নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা-প্রতিহিংসার রাজনীতি কাম্য নয়
২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক সহিংসতা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিজয়ী পক্ষ পরাজিত পক্ষের ওপর যে আচরণ করেছিল, তা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত ছিল না। বিজয়ী চারদলীয় জোটের অনেক নেতাকর্মীকে প্রকাশ্যে লুটতরাজ, সম্পত্তি দখল, বাড়িঘরে অগি্নসংযোগ, ধর্মীয় উপাসনালয় গুঁড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে দেখা গেছে।
সরকারি জোটের কেউ কেউ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারীদের লাঞ্ছিত করেছে। গণধর্ষণের বেশ কয়েকটি সংবাদ সে সময় দেশ-বিদেশের পত্রিকার পাতায় ঠাঁই পায়। অথচ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর চারদলীয় জোট সরকারের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্যই ছিল প্রত্যেক নাগরিকের জানমালের হেফাজত করা। কিন্তু তা না করে তাদের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। সংখ্যালঘুরা বিজয়ী জোটের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে বলে তারা গণহারে সংখ্যালঘু পরিবারগুলোর ওপর চড়াও হয়। স্বভাবতই বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হলে তাদের নির্বাচনী ওয়াদা অনুযায়ী এসব অত্যাচার-নির্যাতনের বিচার হবে বলে মানুষ আশা করেছিল। তবে এখানেও সরকারের আগে ন্যায়ালয়কেই সক্রিয়তা প্রদর্শন করতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সরকার উচ্চ আদালতের আদেশ মেনে অপরাধের অভিযোগ তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে। তদন্ত কমিশন সে সময় সংঘটিত ১৮ হাজার সহিংস ঘটনার মধ্যে মাত্র ৩ হাজার ৬২৫টির তদন্ত করতে সমর্থ হয় এবং গত এপ্রিলে কমিশন সরকারের কাছে রিপোর্ট জমা দেয়। সরকার গত বৃহস্পতিবার ওই রিপোর্টটি প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, তৎকালীন জোট সরকারের ২৫ মন্ত্রীসহ ২৬ হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মী-সমর্থক এসব জঘন্য কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কমবেশি জড়িত ছিলেন। এটা শুধু লজ্জারই নয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে স্থায়ীভাবে কলঙ্কের দাগও এঁকে দেয়। দেশে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারাকে শক্তিশালী করতে হলে এসব সহিংস ঘটনার বিচার হওয়া অবশ্যই প্রয়োজন। অসভ্যতা, প্রতিপক্ষ হত্যা, লুট, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, নারী লাঞ্ছনা ও ধর্ষণ আর যাই হোক রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের উপায় হতে পারে না। দল-মত নির্বিশেষে সব নাগরিকের কর্তব্য হচ্ছে, সরকারকে দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করতে বাধ্য করা।
No comments