জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা-প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রগতি নেই by আশরাফ-উল-আলম
সম্প্রতি রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রণীত বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড আইন, ২০১০-এর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'বিশ্ব কী করবে, সে আশায় বসে থাকার উপায় নেই।' তিনি তাঁর বক্তব্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ভয়াবহতা বার বার উল্লেখ করেন। অথচ কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে দেখা
যায়, এ আইনের আওতায় জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে গত দুই বছরে তেমন কোনো অগ্রগতিই নেই বাংলাদেশের।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ নিজস্ব তহবিল গঠন করে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থ বরাদ্দ করে। ওই সব প্রতিষ্ঠান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করেনি বলে জানা গেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজের ধীরগতির কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে বিপদের আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা আরো ত্বরান্বিত করবে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন।
সরকারি এসব প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়ার মধ্যে নানা অনিয়মও দেখা গেছে। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের নীতিমালার বাইরে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের এ ফান্ডের আওতায় অনুমোদিত প্রকল্পের তালিকা থেকে দেখা যায়। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে (এনজিও) অন্তর্ভুক্ত করার বিধান থাকলেও এখনো কোনো এনজিও কাজ শুরু করতে পারছে না। এ ছাড়া নতুন নতুন বনায়ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে সব প্রকল্পের কাজ স্থগিত রয়েছে সরকারি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়।
জানা গেছে, ৫৩টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় কাজ করতে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টি বোর্ড। বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে নানা অভিযোগ ওঠায় ট্রাস্ট বোর্ড আবার বরাদ্দ স্থগিত করে দেয়।
এসব বরাদ্দ নিয়ে অস্বচ্ছতা, স্বজনপ্রীতি, অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। জলবায়ু তহবিলের অর্থ প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের কাছে নাও পেঁৗছাতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। গত ২ অক্টোবর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত জলবায়ু তহবিল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা-সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভায় সরকারি দলের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, যেসব এনজিওকে এ বিষয়ে কাজ করার জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা নীতিমালা অনুসরণ না করেই দেওয়া হয়েছে। সাবের হোসেন চৌধুরী জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য। ওই মতবিনিময় সভায় বক্তারা ট্রাস্ট ফান্ডের টাকা অপব্যবহারের আশঙ্কা করেছেন। পরের দিন অবশ্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ক্লাইমেট চেঞ্জ ইউনিট আরেকটি বিবৃতি দিয়ে জানায়, স্বচ্ছতার সঙ্গেই জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থ ব্যয় হচ্ছে।
সরকারি তথ্যে জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তন, অভিযোজন ও উপশম-সংক্রান্ত কার্যক্রমগুলো পরিচালনায় সহায়তার জন্য উন্নত বিশ্বের দেশগুলো ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় ১০ কোটি ডলার দিতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে প্রায় দুই হাজার ১০০ কোটি টাকার ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে। জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মিজান আর খানও কালের কণ্ঠকে এই তথ্য দেন।
তবে উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে সরাসরি কোনো অর্থ ও প্রযুক্তি পাওয়ার তেমন কোনো লক্ষণ নেই বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিভিএফের সম্মলনে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, অতিমাত্রায় কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অনীহা দেখাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মত হলো, এসব কারণে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, যা দেখিয়ে উন্নত দেশগুলোর ওপর চাপ বাড়াতে হবে। কিন্তু গত দুই বছরে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা থাকলেও দায়িত্বশীলদের ব্যর্থতায় এ-সংক্রান্ত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড আইন করার পর পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে জলবায়ু পরিবর্তন ইউনিট করা হয়। আইন অনুযায়ী জলবায়ু ট্রাস্টি বোর্ডও গঠন করা হয়। এ বোর্ডে যুক্ত হন সরকারের ১০ জন সিনিয়র মন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ ১৭ জন। প্রকল্প প্রণয়নসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে থাকে এই ট্রাস্টি বোর্ড। পরিবেশ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত ৬২টি সরকারি প্রকল্পের অনুকূলে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে ৬৯৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড থেকে ৫৩টি এনজিওকে প্রায় ১৯ কোটি টাকা বরাদ্দের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো ওই অর্থ ছাড় দেওয়া হয়নি।
জানা গেছে, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওয়া বরাদ্দের টাকায় গত দুই বছরে চলা অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। কোনো কোনো কাজে এখনো হাতই দেওয়া হয়নি। আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দ অর্থ ছাড় না দেওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রকল্পের কাজ শুরুই করা যাচ্ছে না।
পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও জলবায়ু পরিবর্তন ইউনিটের সমন্বয় কর্মকর্তা এস এম মঞ্জুরুল হান্নান খান কালের কণ্ঠকে জানান, যেসব এনজিওকে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি নীতিগতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, সেসব আবার যাচাই-বাছাই হচ্ছে। এ কারণে টাকা ছাড় করা হচ্ছে না।
জানা গেছে, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি এ তহবিল থেকে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের পরিচালনাধীন এনজিওকে কাজ করার জন্য মনোনীত করা হয়। তাঁদের অনেকেরই জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে প্রকল্প পরিচালনার অভিজ্ঞতা নেই। অনেকগুলোই বর্তমান সরকারের আমলে গজিয়ে ওঠা। অনেকে নিজের বাসায় এক-দুই কক্ষের কার্যালয় নিয়ে ও নিজস্ব জনবল ছাড়াই এসব সংস্থা গঠন করেছেন। আবার কয়েকটি সংস্থার কোনো অফিস পর্যন্ত নেই।
জলবায়ু ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি এবং বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী হাছান মাহমুদের নিজের জেলা চট্টগ্রামে এককভাবে সর্বোচ্চ প্রায় ১২টি সরকারি প্রকল্পে ৯৮ কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি ও বেসরকারি সমীক্ষায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বিপন্ন এলাকা ও ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলা বিধ্বস্ত খুলনায় এককভাবে মাত্র ২৪ কোটি ৪১ লাখ ৬৫ হাজার টাকার একটি প্রকল্প বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে পরিবেশ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় অনুমোদিত জেলা ও উপজেলাভিত্তিক প্রকল্পের তালিকা থেকে দেখা যায়, কিছু সরকারি প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় কোনো সহায়ক ভূমিকা রাখবে না। চট্টগ্রামের কুমিরা ফেরিঘাটে গাইড ওয়াল নির্মাণের জন্য দুই কোটি ৪৮ লাখ টাকা চট্টগ্রাম জেলা পরিষদকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ড্রেনেজ সিস্টেম উন্নয়নের জন্য তিন কোটি ৯৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জাহাজভাঙা শিল্পে দুই কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, মোট ছয়টি জোনে ভাগ করে সরকারি প্রকল্পগুলো সাজানো হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের ২১১ কোটি ৩৯ লাখ ৬৪ হাজার টাকার ১৭টি প্রকল্প বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল গত অর্থবছরে। এই অর্থবছরে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল। জানা গেছে, এসব প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি। তিনটি প্রকল্পের কাজ গত বছরেই শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়ে গেছে। বাকি ১৪টি প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া যায়নি বলে কাজ থেমে আছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থ যদি সঠিকভাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে বরাদ্দ দেওয়া না হয় বা ব্যয় না করা হয়, তাহলে আমরা পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারব না।'
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ নিজস্ব তহবিল গঠন করে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থ বরাদ্দ করে। ওই সব প্রতিষ্ঠান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করেনি বলে জানা গেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজের ধীরগতির কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে বিপদের আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা আরো ত্বরান্বিত করবে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন।
সরকারি এসব প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়ার মধ্যে নানা অনিয়মও দেখা গেছে। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের নীতিমালার বাইরে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের এ ফান্ডের আওতায় অনুমোদিত প্রকল্পের তালিকা থেকে দেখা যায়। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে (এনজিও) অন্তর্ভুক্ত করার বিধান থাকলেও এখনো কোনো এনজিও কাজ শুরু করতে পারছে না। এ ছাড়া নতুন নতুন বনায়ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে সব প্রকল্পের কাজ স্থগিত রয়েছে সরকারি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়।
জানা গেছে, ৫৩টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় কাজ করতে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টি বোর্ড। বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে নানা অভিযোগ ওঠায় ট্রাস্ট বোর্ড আবার বরাদ্দ স্থগিত করে দেয়।
এসব বরাদ্দ নিয়ে অস্বচ্ছতা, স্বজনপ্রীতি, অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। জলবায়ু তহবিলের অর্থ প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের কাছে নাও পেঁৗছাতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। গত ২ অক্টোবর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত জলবায়ু তহবিল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা-সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভায় সরকারি দলের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, যেসব এনজিওকে এ বিষয়ে কাজ করার জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা নীতিমালা অনুসরণ না করেই দেওয়া হয়েছে। সাবের হোসেন চৌধুরী জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য। ওই মতবিনিময় সভায় বক্তারা ট্রাস্ট ফান্ডের টাকা অপব্যবহারের আশঙ্কা করেছেন। পরের দিন অবশ্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ক্লাইমেট চেঞ্জ ইউনিট আরেকটি বিবৃতি দিয়ে জানায়, স্বচ্ছতার সঙ্গেই জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থ ব্যয় হচ্ছে।
সরকারি তথ্যে জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তন, অভিযোজন ও উপশম-সংক্রান্ত কার্যক্রমগুলো পরিচালনায় সহায়তার জন্য উন্নত বিশ্বের দেশগুলো ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় ১০ কোটি ডলার দিতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে প্রায় দুই হাজার ১০০ কোটি টাকার ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে। জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মিজান আর খানও কালের কণ্ঠকে এই তথ্য দেন।
তবে উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে সরাসরি কোনো অর্থ ও প্রযুক্তি পাওয়ার তেমন কোনো লক্ষণ নেই বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিভিএফের সম্মলনে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, অতিমাত্রায় কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অনীহা দেখাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মত হলো, এসব কারণে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, যা দেখিয়ে উন্নত দেশগুলোর ওপর চাপ বাড়াতে হবে। কিন্তু গত দুই বছরে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা থাকলেও দায়িত্বশীলদের ব্যর্থতায় এ-সংক্রান্ত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড আইন করার পর পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে জলবায়ু পরিবর্তন ইউনিট করা হয়। আইন অনুযায়ী জলবায়ু ট্রাস্টি বোর্ডও গঠন করা হয়। এ বোর্ডে যুক্ত হন সরকারের ১০ জন সিনিয়র মন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ ১৭ জন। প্রকল্প প্রণয়নসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে থাকে এই ট্রাস্টি বোর্ড। পরিবেশ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত ৬২টি সরকারি প্রকল্পের অনুকূলে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে ৬৯৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড থেকে ৫৩টি এনজিওকে প্রায় ১৯ কোটি টাকা বরাদ্দের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো ওই অর্থ ছাড় দেওয়া হয়নি।
জানা গেছে, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওয়া বরাদ্দের টাকায় গত দুই বছরে চলা অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। কোনো কোনো কাজে এখনো হাতই দেওয়া হয়নি। আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দ অর্থ ছাড় না দেওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রকল্পের কাজ শুরুই করা যাচ্ছে না।
পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও জলবায়ু পরিবর্তন ইউনিটের সমন্বয় কর্মকর্তা এস এম মঞ্জুরুল হান্নান খান কালের কণ্ঠকে জানান, যেসব এনজিওকে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি নীতিগতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, সেসব আবার যাচাই-বাছাই হচ্ছে। এ কারণে টাকা ছাড় করা হচ্ছে না।
জানা গেছে, সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি এ তহবিল থেকে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের পরিচালনাধীন এনজিওকে কাজ করার জন্য মনোনীত করা হয়। তাঁদের অনেকেরই জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে প্রকল্প পরিচালনার অভিজ্ঞতা নেই। অনেকগুলোই বর্তমান সরকারের আমলে গজিয়ে ওঠা। অনেকে নিজের বাসায় এক-দুই কক্ষের কার্যালয় নিয়ে ও নিজস্ব জনবল ছাড়াই এসব সংস্থা গঠন করেছেন। আবার কয়েকটি সংস্থার কোনো অফিস পর্যন্ত নেই।
জলবায়ু ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি এবং বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী হাছান মাহমুদের নিজের জেলা চট্টগ্রামে এককভাবে সর্বোচ্চ প্রায় ১২টি সরকারি প্রকল্পে ৯৮ কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি ও বেসরকারি সমীক্ষায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বিপন্ন এলাকা ও ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলা বিধ্বস্ত খুলনায় এককভাবে মাত্র ২৪ কোটি ৪১ লাখ ৬৫ হাজার টাকার একটি প্রকল্প বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে পরিবেশ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় অনুমোদিত জেলা ও উপজেলাভিত্তিক প্রকল্পের তালিকা থেকে দেখা যায়, কিছু সরকারি প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় কোনো সহায়ক ভূমিকা রাখবে না। চট্টগ্রামের কুমিরা ফেরিঘাটে গাইড ওয়াল নির্মাণের জন্য দুই কোটি ৪৮ লাখ টাকা চট্টগ্রাম জেলা পরিষদকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ড্রেনেজ সিস্টেম উন্নয়নের জন্য তিন কোটি ৯৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জাহাজভাঙা শিল্পে দুই কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, মোট ছয়টি জোনে ভাগ করে সরকারি প্রকল্পগুলো সাজানো হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের ২১১ কোটি ৩৯ লাখ ৬৪ হাজার টাকার ১৭টি প্রকল্প বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল গত অর্থবছরে। এই অর্থবছরে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল। জানা গেছে, এসব প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি। তিনটি প্রকল্পের কাজ গত বছরেই শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়ে গেছে। বাকি ১৪টি প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া যায়নি বলে কাজ থেমে আছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থ যদি সঠিকভাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে বরাদ্দ দেওয়া না হয় বা ব্যয় না করা হয়, তাহলে আমরা পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারব না।'
No comments