গণতন্ত্রের ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে গণতন্ত্রের ভিত্তি আরও মজবুত করতে সুশীল সমাজের প্রতি গঠনমূলক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেস অব সোস্যাল ফিলোসফির যৌথ উদ্যোগে 'গণতন্ত্র, সুশীল সমাজ ও সুশাসন' শীর্ষক তিন দিনব্যাপী ১০ম আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান।


দেশের সুশীল নাগরিক সমাজের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার অনুরোধ গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতি হয় এমন কিছু আপনারা করবেন না। স্বপ্নের জগতে বিচরণ না করে বাস্তবতা বিবেচনা করে সরকারকে পরামর্শ দিন। জনগণের জন্য কল্যাণকর সব মতামতই আমরা সানন্দে গ্রহণ করব। কারণ আমাদের কাছে ব্যক্তি ও দলের চেয়ে দেশ ও দেশের মানুষ অনেক বড়। জনগণের ভোটাধিকার ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় সরকারের কঠোর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, এটা দুঃখজনক যে, একটি গোষ্ঠী সুশীল সমাজের ব্যানার গণতন্ত্রকে মজবুত করার কাজে লাগান না, বরং গণতন্ত্রের ভিত্তি দুর্বল করার কাজে এই ব্যানার ব্যবহার করেন। সুশীল সমাজের নামে যারা গণতন্ত্রের জন্য সোচ্চার তারা সব সময়
গণতন্ত্রের পক্ষে ভূমিকা পালন করেন না। বরং কখনও কখনও সুশীল সমাজের তৎপরতার সুবিধা ভোগ করেন সামরিক একনায়করা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোটা সুশীল সমাজ না হলেও এ ধরনের সুশীল সমাজের সদস্যদের রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। কিন্তু তারা কখনও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাননি। যেহেতু জনগণ তাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় দেখতে চায় না, তাই তারা গণতন্ত্র রক্ষার নামে দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছেন।
দেশের বৃহত্তম স্বার্থে সুশীল সমাজের দেওয়া বিবৃতি এবং আবেদনের ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর থেকে এ পর্যন্ত ১৯ বার সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা চাই না জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার হারাক। এ জন্য সব গণতন্ত্রকামী ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে সতর্ক থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুশীল সমাজকে উদ্দেশ করে আরও বলেন, আমার অনুরোধ থাকবে, স্বপ্নের জগতে বিচরণ না করে বাস্তবতা বিবেচনা করে পরামর্শ দিন। জনগণের জন্য কল্যাণকর সব মতামতই আমরা সানন্দে গ্রহণ করব; কারণ আমাদের কাছে ব্যক্তি ও দলের চেয়ে দেশ ও দেশের মানুষ অনেক বড়।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্র ও সুশাসনের জন্য বিদ্যমান বিতর্কের ক্ষেত্রে নাগরিক সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু সুশীল সমাজের কিছু লোক ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণের জন্য বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক সমকারকে সমর্থন দিয়েছে; যার কারণে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বারবার ব্যাহত হয়েছে। সুশীল সমাজের লোকদের মধ্যে অনেকের উচ্চতর ডিগ্রি থাকলেও তারা জনগণের কাছ থেকে অনেক দূরে রয়েছেন, যা তাদের অযোগ্যতাই প্রমাণ করে।
গণতন্ত্র ও সুশাসনকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিজ্ঞ সুশীল সমাজের অবদান স্বীকার করে তিনি বলেন, 'নব্বইয়ের গণঅভ্যুথানের পর দীর্ঘ পথপরিক্রমায় বাংলার মানুষ এখন অনেক সচেতন হয়েছে। গণতন্ত্র ও সুশাসনকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিজ্ঞ সুশীল সমাজের অবদান অবশ্যই আছে। তবে অনেকেই বাস্তবতার কাছাকাছি থাকতে চান না।'
পার্বত্য শান্তিচুক্তির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পার্বত্য শান্তিচুক্তি হলেও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার তা বাস্তবায়নে কাজ করেনি। বর্তমান সরকার পার্বত্য অঞ্চলে শান্তির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে দারিদ্র্যকে বাধা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়ন এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণই কেবল গণতন্ত্রকে টেকসই করতে পারে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র ছাড়া সুশাসন হবে না এবং সুশাসন ছাড়া দারিদ্র্য নিরসন সুদূরপরাহত। যদিও সুশাসন নিশ্চিত করা আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর সরকারগুলোর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন ভারতের জৈন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. রামজি সিং, আইসিএসপির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. বাসবরাজা পি সিদ্ধাশ্রম, অধ্যাপক ফেরদৌসী বেগম ও ড. নুরুল মোমেন। সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক, ভাষাসংগ্রামী আবদুল মতিন, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আ্যডভোকেট শামসুল হক টুকু , ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট প িত, গবেষক ও শিক্ষাবিদরা অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশে এই সম্মেলন আয়োজনের জন্য আয়োজকদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজয়ের মাসে স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের মহান বন্ধুদের স্বাগত জানাতে পারা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়।
শেখ হাসিনা বলেন, 'বিশ্বায়নের এ যুগে গণতন্ত্র ও সুশাসন পারস্পরিক ক্রিয়াশীল অনুষঙ্গ। গণতন্ত্র দেশকে সুশাসনের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। আবার গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে দেশের সকল মানুষের বিশেষ করে নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণ জরুরি। গণতন্ত্রের মূল কথা হচ্ছে জনগণের সমষ্টিগতভাবে মত প্রকাশের অবারিত সুযোগ।'
সাড়ে ৬ দশক ধরে আওয়ামী লীগ জনগণের শাসন বাস্তবায়নে লড়াই-সংগ্রাম করে আসছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছি, তখনই গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছি। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নারী এবং সম্পদহীনদের ক্ষমতায়নে পদক্ষেপ নিয়েছি।
নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনো রকম হস্তক্ষেপ ছাড়াই নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করছে। উপজেলা, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, ইউনিয়ন পরিষদে নিয়মিত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের সরকার হিসেবে সুশাসন নিশ্চিত করতে আমরা সবগুলো উপাদান ব্যবহারের চেষ্টার পাশাপাশি কাঠামোগত পরিবর্তন এবং তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে সরকারি সেবা মানুষের কাছে পেঁৗছে দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রতিটি জেলায় ই-সেন্টার এবং ইউনিয়নে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সমাজের অনগ্রসর মানুষের নিগৃহীত রোধে মানবাধিকার কমিশন ও তথ্য অধিকার কমিশন গঠন করা হয়েছে। আইনের শাসন থেকে যাতে দরিদ্র মানুষ বঞ্চিত না হয়, সে জন্য জাতীয় আইন সহায়তা সেবা সংস্থা গঠন করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে

No comments

Powered by Blogger.