কিসেরও লাগিয়া by আবিদ রহমান
বাজারে তীব্র গুঞ্জন ছিলো জনপ্রিয়তার ধস নামায় বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগ মন্ত্রিসভায় রদরদল করে ইমেজ পুনরুদ্ধারে নামছে। গুজব-গুঞ্জন মিথ্যে বলে প্রমাণিত হয়েছে; মন্ত্রিসভায় কোনও রদবদল হয়নি।কেবল মন্ত্রিসভার আকার বেড়েছে। জাতি দুজন নতুন মন্ত্রী পেল। আগে মন্ত্রিত্ব না থাকলেও উনারা মন্ত্রীদের চেয়ে কম ক্ষমতাধর ও দাপুটে ছিলেন না। ক্ষমতা ও প্রভাবে আনুষ্ঠানিক লেবেল আঁটা হলো মাত্র।
একজনের পদোন্নতি ঘটেছে। বির্তকিত ও ব্যর্থরা দিব্যি গাড়িতে পতাকা লাগিয়ে দাপটের সাথে বহাল তবিয়তে। এই সংযোজন ও পরিবর্ধন কিসের জন্যে? কী অর্জনের স্বার্থে? জাতির কতটুকু উপকারে আসবে এই সংযোজন? দলের সাংগঠনিক কাঠমোকে শক্তিশালী কিংবা অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চায় কিংবা দলকে গণমুখি করতে কী উপকারে আসবেন এই বাড়তি মন্ত্রীরা বাংলাদেশের গণতন্ত্র আয়ুর্বেদী সালসার মতো বিভিন্ন ‘বিরল প্রজাতির’ লতাপাতা ও গাছগাছালিতে তৈরি ককটেল। ’হেকিম’ ভিন্ন অন্য কেউ রসায়নের ফর্মূলা অবগত নহেন।` জাতীয়তাবাদী শিবিরে গণতান্ত্রিক সালসার মূল উপকরণ এক পরিবারের তিনটি ছবি, যেন একটি পরিবারকে পৃষ্ঠপোষকতাই গণতন্ত্র! জাতির মুক্তি। গণতন্ত্রের লেবাসধারী ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ‘নির্ভীক ও নিবেদিত’ নেতা-কর্মীরা পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠাতেই খোঁজেন প্রশান্তি ও অর্জন।
সেদিন ‘বাংলাদেশের দুর্নীতিগ্রস্থ গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ’ তারেক রহমানের জন্মদিনের কেককাটা অনুষ্ঠানে ’গণতন্ত্রের আপোসহীন জননী’ বেগম জিয়াকে হাতের কনুইতে পাশে সরিয়ে রাজনীতির দল বদলের সব্যসাচী মওদুদকে দেখলাম ছবিতে কেক কাটতে। বাংলানিউজের আরেক ছবিতে দেখলাম ‘বিনয়ে’ প্রায় হাঁটু গেড়ে তারেক রহমানের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়েও মওদুদ ব্যস্ত। পীর-আওলিয়ার সামনেও এতোটা নতশির থাকেন না কোনো নিবেদিত অন্ধ মুরীদ।
আওয়ামী গণতন্ত্রেও আত্মীয়তার ক্রিশ্চিয়ান ডিওরের মৌ মৌ। দল ও সরকারের সব গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবার, আত্মীয় ও তস্য আত্মীয়দের ভীড়। বাদবাকীদের কিছু কদমবুচির । কিছু `গিভ অ্যান্ড টেক`-এর। `ব্যর্থতা` কিংবা `দুর্নীতিগ্রস্ত` বলে আওয়ামী অভিধানে কিছু নেই। আগামী নির্বাচন অবধি জনমত ও জনরায়কে গ্রাহ্য করার মতো বেকুব নয় আওয়ামী নেতৃত্ব! পাঁচ বছরের ম্যান্ডেটের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও ব্যালান্সশিট লাল অংকের ঘরে। চূড়ান্ত ব্যালেন্সশিটের আগে ক্যালেন্ডারের পাতায় মাত্র চব্বিশ মাস, এর মধ্যে নির্বাচনী ওয়াদা পূরণসহ ভোটারদের আস্হা তৈরির কাজটি করতে হবে। শুরুটা করতে হবে তৃণমূল থেকে। কিন্তু তৃণমূলে আওয়ামী অস্তিত্ব নাই বললেই চলে। তৃণমূল পর্যায়ে যারা আওয়ামী ঝাণ্ডা হাতে দাঁড়িয়ে, তাদের ইমেজ ছাত্র-যুবলীগের মতোই চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসে উজ্জ্বল।
ঢাকার বাতাসে গুজব ‘মুখ-বোমা’ বন্ধের জন্যেই দুই নতুন মন্ত্রীকে ঠাঁই দেয়া হয়েছে ক্যাবিনেটে। মুখ-বোমা জনগণের কী উপকারে লেগেছে? শেয়ার বাজার কেলেংকারীর হোতাদের কি হটিয়ে দেয়া হয়েছে? নাকি শায়েস্তা হয়েছেন ‘দরবেশেরা’, শুটকির হাটের বিড়াল চৌকিদারের? অর্থমন্ত্রীর মুখে কি কোনো কুলুপ এঁটে দেয়া হয়েছে? কিছুই হয়নি। হবেও না। পুরোটাই ভাগ-যোগের খেলা। নিখাদ আইওয়াশ । মন্ত্রিসভা রদবদলের সাবেকি গুজব-গুঞ্জনে মানুষ কিছুদিন ঝিম মেরেছিলেন প্রত্যাশায়।
আগামীতে আরেক দফা মন্ত্রিসভা রদরদলের আশা জাগিয়ে জনগণকে সন্তুষ্ট রাখার তীব্র চেষ্টা হচ্ছে। মন্ত্রিত্ব না-পাওয়ার বেদনায় কাতরদের রক্তাক্ত হৃদয়ে মালিশ দেওয়া হচ্ছে ক্ষমতার ‘টাইগার বাম’ দিয়ে। কিন্তু জনগনের স্বার্থ ও আকাঙ্ক্ষার সাথে এগুলোতো সম্পর্কহীন।
নারায়ণগঞ্জবাসীর দেওয়া গণরায়ের কথা ভুলে যাওয়াটা হবে বোকামি। চুনকার মেয়ে কিংবা সাবেক সফল মেয়র হিসেবে আইভী জেতেননি। আইভী জিতেছেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দেয়া গণ রায়ে। নারায়ণগঞ্জবাসীর ভোট জানিয়ে দিয়েছে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষদের মতামতকে গ্রাহ্য করতে হয়।
দলীয় সরকারের অধীনে সাজানো প্রশাসন দিয়ে নির্বাচনে জেতার দিবাস্বপ্ন বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগকে জনগণের আস্হার্জনে নিবেদিত হতে হবে। কারণ এরা রাক্ষসের হাত থেকে বাঁচার জন্যে খোক্কসের ফাঁদে একবার পা দেয়। অন্যবার আবারো একই ভুল করে চোখের জলে বালিশ ভেজায়। দুই দলীয় ও পারিবারিক প্রভুর গোলামিতেই বাঙালি আটকে থাকে।
আওয়ামী গণতন্ত্রেও আত্মীয়তার ক্রিশ্চিয়ান ডিওরের মৌ মৌ। দল ও সরকারের সব গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবার, আত্মীয় ও তস্য আত্মীয়দের ভীড়। বাদবাকীদের কিছু কদমবুচির । কিছু `গিভ অ্যান্ড টেক`-এর। `ব্যর্থতা` কিংবা `দুর্নীতিগ্রস্ত` বলে আওয়ামী অভিধানে কিছু নেই। আগামী নির্বাচন অবধি জনমত ও জনরায়কে গ্রাহ্য করার মতো বেকুব নয় আওয়ামী নেতৃত্ব! পাঁচ বছরের ম্যান্ডেটের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও ব্যালান্সশিট লাল অংকের ঘরে। চূড়ান্ত ব্যালেন্সশিটের আগে ক্যালেন্ডারের পাতায় মাত্র চব্বিশ মাস, এর মধ্যে নির্বাচনী ওয়াদা পূরণসহ ভোটারদের আস্হা তৈরির কাজটি করতে হবে। শুরুটা করতে হবে তৃণমূল থেকে। কিন্তু তৃণমূলে আওয়ামী অস্তিত্ব নাই বললেই চলে। তৃণমূল পর্যায়ে যারা আওয়ামী ঝাণ্ডা হাতে দাঁড়িয়ে, তাদের ইমেজ ছাত্র-যুবলীগের মতোই চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসে উজ্জ্বল।
ঢাকার বাতাসে গুজব ‘মুখ-বোমা’ বন্ধের জন্যেই দুই নতুন মন্ত্রীকে ঠাঁই দেয়া হয়েছে ক্যাবিনেটে। মুখ-বোমা জনগণের কী উপকারে লেগেছে? শেয়ার বাজার কেলেংকারীর হোতাদের কি হটিয়ে দেয়া হয়েছে? নাকি শায়েস্তা হয়েছেন ‘দরবেশেরা’, শুটকির হাটের বিড়াল চৌকিদারের? অর্থমন্ত্রীর মুখে কি কোনো কুলুপ এঁটে দেয়া হয়েছে? কিছুই হয়নি। হবেও না। পুরোটাই ভাগ-যোগের খেলা। নিখাদ আইওয়াশ । মন্ত্রিসভা রদবদলের সাবেকি গুজব-গুঞ্জনে মানুষ কিছুদিন ঝিম মেরেছিলেন প্রত্যাশায়।
আগামীতে আরেক দফা মন্ত্রিসভা রদরদলের আশা জাগিয়ে জনগণকে সন্তুষ্ট রাখার তীব্র চেষ্টা হচ্ছে। মন্ত্রিত্ব না-পাওয়ার বেদনায় কাতরদের রক্তাক্ত হৃদয়ে মালিশ দেওয়া হচ্ছে ক্ষমতার ‘টাইগার বাম’ দিয়ে। কিন্তু জনগনের স্বার্থ ও আকাঙ্ক্ষার সাথে এগুলোতো সম্পর্কহীন।
নারায়ণগঞ্জবাসীর দেওয়া গণরায়ের কথা ভুলে যাওয়াটা হবে বোকামি। চুনকার মেয়ে কিংবা সাবেক সফল মেয়র হিসেবে আইভী জেতেননি। আইভী জিতেছেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দেয়া গণ রায়ে। নারায়ণগঞ্জবাসীর ভোট জানিয়ে দিয়েছে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষদের মতামতকে গ্রাহ্য করতে হয়।
দলীয় সরকারের অধীনে সাজানো প্রশাসন দিয়ে নির্বাচনে জেতার দিবাস্বপ্ন বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগকে জনগণের আস্হার্জনে নিবেদিত হতে হবে। কারণ এরা রাক্ষসের হাত থেকে বাঁচার জন্যে খোক্কসের ফাঁদে একবার পা দেয়। অন্যবার আবারো একই ভুল করে চোখের জলে বালিশ ভেজায়। দুই দলীয় ও পারিবারিক প্রভুর গোলামিতেই বাঙালি আটকে থাকে।
‘কিসেরও লাগিয়া’- দুই
সংসদীয় গণতন্ত্রে মন্ত্রিসভা বাছাই প্রধানমন্ত্রীর একান্ত নিজস্ব এখতিয়ার। নির্বাচিত সাংসদ বা টেকনোক্রেটদের মন্ত্রী হবার মানদণ্ড নির্ধারণ করেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু মন্ত্রিসভা বাছাইয়ে ভোটারদের, জনগণের আশা-আকাংখার প্রতিফলন ঘটাতে হয়। মন্ত্রিসভা হতে হয় নির্বাচনী ইশতেহার আর ওয়াদা পূরণের প্রথম সোপান। মন্ত্রীদের থাকতে হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিষয়ক জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও হোমওয়ার্ক।
দুর্নীতি কম বেশী সব দেশেই আছে। সভ্য দুনিয়ায় মন্ত্রিত্বে সামাজিক সম্মান বাড়ে বলেই মন্ত্রিত্বে আগ্রহী হয় রাজনীতিবিদেরা। সম্মান হানির মতো দুর্ঘটনা ঘটলে নিমিষেই পদত্যাগপত্র পৌঁছে যায় প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে। আমাদের দেশে মন্ত্রিত্ব সম্মানের নয়, বরং সামাজিক সম্মান ও বিশ্বাস হারানোর। মন্ত্রিত্ব মানেই কোটপতি হবার সিঁড়িতে প্রথম পদক্ষেপ। মন্ত্রীরা ভোটারদের চোখে আইনের উর্ধ্বে থাকা ’প্রাণী’। বুদ্ধিমান জনগণ জানেন পানিতে নেমে কুমীরের সাথে আর ডাংগায় বাঘের সাথে লড়তে নেই। ভদ্রলোকেরা সংগতকারণেই মন্ত্রীদের সযত্নে এড়িয়ে চলেন। মন্ত্রীদের আশেপাশে সেকারণেই দেখা যায় পেশী শক্তি ও ‘মাশাল্লাদের’ অযাচিত ভীড়-ভাট্টা।
বুকে হাত রেখে কেউ বলতে পারেন বাংলাদেশের মন্ত্রীরা দুর্নীতিবাজ ও অসৎ? কারো ঘাড়ে দু’টো মাথা আছে? তবু দেখি জোর করে আমাদের মন্ত্রীদের সরানো যায় না, পদত্যাগতো পরের কথা। মন্ত্রিত্ব হারানোর শোক বাংলাদেশে পরিবার পরিজন হারানোর শোকের চেয়েও ভয়াবহ। জিয়ার জমানায় সদ্য বিদায়ী এক মন্ত্রীর বাড়ীর সামনের যখন পতাকা নামানো হচ্ছিলো তখন মন্ত্রী ও ওনার বিবি সাহেবার কান্নায় নিজের চোখেও টলটমল করছিলো শোকাশ্রু। মন্ত্রী হতে প্রত্যাশীদের লাইনটা ও রিলিফের চালের লাইনের চেয়েও লম্বা। মন্ত্রিত্ব প্রত্যাশীরা কী এতোই নিঃস্ব ও রিক্ত?
সব রাজনৈতিক দলে একই হাল। আওয়ামী লীগ, জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি, এমনকি সর্বহারা মানুষের সুখ-দুঃখে কাতর বামদের মধ্যেও সারাক্ষণ চলে মন্ত্রীত্ব পাবার মিউজিক্যাল চেয়ার। কে কাকে ল্যাং মেরে চেয়ার দখল করবেন, এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের রাজনীতিকেরা নিশিদিন ব্যস্ত-সমস্ত। জাতীয়তাবাদী জমানায় মন্ত্রীদের ‘সততায়’ আশি হাজার টাকার সিএনজি চার লাখে বিক্রি হয়েছে। পঁচিশ হাজারের বিদ্যুৎ খাম্বা অনায়াসে পৌঁছেছে লাখের অংকে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ে ঘুষ ও চুরি চামারীর সুযোগ কম জানতাম। পরে দেখলাম সেখানে ‘চাষাবাদ’ চালু হয়েছিলো। ‘বাণিজ্যের’ অভিভাবকদের সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠেছিলো শেয়ারিং-কেয়ারিংয়ের চিনি-তেল সিন্ডিকেট।
সামনে ছেলের কলেজ ফাইনাল নটরডেমে কিংবা মেয়ে ভিকারুন নিসার শেষ বর্ষে, যদি সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী হোন, তাহলে নির্ঘাৎ আপনার ট্রান্সফার অর্ডার আসবে মফস্বলের কোনো শহরে। ঠেকাতে হলে নিত্য ঘুষ খেয়ে নির্ধারিত অংক পৌঁছে দিতে হবে ’কালেকশন পয়েন্টে’। সেই টাকার সিংহভাগ যাবে মন্ত্রী মহোদয়ের আগামী ইলেকশন ফান্ডে কিংবা উনার এলাকার মসজিদ ফান্ডে। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের সব বড় বড় লেনদেনের প্রাথমিক আলোচনায় থাকে নিজের এলাকার মসজিদ-মাদ্রাসা ও মক্তবের ফান্ডের জন্যে ’সাহায্য-সহায়তা’। অবিশ্বাস্য হলেও, জাতীয়তাবাদী জমানায় এক বন্ধু সৎ হাকিমকে ফোনে বলে দিতো কোন মামলার কি রায় হবে। কত টাকা ’কালেকশন’ করতে হবে ইত্যাদি। লেনদেনটি মন্ত্রী পর্যায়ের মাধ্যমে ‘হাওয়া’ হতো।
‘বেচারা’ এরশাদ ভিন্ন কোনো রাজনীতিক চৌদ্দ শিকের বাসিন্দা হননি। মন্ত্রীরা কাউকেই আজ অব্দি হাজত-জেলে যেতে হয়নি। অথচ অলৌকিক উপায়ে সবাই বিত্তশালী। নিজে একা হলে দুঃখ ছিলো না, সবাই পরিবার পরিজন, ভাই বেরাদার ও বন্ধুদের নিয়ে কোটপতি। ক্ষমতা ও অর্থবিত্তের এই আলাদ্বীনের চেরাগ কার না কাম্য? তবে সামান্য জিজ্ঞাসা, মন্ত্রীরা ক্ষমতাসীন হবার পরপরই কেন সাব রেজিস্ট্রার-তহশীলদার- নির্বাহী প্রকৌশলী, ওসি-এসপি, সার্জেন্ট ইত্যাকার পদগুলোতে ব্যাপক ট্রান্সফার চাংগা দিয়ে ওঠে? মাজেজাটা কী!
মন্ত্রিসভাকে হতে হয় জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। মন্ত্রীদের দায়িত্ব সাধারণ মানুষকে নিশ্চিত করা। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা কি দেখি? বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক জবান খুললেই দ্রব্যমূল্যের ঘুমন্ত ঘোড়া তড়াক করে লাফিয়ে ওঠে। হাসিমূখ আবুলতো এখন নাজমুল হুদাকে ফেল মেরে দুর্নীতির সমার্থক। ঠিকেদারীর সাথে সম্পর্কিতরাই এখন যোগাযোগ ও স্হানীয় সরকারের দায়িত্বে আসেন। লঞ্চের মালিকেরা আসেন নৌ মন্ত্রনালয়ে। আইন পেশার সাথে জড়িতরা থাকেন আইনে। পরবর্তীতে নিজেদের ব্যবসার প্রসার নিশ্চিত। দল বদলের সব্যসাচী আইন মওদুদ এরশাদের জমানায় তিনি ব্যবসায়িক পার্টনারকে বানিয়েছিলেন বিচারপতি। মওদুদ যখন আইনমন্ত্রী তখন একই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অন্য পার্টনার প্রধান বিচারপতি।
বাংলাদেশে মন্ত্রীদের দুর্নীতি এখন ‘ওপেন সিক্রেট’। সব মন্ত্রণালয়ের আয়-রোজগার ভালো থাকলেও কিছু কিছু মন্ত্রণালয় ‘রূপে-গুণে-মানে’ সেরা। যোগাযোগ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতিযোগিতার শীর্ষে। ক্ষুব্ধ জনমত নিয়েও দুই মন্ত্রী দিব্যি সুখে-শান্তিতে কামাই রোজগারে ভালোই আছেন।
মন্ত্রিসভার সাম্প্রতিক সম্প্রসারণ ও আগামীর রদ বদলের ইংগিতে সাধারণ মানুষের ফায়দাটা কি হলো? দ্রব্যমূল্যের ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরা হয় না। বাবা-মায়ের কবর জেয়ারতের গ্রাম এখনো যোগাযোগের অবহেলা ও দুর্নীতিতে ‘দূর অস্ত’ ঠেকে। বিদ্যুৎ এখনো আসা-যাওয়ার অভিমানটা ভাংগেনি। যানজট এখন এক মূর্তিমান আতংক। স্কুলে ভর্তির যুদ্ধের ময়দানে পরাজিত সৈনিকের সংখ্যা বাড়ছেই বাড়ছে। ছিনতাইকারীর পাল্লায় না-পড়াটাই এখন অলৌকিক।
মন্ত্রিসভা আছে কি নাই, কোন মন্ত্রী কোন মন্ত্রণালয়ে সেটা শোনারও প্রয়োজন বোধ করি না। কেবল সামান্য মানুষ হিসেবে ন্যূনতম মৌলিক চাহিদাগুলো সুলভে পূর্ণ হোক চাই। প্রার্থনা করি স্ত্রী-পুত্র-কন্যারা যেন নিরাপদে বাড়ী ফিরতে পারে। ঘরের গ্যাসের চুলো যেন সময় মতো জ্বলে। পেটে তীব্র ক্ষুধা, রাস্তায় যানজট আর ছিনতাইকারী, আশেপাশে অস্ত্রধারী ক্যাডারের নজর বোন-কন্যার বাড়ন্ত শরীরের দিকে, গ্রামে বেকার ভাই এসব নিয়ে হিমশিম খাওয়া মানুষদের কাছে মন্ত্রিসভার পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সম্প্রসারণের কোনো মূল্য নেই।
আমরা জানি, পাঁচ বছর রাজনীতিকদের। আর মাত্র ’একটি’ একদিন আমাদের। ভোটের ’সেদিনে’ আমরা বলবো, রাজনীতিবিদেরা শুনবেন। অপেক্ষার বেশিদিন আর বাকি নেই। মাত্র দু’বছর দেখতে দেখতে কেটে যাবে।
ইমেইলঃ abid.rahman@ymail.com
দুর্নীতি কম বেশী সব দেশেই আছে। সভ্য দুনিয়ায় মন্ত্রিত্বে সামাজিক সম্মান বাড়ে বলেই মন্ত্রিত্বে আগ্রহী হয় রাজনীতিবিদেরা। সম্মান হানির মতো দুর্ঘটনা ঘটলে নিমিষেই পদত্যাগপত্র পৌঁছে যায় প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে। আমাদের দেশে মন্ত্রিত্ব সম্মানের নয়, বরং সামাজিক সম্মান ও বিশ্বাস হারানোর। মন্ত্রিত্ব মানেই কোটপতি হবার সিঁড়িতে প্রথম পদক্ষেপ। মন্ত্রীরা ভোটারদের চোখে আইনের উর্ধ্বে থাকা ’প্রাণী’। বুদ্ধিমান জনগণ জানেন পানিতে নেমে কুমীরের সাথে আর ডাংগায় বাঘের সাথে লড়তে নেই। ভদ্রলোকেরা সংগতকারণেই মন্ত্রীদের সযত্নে এড়িয়ে চলেন। মন্ত্রীদের আশেপাশে সেকারণেই দেখা যায় পেশী শক্তি ও ‘মাশাল্লাদের’ অযাচিত ভীড়-ভাট্টা।
বুকে হাত রেখে কেউ বলতে পারেন বাংলাদেশের মন্ত্রীরা দুর্নীতিবাজ ও অসৎ? কারো ঘাড়ে দু’টো মাথা আছে? তবু দেখি জোর করে আমাদের মন্ত্রীদের সরানো যায় না, পদত্যাগতো পরের কথা। মন্ত্রিত্ব হারানোর শোক বাংলাদেশে পরিবার পরিজন হারানোর শোকের চেয়েও ভয়াবহ। জিয়ার জমানায় সদ্য বিদায়ী এক মন্ত্রীর বাড়ীর সামনের যখন পতাকা নামানো হচ্ছিলো তখন মন্ত্রী ও ওনার বিবি সাহেবার কান্নায় নিজের চোখেও টলটমল করছিলো শোকাশ্রু। মন্ত্রী হতে প্রত্যাশীদের লাইনটা ও রিলিফের চালের লাইনের চেয়েও লম্বা। মন্ত্রিত্ব প্রত্যাশীরা কী এতোই নিঃস্ব ও রিক্ত?
সব রাজনৈতিক দলে একই হাল। আওয়ামী লীগ, জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি, এমনকি সর্বহারা মানুষের সুখ-দুঃখে কাতর বামদের মধ্যেও সারাক্ষণ চলে মন্ত্রীত্ব পাবার মিউজিক্যাল চেয়ার। কে কাকে ল্যাং মেরে চেয়ার দখল করবেন, এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের রাজনীতিকেরা নিশিদিন ব্যস্ত-সমস্ত। জাতীয়তাবাদী জমানায় মন্ত্রীদের ‘সততায়’ আশি হাজার টাকার সিএনজি চার লাখে বিক্রি হয়েছে। পঁচিশ হাজারের বিদ্যুৎ খাম্বা অনায়াসে পৌঁছেছে লাখের অংকে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ে ঘুষ ও চুরি চামারীর সুযোগ কম জানতাম। পরে দেখলাম সেখানে ‘চাষাবাদ’ চালু হয়েছিলো। ‘বাণিজ্যের’ অভিভাবকদের সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠেছিলো শেয়ারিং-কেয়ারিংয়ের চিনি-তেল সিন্ডিকেট।
সামনে ছেলের কলেজ ফাইনাল নটরডেমে কিংবা মেয়ে ভিকারুন নিসার শেষ বর্ষে, যদি সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী হোন, তাহলে নির্ঘাৎ আপনার ট্রান্সফার অর্ডার আসবে মফস্বলের কোনো শহরে। ঠেকাতে হলে নিত্য ঘুষ খেয়ে নির্ধারিত অংক পৌঁছে দিতে হবে ’কালেকশন পয়েন্টে’। সেই টাকার সিংহভাগ যাবে মন্ত্রী মহোদয়ের আগামী ইলেকশন ফান্ডে কিংবা উনার এলাকার মসজিদ ফান্ডে। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের সব বড় বড় লেনদেনের প্রাথমিক আলোচনায় থাকে নিজের এলাকার মসজিদ-মাদ্রাসা ও মক্তবের ফান্ডের জন্যে ’সাহায্য-সহায়তা’। অবিশ্বাস্য হলেও, জাতীয়তাবাদী জমানায় এক বন্ধু সৎ হাকিমকে ফোনে বলে দিতো কোন মামলার কি রায় হবে। কত টাকা ’কালেকশন’ করতে হবে ইত্যাদি। লেনদেনটি মন্ত্রী পর্যায়ের মাধ্যমে ‘হাওয়া’ হতো।
‘বেচারা’ এরশাদ ভিন্ন কোনো রাজনীতিক চৌদ্দ শিকের বাসিন্দা হননি। মন্ত্রীরা কাউকেই আজ অব্দি হাজত-জেলে যেতে হয়নি। অথচ অলৌকিক উপায়ে সবাই বিত্তশালী। নিজে একা হলে দুঃখ ছিলো না, সবাই পরিবার পরিজন, ভাই বেরাদার ও বন্ধুদের নিয়ে কোটপতি। ক্ষমতা ও অর্থবিত্তের এই আলাদ্বীনের চেরাগ কার না কাম্য? তবে সামান্য জিজ্ঞাসা, মন্ত্রীরা ক্ষমতাসীন হবার পরপরই কেন সাব রেজিস্ট্রার-তহশীলদার- নির্বাহী প্রকৌশলী, ওসি-এসপি, সার্জেন্ট ইত্যাকার পদগুলোতে ব্যাপক ট্রান্সফার চাংগা দিয়ে ওঠে? মাজেজাটা কী!
মন্ত্রিসভাকে হতে হয় জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। মন্ত্রীদের দায়িত্ব সাধারণ মানুষকে নিশ্চিত করা। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা কি দেখি? বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক জবান খুললেই দ্রব্যমূল্যের ঘুমন্ত ঘোড়া তড়াক করে লাফিয়ে ওঠে। হাসিমূখ আবুলতো এখন নাজমুল হুদাকে ফেল মেরে দুর্নীতির সমার্থক। ঠিকেদারীর সাথে সম্পর্কিতরাই এখন যোগাযোগ ও স্হানীয় সরকারের দায়িত্বে আসেন। লঞ্চের মালিকেরা আসেন নৌ মন্ত্রনালয়ে। আইন পেশার সাথে জড়িতরা থাকেন আইনে। পরবর্তীতে নিজেদের ব্যবসার প্রসার নিশ্চিত। দল বদলের সব্যসাচী আইন মওদুদ এরশাদের জমানায় তিনি ব্যবসায়িক পার্টনারকে বানিয়েছিলেন বিচারপতি। মওদুদ যখন আইনমন্ত্রী তখন একই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অন্য পার্টনার প্রধান বিচারপতি।
বাংলাদেশে মন্ত্রীদের দুর্নীতি এখন ‘ওপেন সিক্রেট’। সব মন্ত্রণালয়ের আয়-রোজগার ভালো থাকলেও কিছু কিছু মন্ত্রণালয় ‘রূপে-গুণে-মানে’ সেরা। যোগাযোগ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতিযোগিতার শীর্ষে। ক্ষুব্ধ জনমত নিয়েও দুই মন্ত্রী দিব্যি সুখে-শান্তিতে কামাই রোজগারে ভালোই আছেন।
মন্ত্রিসভার সাম্প্রতিক সম্প্রসারণ ও আগামীর রদ বদলের ইংগিতে সাধারণ মানুষের ফায়দাটা কি হলো? দ্রব্যমূল্যের ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরা হয় না। বাবা-মায়ের কবর জেয়ারতের গ্রাম এখনো যোগাযোগের অবহেলা ও দুর্নীতিতে ‘দূর অস্ত’ ঠেকে। বিদ্যুৎ এখনো আসা-যাওয়ার অভিমানটা ভাংগেনি। যানজট এখন এক মূর্তিমান আতংক। স্কুলে ভর্তির যুদ্ধের ময়দানে পরাজিত সৈনিকের সংখ্যা বাড়ছেই বাড়ছে। ছিনতাইকারীর পাল্লায় না-পড়াটাই এখন অলৌকিক।
মন্ত্রিসভা আছে কি নাই, কোন মন্ত্রী কোন মন্ত্রণালয়ে সেটা শোনারও প্রয়োজন বোধ করি না। কেবল সামান্য মানুষ হিসেবে ন্যূনতম মৌলিক চাহিদাগুলো সুলভে পূর্ণ হোক চাই। প্রার্থনা করি স্ত্রী-পুত্র-কন্যারা যেন নিরাপদে বাড়ী ফিরতে পারে। ঘরের গ্যাসের চুলো যেন সময় মতো জ্বলে। পেটে তীব্র ক্ষুধা, রাস্তায় যানজট আর ছিনতাইকারী, আশেপাশে অস্ত্রধারী ক্যাডারের নজর বোন-কন্যার বাড়ন্ত শরীরের দিকে, গ্রামে বেকার ভাই এসব নিয়ে হিমশিম খাওয়া মানুষদের কাছে মন্ত্রিসভার পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সম্প্রসারণের কোনো মূল্য নেই।
আমরা জানি, পাঁচ বছর রাজনীতিকদের। আর মাত্র ’একটি’ একদিন আমাদের। ভোটের ’সেদিনে’ আমরা বলবো, রাজনীতিবিদেরা শুনবেন। অপেক্ষার বেশিদিন আর বাকি নেই। মাত্র দু’বছর দেখতে দেখতে কেটে যাবে।
ইমেইলঃ abid.rahman@ymail.com
No comments