ডিসিসি ভাগ, নগর ভবনে সংঘাত এবং হরতাল by শহিদুল ইসলাম
এক. রাজধানী ঢাকা সিটি করপোরেশন কেটে দুই টুকরো করার পর ঢাকাবাসী মহাসমস্যায় পড়ে গেছেন। সকালে চন্দ্রিমা উদ্যানে হাঁটতে গিয়ে যে টুকরো টুকরো কথা কানে এসে পড়ছিল, সেসব ঢাকা ভাগকে কেন্দ্র করে। একজন আরেকজনকে জোরে জিজ্ঞেস করলেন, 'আমরা কি রাজধানীতে বাস করছি?' আরেকজনের কথা কানে ভেসে এল, 'বাংলাদেশের রাজধানী কী উত্তর ঢাকা? না দক্ষিণ ঢাকা?' এমনই সবাই ঢাকা বিভক্তি নিয়ে আলোচনায় মগ্ন।
আসলেও এটা এক সমস্যা। সংবিধানের আইন-কানুন নিয়ে আলোচনার দরকার আছে বলে মনে হয় না। সাধারণ জ্ঞানেই প্রশ্ন উঠেছে 'বাংলাদেশের রাজধানী কী?' জাতীয় সংসদে ২৯ নভেম্বর মাত্র চার মিনিটে এত বড় এক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সরকার গণতন্ত্রসম্মত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে কেউ মনে করছেন না। সরকারের সামনে সমস্যার অন্ত নেই। মূল্যস্ফীতি, জিনিসপত্রের দাম, তেল-গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবন বিপর্যস্ত। তার ওপর ঢাকাবাসীর এই আইডেনটিটি ক্রাইসিস, গোদের ওপর বিষ ফোঁড়ার ঘা। ইতিমধ্যে বিষয়টি আদালতে গড়িয়েছে এবং আগামী রবিবার সিটি করপোরেশন বিভক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বিএনপি ঢাকায় হরতাল আহ্বান করেছে। কাজেই এ কথা বলা যায়, সরকার ২৯ নভেম্বর জাতীয় সংসদে মাত্র চার মিনিটে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে জাতীয় জীবন এক মারাত্মক হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আগেই বলেছি, কোনো আইনের মধ্যে ঢোকার কোনো ইচ্ছা আজ আমার নেই। দেশবাসী আজ অত্যন্ত সচেতন। তাঁরা আইন-কানুনের বিষয়টি ইতিমধ্যে জেনে গেছেন বলেই আমার বিশ্বাস। তবে ঢাকা সিটি করপোরেশন ভাগ করে সংসদে পাস হওয়া আইনটি কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে 'কেন দ্রুত ডিসিসি নির্বাচন করার নির্দেশ দেওয়া হবে না তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে। মানুষের মনে যে প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হলো সরকার কেন এত বড় একটি সিদ্ধান্ত মাত্র চার মিনিটে জাতীয় সংসদে গ্রহণ করল? বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে, ধীরে-সুস্থে সিদ্ধান্ত নিলে কি দোষ হতো? তাহলে আগামী রবিবার বিএনপি এর বিরুদ্ধে হরতাল ডাকতে পারত না। সেই হরতালে কত গাড়ি, রিকশা ধ্বংস হবে, কতজন আহত হবে, এমনকি কারো জীবন প্রদীপও নিভে যেতে পারে_এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না।
দুই. গত বুধবার জাতীয় সংসদে একাদশ অধিবেশনের শেষ দিনে সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'টাকা থাকলে ঢাকাকে চার ভাগ করতাম।' কেন চার ভাগ কিংবা দুই ভাগ করলেন তারও একটা জবাব দিয়েছেন। 'নাগরিক সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে (ডিসিসি) দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ছোট ছোট এলাকা থাকলে সেবাও বেশি পৌঁছে দেওয়া যায়। সরকারের যথেষ্ট টাকা থাকলে ডিসিসিকে চার ভাগে ভাগ করতাম।' প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনে দেশের মানুষ ভাবছেন যে দেশের উন্নয়ন বলতে কী বোঝেন, তার এক চিত্র পাবেন। থানাকে জেলা, জেলাকে বিভাগ করা যদি দেশের উন্নয়ন বোঝায়, সুশাসনের সহায়ক বোঝায়, তবে কোনো কমতি থাকত না আজ। ছোট্ট থানাকে জেলায় উন্নীত করে সেখানে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে, নাগরিক সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া গেছে_এ কথা কেউই বিশ্বাস করে না। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উদ্বেগজনক অবস্থা সরকারের দাবির অসারতাই প্রমাণ করে। তেমনি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়; মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে কলেজ এবং কলেজগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করে যদি শিক্ষার উন্নয়ন ঘটানো যেত, তাহলে প্রত্যেক সরকার ক্ষমতায় বসে একটি করে শিক্ষা কমিশন গঠন করত না। এসব বাস্তব ও তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে দেশবাসীর কোনোই অসুবিধা হয় না যে ঢাকাকে দ্বিখণ্ডিত কিংবা চার-পাঁচ খণ্ডে বিভক্ত করে সরকার যদি দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারত এবং নাগরিক সেবা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে পারত, তাহলে দেশবাসী সাদরে সরকারের এ পদক্ষেপ সমর্থন করত। কিন্তু ছোট্ট প্রশাসনিক ইউনিটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্ষমতা এতটাই বেড়ে যায় যে মানুষের স্বাভাবিক সুস্থ জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, 'পুলিশ ছুঁলে আঠারো ঘা।' গণতন্ত্রহীন দেশে প্রশাসনিক ইউনিট যত ছোট হবে, সেখানে অন্যায়-অত্যাচারের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। সে জন্য শাসক শ্রেণী প্রতিটি গ্রামকে যদি একটি করে থানায় পরিণত করতে পারে, তাহলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরকারের নির্যাতনের মাত্রা ততই বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই বলছিলাম যে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সিটি করপোরেশনকে কেক কাটার চেয়েও দ্রুতগতিকে কেটে দুভাগ করলেন, সে মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হওয়া বাংলাদেশে বড় কঠিন। সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কত বাহিনী গড়ে তুলেছে। কেউ-ই দাবি করবে না যে সরকারের সে ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। বরং ব্রিটিশ সরকার যখন পুলিশ বাহিনী সৃষ্টি করে, তার আগে দেশের আইনশৃঙ্খলার অবস্থা অনেক উন্নত ছিল। কারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে দেশের সন্ত্রাস ও দুর্নীতির সুগভীর সম্পর্ক আছে। এটা শুধু আমাদের দেশের জন্য সত্য তা-ই নয়, পৃথিবীর সব দেশের জন্য তা সত্য। আজকের বুর্জোয়া সভ্যতার সূতিকাগার খোদ ইংল্যান্ডের আন্ডারগ্রাউন্ড জগতের সঙ্গে পুলিশ বাহিনীর কি সুন্দর গভীর সুসম্পর্ক সে সম্পর্কে লন্ডনে তৈরি ''The Left Hand of the Law' ছবিটিই প্রমাণ করে।
তিন. যাক সে কথা। একটি কথাই বলা যায় যে সরকার চার মিনিটে এত বড় এক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে খুব একটা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়নি। ওই সিদ্ধান্তের জন্য আগামী রবিবারের হরতাল নিয়ে ইতিমধ্যেই দেশবাসী শঙ্কার মধ্যে পড়ে গেছে। তা ছাড়া এ মুহূর্তে যখন আমি লেখাটি লিখছি (১ ডিসেম্বর ২০১১) খবর পেলাম নগর ভবন উত্তপ্ত। সরকার সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ চলছে। এর আগেও নগর ভবনে একই বিষয় কেন্দ্র করে উত্তপ্ততা বিরাজ করছিল এবং এ নিয়ে মিছিল-মিটিংও হয়েছে। নগর ভবনে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠতে পারে_বিদ্যমান বাস্তবতা তাই বলছে। এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না, সরকার যদি ওই 'অগণতান্ত্রিক' সিদ্ধান্তটি না নিত। সংসদে পাস হওয়ার অর্থই গণতান্ত্রিক নয়। কোনো আলোচনার সুযোগ না দিয়ে আইনটি পাস করে সরকার দেশকে সংঘাতের মধ্যে ঠেলে দিল। এটার আদৌ কোনো দরকার ছিল না। তেমনি দরকার ছিল না বিএনপির রবিবার হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি প্রদানের। এমনকি এক অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার খেসারত সরকারকে দিতেই হবে। কিন্তু বিএনপির হরতাল আহ্বান সরকারের এই অজনপ্রিয় সিদ্ধান্তের প্রতি জনগণের ক্ষোভ কিছুটা লাঘব হওয়ার সুযোগ করে দিল। ডিসিসি ভাগের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির সঙ্গে সঙ্গে হরতালের মতো চরম পদক্ষেপ ঘোষণা করা অযৌক্তিক। এর ফলে আগামী রবিবার ঢাকায় যে কোন দৃশ্যের অবতারণা হয়, তা এখনই বলা যায় না। দেশবাসী ডিসিসি ভাগের বিরুদ্ধে_তেমনি দেশবাসী আগামী রবিবার ঢাকায় হরতালেরও বিরোধী। এভাবে বিএনপি যদি মনে করে বর্তমান সরকারের পতন ঘটাতে পারবে, সেটা ভুল চিন্তা। ডিসিসি ভাগের বিরুদ্ধে যে জনমতের সৃষ্টি হয়েছে, সেটা রাজনৈতিক প্রভাব দ্বারা সুপরিচালিত করা যেকোনো বিরোধী দলের কর্তব্য ও দায়িত্ব। 'জ্বালাও-পোড়াও' করে জাতীয় ক্ষতিসাধন করা কিংবা জনমতকে উপেক্ষা করে ঢাকা ভাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা চরম রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা ছাড়া কিছু নয়।
লেখক : শিক্ষাবিদ ও সমাজ বিশ্লেষক
দুই. গত বুধবার জাতীয় সংসদে একাদশ অধিবেশনের শেষ দিনে সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'টাকা থাকলে ঢাকাকে চার ভাগ করতাম।' কেন চার ভাগ কিংবা দুই ভাগ করলেন তারও একটা জবাব দিয়েছেন। 'নাগরিক সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে (ডিসিসি) দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ছোট ছোট এলাকা থাকলে সেবাও বেশি পৌঁছে দেওয়া যায়। সরকারের যথেষ্ট টাকা থাকলে ডিসিসিকে চার ভাগে ভাগ করতাম।' প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনে দেশের মানুষ ভাবছেন যে দেশের উন্নয়ন বলতে কী বোঝেন, তার এক চিত্র পাবেন। থানাকে জেলা, জেলাকে বিভাগ করা যদি দেশের উন্নয়ন বোঝায়, সুশাসনের সহায়ক বোঝায়, তবে কোনো কমতি থাকত না আজ। ছোট্ট থানাকে জেলায় উন্নীত করে সেখানে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে, নাগরিক সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া গেছে_এ কথা কেউই বিশ্বাস করে না। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উদ্বেগজনক অবস্থা সরকারের দাবির অসারতাই প্রমাণ করে। তেমনি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়; মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে কলেজ এবং কলেজগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করে যদি শিক্ষার উন্নয়ন ঘটানো যেত, তাহলে প্রত্যেক সরকার ক্ষমতায় বসে একটি করে শিক্ষা কমিশন গঠন করত না। এসব বাস্তব ও তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে দেশবাসীর কোনোই অসুবিধা হয় না যে ঢাকাকে দ্বিখণ্ডিত কিংবা চার-পাঁচ খণ্ডে বিভক্ত করে সরকার যদি দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারত এবং নাগরিক সেবা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে পারত, তাহলে দেশবাসী সাদরে সরকারের এ পদক্ষেপ সমর্থন করত। কিন্তু ছোট্ট প্রশাসনিক ইউনিটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্ষমতা এতটাই বেড়ে যায় যে মানুষের স্বাভাবিক সুস্থ জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, 'পুলিশ ছুঁলে আঠারো ঘা।' গণতন্ত্রহীন দেশে প্রশাসনিক ইউনিট যত ছোট হবে, সেখানে অন্যায়-অত্যাচারের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। সে জন্য শাসক শ্রেণী প্রতিটি গ্রামকে যদি একটি করে থানায় পরিণত করতে পারে, তাহলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরকারের নির্যাতনের মাত্রা ততই বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই বলছিলাম যে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সিটি করপোরেশনকে কেক কাটার চেয়েও দ্রুতগতিকে কেটে দুভাগ করলেন, সে মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হওয়া বাংলাদেশে বড় কঠিন। সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কত বাহিনী গড়ে তুলেছে। কেউ-ই দাবি করবে না যে সরকারের সে ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। বরং ব্রিটিশ সরকার যখন পুলিশ বাহিনী সৃষ্টি করে, তার আগে দেশের আইনশৃঙ্খলার অবস্থা অনেক উন্নত ছিল। কারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে দেশের সন্ত্রাস ও দুর্নীতির সুগভীর সম্পর্ক আছে। এটা শুধু আমাদের দেশের জন্য সত্য তা-ই নয়, পৃথিবীর সব দেশের জন্য তা সত্য। আজকের বুর্জোয়া সভ্যতার সূতিকাগার খোদ ইংল্যান্ডের আন্ডারগ্রাউন্ড জগতের সঙ্গে পুলিশ বাহিনীর কি সুন্দর গভীর সুসম্পর্ক সে সম্পর্কে লন্ডনে তৈরি ''The Left Hand of the Law' ছবিটিই প্রমাণ করে।
তিন. যাক সে কথা। একটি কথাই বলা যায় যে সরকার চার মিনিটে এত বড় এক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে খুব একটা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়নি। ওই সিদ্ধান্তের জন্য আগামী রবিবারের হরতাল নিয়ে ইতিমধ্যেই দেশবাসী শঙ্কার মধ্যে পড়ে গেছে। তা ছাড়া এ মুহূর্তে যখন আমি লেখাটি লিখছি (১ ডিসেম্বর ২০১১) খবর পেলাম নগর ভবন উত্তপ্ত। সরকার সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ চলছে। এর আগেও নগর ভবনে একই বিষয় কেন্দ্র করে উত্তপ্ততা বিরাজ করছিল এবং এ নিয়ে মিছিল-মিটিংও হয়েছে। নগর ভবনে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠতে পারে_বিদ্যমান বাস্তবতা তাই বলছে। এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না, সরকার যদি ওই 'অগণতান্ত্রিক' সিদ্ধান্তটি না নিত। সংসদে পাস হওয়ার অর্থই গণতান্ত্রিক নয়। কোনো আলোচনার সুযোগ না দিয়ে আইনটি পাস করে সরকার দেশকে সংঘাতের মধ্যে ঠেলে দিল। এটার আদৌ কোনো দরকার ছিল না। তেমনি দরকার ছিল না বিএনপির রবিবার হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি প্রদানের। এমনকি এক অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার খেসারত সরকারকে দিতেই হবে। কিন্তু বিএনপির হরতাল আহ্বান সরকারের এই অজনপ্রিয় সিদ্ধান্তের প্রতি জনগণের ক্ষোভ কিছুটা লাঘব হওয়ার সুযোগ করে দিল। ডিসিসি ভাগের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির সঙ্গে সঙ্গে হরতালের মতো চরম পদক্ষেপ ঘোষণা করা অযৌক্তিক। এর ফলে আগামী রবিবার ঢাকায় যে কোন দৃশ্যের অবতারণা হয়, তা এখনই বলা যায় না। দেশবাসী ডিসিসি ভাগের বিরুদ্ধে_তেমনি দেশবাসী আগামী রবিবার ঢাকায় হরতালেরও বিরোধী। এভাবে বিএনপি যদি মনে করে বর্তমান সরকারের পতন ঘটাতে পারবে, সেটা ভুল চিন্তা। ডিসিসি ভাগের বিরুদ্ধে যে জনমতের সৃষ্টি হয়েছে, সেটা রাজনৈতিক প্রভাব দ্বারা সুপরিচালিত করা যেকোনো বিরোধী দলের কর্তব্য ও দায়িত্ব। 'জ্বালাও-পোড়াও' করে জাতীয় ক্ষতিসাধন করা কিংবা জনমতকে উপেক্ষা করে ঢাকা ভাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা চরম রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা ছাড়া কিছু নয়।
লেখক : শিক্ষাবিদ ও সমাজ বিশ্লেষক
No comments