, ঝালকাঠি ও বরিশালে চিকিৎসা করিয়ে ব্যর্থ হয়েছি। অর্থাভাবে অন্য দুই প্রতিবন্ধী সন্তানের কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারিনি।'
গৌরাঙ্গ জানান, এক বছর ধরে শুধু বড় মেয়ে সমাজসেবা অফিস থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা হিসেবে তিন হাজার ৬০০ টাকা পেয়েছেন। বড় ছেলে বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী হলেও বাদুড়তলা বাজারে সেলুন দিয়েছেন। সপ্তাহে দুই দিন কাজ করেন। পরিবারে ১০০-১৫০ টাকা দেন। সমাজসেবা অফিস থেকে জানানো হয়েছে, একই পরিবারে একাধিক ব্যক্তিকে ভাতা দেওয়ার বিধান নেই। সে জন্য পরিবারের অন্য তিন প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে না।
রাজাপুর প্রতিবন্ধী সমিতির পরিচালক আলমগীর শরীফ কালের কণ্ঠকে বলেন, পুরো উপজেলায় প্রায় আট হাজার প্রতিবন্ধী রয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের মাঝেমধ্যে সহযোগিতা করা হয়। কিন্তু সরকারিভাবে তারা প্রয়োজনীয় সহায়তা পাচ্ছে না। পারিপার্শ্বিক কারণে এখানকার শিশুরা প্রতিবন্ধী হচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারের কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। সরকার এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে দিন দিন প্রতিবন্ধীর সংখ্যা বাড়বেই। তা ছাড়া প্রতিবন্ধীদের স্কুল না থাকায় তারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
রাজাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ভবানী শংকর বল জানান, উপজেলার ৩২৭ জন প্রতিবন্ধী মাসে ৩০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছে। তিনি বলেন, জিনগত এবং আবহাওয়াজনিত কারণে রাজাপুরের পালট-বড়ইয়া এলাকায় প্রতিবন্ধীর সংখ্যা অনেক বেশি।
এ অবস্থার মধ্যেই আজ শনিবার দেশে পালন করা হবে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। এ উপলক্ষে আজ বরিশাল নগরীতে মানববন্ধন, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণীর আয়োজন করা হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) বরিশাল জেলা শাখা দিবসটি পালন উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
গোবিন্দের ছোট দুই বোন রীতা রানী শীল (১৭) ও অনিতা রানী শীল (১৫) এবং ছয় বছরের ভাই সৌরভ শীলেরও একই অবস্থা। তারাও ভাইয়ের মতোই বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী। এক পরিবারের চার সন্তানের অবস্থা একই রকম হলেও একমাত্র মেয়ে সুচিত্রা রানী শীল (১৪) পুরো সুস্থ। সে রাজাপুরের মঠবাড়ী ইউনিয়নের পুখরিজানা গ্রামের পিএম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীতে পড়ছে। তবে আর্থিক দৈন্যদশায় যেকোনো সময় তার পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা পরিবারের।
গৌরাঙ্গের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, খাওয়া থেকে শুরু করে পায়খানা-প্রস্রাব, এমনকি শুয়ে থাকা অবস্থায় পাশ ফেরানোসহ সব কাজই সৌরভকে করিয়ে দিচ্ছেন মা ঊষা রানী শীল। তিনি বলেন, 'বড় সন্তানদের সব কাজই একসময় করিয়ে দিতে হতো। রাতে ঘুমের মধ্যে এক পাশে বেশিক্ষণ থাকলে ওরা চিৎকার শুরু করত। তখন পাশ ফিরিয়ে দিতে হতো। এভাবে এক রাতে ওদের অন্তত চার-পাঁচবার ঘুরিয়ে দিতে হয়েছে। একটু বড় হওয়ার পর পায়খানা-প্রস্রাব বিছানায় করত। কারণ তখন ওরা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে আমাকে বোঝাতে পারত না।' তিনি বলেন, 'কাছাকাছি প্রতিবন্ধীদের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় অনেক কষ্টে সন্তানদের অঙ্গভঙ্গি শিখিয়েছি। এখন ওরা অনেক কিছুই শিখেছে। আমাকে রান্না থেকে শুরু করে কারুশিল্পের কাজে সাহায্য করে আসছে। ওরা এখন আমার কাছে আর বোঝা নয়।'
গৌরাঙ্গ জানান, জন্মের পর গোবিন্দকে ছয়টি টিকা দেওয়া হয়েছিল যাতে ভবিষ্যতে ডিপথেরিয়া, পোলিও, হুপিং কাশি, যক্ষ্মা, হাম ও ধনুষ্টঙ্কারের মতো মারাত্মক রোগ থেকে মুক্ত থাকেন। কিন্তু সাড়ে তিন বছর বয়সে কথা বলা ও শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলেন। একই পরিণতি হয় রীতা, অনিতা আর সৌরভের। প্রথমে গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে গোবিন্দ ও রীতার চিকিৎসা করানো হয়। তিনি বলেন, 'রাজাপুর, ঝালকাঠি ও বরিশালে চিকিৎসা করিয়ে ব্যর্থ হয়েছি। অর্থাভাবে অন্য দুই প্রতিবন্ধী সন্তানের কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারিনি।'
গৌরাঙ্গ জানান, এক বছর ধরে শুধু বড় মেয়ে সমাজসেবা অফিস থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা হিসেবে তিন হাজার ৬০০ টাকা পেয়েছেন। বড় ছেলে বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী হলেও বাদুড়তলা বাজারে সেলুন দিয়েছেন। সপ্তাহে দুই দিন কাজ করেন। পরিবারে ১০০-১৫০ টাকা দেন। সমাজসেবা অফিস থেকে জানানো হয়েছে, একই পরিবারে একাধিক ব্যক্তিকে ভাতা দেওয়ার বিধান নেই। সে জন্য পরিবারের অন্য তিন প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে না।
রাজাপুর প্রতিবন্ধী সমিতির পরিচালক আলমগীর শরীফ কালের কণ্ঠকে বলেন, পুরো উপজেলায় প্রায় আট হাজার প্রতিবন্ধী রয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের মাঝেমধ্যে সহযোগিতা করা হয়। কিন্তু সরকারিভাবে তারা প্রয়োজনীয় সহায়তা পাচ্ছে না। পারিপার্শ্বিক কারণে এখানকার শিশুরা প্রতিবন্ধী হচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারের কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। সরকার এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে দিন দিন প্রতিবন্ধীর সংখ্যা বাড়বেই। তা ছাড়া প্রতিবন্ধীদের স্কুল না থাকায় তারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
রাজাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ভবানী শংকর বল জানান, উপজেলার ৩২৭ জন প্রতিবন্ধী মাসে ৩০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছে। তিনি বলেন, জিনগত এবং আবহাওয়াজনিত কারণে রাজাপুরের পালট-বড়ইয়া এলাকায় প্রতিবন্ধীর সংখ্যা অনেক বেশি।
এ অবস্থার মধ্যেই আজ শনিবার দেশে পালন করা হবে আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। এ উপলক্ষে আজ বরিশাল নগরীতে মানববন্ধন, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণীর আয়োজন করা হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) বরিশাল জেলা শাখা দিবসটি পালন উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
No comments