চুক্তিবহির্ভূত শর্তে বেঁকে বসেছে জাইকা-চুক্তিবহির্ভূত শর্তে বেঁকে বসেছে জাইকা by মজুমদার বাবু
পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে বিশ্বব্যাংকের আপত্তির পর এবার প্রকল্প অর্থায়নে আপত্তি তুলেছে দাতা সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। আপত্তির কারণ, জাইকার ৪১৫ কোটি টাকা অর্থায়নে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পে চুক্তিবহির্ভূত শর্তারোপ করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। সংস্থাটি জানিয়ে দিয়েছে, চুক্তির সঙ্গে সংগতিহীন এমন শর্ত মেনে তারা অর্থায়ন করবে না।
এদিকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ও অনড়। তাদের যুক্তি, জাইকাকে ঋণ দিতে হলে শর্ত মেনেই দিতে হবে। ফলে 'ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর প্রজেক্ট ফর দ্য ডেভেলপমেন্ট অব এসএমই' শীর্ষক প্রকল্পটির বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংক। সমস্যা দ্রুত সমাধানে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ইকবাল মাহমুদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সরকারের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গত ১৮ মে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে পাঁচ বছর মেয়াদি 'ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর প্রজেক্ট ফর দ্য ডেভেলপমেন্ট অব এসএমই' শীর্ষক প্রকল্পে পাঁচ হাজার মিলিয়ন ইয়েন (প্রায় ৪১৫ কোটি টাকা) অর্থায়নে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় দাতা সংস্থা জাইকা। দুই ধাপে এই পাঁচ হাজার মিলিয়ন ইয়েন অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসট্যান্স (ওডিএ) ঋণের বার্ষিক সুদ হার মাত্র দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী প্রকল্পটি ২০১১ সালের জুন থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকার অর্থায়ন করবে প্রায় আট কোটি ৮৩ লাখ টাকা। জাইকার অর্থায়নের ১২ কোটি টাকা ব্যয় হবে কনসালট্যান্সি বাবদ। বাকি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে পুনঃ অর্থায়ন করবে এসএমই খাতে। কিন্তু পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় চার মাস পর নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় গত ৩১ অক্টোবর। শর্তটি হলো, এ প্রকল্পে ব্যাংক ঋণের সুদ হার কোনোভাবেই ১৩ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। আর বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
ইআরডি সচিবের সভাপতিত্বে গত ২৩ নভেম্বর জাইকার প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক হয়। বৈঠকে জাইকা বাংলাদেশ অফিসের প্রধান প্রতিনিধি ড. তাকাও টুডা, জাপান দূতাবাসের অর্থনৈতিক মন্ত্রীসহ জাইকার প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে জাইকার পক্ষে জানানো হয়, এমন শর্তারোপের ফলে প্রকল্পে স্বচ্ছতা থাকবে না। তাদের আশঙ্কা, ব্যাংক ঋণের বাজার সুদের হার এর চেয়ে কম হলে প্রকল্পের অর্থ ব্যয় হবে না। আর বাজার সুদের হার এর চেয়ে বেশি হলে ঋণ পেতে স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করবে। তা ছাড়া চুক্তি স্বাক্ষরকালে এ ধরনের শর্ত ছিল না। তাই এমন শর্ত সাপেক্ষে তারা কোনো প্রকল্পে অর্থায়ন করবে না। কিন্তু ওই বৈঠকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় তাদের শর্ত বাতিলের কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, সমস্যার দ্রুত সমাধানে গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে ইআরডি সচিবের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, 'প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে শর্ত আরোপের ফলে প্রকল্পকাজে বিলম্বের আশঙ্কা করা যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে সুরাহার করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।'
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি জুলাই মাসে অনুমোদন হওয়ার কথা থাকলেও তা পাস হয়েছে প্রায় চার মাস পর ৩১ অক্টোবর। ফলে চলতি নভেম্বরে প্রকল্পের প্রথম ধাপে জাইকার ১০০ কোটি টাকা অর্থ ছাড়ের কথা থাকলেও তা পাওয়া যাচ্ছে না। চলতি মাসের মধ্যে এ শর্ত প্রত্যাহার করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি পাস করলে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ টাকা ছাড় করানো সম্ভব হতো।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই বিভাগের নির্বাহী পরিচালক চৌধুরী মহিদুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সম্প্রতি জাইকা আমাদের জানিয়েছে যে ১৩ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে হলে তারা ঋণ দেওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে। আমরা এখনো এ চিঠির জবাব দেইনি।'
পরিকল্পনাসচিব ভূইয়া সফিকুল ইসলাম জানান, এমন প্রকল্পের বিষয় তাঁর জানা নেই।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য শামছুল আলম বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংক জাইকা অর্থায়নে গঠিত পুনঃ অর্থায়ন তহবিল থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৫ শতাংশ সুদে পুনঃ অর্থায়ন করবে। ব্যাংকগুলো এই অর্থ নিয়ে অন্যান্য এসএমই পণ্যের সমপরিমাণ সুদে ঋণ দিলে এ তহবিল গঠনের যৌক্তিকতা থাকে না। তাই আমরা ১৩ শতাংশ সুদের ক্যাপ বেঁধে দেওয়ার কথা বলেছি। অবশ্যই এ বিষয়ে আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁর সম্মতি নিয়েই আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
জাইকার সঙ্গে চুক্তির সময় এ শর্ত কেন উল্লেখ করা হলো না_এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'জাইকার সঙ্গে চুক্তিতে বলা ছিল, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রকল্পটি চালু করা হবে। তাই প্রকল্প অনুমোদনের সময় আমরা শর্তারোপ করেছি।'
জাইকা এ শর্ত না মানলে কী হবে_এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'ঋণ দিয়ে জাইকা আমাদের ঘাড়ে হাত রেখে বলবে যে এটা করতে হবে, তা তো হতে পারে না। প্রয়োজনে আমরা জাইকার ঋণ নেব না।'
সূত্র জানায়, গত ১৮ মে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে পাঁচ বছর মেয়াদি 'ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর প্রজেক্ট ফর দ্য ডেভেলপমেন্ট অব এসএমই' শীর্ষক প্রকল্পে পাঁচ হাজার মিলিয়ন ইয়েন (প্রায় ৪১৫ কোটি টাকা) অর্থায়নে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় দাতা সংস্থা জাইকা। দুই ধাপে এই পাঁচ হাজার মিলিয়ন ইয়েন অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসট্যান্স (ওডিএ) ঋণের বার্ষিক সুদ হার মাত্র দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী প্রকল্পটি ২০১১ সালের জুন থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকার অর্থায়ন করবে প্রায় আট কোটি ৮৩ লাখ টাকা। জাইকার অর্থায়নের ১২ কোটি টাকা ব্যয় হবে কনসালট্যান্সি বাবদ। বাকি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে পুনঃ অর্থায়ন করবে এসএমই খাতে। কিন্তু পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় চার মাস পর নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় গত ৩১ অক্টোবর। শর্তটি হলো, এ প্রকল্পে ব্যাংক ঋণের সুদ হার কোনোভাবেই ১৩ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। আর বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
ইআরডি সচিবের সভাপতিত্বে গত ২৩ নভেম্বর জাইকার প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক হয়। বৈঠকে জাইকা বাংলাদেশ অফিসের প্রধান প্রতিনিধি ড. তাকাও টুডা, জাপান দূতাবাসের অর্থনৈতিক মন্ত্রীসহ জাইকার প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে জাইকার পক্ষে জানানো হয়, এমন শর্তারোপের ফলে প্রকল্পে স্বচ্ছতা থাকবে না। তাদের আশঙ্কা, ব্যাংক ঋণের বাজার সুদের হার এর চেয়ে কম হলে প্রকল্পের অর্থ ব্যয় হবে না। আর বাজার সুদের হার এর চেয়ে বেশি হলে ঋণ পেতে স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করবে। তা ছাড়া চুক্তি স্বাক্ষরকালে এ ধরনের শর্ত ছিল না। তাই এমন শর্ত সাপেক্ষে তারা কোনো প্রকল্পে অর্থায়ন করবে না। কিন্তু ওই বৈঠকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় তাদের শর্ত বাতিলের কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, সমস্যার দ্রুত সমাধানে গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে ইআরডি সচিবের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, 'প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে শর্ত আরোপের ফলে প্রকল্পকাজে বিলম্বের আশঙ্কা করা যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে সুরাহার করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।'
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি জুলাই মাসে অনুমোদন হওয়ার কথা থাকলেও তা পাস হয়েছে প্রায় চার মাস পর ৩১ অক্টোবর। ফলে চলতি নভেম্বরে প্রকল্পের প্রথম ধাপে জাইকার ১০০ কোটি টাকা অর্থ ছাড়ের কথা থাকলেও তা পাওয়া যাচ্ছে না। চলতি মাসের মধ্যে এ শর্ত প্রত্যাহার করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি পাস করলে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ টাকা ছাড় করানো সম্ভব হতো।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই বিভাগের নির্বাহী পরিচালক চৌধুরী মহিদুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সম্প্রতি জাইকা আমাদের জানিয়েছে যে ১৩ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে হলে তারা ঋণ দেওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে। আমরা এখনো এ চিঠির জবাব দেইনি।'
পরিকল্পনাসচিব ভূইয়া সফিকুল ইসলাম জানান, এমন প্রকল্পের বিষয় তাঁর জানা নেই।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য শামছুল আলম বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংক জাইকা অর্থায়নে গঠিত পুনঃ অর্থায়ন তহবিল থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৫ শতাংশ সুদে পুনঃ অর্থায়ন করবে। ব্যাংকগুলো এই অর্থ নিয়ে অন্যান্য এসএমই পণ্যের সমপরিমাণ সুদে ঋণ দিলে এ তহবিল গঠনের যৌক্তিকতা থাকে না। তাই আমরা ১৩ শতাংশ সুদের ক্যাপ বেঁধে দেওয়ার কথা বলেছি। অবশ্যই এ বিষয়ে আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁর সম্মতি নিয়েই আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
জাইকার সঙ্গে চুক্তির সময় এ শর্ত কেন উল্লেখ করা হলো না_এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'জাইকার সঙ্গে চুক্তিতে বলা ছিল, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রকল্পটি চালু করা হবে। তাই প্রকল্প অনুমোদনের সময় আমরা শর্তারোপ করেছি।'
জাইকা এ শর্ত না মানলে কী হবে_এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'ঋণ দিয়ে জাইকা আমাদের ঘাড়ে হাত রেখে বলবে যে এটা করতে হবে, তা তো হতে পারে না। প্রয়োজনে আমরা জাইকার ঋণ নেব না।'
No comments